কবিতা গুচ্ছ | পার্থসারথি ঘোষ




পোস্ট বার দেখা হয়েছে
 অঙ্কন : লাবনী সরকার 


সময় বড় অদ্ভুত!

সময় কর্পূরের মত মিলিয়ে যায় আর মিলিয়ে যায়,কিন্তু একটা গন্ধ আর মিলিয়ে যাওয়ার আফসোস রেখে যায়। 
জীবনের পথটা নদীর মত আঁকাবাঁকা বয়ে যাওয়া এক অন্তহীন গন্তব্যের নাম।কর্পূর মিলাতে মিলাতে একদিন তার ক্ষয় চলে আসে।অন্ত এই যাত্রার সবকিছু দেখতে দেখতে কখনো কখনো কোন বিষয়ের প্রতি এমন অনাগ্রহ আর বিতৃষ্ণা চলে আসে যে তখন সেই অনাগ্রহ আর বিতৃষ্ণা বিরক্তি আর ক্ষোভের কারণ হয়ে দাড়ায়।
কিছু বিষয়ের অযাচিত পাগলামি এমন কিছু বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করেছে যে এখন সেই রিলেটেড কোন কথা এত ক্ষোভ আর বিরক্তির উদ্রেক সৃষ্টি করে যে মানুষ ছুটে চায় পালাতে দূর বহুদূর।কিন্তু কিছু বাধা ধরা নিয়ম আর পুরাতন হয়ে যাওয়া একটু সুতোর টান তাকে ধরে রাখে অবাধ্য গরুকে দড়ি দিয়ে বেঁধে বাধ্য করে রাখার মত। 
মানুষ তার আপন কর্মের ফলই ভোগ করে।তবে ভোগ করা ফলের চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে দাড়ায় প্রতিটি দুয়ার থেকে তাড়া খাওয়া লোকগুলোর কপালে।একুল ভাঙ্গে ওকুল গড়ে এমন না হয়ে যদি দুইকুলই ভেঙ্গে যায় তবে মধ্য সাগরের তুমুল ঢেউয়ে বেচে থাকা যে কি কষ্টের তা একমাত্র সাগরের মাঝে হাবুডুবু খাওয়া ব্যাক্তিটিই উপলব্ধি করতে পারে।
আবার ওখান থেকে বাঁচার আকুতির যে চিৎকার সাগরের ঢেউ আর দূরত্বের কারণে কেউ সে আকুতি শুনতে পায় না।ঘুমের মাঝে বোবায় ধরলে যেমন চিৎকার করতে থাকলেও কেউ শুনে না তেমনি হৃদয় এর ভিতরে চিৎকার করতে থাকলেও কেউ শুনে না।বরঞ্চ উপহাস আর ঠাট্টার পাত্র হয়ে যায়।অবস্থা এমন যে কথা বললে লোকটি খারাপ,না বললে বলদ ভেবে দুইটা গুঁতা দিয়ে যাই অবস্থা হয়ে দাড়ায়। 
সময়ই মানুষকে পরিবর্তন করে দেয়।এক সময় যা ভাবে অন্য সময় সেই ভাবনাই উবে যায়।এক সময় দেখা স্বপ্ন অন্য সময় হারিকেন দিয়েও স্মৃতির পাতায় খুঁজে পাওয়া যায় না।তবে সবকিছুর পড় মানুষ খেলতে খেলতে যে দাগ মনের মধ্যে গেঁথে যায় তার থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না।দাগের উপর দাগ পড়তে পড়তে একসময় সেখানেই ক্যান্সার হয়ে যায়।সেল ভেঙ্গে যায়,কোষগুলো আর প্রপার অর্ডারে উৎপন্ন হয় না।
মানুষকে কিছু না কিছু নিয়েই বাঁচতে হয়।সবার পথ একরকম হয় না।কেউ হয়তো স্কুলের ঘণ্টা বাজিয়েই জীবন পাড় করে দেয়,কেউ হয়তো বাজারের কোনায় তেল বিক্রি করে আবার কেউ ঘানি টানতে টানতেই জীবনের পটল তুলে।
আর সেখানে কেউ স্বপ্ন দেখে আর সেই স্বপ্নের ভাঙ্গনের সুরে সেঁতারা বাজিয়ে যায়।সেতারার সুরে সুরে স্বপ্নের খরিদ্দার খুঁজে যায়। 
কেউ যদি পথ হারিয়ে ফেলে তবে পথ খুঁজে দাও,কেউ যদি হারানো পথেই বেচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পায় তবে তাকে তার মতই থাকতে দাও।
"আমাকে আমার মত থাকতে দাও,
আমি নিজেকে নিজের মত গুছিয়ে নিয়েছি। 
যেটা ছিল না ছিল না 
সেটা না পাওয়াই থাক" ---- এই গানটির মত থাকতে দাও তাকে ---
====
সেই অবেলায়

রূপকথাদেরও দেখি বহু পুরনো হয়ে যেতে,
ঋতুর চোখেও চশমা সময় আড়ালেতে!
ছুটে যাই তবু দূর, যদি কিছু রয়ে যায় বাকি!
তোমার চুলেতেও বয়স ,ঘন বাদলের মনখারাপি।
যে স্রোতের নদী পাড়ে ঝড় ভেঙেছিল স্বপ্নকে,
আজও তোমায় খুঁজি, গোটা চাঁদ বা আধেকে!
রোদ গুটোনো বেলা ভীষণ সংযমী,
স্মৃতি জমানো সন্ধ্যেয় আলি আকবর সরোদে দামী। 
পাখিরা আকাশে লেখে অবাধ্য সব কবিতা, 
খোলা জানলায় ইচ্ছে! দূরবীনে লেগে স্বাধীনতা ! 
তবুও চলে যাই এগোনোর পথ ধরে, 
চমকে দেখি তুমি, ছুঁয়ে আছ নির্ভারে! 
===
যাওয়ার বেলা,, 
    
 নদীর পারে দাঁড়িয়ে আছে, 
 দীর্ঘ দিনের বন্ধু যারা-
 তাদের আমি দেখছি কিন্তু দিচ্ছি না কোনো সাড়া 
 ডাকছে তারা ডেকেই যাচ্ছে! 
 ব্যস্ততা ঢেকেছে ঘর- বাইরে.. 
 শুনছি - কোথাও যেন স্থবিরতা সবখানে -
 ফেরাতে কোথাও পারছিনা.. 
 ভীষণ ভয় হয় বুকের ভেতর- ভীষণ এক উচাটন 
 বন্ধ যখন কথা! বয় না হাওয়া আকাশে -
 এক জীবনের জন্য আবার আটকে পড়া সেইখানেই! 
 ডাকছে ওরা- ফেরাতে কোথাও পারছি না 
 তবুও থমকে চাওয়া- মূকের মতো দৃষ্টিহারা-
 যাচ্ছি ফিরে- তবুও মনের ভেতরে কান্নার বোবা জল ঝরে..

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