পোস্ট বার দেখা হয়েছে
মাগো আনন্দময়ী,কলমে সোমা মুখার্জী
" শরত আলোর কমলবনে বাহির হয়ে
বিহার করে..যে ছিল মোর মনে মনে..."
শরতের অনিন্দ্য সুন্দর আবহ মনের মধ্যে এক অনন্য ভালোলাগার স্মৃতি ফিরিয়ে দেয়।নীল আকাশ জোড়া সাদাসাদা পেঁজা তুলোর মতো মেঘের নৌকো মন কে ভাসিয়ে দেয় পুরোনো স্মৃতির রাজ্যে । মনের মাঝে ফিরিয়ে দেয় সেই অবিস্মরণীয় আনন্দের দিনগুলো। শিউলি সুবাসে মাধবীলতার সুগন্ধে মনের মধ্যে কেমন যেন নস্টালজিয়া কাজ করে। ভেসে আসে হারিয়ে ফেলা কত পুরোনো দিন..জীবনের অঙ্গে অঙ্গে জড়িয়ে থাকা কাশ ফুলের মেখলা..কত শিউলি সৌরভে আকুল মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা কত স্মৃতির সরগম...
আমাদের বাড়ির গলির মুখেই ছিল একটি ফুটন্ত শিউলি ফুলের গাছ..সারাবেলা তার সুগন্ধে মন আকুল করত...ভোর বেলা উঠেই ছুটতাম গলির মুখে .. টুকরি ভরে কুড়িয়ে আনতাম ঝরে পড়া ফুল গুলি,চলত বিনি সুতোর মালা গাঁথা..
কি নির্মল কত সহজ সরল আনন্দ..অকারণ খুশি অপরিসীম ভালো লাগা ...যা আজকের দিনে দুর্লভ..
হাওয়ায় হাওয়ায় পুজোর গন্ধ ..পাড়ার মোড়ে মোড়ে প্যান্ডেল,সেই প্যান্ডেলের বাঁশে দড়ি টাঙিয়ে দোলনা বেঁধে ছোটদের দোল খাওয়া...সবুজ ঘাসে ঝিকমিকে রোদ্দুর পড়ে চারদিক উদ্ভাসিত ....আকাশে বাতাসে যেন ছুটির চিঠি মেলা আছে। উজ্জ্বল নীল আকাশ জুড়ে ঝকঝকে সাদা মেঘের দল.. কিসের খবর আনে..শারদলক্ষীর আবাহনে যেন মেতে উঠেছে বাঙলার প্রকৃতি।
পুজোর দিন গুলো আসার সাথে সাথে নতুন জামাকাপড়ের গন্ধ ভরিয়ে তোলে বাড়ির আবহাওয়া ছোটোদের মধ্যে আনন্দের ধূম পড়ে যায় কার কটা নতুন জামা হল তাই নিয়ে। বাবা মা দাদু ঠাকুমা মামা মাসি পিসি বড় দাদা দিদিরা কে কি দিল তাই নিয়ে..প্রত্যেক বার পুজোয় নতুন স্টাইল নতুন ফ্যাশন..হাকোবা ট্রিঙ্কল টেরিলিন ডেকরন ওয়াস অ্যান্ড ওয়্যার ইত্যাদি..বেলবটম প্যারালাল চ্যুজ প্যান্ট ইত্যাদি কত স্টাইলের নাম...মহানন্দে শুধু এই নিয়েই জল্পনা কল্পনা..
জামার সাথে ম্যাচিং চুড়ি মালা আরো কত কি..বাক্স ভরা সাজের জিনিস..পাউডার সেন্ট কাজল ফিতে কুমকুম ক্লিপ হেয়ার ব্যান্ড ইত্যাদি আর কত কি..
বাড়িতে কেউ এলেই একবার করে তাকে খুলে খুলে দেখানো..কোন জামাটা কে দিয়েছে...
এই ভাবে পুজোর আগেই সে সব জামাকাপড় দশ বার লোকে দেখে ফেলতো..
