সাপ্তাহিক সেরা - ঋজু




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

#অ্যাম্বুলেন্স_ও_একটি_‌ভালবাসার_গল্প 🚑
~ঋজু 

মিসড কল, একটা অচেনা নাম্বার, নিশ্চই কোনো পেশেন্ট পার্টি হবে,
ট্রু কলারে নামটা দেখতেই মনটা কেমন করে ওঠে রামানুজের, অপরাজিতা... 
তাহলে কি সেই অপা, মাথার মধ্যে কত রকমের চিন্তা ঘুরতে থাকে রামানুজের,
রামানুজ রহমান অর্থান রামানুজ  অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার, নিজেদের ওষুধের ব্যাবসার পাশাপাশি, অ্যাম্বুলেন্স চালানোটা রামানুজের পেশা না নেশা, 
মানুষ সেবার নেশা, রাতবিরেতে এই ছোট্ট মফঃস্বলের একটা ভরসার নাম রামানুজ। মাত্র বছর ঊনত্রিশের রামানুজের এই অদ্ভুত ভালো নেশাটা তৈরি হয়েছে তার মায়ের থেকে, তার মা সম্প্রীতি রহমান ঘোষ;
আজ থেকে বছর তিরিশ আগে, যা ছিলো প্রায় কল্পনাতীত, সেটাই করে দেখিয়েছিলো মাত্র ষোলোর সম্প্রীতি আর বছর বাইশের ইরশাদ, প্রথমে প্রেম তারপর বিয়ে, সময় বয়ে গেছে তার আপন ছন্দে, দুজনেই থেকে গেছে নিজেদেরকে আগলে,সবার থেকে আলাদা হয়ে, এখন রামানুজের মামারা আসে, এক চাচাও এসেছিলো তার ছেলেকে নিয়ে, তাদের বাড়ি কিছুদিন আগে, রামানুজ স্বপ্ন দেখে,একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে, ঠিক হতে বাধ্য, মানুষ শুধু মানুষ হিসাবেই দেখবে সকলকে;

একটু ধারণা হওয়ার পর থেকেই রামানুজ দেখেছে, তাদের বাড়িতে একটা ছোট্ট ও খুব সুন্দর দেখতে লক্ষ্মীর সিংহাসন আছে, প্রদীপ জ্বলে,মা পুজো করে
আবার রমজানের সময় মা, বাবার সাথে কত মানুষকে নতুন জামাকাপড়, প্রয়োজনীয় জিনিস দান করে,
এই সবকিছু দেখতে দেখতে বড়ো
 হওয়া রামানুজ, মানবসেবাকেই তার মূলমন্ত্র করে নিয়েছে অচিরেই,
অপরাজিতা নামটা রামানুজের কাছে একটা মন ভালো করা বাতাসের মতো, মাস ছয় আগে, রাত দুটো-তিনটে হবে, হঠাৎ একটা ফোন আসে দক্ষিণ পাড়া থেকে, পেটে অসহ্য যন্ত্রণা মেয়ের, বাবার আর্তনাদ, একটু তাড়াতাড়ি এসো,
দক্ষিণ পাড়া কাছেই, যদিও হাসপাতাল যেতে মিনিট চল্লিশ লাগবেই,
যন্ত্রণাতে প্রায় অচৈতন্য অপরাজিতাকে দেখেই, মায়ের মুখটা যেন ভেসে উঠছিলো রামানুজের কাছে,
বাড়িতে আর কেও নেই, কোনো রকমে দুজনে মিলে অ্যাম্বুলেন্সে তুলেই বেড়িয়ে গিয়েছিলো ওরা,
ভোরের হাসপাতাল চত্বর যেন ঘুমিয়ে থাকা দেবালয়, 
নাম কি মেয়ের, নার্সের প্রশ্নেও যেন ঘোর কাটেনা প্রৌঢ়ের,
'কাকু, মেয়ের নামটা বলুন?'
অপা... অপরাজিতা, সেই প্রথম নামটা জেনেছিলো রামানুজ,
জরুরি বিভাগে ভর্তি করে, বাইরে বেশ কিছুক্ষণ বসেছিল রামানুজ অপার বাবার সাথে,
' জানিনা বাবা, কেন এমন হোলো,
মা মরা মেয়ে আমার, কলেজের পর অনেকগুলো টিউশন করে জানো,সংসারটা চলে কোনোমতে, আমার দোকানটাতে তেমন কেনাকাটা নেই, আমাদের আত্মীয়রাও এখানে কেউ নেই সেভাবে, বাড়িতে বাবা-মেয়েই থাকি, ওর আমি কতটাই বা খেয়াল রাখতে পারি বলো,কখন খায়,কখন খায়না'
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে চলেন প্রৌঢ়,
'চিন্তা করবেননা, যেকোনো অসুবিধায় আমায় ফোন করবেন, আর না হলে আমিই করে নেবো'...
উঠে পরে রামানুজ, একটা ফোন ঢুকছে, তাকে বেড়োতে হবে,
মনে মনে কোথাও একটা ভীষণ টান যেন সে এইটুকু সময়েই অনুভব করে, অপাকে কি প্রথম দেখাতেই?...  না না এখন এসব ভাবার সময় নয়, নিজেকে বোঝায় রামানুজ,
মাঝে অপার বাবাকে ফোন করেছে দুবার, এখন ভালো আছে সে, তবে কিডনিতে স্টোন ধরা পরেছে তার, আকারে ছোটো,তাই ডাক্তার বলেছেন, ওষুধ,খাবার আর জল, একদম নিয়ম মেনে খেলে,অপারেশন করতে হবেনা, আজ হাসপাতাল থেকে ছাড়বে তাকে,
অপার বাবাকে নির্দিষ্ট সময়ে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নেয় রামানুজ, 
' কি নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন?'
' না বাবা,মেয়েটাকে তো রেস্টে থাকতে হবে, এতো ওষুধ... আমি কিছু বুঝতে পারছিনা বাবা, ওর এক বন্ধু আছে, ভালবাসা আর কি,ফোন করেছিলো, সে এখনও কিছু করেনা,তবে যতোটা পারবে করবে বলেছে,জানো বাবা আমি...'
কথা থামিয়ে দেয় রামানুজ, 'চিন্তা করবেননা, ওর ওষুধের সব খরচ আমার, আপনি সময় মতো নিয়ে যাবেন,কোনো দ্বিধা করবেননা,'

