ধারাবাহিক || আলিপুর বোমা মামলা || ১ম পর্ব || অলিপা পাল




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

 আলিপুর বোমা মামলা : শ্রীঅরবিন্দ ঘোষ এর কারাকাহিনী

অলিপা পাল

প্রথম পর্ব

১১০ বছরের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের দোরগোড়ায়। 

ক্যানাল ইস্ট রোড ধরে মুরারিপুকুর এলাকায় ঢুকতেই চোখে পড়বে রাস্তা থেকে শুরু করে অ্যাপার্টমেন্ট, ক্লাব থেকে শুরু করে বাড়ির নাম সবই প্রায় বিপ্লবীদের নামাঙ্কিত। বিপ্লবী বারীন ঘোষ, ঋষি অরবিন্দ, ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকী— বাদ নেই কারও নাম!‌ কিন্তু বাংলার স্বাধীনতা যুদ্ধের সেই ঘটনাবহুল বাগানবাড়িটি কোথায়? কোথায় সেই বোমার কারখানা? ৩২ মুরারিপুকুর ! গোটা বাগানবাড়ি ও বোমার মাঠের আজ আর কোনও অস্তিত্বই নেই। ঐতিহাসিক সেই জায়গায় এখন রং, কেমিক্যাল কারখানা আর সামান্য কিছু বসতবাড়ি। একই সঙ্গে বদলে গেছে ঠিকানাও। সামনের অংশ ২২৬/‌এ/‌এইচ/‌১৫ বাগমারি রোড এবং পেছনের অংশটি ৩২/‌২ মুরারিপুকুর রোড (‌জজবাগান)।


শুক্রবার গভীর রাত সশস্ত্র পুলিশে ভরে উঠল ছোট্ট ঘর ৷সুপারিণ্টেণ্ডেণ্ট ক্রেগান,২৪পরগণার ক্লার্ক সাহেব,কয়েকজন ইন্সপেক্টর, লাল পাগড়ি, গোয়েন্দা,পরিচিত বিনোদকুমার গুপ্ত ৷

শ্রীঅরবিন্দের গ্রেফতারের ঘটনা১৯০৯-১০সালে সুপ্রভাত কাগজে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছিল ৷

বিছানায় বসে অরবিন্দু ৷ক্রেগান জিজ্ঞাসা করলেন, অরবিন্দ ঘোষ কে?খানাতল্লাসীর ওয়ারেন্ট চাইল অরবিন্দ,সাথে ক্রেগানের অতিশয় অভদ্র কথায় দুজনের বাকবিতণ্ডা ৷ ওয়ারেন্টে বোমার উল্লেখ যা মজঃফরপুরের খুনের সাথে যুক্ত ৷ শ্রীঅরবিন্দ শুধু বুঝতে পারেনি তার বাড়িতে বোমা বা অন্য কোন স্ফোটক পদার্থ পাওয়ার আগেই body warrant এর অভাবে কেন তাকে গ্রেপ্তার করলো ৷সাথে গ্রেপ্তার হল শ্রী অবিনাশ ভট্টাচার্য, শৈলেন্দ্র বসু ৷ ক্রেগনের ভাবে প্রকাশ পেয়েছিলো সে হিংস্র পশুর গর্তে ঢুকেছেন,যারা আইনভঙ্গকারী,তাদের প্রতি ভদ্র ব্যবহার করা নিষ্পয়োজন ৷ অহংকারী ক্রেগন শ্রীঅরবিন্দ'কে বলেছিলো 'আপনি নাকি বি-এ পাশ করিয়াছেন? এমন সজ্জাবিহীন কামরায় মাটিতে শুয়ে আছেন,এই অবস্থায় থাকা কি আপনার মত শিক্ষিত লোকের পক্ষে লজ্জাজনক নহে?' উত্তরে শ্রীঅরবিন্দ বলেন 'আমি দরিদ্র,দরিদ্রের মতই থাকি '৷উত্তরে সাহেব সজোরে বলে 'তব কি আপনি ধনী লোক হবেন বলে সকল কাণ্ড ঘটাচ্ছেন ?'শ্রীঅরবিন্দ বুঝলেন দেশহৈতেষিতা,স্বার্থত্যাগ বা দারিদ্র্যব্রতের মাহাত্ম স্থূল বুদ্ধি ইংরেজকে বোঝান দুঃসাধ্য ৷

