যোগ কথা | অলিপা পাল




পোস্ট বার দেখা হয়েছে
ছবি সংগৃহীত


 যোগ কথা 


যোগ নির্ভুল ভাবে ভারতীয় প্রাচীন কলা । যোগের মাধ্যমে ভারতবর্ষের বিশ্বজয়ে এক আত্মতৃপ্তি আছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বীকৃতিতে ২১ জুন তারিখটি আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসাবে পালিত হয় । যোগ হল এক বিশেষ ধরনের শারীরিক ও মানসিক ব্যায়াম এবং আধ্যাত্মিক বিকাশ। এর উদ্দেশ্য মানুষকে শারীরিক ও মানসিকাভাবে সুস্থ রাখা। যা আজও ভারতে প্রচলিত ।
    
যোগ হলো জীবন দর্শন,জীবনপদ্ধতি, আত্মানুশাসন,এক ব্যাধিমুক্ত ও সমাধিযুক্ত জীবনের সঙ্কল্প। যোগ আত্মোপচার ও আত্মদর্শনের সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যা। যোগ শুধু বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিই নয় ৷ যোগের প্রয়োগ  পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যাধিকে নির্মূল করে। অর্থাৎ যোগ মানসিক চিকিৎসাশাস্ত্র।

যোগের ইতিহাস : 

সংস্কৃত শব্দ ইউয্‌ থেকে যোগ শব্দ এসেছে এর অর্থ সংগঠিত আত্মা ও পরমাত্মার মিলন ৷ প্রকারভেদে বিভিন্ন ধরণের যোগ থাকলেও, যোগের মূল উদ্দেশ্য মনকে নিয়ন্ত্রণ বা স্থির করা।
 সুপ্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার সময় থেকেই প্রচলিত ছিল যোগাভ্যাস । ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার  মিলনকে যোগ আখ্যা দিয়েছেন। 
যোগ কি?কিসের যোগ?কার দ্বারা যোগ ঘটাবে ? নিজের পরিধির গন্ডি ছেড়ে  বিশ্ব ঐক্যবাদ তথা সৃষ্টির মূলে তা উপলব্ধি করা যাবে। কারণ যোগ অর্থ আদির সাথে প্রান্তের যোগ, মূলের সাথে শাখার যোগ, বৃহত্তের সাথে ক্ষুদ্রের যোগ।

যোগাসনকে যোগ ব্যায়ামও বলা হয়ে থাকে। আসন আর ব্যায়ামে বেশ পার্থক্য আছে। ব্যায়াম হলো খেলাধুলা, সাঁতারকাটা, হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং, জিম, এ্যাক্রোবিক প্রভৃতি। খালি হাতে ব্যায়াম হলো আসল যোগাসনচর্চা ৷
সুস্বাস্থ্যের কথা ভেবে বিধিসম্মতভাবে অঙ্গ সঞ্চালন হল ব্যায়াম। বয়স লিঙ্গ নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষেরই সুস্থ থাকার জন্য যোগ ব্যায়াম করা দরকার । আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ‘সুষম খাদ্যের সাথে যোগাসন কর, টেনশন (স্ট্রেস্) মুক্ত জীবনযাপন করা অপরিহার্য ৷

ছবি সংগৃহীত 


International Yoga Day 2020 : 

  বিশ্ব জুড়ে ভয়াবহ করোনা আবহে এ বছর ভারতবর্ষ জুড়ে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যোগাসন অভ্যাস করা যায়নি। সবটাই হয়েছে ঘরে বসে, সামাজিক দূরত্ব মেনে। তাই এ বছরের থিম ছিলো  ঘরে বসে পরিবারের সাথে যোগআসন চর্চা ৷এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বাড়িতে বসে কী ভাবে যোগচর্চা করা যায়, সেটাই এবারের যোগ দিবসের মূল বিষয় ৷ করোনা-আবহে এই বছর ডিজিটাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে পালিত হয় আন্তর্জাতিক যোগ দিবস। কোনও  স্থানে অনেকে মিলে জড়ো হয়ে  যোগচর্চার যে ছবি প্রতিবার দেখা যায়, তা এবার আর দেখা যায় নি। বড় জমায়েত রুখতেই ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত ৷ ভারচুয়ালি ২১ জুন সকাল ৭টা থেকে পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস।যোগচর্চা কে সমর্থন করে বিভিন্ন সংগঠনগুলির সাহায্যে বিদেশেও যোগদিবস পালন হয়েছে ৷

 মানসিক অবসাদের লক্ষণগুলিকে দূর করতে যোগাসন অপরিহার্য। 
এক গবেষণার বিষয়বস্তু ছিলো ৩০ জন মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশনের রুগী।২ টি দলে ভাগ করা হয়। গবেষকগণ, ২ দলের রুগীকে দিয়ে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ায় ও আয়েঙ্গার যোগ করায়। একদল কম ক্লাস করেন, একদল কে বেশি।

৩ মাস পর প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর ব্রেনের এমআরআই স্ক্যান করা হয়। এবং তাঁদের মানসিক অবসাদের তীব্রতা মাপা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, বেশি যোগাভ্যাস করা দলের যোগাভ্যাসের পরে মানসিক অবসাদের তীব্রতা অন্য দলের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে।    ৷
ডিপ্রেশনের শিকার আজ আমরা প্রায় সবাই। এই পরিস্থিতিতে মুক্তির উপায় হতে পারে যোগচর্চা। ঘরেই কয়েকটি যোগাসন অভ্যেস করলে দূর হতে পারে মন খারাপ। 

ছবি সংগৃহীত 

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির যোগাসন:

বালাসন:


এই যোগাসন শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। মস্তিষ্ককে শীতল করে। মস্তিষ্কেও রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। মনের ওপর স্ট্রেস কমায়।

সেতুবন্ধাসন :


মেরুদণ্ডে রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি পায়  মনঃসংযোগের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এই আসন ৷

শীর্ষাসন :


 নিয়মিত অভ্যাস করলে তা মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়।  মনঃসংযোগ বাড়ে ও শরীরের ক্লান্তি কমে।

শবাসন :


 রিল্যাক্স করার আসন। এই আসন  দেখতে সহজ হলেও,ঠিক ভাবে করা বেশ কঠিন। নিয়মিত ভাবে সঠিক পদ্ধতিতে শবাসন অভ্যাসে অনেক উপকারিতা আছে ৷ মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এই আসন।

ছবি সংগৃহীত 


আধুনিক বিভিন্ন যোগ শৈলী :


হথ যোগ,অষ্টাঙ্গা যোগ,ভিনিয়াস যোগ
গরম যোগ,আয়েঙ্গার যোগ ৷

যোগাসন ছাড়া এমন কোন চিকিৎসা পদ্ধতি নেই যা শরীরের অস্থি সন্ধিতে এবং ফুসফুস, প্লীহা, পাকস্থলী, মূত্রথলী, যকৃৎ, বৃক্ক ইত্যাদি অন্ত্রে ভালভাবে রক্ত সঞ্চালন হতে পারে। মেরুদণ্ড নমণীয় ও স্থিতিস্থাপক হয় যোগাসন শরীরের প্রয়োজনীয় গ্রন্থিগুলোকে অধিক সতেজ ও সক্রিয় করে তোলে। তাই যোগাসনকেই সর্বোত্তম বলে ধরা হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