'না না বাবা',
'কোনো না নয়, আমি তো আপনার ছেলের মতোই'
'অপা জানলে খুব রাগ করবে...'
'জানাবেন না, ব্যস মিটে গেল', একটু গম্ভীর হয়েই যেন বলে রামানুজ।

এর মধ্যে অপা সুস্থ হয়ে উঠেছে অনেকটাই, অপার বাবাই খবর দেয়, 
গতমাসে ওষুধ আনতে এসে জড়িয়ে ধরে রামানুজকে, 
' বাবা, আর ওষুধ লাগবেনা, আর জানো ওর সেই বন্ধুটা একটা চাকরি পেয়েছে, তার বাড়ির লোকেরা সবাই অপাকে দেখতে এসেছিলো, ওরা বিয়ের দেরিও করবেনা বেশি,
তোমার ঋণ কোনোদিনই...'

থামিয়ে দেয় রামানুজ,
 'আসুন মিষ্টি মুখ করে যাবেন,'
অপার বাবাকে বাড়িতে ডাকেন রামানুজের মা, রামানুজের  কোনোকিছুই তার মায়ের অজানা নয়।

আজ প্রায় মাস ছয় পর, আবার সেই নাম অপরাজিতা, 
কল ব্যাক করে রামানুজ, 
'দাদা, দক্ষিণ পাড়া থেকে অপা বলছি,চিনতে পারছো?'
কিছুটা হকচকিয়ে যায় রামানুজ
'হ্যাঁ পারছি'
' সামনের শনিবার তুমি আমাদের বাড়ি আসবে'
বলেই ফোন কেটে দেয় অপা, কি অদ্ভুত মেয়েরা বাবা,প্রথমবার ফোন করেই এমন শাসনের সুরে কে বলে? 
মনে মনে ঠিক করে নেয় রামানুজ,সে যাবে
অপাকে দেখতে তারও যে মন চাইছে,

অপাদের বাড়িটা আগে থেকেই চেনার দৌলতে, অসুবিধা হয়নি রামানুজের, দরজায় টোকা দিতেই,দরজা খুলে দেয় অপার বাবা, ' যাও ভিতর ঘরে'
আশ্চর্য! হতভম্ব হয়ে আছে রামানুজ,ভিতরঘরে একটা মায়াবী আলো, ঠিক তার মায়ের লক্ষ্মীর সিংহাসনের মতো,
সামনে সুন্দর পরিপাটি সেজে বসে আছে এক দেবী, না এই তো অপরাজিতা! 
' কি! এতো চমকে গেলে হবে?
বসো তো,'
সেই শাসন,
সাজানো আসন,পরিপাটি মিষ্টির প্লেট, ধূপ, বাটা চন্দন...
আসনে বসে রামানুজ, 
মন্ত্র উচ্চারিত হয়, 
একটা আঙুল ছুঁয়ে থাকে
' ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা
যমের দুয়ারে পরলো কাঁটা,
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা,
আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা'...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