খানাতল্লাসী চলছে ৷ভোর সাড়ে পাঁচটার সময় আরম্ভ হয়ে শেষ হয় সারে এগারটায় ৷বাক্সের ভিতর বাইরে যত খাতা,চিঠি,কাগজ,কাগজের টুকরো,কবিতা,নাটক, পদ্য,গদ্য,প্রবন্ধ, অনুবাদ যা ছিলো কিছুই বাদ যায় না এই সর্ব্বগ্রাসী খানাতল্লাসীর থেকে ৷তবে ছোট কার্ডবোর্ডের বাক্সে দক্ষিণেশ্বরের মাটি ছিলো,ক্লার্ক সাহেব সন্দিগ্ধচিত্তে অনেক্ষণ নিরীক্ষণ করেছিলেন-তার ভাবনার ভয়ঙ্কর তেজবিশিষ্ট স্ফোটক পদার্থ ৷

তল্লাসী শেষ হলে ধৃত তিনজনকে স্থানীয় থানা  থেকে লালবাজার হয়ে রয়ড স্ট্রীটে নিয়ে যাওয়া হয় আবার লালবাজার চলে জিজ্ঞাসাবাদ ৷ অতিবাহিত হয় তিন রাত ৷

ট্রায়াল রুম ( ছবি সংগৃহীত) 
আই. সি.এস পরীক্ষার প্রস্তুতিকালে শ্রীঅরবিন্দকে যথেষ্ট আইন বিষয়ক পড়াশুনা করতে হয়েছিল যার ফলে  তিনি কোন ফাঁদে পা দেননি ৷ জোর জবরদস্তি সত্ত্বেও তিনি কোন বিবৃতি দিতে অস্বীকার করেন এবং নিজের অধিকার রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন ৷ প্রথম থেকে ইংরেজ সরকার শ্রীঅরবিন্দকে যথাসাধ্য হেনস্থা করার চেষ্টায় ছিলো ৷তাঁর খাদ্য ছিলো খাওয়ার অনুপযুক্ত ৷

সোমবার,৫ই মে কলকাতা চীফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বন্দীদের পেশ করা হল ৷ইতিমধ্যে আটটি বিভিন্ন স্থানে তল্লাসী চালিয়ে ২৪মে তারিখে প্রায় পঁচিশজনকে আটক করা হয় এবং পরে সংখ্যায় আরও বেড়ে  মোট ৪২জন গ্রেপ্তার 

হয় ,যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে ৩জনকে মুক্তি দেওয়া হয় ৷বাকী৩৯জনকে নিয়ে ১৭ই মে১৯০৮,শুরু হয়২৪ পরগণার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ বার্লির আদালতে,যা আলিপুর বোমা মামলা নামে খ্যাত ৷

শ্রীঅরবিন্দের কারাজীবন আরম্ভ হয় ৫ই মে, পরের বছর ৬ই মে তিনি মুক্ত হন ৷শ্রীঅরবিন্দ ও বহুসংখ্যক বিপ্লবীদের আটক সংবাদ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল ৷দেশবাসী হল হতবুদ্ধি ৷মুজঃফরপুর বোমার ঘটনায় ইতিমধ্যে যথেষ্ট চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল ৷ যে দুজন যুবক ধরা পড়েছিল, তার মধ্যে প্রফুল্ল চাকী গ্রেপ্তার এড়াতে নিজেকে গুলি করে ৷ অন্যজন, ক্ষুদিরামকে আদালত অভিযুক্ত করে ফাঁসি দেয় ৷অতি অল্প লোকই বিশ্বাস করেছিল যে শ্রীঅরবিন্দ আতঙ্কবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত ৷তবু তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং সরকার উঠে পড়ে প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে তিনি হচ্ছেন নাটের গুরু,সকল অনর্থের 

