পোস্ট বার দেখা হয়েছে
আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস উপলক্ষ্যে বিশেষ প্রতিবেদন: "শান্তির জন্য শিক্ষা"; লিখছেন , ড: বিরাজলক্ষী ঘোষ মজুমদার

শান্তি হলো একটি অর্জন সাপেক্ষ মূল্যবোধ।শিশুর বৌদ্ধিক ও প্রাক্ষোভিক বিকাশের মিথষ্ক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই এটি অর্জন সম্ভব।শান্তি হলো একধরনের আচরণ যা ব্যাক্তিকে অন্যের সঙ্গে সংযোগ সাধনের ক্ষেত্রে ঐক্য মূলক মনোভাব বজায় রাখতে সাহায্য করে।এর ভিত্তি হল পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ও ন্যায় বিচার।এটি এক ধরনের প্রক্রিয়া যা মানুষের মধ্যে সঠিক মনোভাব দৃষ্টিভঙ্গি ও আদর্শের বিকাশ ঘটায়।
অন্যদিকে শান্তির জন্য শিক্ষা হলো একটি প্রক্রিয়া যা আন্ত:ব্যক্তিক, আন্তরব্যক্তিক,জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে দ্বন্দ্ব নিরসন এবং শান্তির পরিবেশ সৃষ্টির জন্য শিশু,যুবক ও পরিণত মানুষদের মধ্যে প্রয়োজনীয় জ্ঞান,দৃষ্টিভঙ্গি, দক্ষতা,মূল্যবোধ ইত্যাদির মাধ্যমে আচরণগত পরিবর্তন আনে এবং দ্বন্দ্ব ও হিংসার নিরসন ঘটায়।
অর্থাৎ শান্তির জন্য শিক্ষা হল একাধারে একটি দর্শন অন্নধারে একটি প্রক্রিয়া যার মধ্যে আছে কিছু দক্ষতা ,দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারা।পৃথিবীতে ধারণযোগ্য উন্নয়ন ও ভারসাম্যপূর্ণ শান্তির পরিবেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটি ব্যাক্তির মধ্যে প্রয়োজনীয় জ্ঞান,দক্ষতা,ধারণা ও মনোভাবের জাগরণ ঘটায়।এই দর্শন অহিংসা,ভালোবাসা ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়।এটি পরোক্ষভাবে সমস্ত হিংসার বাতাবরণ কে প্রতিহত করে এবং বিকল্প সুস্থ ধারণার বিখাশ ঘটায়।শান্তি হল মানুষের এক ধরনের ইচ্ছার প্রকাশ। এটি একটি যৌক্তিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি,যা চুক্তভিত্তিক ও রাষ্ট্র দ্বারা রক্ষিত ।এই শান্তির ধারণার প্রথম পাঠ পাওয়া যায় পরিবার থেকে ।এবং পরবর্তীতে বিদ্যালয় থেকে।এটি একটি সৃজনাত্বক ও গঠনমূলক চিন্তন প্রক্রিয়া যা শিশুর মধ্যে শিক্ষণ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে এক ধরনের নির্দেশনা দেয় যা শিশু ও তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের মধ্যে মেল বন্ধন ঘটায়।২০০১-২০১০ এই সময় কাল কে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ শান্তির সংস্কৃতি এর দশক বলে চিহ্নিত করে।

শান্তির জন্য শিক্ষা এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো:
১. সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক দ্বন্দ্ব ও বৈষম্য গুলির অপসারণ।
২. প্রতি মানুষের মানবিক মূল্যবোধ কে জাগ্রত করা। সাম্য,মৈত্রী, ন্যায়,সৌভ্রাতৃত্ব বোধ,সহযোগিতা ও সহমর্মিতার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ।
৩. পৃথিবীর বেশীর ভাগ মানুষই আজ ধর্ম,ভাষা,বর্ণ, জাতি, সংষ্কৃতি গত বৈষম্যের শিকার।এর হাত থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করা।
৪. ইউনেস্কো তার ফোর পিলার্স অব এডুকেশন এ উল্লেখ করেছে লার্নিং টু লিভ টুগেদার বা শান্তি পূর্ণ সহাবস্থানের শিক্ষা।প্রত্যেকে একে অপরের মূল্যবোধ ও ঐতিহ্য গুলিকে উপলব্ধি করা।এইটি যেমন মানুষের মানুষে তেমন আবার প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যেও কার্যকর হবে শান্তির জন্য শিক্ষার মাধ্যমে।
৫. মানুষ যাতে শান্তি পূর্ণ উপায়ে নিজের এবং অন্যের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে সামিল হতে পারে সেই মানবাধিকার সচেতনতা গড়ে তুলবে শান্তির জন্য শিক্ষা।
৬. শান্তির জন্য শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশ্ব দায়বদ্ধতার সৃষ্টি করবে আঞ্চলিক বৈষম্য ও প্রয়োজন কে মাথায় রেখে যাতে সমগ্র মানবজাতির সুষ্ঠু বিকাশ সম্ভবপর হয়।
৭. শান্তির জন্য শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মানুষে মানুষে পার্থক্যগুলো কে স্বাগত জানাতে,মিলগুলি নির্ণয় করতে এবং ধনাত্মক মানবিক সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে সহায়তা করবে।
৮. শান্তির জন্য শিক্ষা হিংসার উৎপত্তি ও প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে, প্রয়োগকারী এবং যার উপর প্রয়োগ করা হচ্ছে তার উপর কি কি প্রভাব পড়তে পারে সে সম্পর্কে উপলব্ধি করতে ও প্রয়োজনীয় পন্থা নিৰ্ণয় করে কিভাবে দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে শান্তি স্থাপন করা যায় তার অনুধাবনে সাহায্য করে।
১৯৪৬সনে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অধীনস্থ সংস্থা হিসেবে ইউনেস্কো প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি শান্তি ও নিরাপত্তার আন্তর্জাতিক নীতির উপর ভিত্তি করে সাধারণ শিক্ষার মধ্যে রদবদল আনে।এর মূল উদ্দেশ্য ছিল পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক থেকে মুক্তি,অস্ত্র প্রতিযোগিতা রোধ করা ও নিরস্ত্রকরণ কে উৎসাহিত করা।

3 মন্তব্যসমূহ
খুব সুন্দর লেখা !
উত্তরমুছুন
উত্তরমুছুনখুব সুন্দর ভাবে প্রকাশিত
ভীষণ গোছানো লেখা
সমৃৃৃদ্ধ হলাম
খুব সুন্দর হয়েছে আপনার লেখাটি
উত্তরমুছুন