শারদ সংখ্যা ২০২০ || গল্প || হেমন্ত সরখেল




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

হিপ-হিপ-হুররে
হেমন্ত সরখেল 
                           
-- মহা জ্বালায় এই কুতুটা! তুমি ওকে ডাকতে পারছো না?
                  দাড়ি কাটতে কাটতে একরাশ বিরক্তি ঝরে পড়লো নন্দদার গলা থেকে।      
-- আহা!--- বউদি রান্নাঘরে গ্যাসের সামনে দাঁড়িয়ে ফুটন্ত জলে চা পাতা দিতে দিতেই ছুঁড়লেন কথাটা-- 
-- নিজেই তো ঐ এস বিস্কুটগুলো খাইয়ে খাইয়ে এই দশা করেছ, এবার ম্যাও সামলাও!
-- বোঝো! হচ্ছে কুকুরের কথা উনি বিড়াল নিয়ে এলেন। ম্যাও আবার কী? কুতু কি আমার মিনি-পুষি? লেজখানা দেখেছো! ভাগ্যিস গোরাসাহেবগুলো চলে গেছে এদেশ থেকে - নইলে কি আর ও আমার কাছে থাকতো?
                কুতুর লেজটা যেন বের করা জিভের হ্যা হ্যা এর থেকে একটু বেশি পরিমানে দুলে উঠল। মালিকের মুখের প্রশংসায় আহ্লাদে আটখানা! লেজ মুড়ো নিয়ে দশখানা! সাধে কী আর সারমেয় বলি! 
-- হা ঠাকুর! কোন বাল্মিকীর ঘরে এনে ফেললে আমায়! এ ম্যাও মানে কি আমাদের লক্ষ্মী? এর মানে লাই দিয়ে মাথায় তোলা নির্বোধের অত্যাচার সামলানো। যেটা তোমার কুতু দিন বেলান্ত করে চলেছে!
কিছু বুঝলো নাকি? দোদুল্যমান লাঙ্গুল থামলো কেন? আবার ঘেঁসেও এল একটু যেন মালিকপক্ষের দিকে। সেটা লক্ষ্য করলেন যেন প্রভু।
-- আর তোমার পেয়ারের নক্খী! সে পাতে মুখ দিলে কোন দোষ হয় না,তাই তো?আরেকটু হলে সেদিন ভোলা মাছটা পাত থেকে মুখে তুলে ফেলেছিল আর কি…
-- একদম না! ও মাছ নিতেই চায়নি। তুমি খাচ্ছো,ওকে দিচ্ছ না,ও তাই থাবাটা দিয়ে তোমার হাত ছুঁয়ে এটা বোঝাতে চাইছিল। কপালটা মন্দ বেচারীর, ওর ইশারাটাই তোমার বদ্ধ ঘটে ঢুকলো না।
-- আরিব্বাস! তাই নাকি! ও ইশারা করছিল? আমিই বুঝিনি??? এভাবেও পক্ষ নিয়ে গল্প বানানো যায় সেটা জানা ছিল না আমার।
ছবি সহযোগিতায় : উষসী রায়
-- দ্যাখো, সকাল সকাল মাথা গরম করিও না আমার। একটা অভদ্র কুকুর যার কোন সহবত শিক্ষা পর্যন্ত নেই তার জন্য তুমি মা ষষ্ঠীর বাহনের বিরুদ্ধাচরণ করছো?
মা ষষ্ঠী! কথোপকথনে দেবীর প্রবেশে থমকালেন দাদা। এবার আর কথা বলা যাবে না। এই সংসারসমুদ্রে মায়ের জাতেরা এককাট্টা। দেবী'রা কারনে-অকারনে এনাদের লিড করেন। একে অপরের ঢাল। দাদা চুপ করে গেলেন। কোথাকার স্রোত কোন পারে ধাক্কা খায় কে জানে!তবু একবার মিনমিনে গলায় কিছু বলার চেষ্টা করতেই বৌদি তেড়েফুঁড়ে উঠলেন--
-- থাক। ঘাসের মুথো তোলা বন্ধ করে দুজনে গুটি গুটি পায়ে বাজারটুকু করে দিয়ে আমায় উদ্ধার করো। প্রতিদিন সকালের এই এক জ্বালা, একে রামে রক্ষে নেই আবার সুগ্রীব দোসর, কোন কালে যে বাকি-বকেয়া খেয়েছিলাম তোমাদের! আর পারি না বাপু...