মূল ৷দেশবাসী হতচকিত,বিমূঢ় ও যুগপৎ হয়েছিল শোকাচ্ছন্ন ৷

শ্রী অরবিন্দ বলেছেন— 

            '১লা মে শুক্রবার১৯০৮,

জানিতাম না যে এই দিনই আমার জীবনের একটা অঙ্কের শেষ পাতা, আমার সম্মুখে এক বৎসরের কারাবাস, এই সময়ের জন্য মানুষের জীবনের সঙ্গে যতই বন্ধন ছিল,সবইছিন্ন হইবে, এক বৎসর কাল মানবসমাজের বাহিরে পিঞ্জরাবদ্ধ পশুর মত থাকিতে হইবে ৷আবার যখন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করিব,তথায় সেই পুরাতন পরিচিত অরবিন্দ ঘোষ প্রবেশ করিবে না, কিন্তু একটী নূতন মানুষ,নূতন চরিত্র, নূতন বুদ্ধি,নূতন প্রাণ, নূতন মন লইয়া নূতন কর্মভার গ্রহণ করিয়া আলিপুরস্থ আশ্রম হইতে বাহির হইবে ৷বলিয়াছি এক বৎসর কারাবাস, বলা উচিত ছিল এক বৎসর বনবাস, এক বৎসর 

আশ্রমবাস ৷ বৃটিশ সরকারের কোপ দৃষ্টির একমাত্র ফল, আমি ভগবানকে পাইলাম ৷'—

এই বিচার পর্বে ঘটে গেল এক নাটকীয় ঘটনা ৷একজন অভিযুক্ত বন্দী নরেন গোঁসাই রাজসাক্ষী (approver) হতে রাজি হল ৷ইংরেজ সরকার প্রতিশ্রুতি দেয় তাকে ক্ষমা প্রদর্শন করা হবে ৷বিনিময়ে নরেন গোঁসাই আদালতে স্বীকারোক্তি, সকল তথ্য জানাবে ও ইংরেজ সরকারের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে ৷এই সময় গোঁসাইকে অন্য বন্দীদের থেকে আলাদা রাখা হয় ৷কিন্তু শেষ রক্ষাহল না ৷দুই বিপ্লবী কানাইলাল দত্ত ও সত্যেন্দ্রনাথ বোস স্থির করলেন বেইমানীর মূল্য প্রাণ দিয়ে শোধ করতে হবে গোঁসাইকে ৷তারা দুজনে রাজসাক্ষী হতে ইচ্ছুক জানালেন কর্তৃপক্ষকে ৷ নরেন গোঁসাই এর সাথে সাক্ষাতের বন্দোবস্ত হল ৷কথা চলাকালীন হঠাৎ গুলির আওয়াজ ৷ গোঁসাই ছুটছে,পিছনে কানাই ও সত্যেন,তাদের পিছনে কারারক্ষী বাহিনী ৷গোঁসাই আহত হয়ে পথের ধারে ড্রেনের মধ্যে পড়ে যায় ৷কানাই ও সত্যেনের বিরুদ্ধে সংক্ষিপ্ত বিচার শুরু হয় ৷আত্মপক্ষ সমর্থনে অনিচ্ছুক

হওয়ায় তাদের ফাঁসি হয় ৷সকল দেশপ্রেমিকের চোখের জলে ধৌত হয়ে বীরের ন্যায় তাঁদের মৃত্যু হল ৷ গোঁসাইয়ের মৃত্যু মামলার উপর সামগ্রিকভাবে চূড়ান্ত প্রভাব বিস্তার করে ৷সে এমন সব বিবৃতি দিয়েছিল যা শ্রী অরবিন্দের বিপক্ষে নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারত ৷গোঁসাই একজন প্রধান সাক্ষ্য হতে পারত ৷

কিন্তু তার মৃত্যুতে তার বিবৃতি সাক্ষ্য হিসাবে পেশ করা যাবে না ,কারণ আসামী পক্ষ মৃত গোঁসাইকে কাঠগড়ায় জেরা করা যাবে না ৷অর্থাৎ তার বিবৃতি আইনের চোখে বাতিল ৷

কানাই ও সত্যেন রিভলবার কোথায় পেলো?সত্য ঘটনা জানা যায়নি ৷তবে অনুসন্ধান করে জানা যায় চন্দনগরের এক বিপ্লবী রিভলবার দুটি গোপনে জেলে বারীনের কাছে পৌছে দিয়েছিলো ৷ পদ্ধতি যাই হোক ,যে ভাবে বিশ্বাসঘাতকের মুখ বন্ধ হয়েছিল তা প্রশংসনীয় ৷

