বিশ্ব গোলাপ দিবস ২২শে সেপ্টেম্বর || অলিপা পাল




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

 

বিশ্ব গোলাপ দিবস ২২শে সেপ্টেম্বর

অলিপা পাল

(ক্যানসার রোগী'র সুস্থতা কামনায়)

___________________________________

ফ্লাইটের সিটে চোখ বন্ধ করে বসে আছে রাহুল ৷ একটু পরেই মুম্বাইএর রাণওয়ে দিয়ে ছুটবে প্লেন ৷আবেগে গলা বুজে আসছে ৷সেই মুম্বাই দীর্ঘ তিন বছর পর ফিরে আসা ৷ মাল্টিন্যাশানাল কম্পানির সামান্য পদের চাকরি ছেড়ে চলে গিয়েছিল রাহুল ৷আজ ফিরছে প্লেব্যাক সিঙ্গার হয়ে ৷ টানা সাত দিন পরপর রেকডিং ৷ মাঝে পনেরো দিন আত্মীয়স্বজনের সাথে কাটনাে, দিশার সাথে রেজিস্ট্রী সেরে উড়ে যাবে মধুচন্দ্রিমা বনাম লণ্ডনে স্টেজ শো দুর্গপূজার মরশুমে ৷ অথচ দিশাকে একদিন রাহুল সরিয়ে দিয়ে ছিলো জীবন থেকে,অনেক অসম্মান করে ৷ দিশা রাহুলের কলিগ আবার সহপাঠী ৷ এক সাথে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ৷ ইঞ্জিনিয়ারিং রাহুল কোনদিন পড়তে চায়নি,ওর নেশা ভালোবাসা আবেগ অনুভূতি সব কিছু গান ৷কিন্তু রক্ষণশীল পরিবারে গান গাওয়া যাবে না ৷ রাহুলের পরিবারে সকলেই প্রায় ডাক্তার ইঞ্জিনিয়র,তাই পরিবারের ঐতিহ্য বজায় রাখতে বাধ্য ৷ ছ'বছরের চাকরি জীবনে সে হাপিয়ে উঠেছিলো,মনে হত তখনি অবসর নিলে ভালো ৷  কাজের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে সে কাজে সাফল্য আসেনা, তা ভালো করেই জনতো রাহুল ৷ বসের হুকুম, সহকর্মীদের রেষারেষি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরে হতাশার জন্ম নেয় ৷ রাহুল সমস্ত কথা জানাতো কলকাতাবাসী ডাক্তার দাদাকে ৷ বছর তিন আগে পূজার ছুটিতে যায় দাদা'র কাছে ৷ সেখানেই সাতদিন প্রচণ্ড জ্বরে বিছানা নেয় ৷অনেক রকম রক্ত পরীক্ষার পর দাদা জানায় রাহুলের ক্যানসার ৷ হাতে আর আট দশ মাস আয়ু ৷উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দিশা'র সাথে বিবাহিত জীবনের স্বপ্ন সব চোখের সামনে ওলটপালট হয়ে গেলো যেন ৷ দিন কয়েক খাওয়া ঘুম বন্ধ ৷শুধুই উথাল পাথাল চিন্তা ৷ 

হঠাৎ রাহুল ভাবলো সে তো এত দিন মরেই ছিলো ৷ নিজের ভালোলাগাকে তো কোনদিন প্রাধান্যই দেয়নি, অন্যের ইচ্ছায় প্রাণে বেঁচে ছিলো৷ আর তো ওর জীবনের কোন বাঁচার আশা নেই,তবে যে ক'দিন বাঁচবে নিজের মত স্বাধীন ভাবে কেনো নয় ! ইমেল করে রেজিগনেশন দিলো চাকরিতে ৷ দিশার সাথে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করলো এমনকি ফোনের সিম বদলে ফেলল ৷শুরু হল গানের চর্চা ৷গ্রাম মফস্বল শহর পাহাড় যেখানে ডাক পেয়েছে ছুটেছে নেশার মত গান গাইতে হয়তো খোলা মাঠে ত্রিপল টাঙানো মঞ্চে আবার কখন অডিটোরিয়ামে ৷ সুযোগ এলো টিভি সিরিয়ালে টাইটেল সং গাওয়ার ৷ এভাবেই চলে গেছে আড়াই বছর ,এসেছে সেই মহেন্দ্রক্ষণ মুম্বাইতে হিন্দি সিনেমায় প্লে ব্যাক সিঙ্গারের সুযোগ ৷ রাহুলের পাশে সবসময় যারা ছিলো সেই দাদা বৌদির অনুমতি ৷ দাদা'র থেকে জানতে চাওয়া ওর শরীরের এখন কন্ডিশন কেমন? ওর তো নিজেকে কখন অসুস্থ অনুভব হয়না,হয়তো এতদিন গানের নেশায় মনে হয়নি ৷ দাদা সন্ধ্যায় চেম্বার থেকে ফিরলে রাহুল দাদাকে সব জানাতেই ,চা জলখাবার নিয়ে উপস্থিত বৌদি বলে উঠলো তোমার ক্যানসার হয়নি তোমার দাদা বানিয়ে বলেছে ৷ চাকরিতে অনিহা ডিপ্রেশনে চলে যাওয়া তোমার দাদা আর সহ্য করতে পারছিলো না আর কোন উপায় দেখছিলোনা তোমাকে বাঁচানোর ৷ বাকরুদ্ধ রাহুল কি করবে এখন !কি করা উচিত ওর !দাদা'কে জড়িয়ে ধরে কান্না ছাড়া আর কি বা করতে পারে ! অস্পষ্ট ভাবে দাদা'কে বলল তবে এত ওষুধ যে খেতে দিয়েছিলি !দাদা হেসে ওর পিঠ চাপড়ে বলল ওগুলো ভিটামিন, কোন ক্ষতি হবে না ৷এসব ঘটনা সবই দিশা জানে,বৌদি'র কথা শেষ না হতেই দাদার মোবাইলে ফোন বেজে উঠলো ৷ টেবিলের উপর রাখা ফোনে দিশার নাম ভেসে উঠছে! দাদা ফোন স্পিকারে দিলো ৷ দিশা জানালো এক সপ্তাহ পরেই রাহুলের গানের রেকডিং মুম্বাইতে সুতরাং ফ্লাইটের তিনটে টিকিট দিশা মেল করে পাঠাচ্ছে ৷ দিশার কণ্ঠস্বর রাহুল চোখ বন্ধ করে অনুভব করলো ৷

