মির্জা গালিব || অনুবাদ || ৩য় পর্ব || দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

গালিব কথা

তৃতীয় পর্ব


"पूछते हैं वो कि 'ग़ालिब' कौन है

कोई बतलाओ कि हम बतलाएँ क्या"

(Poochchte haiN woh K ‘GHalib’ kaun hai ?

Koee  batlaao   K  ham  batlaayaiN  kya ?)


গালিব বিশ্লেষণে একটা জন্ম যথেষ্ট নয়।  গালিবের উপলব্ধি এবং জীবনের অভিজ্ঞতা তাঁর লেখনী উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যায়। ভাগ্যের কাছে বারবার বিচ্যুতি হতাশা জর্জরিত জীবনে কেবলমাত্র কলমই ছিলো তাঁর একমাত্র উপাদান।

জানা যায় , কালোত্তীর্ণ কবি মির্জা গালিব ব্যক্তিজীবনে ছিলেন মারাত্মক অসংযমী, হেঁয়ালি, বেহিসেবি, বেপরোয়া। নিজের প্রতিভা নিয়ে প্রচণ্ড দাম্ভিক, আত্মপ্রেমী, উদ্ধত ছিলেন , কিন্তু জীবন আর জীবিকা নিয়ে তাঁর বিশেষ কোন মনোযোগ ছিলনা- এবং  শেষ জীবন চরম দুঃখ ও দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। জীবিত অবস্থায় তিনি যথাযোগ্য মর্যাদা পায়নি- মৃত্যুর পর বিখ্যাত হয়ে ওঠেন।

জানা যায়,  গালিব মদ পান করার সময় লিখতেন এবং তা প্রায়ই সন্ধ্যায়৷ মদ হাতে, একা বসে একটি সুতা নিয়ে খেলতেন, কবিতার একটি লাইন লেখার পর সুতায় একটি গিঁট দিতেন। যখন শুতে যেতেন, তখন সুতায় অনেকগুলো গিঁট থাকতো। সকালে তিনি গিঁটগুলো খুলতেন৷ লাইনগুলো তিনি মুখস্থও বলতে পারতেন। গালিব শুধুই একজন কবি ছিলেন না, তিনি ছিলেন গভীর দার্শনিক, ভাবুক এবং চিন্তাশিল্পী।

ছবি সংগৃহীত
পরাধীনতা কিংবা দেশাত্মবোধক, রাজনৈতিক লেখা তাঁর আর লেখা হয়ে ওঠেনি ।

প্রেমপূজারী গালিবের শেরগুলো নারী প্রেম, বিরহ আর স্তাবকতায় ভরা। নারীর সৌন্দর্য, হেয়ালিপনা, উপেক্ষা, বিরহ কিংবা নিষ্ঠুরতা অসাধারনভাবে ফুটে উঠেছে গালিবের কাব্যে। 

গালিব নিজের মন্দভাগ্যকে নিজেই শ্লেষাত্মক মন্তব্যে জর্জরিত করেছেন। তাঁর কবিতা তাই তীক্ষ্ণ, বিদ্রূপাত্মক আর বিষণ্ণ। যা তার জীবন অভিজ্ঞতাকে বিশেষভাবে ছুঁয়ে গিয়েছিলো। 

আরও জানা যায়, তিনি কাব্যে রহস্যময়তা আর দুর্বোধ্যতা পছন্দ করতেন। বেশিরভাগ মানুষ তাঁর কবিতার মর্মার্থ অনুধাবনে ব্যর্থ হতেন। এজন্য সমকালীন কাব্যবোদ্ধাদের দৃষ্টিতে ‘মুশকিল পসন্দ,'প্রলাপ বকিয়ে’ বা 'poet of nonsense’ খেতাবেও গালিবের অপখ্যাতি ছিল। কবিতার আসর বা মুশায়েরায় গালিবকে তাঁর কবিতার দুর্বোধ্যতার কারনে বিভিন্ন সময়ে ব্যাঙ্গাত্নক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হতো।

তবে এই সমালোচনায় ভেঙ্গে পড়া দূর, কবি প্রতিদিন আরও তীক্ষ্ণ হয়েছেন এবং লিখে গেছেন তার মতো করেই যা পরবর্তীকালে কালজয়ী সাহিত্য হিসেবে গৃহীত হয়েছে বিশ্বজুড়ে ।

 তৃতীয় পর্বে রইলো গালিবের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাব্যানুবাদ।

পছন্দ হলে অবশ্যই মতামত জানাতে ভুলবেন না।

এবং ভুল ত্রুটি অবশ্যই মার্জনীয় ।

ধন্যবাদ। ।

দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য 

ছবি সংগৃহীত

NA thaa kuchh

Mirza Ghalib


Na thaa kuchh to Khudaa thaa, kuchh na hotaa to Khudaa hotaa

Duboyaa mujh ko hone ne, na hotaa mai.n to kyaa hotaa


huaa jab Gam se yuu.N behis to Gam kyaa sar ke kaTane kaa

na hotaa gar judaa tan se to zaa.Nno.n par dharaa hotaa


huii muddat ke 'Ghalib' mar gayaa par yaad aataa hai

wo har ek baat pe kahanaa ke yuu.N hotaa to kyaa hotaa


অনুবাদ -

কিছু না থাকলেও ঈশ্বর ছিলেন ; কিছু না হলেও ঈশ্বরই হন ;

আমার অস্তিত্ব আমায় ডুবিয়েছে ; যদি আমি না থাকতাম তবে কি হতো?


