সঙ্গীত শিক্ষাগুরু যখন নজরুল || দে ব লী না




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

 

কবির সাহচর্যে যাঁরা যখন এসেছেন তারা সকলেই বারেবারে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছেন..., লিখছেন দেবলীনা চক্রবর্তী 
সঙ্গীত শিক্ষাগুরু যখন নজরুল 
ছবি সংগৃহীত 
মানব সভ্যতার ক্রমবর্ধমান বিকাশের ইতিহাসে ভাষার ব্যাবহার যখন থেকে শুরু হয়, তখন থেকে সঙ্গীত বা গান মানুষের আনন্দ-বেদনা, সামাজিক-সংস্কৃতিক বিকাশ, বিনোদন প্রভৃতি নানা ক্ষেত্রে জীবনচর্চার অন্যতম উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন চর্যাপদের সকল শ্লোক বা চর্যাগুলোই গান বা সঙ্গীত বা গীতি কবিতা হয়ে উঠেছে। 
সময়ের বিবর্তনে বাংলাভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম ভাব উপাদান গান বা সঙ্গীতকে বিভিন্ন বিষয়, বৈচিত্র্যে, রাগ তাল ও সুরে ও মাধুর্যতায় সমৃদ্ধ করে যারা সমগ্র বিশ্বে মহা সমারোহে ও পরম যত্নে  সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন তাদের মধ্যে আমাদের বিদ্রোহীকবি ও মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম অন্যতম ও শ্রেষ্ঠ । প্রায় চার হাজরের বেশি গান রচনা করে নজরুল কেবল বাংলা সাহিত্যের সর্বাধিক সঙ্গীত রচয়িতা নন, বিশ্ব সাহিত্যেরও সর্বাধিক সঙ্গীত রচয়িতা হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। সংখ্যার হিসাবে নজরুল সঙ্গীত যেমন সর্বাধিক মর্যাদায় সমাসীন, তেমনি জনপ্রিয়তার দিক দিয়েও নজরুল সঙ্গীতের সংখ্যাও রয়েছে গর্বিত মাত্রায়। 
একজন গীতিকারের এত অধিক সংখ্যাক গান জনপ্রিয়তা পাওয়ার তুলনায়ও নজরুল অতুলনীয়। কবি নজরুলের অধিকাংশ গান যেমন কবি নজরুল নিজে রচনা করে সুর দিয়েছেন, তেমনি অনেক বিখ্যাত সুরকার তার গানের সুর দিয়েছেন। তাদের মধ্যে কমল দাশ গুপ্ত, চিত্ত রায়, নিতাই ঘটক, অনিল ভট্টাচার্য্য, কে মল্লিক, সুবল দাস গুপ্ত, শৈলেশ গুপ্ত, সুখময় গাঙ্গুলী, ধীরেন দাশ, ধীরেন মিত্র, সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যয়, জ্ঞানদত্ত,পঙ্কজ মল্লিক, কৃষ্ণ চন্দ্র দে, গিরীস চক্রবর্তী, পিয়ারু কাওয়াল, আবদুল করিম খাঁ প্রমুখ অন্যতম। এবং তাঁর লেখা ও সুরারোপিত গান কণ্ঠে ধারণ করে পরম দক্ষতায় যাঁরা বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করেছেন তাঁরা কবি নজরুলের একনিষ্ট ও সুযোগ্য সঙ্গীত শিক্ষার্থী ।
তাদেরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, যেমন আঙ্গুর বালা, কানন বালা, প্রতিভা বসু, ইন্দুবালা দেবী, ফিরোজা বেগম প্রমুখ। এঁরা সকলেই কবিকে পেয়েছিলেন সঙ্গীত শিক্ষক হিসেবে এবং ভীষণ একাত্ম এক সুরসাধক হিসেবে। 
ছবি সংগৃহীত 
প্রতিভা বসু : 
আদি ঢাকার বনেদীপাড়া বনগ্রামের অধিবাসী ছিলেন রানু সোম। সঙ্গীতজ্ঞ দিলীপ রায়ের কাছে প্রথম তার নজরুল গীতির হাতেখড়ি এবং অসামান্য সুমিষ্ট কণ্ঠের জন্য তিনি যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন। 
 পরবর্তী জীবনে রানু সোম কবি বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং প্রতিভা বসু নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। কবি নজরুল তার বাড়িতে গিয়ে সঙ্গীত শেখানোর জন্য উপস্থিত হতেন ঢাকাতে থাকা কালীন প্রায় প্রতি সন্ধেতেই এবং হাসতে হাসতে বলতেন , ‘এসে পড়লাম বুঝলে? বেলা বাড়তে দিলে কি আর উপায় আছে? সব ছেলেরা ঠিক ভিড় করবে, ধরে নিয়ে যাবে কোথাও। এখান থেকে ফিরে গিয়ে কাল রাত্তিরে একটা গান লিখেছি, এক্ষুণি শিখিয়ে দিতে হবে। এভাবেই শুরু হয়ে যেত প্রতিভার গান শেখার পালা। রাতের লেখা গানটি তুলতে লাগলেন কবি ..... 
 ‘ কোন কূলে আজ ভিড়লো তরী এ কোন সোনার গাঁয়-
 ভাটির তরী আবার কেন উজান যেতে চায়।’
 প্রতিভা জানাচ্ছেন, ‘এই গানটি লিখেছেন রাতে। দেখা গেলো তখনো তার বয়ান ও সুরারোপ সম্পূর্ণ হয়নি, আমাকে শেখাতে শেখাতেই বাকিটা ঠিক করে নিলেন। পকেট থেকে কলম বেরুলো, কাটাকুটি কাগজ বেরুলো, গলা থেকে সুর বেরুলো, গানে সম্পূর্ণতা এলো। দিন তিনেক বাদে আর একটি গান তৈরি হলো, ‘এত জল ও কাজ চোখে পাষাণী আনলে বল কে।’
 যখন কবি গান বাঁধতে বসতেন অবিশ্রান্ত চা খেতেন আর সেই সময় যদি অপ্রত্যাশিতভাবে এককাপ চা পেতেন তাহলে আহ্লাদে আটখানা হয়ে উঠতেন। এভাবেই নজরুলের কাছে রানু সোম ওরফে প্রতিভা বসুর গান শেখার পালা শুরু হয়। 

