শারদ সংখ্যা ২০২০ || গল্প || কথিকা বসু




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

মা
কথিকা বসু

( এক )

কাল সারারাত জেগে থাকার পর, ভোরের দিকে চোখটা একটু লেগে এসেছিল প্রতিমার। হঠাৎই কানে গেল ঢাকের বোল। ঘুম ভেঙে উঠে বসল প্রতিমা, তারপর দাঁত কিড়মিড় করে দেওয়ালে টানানো, মালাপরানো ছেলের ছবির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে, "আগের বছর, রাক্ষুসীটার, তোকে খেয়েও শান্তি হয়নি। এ বছর আবার আসছে, অন্য কাউকে খাবে বলে"। "মায়ের বোধনের দিন এসব কি বলছো?", পাশ থেকে বলে ওঠে অরুপ, প্রতিমার বর। "কেন কি ভুল বলেছি? আর কে মা? যে একটা মায়ের কাছ থেকে তার ছেলেকে কেড়ে নেয়, আমার চোখে সে মা নয়, রাখ্খুসী", ধরাগলায় বলে ওঠে প্রতিমা। অরুপ চুপ করে যায়, আসলে ও জানে, কথা বাড়িয়ে কোন লাভও নেই, গেল বছর পুজোয় ছেলেটা চলে যাবার পর থেকেই, এরকমটাই বলে প্রতিমা। অবশ্য প্রতিমারই বা দোষ কি, চোখের সামনে ছেলেকে চলে যেতে দেখলে কারই বা মাথার ঠিক থাকে, ও নিজেই তো কত কষ্টে সামলেছে নিজেকে! ছেলেটা যদি মায়ের পুজোর পদ্ম তুলতে গিয়ে, সাপের কামড়ে ওভাবে...মা এটা ঠিক করলেন না, ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে অরুপের।

( দুই )

অষ্টমীর সকাল। সবাই ব্যস্ত পুষ্পাঞ্জলি নিয়ে। অরুপও বাড়ি নেই, বাজারে গেছে। বাড়িতে একাই রয়েছে প্রতিমা, হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। এই সময়ে আবার কে, ভাবতে ভাবতে দরজাটা খুলতেই প্রতিমা দেখে, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রাজুর বয়সী, একটা ছেলে। ছেলেটাকে দেখে প্রতিমার বুকটা মুষরে ওঠে ব্যথায়। ছেলেটার জামাটা ছেঁড়া, চোখে মুখে খিদে-তেষ্টার ছাপ স্পষ্ট। "তুই কে বাপ? তোকে তো আগে কোনদিন গাঁয়ে দেখিনি", ছেলেটাকে জিগ্যেস করে প্রতিমা। "দেখবে কি করে? আমি তো অনেক দূরে থাকতাম। গেলবার পুজোর আগে, বন্যায় আমাদের ঘরবাড়ি, খেত সব ডুবে গেল আর মা-বাবাকে কাটল সাপে। তারপর থেকেই কাজের সন্ধানে এ গাঁ-ও গাঁ ঘুরি আমি, খুদকুঁড়ো যা মেলে তাই খাই"। ছেলেটার কথাগুলো শুনে মাথায় দপ করে আগুন জ্বলে উঠে প্রতিমার, মনে মনে ভাবে, রাক্ষুসীটা তাহলে শুধু ওর একারই নয়, এই ছেলেটার ঘরও ভেঙেছে। ছেলেটা বলে চলে, "তো সেরকমই আজ সকালে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ দেখা এক মাসির সাথে। সে বলল, তোকে এক জায়গায় নিয়ে যাব, যেখানে তোর কোন অভাব থাকবে না। তুই আবার মা-বাবা পাবি। আর ওদেরও তোকে বড্ড দরকার, বলে আজ তোমার ঘরের সামনে ছেড়ে গেল আমায়। তুমি আমায় থাকতে দেবে মাসি"? 

তুই চিনিস না মহিলাটাকে?

মাথা চুলকে বলে ছেলেটা, "না, তবে তাকে দেখতে, অনেকটা তোমাদের গাঁয়ের মন্ডপের দুগ্গাঠাকুরের মূর্তিটার মতো"।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