অস্তিত্ব যখন চারপাশের যন্ত্রণায় জর্জরিত ; 

মাথা কাটার যন্ত্রণা হয়তো অনেক কম -

যদি মন থেকে বিচ্ছিন্ন না হতাম - হাঁটুতে থাকতো প্রাণ।


এমনই হলো গালিব মরে গেছে কিন্তু স্মৃতিতে রয়ে যায় ;

যে সব সময় বলতো ; এমন হলে কেমন হতো 

গালিবের বাড়ির অন্দরমহল (ছবি সংগৃহীত)


Ye Na Thee Hamaree Qismat

Mirza Ghalib 


ye na thee hamaaree qismat ke wisaal-e-yaar hota

agar  aur  jeete  rehte  yahee  intezaar  hota


tere  waade par jiye ham  to ye jaan jhooT jaanaa

ke  KHushee se  mar na jaate  agar 'eitabaar hota


koee mere  dil se pooche tere teer-e-neemkash ko

ye KHalish kahaaN se hotee jo jigar ke paar hota


ye kahaaN ki dostee hai ke bane haiN dost naaseh

koee  chaarasaaz  hota,  koee  Ghamgusaar  hota


rag-e-sang se Tapakta wo lahoo ki fir na thamta

jise GHam samajh rahe  ho, ye agar sharaar hota


kahooN kis se maiN ke kya hai, shab-e-GHam buree bala hai

mujhe  kya  bura  tha  marna ?  agar  ek  baar  hota


hue mar ke ham jo ruswa, hue kyoN na GHarq-e-dariya

na  kabhee janaaza  uThata, na  kaheeN  mazaar hota


use;  kauN  dekh  sakta  ki yagaana  hai wo yaktaa

jo dooee ki boo bhee hotee to kaheeN do chaar hota


ye  masaail-e-tasawwuf,  ye  tera bayaaN  'GHalib' !

tujhe ham walee samajhate, jo na baada KHwaar hota


অনুবাদ -


প্রিয়জনের সাথে মিলন আমার ভাগ্যে ছিলোনা ;

যতোদিন বাঁচবো - ততদিন এই অপেক্ষা চলবে।


মিথ্যে হলেও তোমার প্রতিশ্রুতিতে বেঁচে থাকতাম ;

সম্মতি যদি পেতাম ; হয়তো আনন্দে মরেই যেতাম। 


তোমার অর্ধেক তীরের মতো সম্পর্ক আমায় জিজ্ঞাসা করুক কেউ ;

তীরটি শক্তভাবে ছিদ্র করলেও আমার হৃদয় কোনও ব্যথা অনুভব করতে পারবে না।


বন্ধু থেকে পরামর্শদাতা - এ কেমন সম্পর্ক ;

কেউ তো হোক যে  নিরাময়কারী কিংবা  সহানুভূতিশীল।


যে রক্ত শিরা থেকে ঝরে কখনও থামেনা -

যেটা দুঃখ বলেই বুঝি - সেটা ঝটকা হতে পারতো।


কার কাছে আমি বলবো - দুঃখের রাত কতোটা খারাপ বিপর্যয়!

আমি মৃত্যুই চাইতাম - যদি একবারই হতো।


মৃত্যুর পরেও আমি লাঞ্ছিত ; ডুবন্ত সমুদ্র প্রাণ ;

না কখনও শবযাত্রা হয় - না কোথাও সৎকার।


কে তাকে দেখতে পাবে?  যে একতা অনন্য;

 যদি এখানে দ্বিগুণ পরিমাণও থাকে তবে কোনওভাবে  দুই বা চার হতে পারেন!


রহস্যবাদের এই কথা সব তোমারই গালিব ;

তোমায় সন্ত বলে ভাবতে পারি ; যদি মদ্যপান না করতে। 


আরও পড়ুন - 

প্রথম পর্ব

দ্বিতীয় পর্ব 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

11 মন্তব্যসমূহ

  1. গালিব সর্বকালের এক বিতর্কিত ও পরম শ্রদ্ধেয় কবি। তিনি কখনও চারদিকের সমালোচনায় নিজের সৃজনে কোনো পরিবর্তন আনবার প্রয়োজন মনে করেন নি। সময়ের ধারা প্রবহমান, কবিতায় হয়েছে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা, কিন্তু আজও প্রতিটি সচেতন কবি প্রেমের , বিরহের এবং ঐশ্বরিক বিষয়ের ওপর ব্যতিক্রমী, তদুপরি সর্বকালীন আকর্ষণীয় কবিতার গভীরতার অনুসন্ধানে গালিবের কবিতা বারবার পড়ে এর মর্মার্থ ও কুশলতা বোঝবার চেষ্টা করে। অনুবাদ কবিতা গুলো পড়ে খুশি হয়েছি। এমন অনুবাদের ভীষণ দরকার, দেবাশীষ সেই দায়িত্ব পালন করেছে।

    উত্তরমুছুন



  2. অসামান্য প্রাকাশ 'যদি আমি না থাকতাম' কিংবা 'বন্ধু থেকে পরামর্শদাতা...মৃৃত্যুর পরেও আমি লাঞ্চিত.... '

    উত্তরমুছুন
  3. অনবদ্য গালিব এই ভাবে কবিতা পড়ার
    সুযোগই খুব আনন্দের

    উত্তরমুছুন
  4. দুর্দান্ত ... অসাধারণ এই অনুবাদ , চলুক এভাবেই নিরন্তর !! শুভকামনা কবি দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য

    উত্তরমুছুন
  5. আগের পর্বগুলোর মতই খুব সুন্দর। গালিব কে এইভাবে চেনানোর জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন
  6. অনবদ্য, সমৃদ্ধ হলাম সফল অনুবাদে

    উত্তরমুছুন