                       গজ গজ করতে করতে বৌদি সেন্টার টেবিলের ওপর চায়ের কাপ আর কুতুর বরাদ্দ দুটো এস বিস্কুট সপাটে নামিয়ে রেখে ফিরলেন রসোইঘরের পানে। একবার সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিশ্বাস পড়ল যেন নন্দদার! অপেক্ষমান কুতুকে বললেন--
-- কী বুঝলি! যেতেই হবে। জন্মিলে বাজার করিতে হবে, হাতলহীন বাঁচিয়াছে কে কবে? সে ব্যাগেরই হোক কিংবা টিউবওয়েলের অথবা জীবনের, তোমাকে ধরে রাখতেই হবে। প্রয়োজনে চাপ দেবে আবার থেমে যাবে, কিন্তু রাখতে হবে ধরে। নইলে খাবার পাবে না, জল পাবে না, প্রাণ বাঁচবে না।
                শুরুর দিকটায় একটু উচ্চগ্রামে উঠিয়ে রাখলেও গলার স্বর অন্তে খাদে ঝুলে এল।
-- ম্যালা কোবতে শিখেছ! আমার মুখ খুলিয়ো না সক্কালবেলা কিন্তু! আমি কোবতে শুরু কল্লে তোমার মরাপাঁচালি ভুলে যাবে। চট করে চাড্ডি বাজার করে আনো।
দাদার নিশানায় ভুলচুক হয় না। জবরদস্ত রিটার্ণ শটটাও এল বৌদির, রান্নাঘর থেকে। পরিবেশ আয়ত্বে রাখতে কলাকৌশলে মহারথী দাদা। দেবীকে চটিয়ে কে কবে শান্তিতে থেকেছে! দাদার মুখে মুখে কবিতা বানানো যে বৌদির চূড়ান্ত অপছন্দ সেটি অজানা নয়। তাই পরিবেশ শান্ত রাখতে, বৌদিকে জেতাতে, দাদার ছন্দ কাটা। এটাতেই হয়তো দাদার তৃপ্তি। চা শেষ করে বাজারে'র ব্যাগ হাতে দাদা অন্য কোর্টে বেরোলেন ফেদার ওড়াতে। সাথে বংশবদ কুতু। সকাল সকাল ডিফিট-এর পর একটু মিইয়ে আছে যেন।
                 চারশো বাহাত্তর মিটার লম্বা রাস্তাটা ষোলো ফিট চওড়া। দুপাশে আবাসিক। এটাই আমাদের পাড়া। দাদার বাড়ির উল্টোদিকে একটা টাইমকল। তার ওপিঠের খালি জায়গাটাতে উঁচু করে তৈরি হয়েছে একটা রোয়াক। বসলে,প্রায় জন পঞ্চাশ বসা যায়। তার ওপাশে গুপ্তিদের বাঁশঝাড়টা শুরু হয়েছে। সেটা শেষ হয় ছাব্বিশ ফ্যামিলির এরিয়ায়। এই রোয়াকটাই আমাদের ক্লাব। পিচের রাস্তায় ক্রিকেট। চারকোণা কাঠের স্ট্যান্ডের ওপরে রেখে ক্যারাম। কেডস্ পায়ে তিন নম্বর বলে ফুটবল। চুন দিয়ে দাগ কেটে ব্যাডমিন্টনের কোর্ট, কুয়াশাবৃত শীতের রাতে হ্যা হ্যা নোলাপূর্তি দাদার আনা নলেন গুড়ের গরম রসগোল্লায়। আর ফি-সাঁঝে বৌদির নিত্যনতুন গরমাগরম টিফিন।
                   ফিট পাঁচেকের নন্দ'দা। নধরপানা গড়ন। অ্যাতো ফর্সা যে বে-পাড়ার ছেলে'রা ওনাকে দেখলেই পেছন থেকে লাল টমেটো বলে ওঠে। অবশ্য দাদার সাথে সামঞ্জস্য রাখা উচ্চতার বৌদি, তাতে খুশিই হন। দাদাকে ঘন ঘন চা বানিয়ে খাওয়াতে দেখলেই আমরা বুঝতে পারি, আজ কেউ আবার দাদাকে লাল টমেটো বলেছে বৌদির সামনে। ফর্সা দাদার জন্য গর্বিত আমাদের বৌদি।