প্রাথমিক বিচারপর্ব ১৪ই সেপ্টেম্বর শেষ হল ৷৩৯জন অভিযুক্তদের মধ্যে ৩ জন কানাই,সত্যেন ও নরেন গোঁসাই মারা গেছে ৷বাকি ৩৬ জনকে শুশানী শেষ ৷তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো সংঘবদ্ধভাবে হিংসার আশ্রয় নেওয়া, ষড়যন্ত্র,গুপ্ত হত্যা প্রচেষ্টা, অন্তর্ঘাতমূলক কর্যাবলী,অবৈধ বিস্ফোরক তৈরী ইত্যাদি ইত্যাদি—এই সকল অভিযোগ প্রমানিত হলে সর্ব্বোচ্চ দণ্ড দিতে কোন বাধা থাকবে না ৷শুরু হল প্রধান বিচার কার্য ২৪পরগণা ও হুগলী জেলা দায়রা জজ মিঃ চার্লস পোর্টেন বীচক্রফট এর আদালতে ৷

সাক্ষ্য হিসাবে ছিলো আনুমানিক ৪০০০ দলিল,৩০০ থেকে ৪০০ দস্তাবেজ,বিস্ফোরক,বোমা,ও অস্ত্রশস্ত্র আদালতে পেশ করা হল ২০০ ব্যক্তি সাক্ষী ৷মামলা শুরু হয় ১৯শে অক্টোবর,১৯০৮ থেকে ১৩ই এপ্রিল,১৯০৯, মোট ১৩১দিন ৷রায় প্রকাশ পায় ১৯০৯ সালের ৬ই মে ৷

৩২মুরারি পুকুর( ছবি সংগৃহীত) 
বিস্ময়কর এই আইন যুদ্ধ ৷ যার ফলাফলের উপর বহু ব্যক্তির জীবন মরণ নির্ভরশীল ৷এই মামলার প্রতিদিনের বিবরণ সারা দেশের লোক শ্বাস রুদ্ধ আবেগের সাথে লক্ষ্য 

করত ৷ এই মামলায় জন্য যে প্রচুর খরচ তা সহজেই অনুমান করা যায় ৷

শ্রীঅরবিন্দের বোন সরোজিনী Defence fund গঠন করেন ৷দেশের দূরদূরান্ত থেকে জনসাধারণ অর্থ সাহায্য করে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৷

মামলার বিচারক ছিলেন বীচক্রাফট সাহেব ৷ তিনি ১৮৯০ সালে শ্রীঅরবিন্দের সাথে ভারতীয় সিভিল সার্ভিস (I.C.S) পরীক্ষায় একই সাথে উত্তীর্ণ হন ৷ পরীক্ষায় শ্রীঅরবিন্দ সাহেবের তুলনায় ভালো ফল করেন ৷ দুজনেই কেম্ব্রিজের ছাত্র ৷

সরকারপক্ষ মাদ্রাজের সুপ্রসিদ্ধ ব্যারিস্টার ইয়ারডলি নর্টনকে এই মামলায় নিযুক্ত করেন ৷নর্টন ছিলন দায়রা মামলায় দুর্ধর্ষ,মানসিক চাপে বহু সাক্ষী বশ্যতা স্বীকার করত ৷

শ্রীঅরবিন্দ ও অভিযুক্তদের পক্ষে

উদীয়মান এক বিখ্যাত ব্যারিস্টার

চিত্তরঞ্জন দাশ দায়িত্বভার গ্রহন 

করেন ৷ শ্রীঅরবিন্দের সাথে তার সম্পর্ক ছিলো নিবিড় ৷রাতদিন পরিশ্রম করে বিনা পারিশ্রমিকে অদ্ভুত অধ্যাবসায়ে মামলাটি পরিচালনায় আত্মত্যাগের এক নজির সৃষ্টি করেন ৷ চিত্তরঞ্জন দাশের আবির্ভাব, শ্রীঅরবিন্দের স্বপক্ষে মামলার গতি ঘুরিয়ে দিয়েছিলো ৷ তার সওয়াল ভাষণ দীর্ঘ আটদিন ব্যাপী 

