পিরামিডের দেশে | ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী | ৬ষ্ট পর্ব | সোমা মুখার্জী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

 নীলনদের তীরে পিরামিডের দেশে

  (পর্ব ৬)

চলেছি যেন ইতিহাসের পাতার মধ্য দিয়ে..এই মিশর ভ্রমন এমনিএক অভিজ্ঞতা... যেন সেই পুরোনো মিশরীয় সভ্যতার মধ্যে পা রেখেছি।..

যাই হোক এবার আমাদের দ্রষ্টব্য Philae টেম্পল।

এটি অসওয়নের একটি মূল দ্রষ্টব্য স্থান..

এই মন্দিরটি আসলে নীলনদের মধ্যে একটি দ্বীপের মত। চার পাশে মন ভরানো নীল জল দিয়ে ঘেরা।মনের মধ্যে প্রশান্তি নিয়ে আসে।বড় বড় পাথরের জানলাগুলো দিয়ে বাইরের দৃশ্য মন কে মোহিত করে। মন্দির গাত্রে মিশরীয় ভাষায় খোদিত শিলালিপিতে পুরোনো যুগের ইতিহাস লিপিবদ্ধ।

গ্রীক ভাষায় 'philae' শব্দের অর্থ ' the end' মানে শেষ। এই মন্দিরটি ইজিপ্টের দক্ষিনের  প্রান্তসীমায় অবস্থিত। রোমের এম্পারারদের আমলে এই মন্দির নির্মান শেষ হয়।

মন্দিরটি দেবী আইসিস  এর উদ্দেশ্যে  উৎসর্গীকৃত। জানা যায় দেবী  আইসিস এর স্বামীর নাম ওসিরিস। এদের সন্তান হোরাস।প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্যে সংস্কৃতিতে এই নামগুলি বহুল পরিচিত। শেকসপীয়রের ট্রাজেডির অনেক গল্পই এদের জীবনের গল্প নিয়ে রচিত।শোনা যায় দেবতা ওরিসিস কে তার ভাই সেঠ খুন করে একদম টুকরো টুকরো করে ফেলে... তখন দেবী আইসিস এই টুকরো গুলিকে সংগ্রহ করে তাঁর জাদুশক্তির প্রভাবে পুনরায় তাকে প্রাণ দান করেন। তারপর তাদের সন্তান হোরাস এর জন্ম হয়। আইসিস এর কাছে হোরাস বড় হয়ে ওঠে এবং পরে সম্মুখ যুদ্ধে সেঠ (seth) কে পরাজিত করে ওরিসিস ওপর অত্যাচারের প্রতিশোধ নেয়।

প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্যে আইসিস একটি গুরুত্বপূর্ন চরিত্র। ওরিসিস কে নতুন জীবন দেওয়া এবং হোরাসের জন্ম দেওয়ার পর থেকে তাকে জীবনদাত্রী দেবী রূপে কল্পনা করা হয় এবং রাজাদের রক্ষাকর্ত্রী হিসাবেও স্থান দেওয়া হয়।

দেবী আইসিস প্রাচীন গ্রীক সংস্কৃতিতে Mother Of   God নামেই বিখ্যাত। রোমান যুগে এই চরিত্রটি প্রচুর ভক্তি শ্রদ্ধার সাথে পূজিত হত। 

১৯৬০ সালে যখন অসওয়ান ড্যাম তৈরী হচ্ছিল তখন এই মন্দিরটি প্রায় জলের তলায় চলে যাচ্ছিল। কিন্তু সৌভাগ্য ক্রমে মিশর গভর্মেন্ট এবং Unesco র চেষ্টায় এটিকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। দশ বছরের চেষ্টায় মন্দিরের প্রত্যেক অংশ কে ব্লক হিসাবে তুলে আবার এটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। না হলে অসম্ভব সুন্দর এই প্রাচীন স্থাপত্য দেখবার সুযোগ আজ আমাদের হত না।

আমাদের গাইড শরীফ বলে ইজিপশিয়ান ছেলেটি ধীরে ধীরে আমাদের এই বারো জনের দলটির একজন হয়ে উঠেছে। প্রবল উৎসাহে সে আমাদের নিয়ে যেতে চেষ্টা করছে লুপ্তপ্রায় মিশরীয় সভ্যতার ইতিহাসের পাতায়...অতীত দিনের পারে স্মরণ সাগর ধারে...

                    (চলবে)


পূর্ববর্তী পর্ব পড়ুন ....

প্রথম পর্ব

দ্বিতীয় পর্ব

তৃতীয় পর্ব

চতুর্থ পর্ব

পঞ্চম পর্ব 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