                    নন্দদা নিঃসন্তান। সারমেয় কুতু,মার্জার লক্ষ্মী এবং বৌদি, নন্দদার এই সংসার। সরকারী চাকুরে, তবে কেউ কোনো মাসে রেগুলার অফিস যেতে দেখেছি কি না সন্দেহ আছে। শুধু, মাসের প্রথম সপ্তাহের দু-চারদিন কেতাদুরস্থ নন্দদাকে দেখতে আমরা অভ্যস্ত। ঐ টুকুই। বাকি সারা মাস আমাদের সাথে পাড়ায় ক্যারাম, ক্রিকেট, ফুটবল টুর্নামেন্ট, ব্যাডমিন্টনে ই দাদা ব্যস্ত। নেশা বলতে মাছ ধরা, ঘুড়ি ওড়ানো আর লোকের পেছনে লাগা। উনি ছাড়া পাড়ার কোনো অনুষ্ঠান! না বাবা, ভাবা ই যায় না! বৌদি অমায়িক, মাতৃস্নেহ ঝরে পড়ছে। আমাদের জন্য কয়েক ঢোক জল বেশি খেতে দেখেছি বৌদিকে। বেশ কয়েকবার। স্নেহের পরাকাষ্ঠায় দাদা হেরে ভূত। 
                    গেলবারেই তো! গোবরাপুকুর বয়েজ ক্লাবে আন্ডারহ্যান্ড ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। একদিনেই নিষ্পত্তি। আট টিমের নকআউট টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছি আমরা হেঁদিয়ে-ভেঁদিয়ে, কোনোক্রমে। বিপরিতে বুটিকপাড়া সমিতি। আমাদের কোচপত্নী হিসেবে দুপুরের পর বৌদিও রিক্সা চেপে খেলার মাঠে হাজির। গায়ে শাল, মাফলার জড়িয়ে বসলেন প্রাইজ ডিস্ট্রিবিউশনের টেবিলটার পাশে। সোনার বাউটি মোড়া মোটা হাতের ধাক্কায় দু'চারটে উচ্চিংড়েকে ছক্কা মারার মতো দু'চারবার উড়িয়ে চোখের সামনেটা সপাট ময়দান করে নিয়েছেন। কেউ আর সামনে দাঁড়াচ্ছে না। কেউ ভুল করে এসে দাঁড়ালেও ধাঁ করে তাকে টেনে নিচ্ছে পাশে,অন্য কেউ। নিষ্কন্টক বৌদির দর্শনাভিলাষ। সাত ওভারের খেলা। আমাদের জন-গণ-মন ক্লাবের দিলু ক্যাপ্টেন হিসেবে টসে হারলো। বৌদি মাঠের বাইরে থেকে চেঁচিয়ে বললেন--
-- তোর কালকের বেগুনিটা গেল রে দিলু!
                     টস যে কারো হাতে নেই সেটা বুঝতে ওনার বয়েই গেছে!
                     মাঠটাকে গোল করে ঘুরছেন আমাদের কোচ। ফিল্ডিং-এ কে কোথায় দাঁড়াবে, চেঁচিয়ে বলে দিচ্ছেন। কথা না শুনলেই ক্যাপ্টেন চেঞ্জ হয়ে যেতে পারে। দিলুও সেইমতো দাপট দেখাচ্ছে। দাদা মাঠের বাইরে থেকেই কখনো কভারের, কখনো ডিপ মিড উইকেট, কখনো লং অফ আবার কখনো গালি'তে দাঁড়ানো ফিল্ডারকে এগিয়ে পিছিয়ে জায়গা স্থির করাচ্ছেন। বোলার বল করতে ছুটলেই-- স্টেডি স্টেডি, মুভ মুভ বলে আমাদের উদ্দেশ্যে তর্জন করে উঠছেন।
                    সাত ওভারে ওদের রান সাকুল্যে বেয়াল্লিশ। আমাদের তেতাল্লিশ করতে হবে। ঠাণ্ডা বেশ। বিকেলের আলো মরে আসছে। রানটা এই স্যাতসেঁতে পিচে অনেক। আলো কমে আসায় ওদের ব্যাটিংয়ের শেষ ওভারে, অলোকের দুটো বল নাকি ব্যাটসম্যান ঠাহর ই করতে পারেনি। আমরাও বল দেখতে পাবো না ভেবে, ওরা ভেতরে ভেতরে উৎফুল্ল। বৌদি প্লাস্টিকের চেয়ার ছেড়ে উঠে এসেছেন আমাদের কাছে। বল দেখতে আমাদের উইকেটকিপার পল্টুরও কষ্ট হচ্ছিল। ও জানালো সেটা। হাতে দশ মিনিট মাত্র। খেলা শুরু হবে। ও পাড়ার মান্যিগন্যিরা এসে বসেছেন টেবিলের কাতে। প্রাইজ দিতে হবে তো আবার!