উমা মৈত্র : 
১৯২৮ সালটি নজরুল ইসলামের জীবনে নানা কারণে বৈচিত্রময়। এ বছর ঢাকায় কবির সঙ্গে আরো এক তরুণীর সাক্ষাৎ হয় তিনি হলেন উমা
 মৈত্র, ডাক নাম ‘নোটন’। এই গুণী তরুণী একাধারে ছিলেন সুন্দরী-বিদূষী এবং সেতার বাজাতে সিদ্ধহস্ত। তার ওস্তাদ ছিলেন বিখ্যাত সেতারী হায়দার আলী। ভালো ছবিও আঁকতেন নোটন। টেনিস ও দাবা খেলাতেও ছিলেন পারদর্শিনী। সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা না পেলেও অথবা এ বিষয়ে আগ্রহী না হলেও নজরুল ইসলাম ও দিলীপ কুমার রায়ের গানের সঙ্গে স্বচ্ছন্দে সেতারে সঙ্গত করতেন।উমা মৈত্র ওরফে নোটন ছিলেন অভিজাত ব্যক্তিত্ব ও শান্ত স্বভাবের ‘অপূর্ব সুন্দরী’ রমণী।নজরুল এই নোটনকে বেশ কিছু গান শেখান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গান হচ্ছে.... 
 ১. ‘নিশি ভোর হ’ল জাগিয়া, পরান-প্রিয়া।
  কাঁদে ‘পিউ কাহা’ পাপিয়া, পরান পিয়া’
২. ‘আজি এ কুসুম-হার, সহি কেমনে।
 ঝরিল যে ধুলায়, চির-অবহেলায়
  কেন এ অবহেলায়, পড়ে তা’রে মনে’
৩. ‘বসিয়া বিজনে,কেন একা মনে, পানিয়া ভরণে   চললো গোরী।
 চল জলে চল, কাঁদে বনতল, ডাকে ছলছল, জল-লহরি’
 বাংলা সঙ্গীতের জগতে সমকালে এই গানগুলো বহুল প্রচারিত হয় এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এ ধরনের আরো বহু বিখ্যাত গানে নোটনের সঙ্গে নজরুল সেতারে সঙ্গত করেন।
গ্রামোফোন কোম্পানিতে কাজী নজরুল ইসলাম যোগ দিয়েছিলেন তাঁর গুরু ওস্তাদ জমিরউদ্দিন খাঁ সাহেবের সহকারী হিসেবে। খাঁ সাহেবের মৃত্যুর পর পদোন্নতি পেয়ে নজরুল হেড কম্পোজার ও ট্রেনার হন। ফলে এই কোম্পানিতে যাঁরা গান রেকর্ড করতে আসতেন তাদের গান তোলার জন্য কাজী সাহেবের কাছে যেতেই হতো।সে সময় পেশাগত প্রয়োজনেই কানন দেবী, ইন্দুবালা, আঙ্গুর বালা, বিজনবালা, সুপ্রভা সরকার বা ফিরোজা বেগম এঁরা গ্রামোফোন কোম্পানিতে কবির কাছে গান শিখতে গেছেন। কবিও পেশাগত দায়িত্ব হিসেবেই এদের গান শিখিয়েছেন ভীষণ নিষ্ঠা সাথে। 