প্রেম-ভালবাসা-বন্ধুত্বের সঙ্গে গোলাপ ফুল অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে। তবে ভ্যালেন্টাইন্স দিবসের রোজ ডের সঙ্গে  ২২শে সেপ্টেম্বর রোজ ডে'র কোন মিল নেই ৷যাঁদের জীবনে শুধুই মৃত্যুর ছায়া। যাঁদের জীবনে বাঁচার রসদ তলানিতে। তারপরেও যাঁরা জীবনযুদ্ধে ফিরে আসে লড়াকু মানসিকতা থেকে। কর্কট রোগের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে, আজকের দিন তাঁদের জন্য। ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব গোলাপ দিবস (World Rose Day) বা ওয়ার্ল্ড রোজ ডে কুর্নিশ জানানো সেই সব ক্যান্সার ক্রুসেডারদের (Cancer Patients) যাঁরা রোগের কাছে হার মানতে শেখেননি। আজ তাঁদের কার্ড দিয়ে, গোলাপ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর দিন ৷ প্রার্থনা করা হয়, যাতে লড়াইয়ের শেষে তাঁদের জীবন গোলাপের নরম পাপড়ির মতোই পেলব, মসৃণ, জয়ের সুগন্ধে ভরে থাকে। 

জরায়ু ক্যান্সার নিয়ে ১৪ দিন হোম আইসোলেশনে থেকে করোনা মুক্ত হলেন শতায়ু বৃদ্ধা। মধ্যপ্রদেশের খরগাঁও জেলার এই ঘটনায় করোনামুক্ত রুক্মিণী চৌহান এখন গোটা রাজ্যের অনুপ্রেরণা। রুক্মিণী চৌহান বিশ্বের সবেচেয়ে বৃদ্ধ করোনা মুক্ত ব্যক্তি। গত ২১ জুলাই তাঁর সংক্রমণ ধরা পড়ে। কিন্তু তাঁর কোনও উপসর্গ ছিল না। তাই বাড়িতেই পৃথক ঘরে তাঁকে আইসোলেশনে রাখা হয়। যেহেতু উনি শতায়ু এবং জরায়ুর ক্যান্সারে ভুগছেন, তাই বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল তাঁকে।

ক্যান্সার হলেই মৃত্যু, সব শেষ হয়ে গেল— এই ধারণা মন থেকে দূর করতে হবে। দ্রুত নির্ণয় হলে এবং ঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে চিকিৎসা করালে ক্যান্সারকে সঙ্গে নিয়েই ভালভাবে বেঁচে থাকা যায়। নতুন করে চিহ্নিত হওয়া ক্যান্সার আক্রান্তদের এই বার্তা দিয়ে মনে উৎসাহ ও সাহস জোগালেন ক্যান্সারকে হার মানিয়ে লড়াই করে চলা অন্য রোগীরা, অর্থাৎ ক্যান্সার সারভাইভাররা।  

কানাডার ১২ বছরের মেলিন্ডা রোজ ব্লাড  ক্যান্সারের এক বিরল রোগ অস্কিন টিউমারে আক্রান্ত হয়েছিল। অনেক লড়াইয়ের পর কর্কট রোগের কাছে অবশেষে হার মানে সেই কিশোরী। রোজকে স্মরণ করেই আজ বিশ্ব গোলাপ দিবস। রোজের জীবন বলছে, যতদিন সে বেঁচে ছিল ততদিন সে যুদ্ধ চালিয়ে গেছে। হার না মানা মনোভাব নিয়ে। রোজের ছোট্ট জীবনের শেষ ছয় মাস ছিল ভীষণ যন্ত্রণার। একদিকে ক্যান্সার তাকে ক্রমশ গ্রাস করছে, অন্যদিকে সে জিততে মরিয়া। কিশোরীর এই জীবন যুদ্ধ আজও উদ্বুদ্ধ করে ক্যান্সার ক্রুসেডারদের।

তার সেই হার না মানা মনোভাব ধরা পড়েছিল তার লেখা ই-মেইল, কবিতা এবং চিঠিতে। যেখানে রোজ ইতিবাচক মন নিয়ে যুদ্ধ জয়ের গল্প শোনাত। এভাবেই তিনি বিশ্বের সমস্ত ক্যান্সার আক্রান্তদের কাছে আজও জীবন্ত। মেলিন্ডা যেভাবে মানুষের জীবনকে স্পর্শ করেছে, উৎসাহিত করেছে মারণরোগে আক্রান্তদের--- তা ভোলার নয়। বিশ্ববাসী যে তাকে মনে রেখেছে, এই বিশেষ দিন তারই প্রমাণ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. খুবই ভাল লাগল এই দিনটিকে স্মরণ করানোর জন্য তোমাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও ভালবাসা ।

    উত্তরমুছুন
  2. খুব ভালো লাগলো অলিপা
    এই সমস্ত বিষয় ভাবনা নিয়ে লেখা মনকে উদ্বুদ্ধ করে..চলুক কলম

    উত্তরমুছুন