চলেছিলো ৷ আইনের দুনিয়ায় এই সওয়াল অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে ৷এই মামলা তাকে খ্যাতির শীর্ষে তুলে ধরে এবং তৎকালীন অন্যতম শ্রেষ্ঠ আইনজ্ঞ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হন ৷ শ্রীঅরবিন্দের উদ্দেশ্যে সি আর দাশ বলেছিলেন—   আজ যিনি অভিযুক্ত তিনি শুধু এখানে নন, ইতিহাসের বিচারালয়ে বিচারপ্রার্থী ৷ বিতর্ক যে দিন কালের গর্ভে নীরব হবে,তিনি দেহত্যাগ করবেন, তার পরেও বিশ্ব তাঁকে মান্য করবে দেশপ্রেমের কবি,জাতীয়তার নবী মানব প্রেমিক হিসাবে ৷

C R DAS ( ছবি সংগৃহীত) 
বিচারাধীন বন্দীদের দিনের পর দিন মামলা চলাকালে আদালতে পেশ করা হত ৷তাদের রাখা হত জালের মধ্যে ৷

আদালত ঘর ঘিরে থাকত সশস্ত্র পুলিশ ৷নর্টন আত্মরক্ষার জন্য গুলি ভর্তি পিস্তল নিয়ে আসত ৷ এমন গম্ভীর পরিস্থিতিতে বন্দীদের ব্যবহার ছিলো আশ্চর্যজনক ভাবে দেখার

 মত ৷ অরবিন্দ থাকতেন শান্ত,নির্লিপ্ত, আত্মমগ্ন—বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন ৷অন্যদের মধ্যে কোন চঞ্চলতা দেখা যেত না ৷তারা থাকত উদ্বেগহীন প্রফুল্ল ৷তাঁদের ভবিষ্যৎ দাঁড়িয়ে ফাঁসিকাঠে অথবা যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরে ৷অথচ তাঁরা একাগ্রমনে  পড়ে চলেছেন বঙ্কিম উপন্যাস, বিবেকানন্দের রাজযোগ বা sience of Religions,গীতা,পুরাণ, কেউবা ইউরোপীয় দর্শন ৷

বিচারের রায় ১৯০৯ সালের ৬ই মে প্রকাশিত হবে ৷ঐদিন যাতে কোন গণ্ডগোল হাঙ্গামা না হয় তার জন্য ছিলো ব্যাপক পুলিশি ব্যবস্থা ৷

বন্দীদের আদালত কক্ষে আনা হল ৷ কিছুক্ষণ পরে দণ্ডাদেশ ঘোষনা হল ৷ বারীন ও উল্লাসকর এর মৃত্যুদণ্ড, দশজনের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর, সাতজনের দ্বীপান্তর ও বিভিন্ন মেয়াদী কয়েদবাস ৷ বাকি সতের জনের বেকসুর খালাস —এর মধ্যে ছিলেন শ্রীঅরবিন্দ ও নলিনীকান্ত গুপ্ত ৷অবশ্য আপীলে বারীন ও উল্লাসকর এর মৃত্যুদণ্ড মুকুব হয়ে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর ধার্য হয় ৷ দণ্ডাদেশের কঠোরতা সত্ত্বেও শ্রীঅরবিন্দের মুক্তিতে দেশে অনন্দের সাড়া পড়ে গিয়েছিল ৷শ্রীঅরবিন্দ সহ অন্যান্য মুক্ত অভিযুক্তদের মাল্যদান সম্বর্ধনার মাধ্যমে সি আর দাশের বাড়িতে আনা হয়,সেখানে ছিলো খাওয়া দাওয়া ও রাজকীয় অভ্যর্থনার আয়োজন ৷এই সব আনন্দ উল্লাসের মধ্যে শ্রীঅরবিন্দ ছিলেন ব্যাহত অবিচলিত ও উদাসীন,দৃষ্টি ছিলো গভীর ৷

শ্রীঅরবিন্দের কারা কাহিনী —

                     

                    ( চলবে পরবর্তী শেষ পর্বে...)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