দৈনিক কবিতা গুচ্ছ




পোস্ট বার দেখা হয়েছে
                                                 অঙ্কন : লাবনী সরকার 


বর্ষার কলকাতা
 চন্দনা দে সিনহা

ঘন ঘোর বর্ষা,
নেইকোন ভরসা
লুকোচুরি সূর্যের
হবে নাকো ফর্সা।
এই রোদ এই ছায়া
মাঝে মাঝে ঝাপসা
সাদাকালো মেঘ ভায়া
আঁকে যত নকশা।
চারিদিক স্যাঁতস্যাঁতে
গাড়ি বাস বন্ধ
কাঁদা জল ক্যত্ক্যাতে
বিদঘুটে গন্ধ।
কবিদের কল্পনা
মেঘে দেখে আলপনা,
ব্যাঙেদের উল্লাস
চাষীদের শুরু চাষ
চিন্তিত গৃহিণী
ছুটি নেয় চাকরানী-
ঘরে বসে থাকে বেশ
কম হয় তার ক্লেশ।
ভাঙ্গা ঘরে গরিবে
বসে থাকে নীরবে,
ভাবনায় বুক করে ধুকধুক
এই বুঝি উড়ে যায় চালাটুক,
পাতা ওড়ে ফর ফর
মেঘ করে কর কর
বাড়িঘর যায় ধুয়ে
ছোট খোকা এক গুয়ে
বৃষ্টিতে  নাচবে ই
জলে ভিজে তাতা  থেই
 গাড়ি যতো গরগর
রিক্সারা ধড়ফড়
মনে জাগে স্ফূর্তি
ভাড়াবাড়ে চড়চড়
রোজগার বাড়তি।  
কারো হাতে বর্ষাতি
কারোকাছে রেনকোট
খালি হাতে সব জাতই
কোন শেডে একজোট,
কেউ খুশি হাটু জলে
কারো ভয় বর্ষাতে
কারো বুঝি পা-দোলে
চায়ে মুখ হর্ষেতে,
ধুলোবালি, মলিনতা
সব যেন নিঃশেষে
ঝমঝম বর্ষায়
ধূয়েযায় অবশেষে,
বর্ষার অবসানে  
রোদ করে ঝিকমিক
 শরতের আহবানে
সুন্দর  চারিদিক।

===

ও কথা
পরাগ চৌধুরী

কাঙাল মাটি মেঘের কাছে যা চায়
অথচ কোনও দিন বলতে পারেনি

অভিমানী শিশুটিও যা চায়
বাবা-মা'র কাছে যা বলতে পারে না

আর ক'দিনের পরমায়ুও তার চাওয়া
জীবনের কাছে যা বলতে পারবে না

এবং এ জটিল মুহূর্ত
মহাকালের কাছে যা কিছু ভেবেও
বলতে পারছে না

সেভাবেই তোমাকে কি ও কথা নিমেষে ব'লে দেওয়া যায়?

বুঝে নিও---
যদি সময় থামিয়ে দেওয়া পলক থাকে
যদি ক্ষতে অক্ষত আদর বুলিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে থাকে
যদি আব্দার সহ‍্য করার হাসিটুকু থাকে
আর যদি থাকে বুকভর লুকোনো বৃষ্টি...

===

আকাল 
    চন্দনা দে সিনহা

কলির কালে আকাল এল  --                                       কী  নিদারুণ  দাপট  তার
    তিমির ঘন রাত্রি হল
    কত প্রাণ হলো ছারখার।
প্রলয় নাচনে ভেসে গেল ---
      সব   সুর-তাল-ছন্দ -লয়
ঘোর কলিকাল এল আকাল
       পৃথিবী আবার গদ্যময়।
  বিশ্ব প্রলয় তাণ্ডবে কাঁপে
      ‌‌ বুক করে থর থর
      গৃহবন্দি সবাই এখন
           বন্ধ দুয়ারে জড়।
লেলিহান শিখা ধেয়ে আসে
       দুঃসহ বেগে ওই--
লক্ষ-কোটি শবের উপর
        নাচছে তাথৈ থৈ,
অট্টহাস্যে তান্ডব নাচে
      ভাসায় শবের  তরী
রক্তচক্ষু মেলে আসে ওই
     ‌ তামসী ভয়ংকরী,
স্তব্ধ ভুবন, নেই কোলাহল,
   কোথাও নেইকো সাড়া
অন্তহীন শূন্যতাতে নিঝুম  
             সকল পাড়া,
ণিশিথ  কুহেলি ধেয়ে আসে ওই সোনালী আকাশ ফুঁড়ে 
ন্যায় -অন্যায় পাপ -অনাচার
          সব রাখো সব দূরে
কে জানে কবে দূর হয়েযাবে
     ‌     নিশীথ অন্ধকার
 আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে
         ‌  সপ্তসুর আবার ,       
শক্তমুঠোয়  বেঁধে রাখো সব
    প্রেমেরই বাঁধন ডোর,
কেটে যাবে ভয়, জানি নিশ্চয়
আসবে নূতন ঊষার ভোর।
নব -জ্যোতির  কিরণ -ছটায়
উঠবে ফুটে শত শ্বেত শতদল
নব উল্লাসে আসবে জীবনে
     নতুন ছন্দ আর কোলাহল
শুভ্রজ্যোৎস্না ভরবে আবার
 নিশীথ রাত নয় আর নয়   
বিজয় কেতন উড়াব এবার
    আমরা সবাই করব জয়  । ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