ধারাবাহিক উপন্যাস | অন্তর্জলী | ১ম পর্ব | দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য




পোস্ট বার দেখা হয়েছে




     
             🌼  ভূমিকা 🌼

 উল্লেখিত জীবন বোধ এবং জন্ম - মৃত্যুুর পরম্পরাগত বৃত্ত। কিন্তু  অস্বাভাবিক ভাবে যেকোনো মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে প্রভাবিত করতে সক্ষম, অর্থাৎ মৃত্যু থেকে নব জীবনের আলো জাগ্রত করতে আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস । প্রথম উপন্যাস " অন্তর্জলী "  । অজানা একলা বোধের দরজা খুলে জন্ম - মৃত্যুর দোলাচলে উপলব্ধির এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় আমি লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করলাম। বিভিন্ন গ্রন্থ আমাকে সহযোগিতা করেছে।


                     🙏উৎসর্গ 🙏


সদ্য প্রয়াত আমার পিতা ও মাতার  শ্রী'চরণে উৎসর্গীকৃত।  

 
                          *****

 মৃত্যু হয়তো জীবনের শেষ কথা বলে।  কিন্তু পরিবর্তনের এবং বিবর্তনবাদের অমোঘ ধারায় জন্ম এবং  মৃত্যু এই দুই, জীবনের চিরস্থায়ী সত্য।  মৃত্যু কেবলমাত্র শরীরের ক্ষয় প্রণালী। তার অন্তর্নিহিত জীবন সোপান এবং ভবিষ্যৎ ধারা সুদূরপ্রসারী এবং অস্তিত্ববান।  প্রত্যেক মৃত্যুর তীব্র প্রভাব ভবিষ্যৎ জীবন প্রণালীকে প্রভাবিত করতে সক্ষম।  এমনকি প্রজন্মের ভাবমূর্তি নির্ধারিত হয় একটি কিংবা একাধিক মৃত্যু বা ধ্বংসাবশেষকে কেন্দ্র করে।  

স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাও এই ধারাকে অক্ষুণ্ণ রেখে গেছেন। আসলে সব কিছুর মূলেই কর্ম।  প্রত্যেক বিরুপ প্রতিক্রিয়া এবং স্বধর্মী আচরণের কেন্দ্র বিন্দু - কর্ম।  ফলপ্রসূ না হলেও কর্ম তার পথেই এগিয়ে চলে।  
    ন হি কশ্চিৎ ক্ষণমপি জাতু তিষ্টত্যকর্মকৃৎ ।
    কার্যতে হ্যবশঃ কর্ম সর্বঃ প্রকৃতিজৈর্গুণৈঃ ॥
অর্থাৎ - 
সকলেই মায়াজাত গুণসমূহের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অসহায়ভাবে কর্ম করতে বাধ্য হয়; তাই কর্ম না করে কেউই ক্ষণকালও থাকতে পারে না।

যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবন বৃত্তান্ত যুদ্ধ - লড়াই এবং হাহাকার পরিপূর্ণ।  যেখানে সৃষ্টি কর্তা স্বয়ং উপলব্ধি করেছেন সমাজ ও সম্পর্কের ভিন্নধর্মী ক্ষতিয়ান। সেখানে দাঁড়িয়ে জাত পাতের ভেদাভেদ কিংবা শোক ও রক্তাক্ত কুরুক্ষেত্র বড়োই দৃষ্টান্তমূলক। প্রত্যেক সমস্যা থেকে মূল স্রোতে ফিরে আসার প্রণালী একমাত্র কর্ম।
     ন কর্মণামনারম্ভান্ নৈষ্কর্ম্যং পুরুষোহশ্নুতে ।
       ন চ সন্ন্যসনাদেব সিদ্ধিং সমধিগচ্ছতি ॥
অর্থাৎ - 
কেবল কর্মের অনুষ্ঠান না করার মাধ্যমে কর্মফল থেকে মুক্ত হওয়া যায় না, আবার কর্মত্যাগের মাধ্যমেও সিদ্ধি লাভ করা যায় না। 

মহাভারত প্রসঙ্গে কার্যত, যেখানে কুরুক্ষেত্রে একের পর এক সর্বশান্ত হয়ে চলেছে পরিবার, আত্মীয় স্বজনদের লাশের উপর তৈরী হয়ে চলেছে নতুন উদ্যমতার আকাশ, ঠিক সেই সময় আড়ষ্ট অর্জুনের ভগ্ন মনোভাব মেরামতী করতে প্রস্তুত শ্রীকৃষ্ণ।  তার মাণদন্ডে দীক্ষিত মানবকূল হাহাকার ত্যাগ করেছে সুখে। কৌরবের প্রতিহিংসা কিংবা পাণ্ডবদের প্রতিশোধ পরায়ণতাকে আরও শক্তিশালী করেছে কর্ম বোধ।  রথারোহী, অশ্বারোহী,  রক্তাক্ত ময়দান কিংবা মুন্ডহীন - বিচ্ছিন্ন শবের কায়দা কানুন তীব্র উদ্যমী হয়ে উঠেছে বাণী প্রতিষ্ঠায়। 

অর্জুন বললেন-হে জনার্দন ! হে কেশব ! যদি তোমার মতে কর্ম অপেক্ষা ভক্তি-বিষয়িনী বুদ্ধি শ্রেয়তর হয়, তা হলে এই ভয়ানক যুদ্ধে নিযুক্ত হওয়ার জন্য কেন আমাকে প্ররোচিত করছ ? কেনো আমায় বিভ্রান্ত করছো?  
আসলে এখানে উত্তর নয়, কর্মে উদ্যোগী এক মহাপ্রাণ যোদ্ধা প্রশ্ন করে চলেছিলো।  

আমরা আসলে ততটুকুই বোঝার চেষ্টা করি যতোটা বুঝতে চাই। ততটুকুই প্রশ্ন করি যতোটা উত্তর জানতে চাই। যেখানে জয় - পরাজয়ের নিশ্চয়তা থাকলেও পরিস্থিতি ভাবনা পরিবর্তন করতে থাকে, সেখানে একমাত্র কর্মই সমগ্র গতিবেগকে প্রভাবিত করতে পারে ।

                                        চলবে .......

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

4 মন্তব্যসমূহ


  1. মৃৃৃত্যু কেবল শরীরের ক্ষয় প্রণালী
    বলিষ্ঠ কলম
    এক বছর পর আবারও পড়ার অপেক্ষায়
    পর্ব ভিত্তিক উপন্যাস

    বিনম্র শ্রদ্ধা উৎসর্গীকৃৃত চরণে
    উৎ

    উত্তরমুছুন
  2. আগ্রহ নিয়ে পড়লাম ও পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ।ভালো লাগছে।

    উত্তরমুছুন
  3. আবারো পড়লাম। এক অনন্ত কর্মই মুক্তির পথ বলে আমার মনে হয় ।এই উপন্যাসটি অপূর্ব এক অনুভব করার উপন্যাস। শুভেচ্ছা বন্ধু ।💐

    উত্তরমুছুন