                      সমস্যাটা ব্যাপক। নন্দ'দা হঠাৎ বললেন--
-- ব্যাট করতে যাবে পল্টু আর ন্যাটা। প্রথম চার ওভারেই রান তুলে ফেলতে হবে।
                   ন্যাটা!!! ও ধরে খেলতে পারবে? আনতাবড়ি ব্যাট চালায়! না বোঝে লাইন না লেংথ! দাদার কি মাথা খারাপ হলো নাকি!     
                   চোখটা আমাদের মুখের ওপর বুলিয়ে নিলেন কোচ। আমাদের অচম্ভিত অবস্থা দেখে মুচকি হেসে বললেন--
-- সব কাছে আয়, শোন মন দিয়ে যা বলছি।
                   বৌদি সমেত আমাদের মাথাগুলো ভাঙা পাকা কাঁঠালের ওপর বসা ডাঁশ মাছির মতো একত্রিত। দু'মিনিটের শলা-পরামর্শের পর পল্টু আর ন্যাটা ব্যাট হাতে ময়দানাভিমুখী। ইত্যোমধ্যে দাদার কানে কানে বৌদি যেন কী বললেন। দাদা সবেগে মাথা নাড়লেন, না - না - একদম না! তোয়াক্কা না করে বৌদি চেয়ারের দিকে, অসহায় দাদা রওনা দিলেন মাঠের বিশেষ অংশের দিকে। ওদের উইকেটকিপারের পেছনে। সেখান থেকে ইশারা করে ওয়াইড বোঝানো যায় আম্পায়ারকে। একটা অলিখিত নিয়মবহির্ভূত চাপ তৈরি করা নিয়ন্ত্রকের উপর, এই আর কী!
                    ন্যাটা স্ট্যান্ড নিচ্ছে। দু'বার তিনবার নিয়ে মিডল নিল। কোনো তাড়াহুড়ো নেই। হু হু করে কমছে উজালা। ছটফট করছে ফিল্ডাররা। ওরা জানে,জয় সুনিশ্চিত। তবু,শেষ করতে হবে তো! 
                    প্রথম বলেই চার। ন্যাটা চোখ বুজে ব্যাটটা এগিয়ে দিল। ব্যাটের চ্যাটালো বুকে সজোরে এসে লাগলো বলটা। আম্পায়ারের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে এক ড্রপ খেয়ে মাঠের বাইরে। পর পর চার বলে এলোপাথারি চালিয়ে খেলে চারটে চার। এ ন্যাটাকে আমরা চিনি না। পঞ্চম বল হাঁটুতে। ওরা চ্যাঁচালো। ন্যাটা এগিয়ে গেল লেগ অাম্পায়ারের দিকে। একটু সামনে ঝুঁকে বেশ জোরে বলল--
-- বোলিং অ্যাকশন দেখুন, হাত পেছন দিকে কতোটা নিয়ে যাচ্ছে? অান্ডারহ্যান্ড মানে কী? কাঁধের লেভেল ছাড়াচ্ছে! নো ডাকলেন না কেন?
                      মাঠের বাইরে থেকে ন্যাটার সাপোর্টে আমাদের সমবেত চিৎকারে ভ্যাবাচ্যাকা খেলো দুই আম্পায়ার। এল বি ডব্লিউ'র অ্যাপিলটা মাঠে মারা গেল। শেষ বল ব্যাটের কোণায় লাগিয়ে দু রান নিলো ন্যাটা।
                      পরের ওভারের প্রথম বলেই আউট। বলটা অফ স্ট্যাম্পে লেগেছে। লেগ আম্পায়ারের দিকে ব্যাট হাতে দৌড়ে গেল ন্যাটা।
-- আবার, আবার! দেখতে পান না নাকি? এভাবে খেলা হয়? বল চেঞ্জ করুন, নতুন বল দিন, অ্যাকে ক্যামবিস তার ওপর হলুদ। আপনি দেখতে পেয়েছেন বলটা? পেয়েছেন দেখতে? আন্ডারহ্যান্ডে অতো পেছন থেকে হাত আনার নিয়ম আছে? কিছুই তো জানেন না দেখছি!
