শারদ সংখ্যা ২০২০ || মুক্ত গদ্য || বৈশালী গাঙ্গুলী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে


তোমায় আমায় মিলে
বৈশালী গাঙ্গুলী 

চারদিকে থৈ থৈ জল- নৌকো এসে ঠেকে ঘাটে, ঝোড়ো হাওয়ায় জলের মধ্যে ফেলে আসা মুহূর্তের হতাশা কান পাতলে শোনা যায়। 

বলা হয় নি কত কিছু ঘাসের ওপরে এক পা, দু পা এগিয়ে যাওয়ার সময় বড্ড সাধ হয়েছিল সেদিন- 'এমন করে যদি হেঁটে যেতে পারি সময়ের আলপথ ধরে।'
কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায় বসে টানা চারটে গান গেয়েছিলে যেমন করে।
যোগবলে গন্ধর্বের শান্ত, ধীর, মন্দাক্রান্তা ভাবের স্থবিরতায়- সাথে স্রোতস্বিনীর রিনিঝিনি সুরের মাদকতা ভরিয়ে দিয়েছিলে সেদিন। 
বিশ্বাস করো বলতে চেয়েছিলাম- 'আমার মরন যদি হয় এমন করে, শেষ ইচ্ছে হয়তো থাকবে না কোনো।' কিন্তু তাও বলতে পারি নি, তাই বেড়েছে জন্মের মতো ঋণ।

 বিদায় নেওয়ার বেলায় - বললাম যখন-'সুন্দর যা কিছু সাথে নিয়ে যাচ্ছি আঁচলে বেঁধে। তুমি দেখোনি- একবার আঁচল ঠেকিয়ে দিয়েছিলাম ফাঁকা সিঁথির ওপরে, যাকে আঙুলে জড়িয়ে বিভোর হয়েছিলে শেষ সন্ধ্যায়। 
পরম প্রাপ্তি এমন মুহূর্ত, যা কাটিয়েছি একান্তে দুজনে। যার স্বপ্ন চোখের পাতাকে ঝাপসা করে সময় অসময়। 

আর সেই নৌকোর মাঝির গান, উদাস হয়ে ঘিরে থাকে অনাবিল আনন্দের পরাগরেণু মেখে। অমৃতের এক বিন্দু রসে সিক্ত ঠোঁট গেয়ে ওঠে সাধনা -
"আমি তোমারি সঙ্গে বেঁধেছি  আমার প্রাণ, সুরের বাঁধনে। তুমি জান না, আমি তোমারে পেয়েছি অজানা সাধনে॥
সে সাধনায় মিশিয়া যায় বকুলগন্ধ, সে সাধনায় মিলিয়া যায় কবির ছন্দ-------তোমার অরূপ মূর্তিখানি ফাল্গুনের আলোতে বসাই আনি।".......গানের তানে সে কী অদ্ভুত উন্মাদনা॥"

দূরে তীব্র দৃষ্টি নিয়ে চাতক পাখি তাকিয়ে দেখে, কী ভীষণ নিস্পৃহতা ভাব আজ আমার চোখের বাইরে। 
যেন সন্ধান পেয়েছি- তৃষ্ণার নিবারক মন্ত্রবলে ব্রতী।

ভাল থাকা আর ভাল হয়ে থাকার অঙ্গীকার নিয়ে দিন-রাত, মাস, বছর ঘুরে বছর আসে রঙ বাহারে চুলে ধরে পাক। দীর্ঘশ্বাসের ঢেউ শূন্য ঘর ভরে দিয়ে যায়- 
গানের টানে হারিয়ে সর্বহারা 'আমি' নিজেকে 'তুমি'তে খুঁজে পায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