ইন্দুবালা : 
ইন্দুবালার গায়িকা জীবনে কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় একটি স্মরণীয় ঘটনা। কাজী নজরুল ইসলামের গুরু ওস্তাদ জমিরউদ্দিন খাঁর সুরে তিনি অনেক গান রেকর্ড করেন। নজরুলের প্রশিক্ষণে তিনি দুটো নজরুলগীতি রেকর্ড করেন। পরে বহু নজরুলগীতি রেকর্ড করে নজরুল সংগীতে প্রথম সারির গায়িকা হিসেবে প্রচুর সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করেন। তার গাওয়া নজরুলগীতির প্রথম রেকর্ডে ছিল দুটো গান ‘রুম ঝুম রুম ঝুম কে এলে নুপুর পায়' ও ‘চেয়ো না সুনয়না।' 
ইন্দুবালা কোনো দিন শিক্ষক হিসেবে কাজী নজরুল ইসলামের মধ্যে কৃত্রিমতা দেখেননি। সবাইকে আপন করে নিতে পারতেন খুব সহজেই। অফিসের সামনে একটা তেলেভাজার দোকান ছিল। নজরুল টাকা দিয়ে বলতেন, ‘যাও ইন্দু, তেলেভাজা নিয়ে এসো।’ তেলেভাজা খাওয়ার পর তিনি আবদার করে বলতেন, ‘ইন্দু, এবার পান দাও।’ নজরুল ভীষণ পান খাওয়ায় অভ্যস্ত ছিলেন।একদিন রিহার্সেল রুমে কবি একা। ইন্দু বালা ঢুকতেই উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে বললেন, ‘ইন্দু, এসো, একটা নতুন গান লিখেছি, সুরও ঠিক করেছি, তুমিই নাও।’ যে গানটি নিয়ে উল্লাস করছিলেন নজরুল, সেটি হলো ‘অঞ্জলি লহ মোর সংগীতে’।গানের জগতে সম্রাজ্ঞীর আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন এই মহান গায়িকা। 

আঙুরবালা:
ইন্দুবালার মতই সংগীত ভুবনে নারীদের আগমনকে জানান দিতে আবির্ভূত হয়েছিলেন আরেকজন মহিলা শিল্পী। তার নাম আঙুরবালা। তার আসল নাম ছিল প্রভাবতী , তার কণ্ঠে সুর ছিল আঙুরের মতো মিষ্টি তাই তিনি হলেন আঙুরবালা। আঙ্গুরবালা দেবী পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী তাঁর কাজীদা গানের শব্দ-বিকৃতি একেবারেই সহ্য করতে পারতেন না। তিনি হয়তো লিখেছেন ‘বিন্ধিল’, যিনি গাইছেন তিনি হয়তো প্রমিত উচ্চারণ করলেন ‘বিঁধিল’-এটা পছন্দ করতেন না কবি।
কবির গান শেখানোর ধরন ছিল প্রথমে একটি গান আগে শোনাতেন, সেই গান তার গলায় সুর কীভাবে উঠছে দেখে প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করতেন। অনেক সময় কথাও বদলাতেন। খুব ভালো গাইলে বলতেন, ‘তোমার কণ্ঠে আমার গান প্রাণ পেল।’ কখনো ঠাট্টা করে বলতেন, ‘আমি তো কাঠামোটা তুলে দিলাম। এবার তুমি আঙুরের রস মিশিয়ে মিষ্টি করো।’
আঙ্গুরবালা দেবী নজরুলের প্রথম যে গানদুটি রেকর্ড করেছিলেন, তা হলো ‘ভুলি কেমনে আজো যে মনে’ ও ‘এত জল ও কাজল চোখে’।১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে আঙ্গুরবালা দেবীর গান প্রচার করা হয়েছিল। সে গানগুলোর মধ্যে ছিল ‘এত জল ও কাজল চোখে’ আর ‘যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পারো নাই’। শেষোক্ত গানটি গেয়েই সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি পেয়েছেন শিল্পী। নজরুলের সংগীত রচনা ও পরিচালনায় ঋদ্ধ ধ্রুব চলচ্চিত্রে নারদ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সয়ং কবি নজরুল এবং আঙ্গুরবালা সে ছবিতে গান করেছিলেন,আর ধ্রুবর মা সুনীতির চরিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন।

