গল্প | চোর | আল মুনাফ রাজু




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

 


চোর

আল মুনাফ রাজু


দুপুরের খাবার শেষ করে টিভি দেখছিলো আজহালের বাবা মনির, হঠাৎ করেই টিভিটা বন্ধ হয়ে গেলো আর চলছেনা। মনে মনে ভাবছে আর বিড়বিড় করছে, টিভি খানা মনে হয় গেলো আর সমস্যা দেখা দেবেইনা কেনো বছর চারেক তো হলো এখন একটু রিপেয়ার দরকার। এই ভাবনা শেষ হতে না হতেই আবার বিড়বিড় করতে লাগলো চার বছর তাতে কি মানুষের জিনিস তোহ যুগ ধরে চলে, আমার সাথেই কেনো এমন হবে টিভি ফ্রিজ সবকিছু দিন না গড়াতেই সমস্যা দেখা দেয়, উপরওয়ালা মনে হয় রেগে আছেন।ভাবতে ভাবতে মোবাইল রিমোট দিয়ে চেক করতেই অন হয়েগেলো টিভি। তখন বোঝা গলো বাসার টিভির রিমোট খানা নষ্ট হয়ে গেছে। আর হবেইনা কেনো সারাদিন আজহাল এটাকে বল হিসাবে খেলা করে, বেচারা এতোদিন যে কিভাবে ঠিক ছিলো কে জানে। যাক অন যখন হলো তখন একটু টিভি দেখি এই মনে করে বসে দেখতে দেখতে আসরের আজান দিয়ে দিলো আবার একটু  টয়লেট চেপেছে। টিভিটা বন্ধ করে মনির সাহেব নিজের বেডরুমের বাথরুমের দিকে গেলেন। রুমে গিয়ে দেখলেন তার সহধর্মিণী কম্পিউটারে কাজ করছেন, মনির সাহেব পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে খানিকটা শুকনো খুনসুটি করে বাথরুমে গেলেন এবং সব সেরে একবারে অজু করে বের হলেন। তারপর আসরের নামাজ পড়ে আজহালকে  ডাকলেন, কোথায়রে বাবা?আজহাল মনির সাহেবের একমাত্র ছেলে তিন বছরে পড়লো কথা এখনো স্পষ্ট নয় দু'চারটে শব্দ বাদে এই যেমন বাবা দাদু মা। বাবার ডাকে দৌড়ে এলো আজহাল। চলো বাবা আমরা বাইরে যাবো টিভির রিমোট কিনতে। আজহালকে তার বাইকের সামনে বসিয়ে রওনা দিলো বাজারের দিকে।

ধীরে ধীরে বাবা আর ছেলে পৌঁছে গেলো বাজারে। বাজারের রহিম ইলেক্ট্রনিক্স এর সামনে গিয়ে বাইকটা রাখলেন রাস্তার পাশেই। আজহালকে বাইকে বসিয়ে মনির সাহেব বললেন বাবা তুমি বসো আমি রিমোট টা নিয়ে আসি। এই বলে আজহালকে বসিয়ে বাইকের চাবি না নিয়েই দোকানের দিকে গেলেন মনির সাহেব।

দোকানে না পৌঁছাতে ছেলের কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলো, পেছনে ফিরে দেখে আজহাল রাস্তায় পড়ে আছে আর বাইক খানা নিয়ে ছুটছেন চোর মহাশয়। মনির সাহেব দৌড়ে গিয়ে ছেলেকে রাস্তা থেকে সরিয়ে রেখে চোরের পেছনে ছুটতে লাগলো। আজহাল বাবাকে ছুটতে দেখে সেও বাবার পেছনে ছুটতে লাগলো আর বাবা বাবা করে ডাকতে লাগলো। আর এ সময় একটা সিএনজি যাচ্ছিলো রাস্তা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে ছোট্ট আজহালকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো। ছিটকে পড়েগেলো আজহাল, বন্ধ হয়ে গেলো বাবা বাবা ডাক। মুহূর্তেই মানুষের ভীড় জমে গেলো। চোরকে না পেয়ে ছেলেকে নিতে দৌড়ে ফিরে আসে মনির সাহেব, এসে ছেলেকে খোঁজে এদিক ওদিক।

হঠাৎ চোখ যায় ভীড়ের দিকে, বুকের ভেতরে মনে হয় একটা বেথা শুরু হয়, শরীরে ঘাম ঝরতে শুরু করে। ছুটে যায় ভীড়ের দিকে, মানুষ ঠেলে ভেতরে তাকাতেই বাবা বলে চিৎকার আসে ভেতর থেকে। সবার দৃষ্টি এখন মনির সাহেবের দিকে। ছেলেকে কোলে তুলে কিছু না ভেবে শুধু দৌড়াতে থাকে হাসপাতালের দিকে। শরীরের ঘাম চোখের জল সব মিশে সিক্ত হয়েছে শরীর। ঠান্ডা হয়ে গেছ হাত পা তবুও ছুটে চলেছে হাসপাতালের দিকে।

ইমার্জেন্সিতে ঢুকে কান্নার জন্য কিছু বলতে পারছে না, মনির সাহেব না বলতে পারলেও ডাক্তার বুঝেছেন তার অভিবেক্তি। ডাক্তার তাদের কাজ শুরু করেছেন মনির সাহেবকে সামনে বসতে বলে। ডাক্তারের গতিবিধি দেখে ভালো মনে হচ্ছে না, মনির সাহেবকে বল্লেন আপনি ভর্তির ব্যাবস্থা করেন। এই বলে ডাক্তার ওটিতে গেছেন আর মনির সাহেব ভর্তির কাউন্টারে। মনির সাহেবের চোখের পানি যেনো বৃষ্টির মতো ঝরছে, ছেলের নামটাও বলতে পারছেনা ভর্তি কাউন্টারে। সময় যেনো আর কাটেনা এমন করে করে আধা ঘন্ট পর ডাক্তার এসে বললো আল্লাহর রহমতে আপনার ছেলের প্রানের ঝুঁকি কেটেগেছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