                  নন্দ'দার সাজানো চালে,ন্যাটার তীব্র আক্রমণে দিশেহারা বেচারা লেগ আম্পায়ার। আন্ডারহ্যান্ডে বোলার তার হাত পেছনে যতটা নিয়ে যেতে পারবে সেটা নিয়মমাফিক কিনা, ঘনিয়ে আসা তমসায়, যেন একমাত্র স্থির করে দেবেন আমাদের কোচ! যেখানে লিখিত বা প্রচলিত কোনো নিয়ম নেই, অন্ততঃ আমন্ত্রণের চিঠিতে এটা লেখা না থাকার কারণে, ধন্ধ তৈরির নিয়মটাকেই নিয়ম বানিয়ে পেশ করাচ্ছেন নন্দ'দা। স্বভাবতই, এই প্যাঁচে ভ্যাবলা মেরে গেছে দুই আম্পায়ার। কমিটির মুরুব্বিদের অবস্থাও তথৈবচ।
                      ন্যাটা আউট, বুটিকপাড়া খুব খুশি। ন্যাটাকে অাম্পায়ারের দিকে যেতে দেখে ওরাও সেদিকেই দৌড়ে গেল। আমরাও দৌড় লাগালাম সেদিকে। দাদাও ছুটে এলেন। অন্ধকারে কতোগুলো মাথার তীব্র নড়াচড়া আর একরাশ হৈ চৈ ছাড়া মাঠের ভেতরের পরিবেশ দূর থেকে বোধগম্যহীন। হঠাৎ বৌদির চিৎকার--
-- শেম শেম! আম্পায়ারের দাদাগিরি মানছি না, মানবো না। গা জোয়ারি চলছে না, চলবে না। মানছি না, মানবো না। চলছে না, চলবে না।
ছবি সহযোগিতায় : উষসী রায়
 আওয়াজ পানে তাকিয়ে দেখি বৌদি দু হাত নেড়ে চেঁচিয়ে চলেছেন। আমরাও মাঠের মধ্যেই সুর মেলালাম। ধুন্ধুমার অবস্থা। ওদিকে আম্পায়ারকে ঘিরে জটলা। দাদা একবার টিমের ছেলেদের টানছেন একবার বেসামাল আম্পায়ারদের ওনার সয়ম্ভূ 'নিয়ম' বোঝাচ্ছেন। সন্ধে চাদর টানলো ঝুপ করে।
                      ফিরছি সবাই হেঁটে, পাড়ার মুখে এসে বৌদি বললেন-
-- আমার সাথে আয়।
                      বাড়ির সামনেই একটা ল্যাম্পপোস্ট। জ্বলছে স্ট্রিট লাইট। ষাট ওয়াটে আর কতো আলো হবে! বৌদি সেখানেই দাঁড়ালেন। দাদা এগিয়ে গেলেন।
-- কী হয়েছে?
                       বৌদি উত্তর না দিয়ে গায়ের শালটা ডান হাত দিয়ে সরালেন। বাঁ হাত দিয়ে কোলের কাছে ধরে রেখেছেন উইনার্স ট্রফিটা।
আমরা দেখে হৈ হৈ করে উঠলাম। ব্যতিব্যস্ত দাদা হাত উঁচু করে আমাদের থামালেন। বৌদিকে বললেন--
-- এটা তোমার কাছে? কীভাবে? কেন?সেটাই করলে,যেটা পইপই করে বারণ করলাম? 
-- ওরা প্রথম ওভারে তিন রান করেছিল। আমরা আঠেরো। তাহলে কারা জিতল?খেলাই তো হলো মোটে এক ওভার। তাহলে? তোমরা যখন মাঠের মধ্যে ন্যায় চাইছিলে তখন দেখি একটা শুঁটকো টেবিল থেকে চুপচাপ ট্রফি দুটো তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ঘাড় ধরে ছোট্ট একটা পাক দিতে দুটোই দিয়ে দিলো আমায়। আমি ছোটোটা রেখে বড়োটা নিয়ে এলাম।
                   অকাট্য যুক্তি। অ্যাভারেজেও জয়টা তো আমাদেরই। এরপর আর আমরা দাদাকে কিছু বলতে দিইনি। সবাই মিলে চেঁচিয়ে উঠলাম-
    থ্রি চিয়ার্স ফর বৌদি। হিপ হিপ হুররে!!! 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