কানন দেবী:
গান শেখাতে গিয়ে অন্যান্যের মতো শিল্পী কানন দেবীর সঙ্গেও নজরুল ইসলামের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ নিয়ে সমকালে নানা কথা রটে শিল্পী মহলে।অথচ কানন দেবীর সঙ্গে কবির সম্পর্ক ছিলো গুরু-শিষ্যার।সে কালের প্রতিভাময়ী চলচ্চিত্র তারকা কানন দেবী নজরুলকে প্রথম দেখেন মেগাফোন কোম্পানির মহড়াকক্ষে। নজরুলের দিকে তাকাতে ভয় হচ্ছিল কানন দেবীর।মাথাভর্তি ঝাঁকড়া চুলের ভদ্রলোকটি চোখ বুজে হারমোনিয়াম বাজিয়ে সুর ভাঁজছিলেন। একসময় চোখ খুলে কাননকে সংকুচিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে কবি বলে উঠলেন, ‘ডাগর চোখে দেখছ কী মেয়ে? আমি হলাম ঘটক, তা জানো? এক দেশে সুর থাকে, অন্য দেশে কথা। এই দুই দেশের বর-কনেকে এক করতে হবে। কিন্তু দুটোর জাত পাত আলাদা হলেই বে-বন্তি। বুঝলে কিছু?’ তারপরই প্রাণখোলা হাসি।
নিউ থিয়েটার্সের বিদ্যাপতি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে নায়িকা ও গায়িকা রূপে কানন দেবীর বৈপ্লবিক প্রতিষ্ঠা হয়। এই প্রতিষ্ঠার পেছনের মানুষটিও ছিলেন নজরুল। বিদ্যাপতির নায়িকা অনুরাধা চরিত্রটি কাহিনিতে যুক্ত করেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। অনুরাধা দর্শকদের ভালোবাসা পেয়েছিল। সাপুড়ে ছবিতে যে সাতটি গান ছিল তার ছয়টিই গানই লিখেছিলেন নজরুল। সেখানে কানন দেবী একক কণ্ঠে গেয়েছিলেন সেই অপূর্ব মোহিত করা গান ‘আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ওই’ আর ‘(কথা) কইবে কথা কইবে না বৌ’।

ফিরোজা বেগম: 
কবি নজরুলের সাথে ফিরোজা বেগমের প্রথম সাক্ষাৎ হয় ১৯৪১ সালে, যখন ফিরোজা বেগমের বয়স মাত্র ১১ বছর। তখন এইচএমভি রিহার্সেল রূমে, সেখানে তিনি কবির প্রথম যে গানটি শোনান তা হলো ‘যদি পরানে না জাগে আকুল পিয়াসা’। শিশু ফিরোজা বেগমের সুকণ্ঠী গানের সন্তুষ্ঠ হয়ে কবি নজরুল তাকে আর একটি গান গাইতে অনুরোধ করেন। শিশু ফিরোজা বেগম তখন গান গাইতে শুরু করেন ‘কালো পাখিটা মোরে কেন করে এত যালাতন’। শুনেই কবি বলে উঠলেন অবাক কণ্ঠে - ‘দেখেছ, মেয়েটা একেবারে রেকর্ডের মতো গায়!’ যদিও ফিরোজা রেকর্ড থেকেই গানগুলো শিখেছিলেন। নজরুল তার সন্তানতুল্য ফিরোজা বেগমকে অত্যন্ত মমতায় ও দরদ দিয়ে গান শিখিয়েছিলেন। ফিরোজা বেগমও ছিলেন একজন দক্ষ শিল্পী। অত্যন্ত দক্ষতার সাথে গানগুলি আয়ত্ত করতেন এবং পরিবেশন করতেন এই কারণে তিনি দিনে দিনে হয়ে উঠেছিলেন নজরুল সঙ্গীতের সম্রাজ্ঞী। ১৯৪৯ সালে গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে ফিরোজা বেগমের কণ্ঠে নজরুল সঙ্গীত ‘আমি গগন গহনে সন্ধ্যাতারা’ গানটি রেকর্ড হয়। ১৯৬০ সালে পূজার সময় কবি নজরুলের ‘দূর দ্বীপবাসিনী’ ও ‘মোমের পুতুল’ গান দুটি দিয়ে ফিরোজা বেগমের একক যে রেকর্ডটি বের হয়। 
ছবি সংগৃহীত 
কবির সাহচর্যে যাঁরা যখন এসেছেন তারা সকলেই বারেবারে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছেন এবং শ্রোতা হিসেবে আপামর জনগণ কে সুস্থ ও শ্রুতিমধুর সঙ্গীতে মুগ্ধ করেছেন।
সৃজনেই যাঁর সুখ, সেই নজরুল বিশ্বাস করতেন, ‘আমি চিরতরে দূরে সরে যাব, তবু আমারে দেব না ভুলিতে’। একথা খুবই সত্যি যে তাঁকে ভুলে যায়নি কেউ বা ভুলতে পারে না কেউ ; তাঁর গান, কবিতা, প্রবন্ধ তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তিনি হয়ত শরীরবৃত্তীয় ভাবে চলে গেছেন, কিন্তু তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে রয়ে গেছেন এবং থাকবেন আমাদের কাছেই আমাদের মনের মণিকোঠায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