পঞ্চমী থেকেই ঢাকিদের আসা শুরু..আকাশে বাতাসে..পুজোর আমেজ..ষষ্ঠীর সকাল থেকেই ঢাক বেজে ওঠার শব্দে দেবীর আবাহন মনের মাঝে আনন্দের ঢেউ তোলে.. যাক পুজো তাহলে শুরু হয়ে গেল...
বড়েদের মধ্যেও সাড়া পড়ে গেছে..কত রকম খাবার দাবার এর আয়োজন..মা কাকিমা রা কোমোরে আঁচল জড়িয়ে পুজোর কাজে ব্যস্ত .. প্যান্ডেলের পিছনেই হয়তো কোনো বাড়ির দালান রক..সেখানে সারে সার তারা বসেছেন..কেউ বা ফল কাটে বড় বড় কাঠের থালায়, কেউ বা ধুনুচি সাজায় কেউ বরণডালা..
আর এক দিকে চলেছে ভোগের জোগাড়..
এই রকম কত শত ছবি যে মনের মধ্যে ধরা তার ঠিকানা..নেই..
মন্ডপে মন্ডপে নাগরদোলা পুতুল নাচ জলসা..আগমনী গানের আসর. ম্যজিক এ সব আর কত কিছু..উৎসব এর পরিপূর্ণ আয়োজন..
অষ্টমী সন্ধিপুজোয় একশো আট প্রদীপ এর আলোয় মায়ের আলোকিত মুখ...মায়ের শ্রীচরণে পদ্মের নিবেদন...
ভোগ নিবেদনের সময় বিশালকৃতি তালপাতার পাখায় মাকে ব্যাজন এসব কত কিছু মনের মধ্যে যেন অনির্বচনীয়ের আভাস আনে...যাকে ঠিক ভাষাতে ধরা যায় না...
এই হচ্ছে সেকাল আর একাল...
তারপর শারদ অর্ঘ্য প্রকাশিত হতো প্রতিবছর.. পুজোয় প্রিয় সঙ্গীত শিল্পীদের মনে রাখার মতো সব গান যার সুর আজ এই এতো বছর পরেও মনকে নাড়া দিয়ে যায়...কত পুজোসংখ্যা আনন্দবাজার দেশ আনন্দমেলা শুকতারা এসব পত্রিকা মুখের সামনে মেলে ধরে সময় কাটানোর অপূর্ব সে আনন্দ...
" হায়রে সেকাল হায়রে কোথায় চলে যায় রে
আজ একালের মরীচিকায় নূতন মায়ায় ভাসিতে"
এখন তো সব কিছু ই অন্য রকম ..থিমের পুজো..বর্ণময় আলোকসজ্জা...চাকচিক্য. ..নামজাদা ফাইভ স্টারে পুজোর মেনু...আবাসনে পুজো..পাড়ার পুজো..ক্লাব এর পুজো...আরো কতো কি..
প্রতিযোগিতার লড়াই..
তবু পুজো তো পুজোই মা আসছেন বছর পরে..
আনন্দে হৃদয়ে স্থান দিই..
মায়ের আগমনে পৃথিবী বিপদ মুক্ত হোক ...
"মাগো আনন্দময়ী নিরানন্দ কোরো না"
ফিরে আসুক...শান্তি এই অস্থির পৃথিবীতে..
6 মন্তব্যসমূহ
উত্তরমুছুনসত্যি দিদি মন চলে গেলো ছোটবেলার দিন গুলোয়
খুব সহজ সরল সাবলীল লেখা
ভালোবাসা অলিপা
মুছুনবিজয়ার শুভেচ্ছা রইল
ভালো থেকো
ভীষণ ভালো লাগল এই সেকালের পুজোর স্মৃতিচারণ । দিনগুলো যেন ছবির মতই ধরা দিল এই অপূর্ব লেখায়
উত্তরমুছুনঅনুপ্রাণিত হল কলম...
মুছুনকি যে ভালো লাগলো লেখাটা .... সত্যি সেসব দিনের উৎসব ছিল ছোটো ছোটো আনন্দ ঘিরে ❤️❤️
উত্তরমুছুনঅনেক ভালোবাসা দেবলীনা..সব সময় সাথে থাকো...অনেক উৎসাহ পাই
মুছুন