শারদ সংখ্যা ২০২০ || গল্প || সু কা ন্ত দে




পোস্ট বার দেখা হয়েছে


থমকে গেছে
 সু কা ন্ত   দে

রাজবাড়ির ঘড়ির কাঁটা স্থির। রাস্তাটা হঠাৎ-ই চওড়া হয়ে গেছে। আলু আশি থেকে একশো হয়েছে পাল্লা, ডিম সাড়ে চার থেকে ছয়, আর বাকি সব মোটামুটি যা ছিল তাই। বাজারে মানুষজন কম। সেই নির্দিষ্ট জায়গায় বসে দুই মাসি গুগলি ছেঁচছে। কাল ল্যাকটোজেন থ্রি নিয়েছি তিন প্যাকেট। ভাই এর জমজ ছেলে মেয়ে। পরের একুশ দিন আর পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। দোকানদার ফোনে বলছিল -- "একবার খুলবেন আমিই মাল বের করবো। আপনাকে কষ্ট করতে হবে না"। একটু থেমে আবার বলল-- "বাচ্চাদের খাবার দাদা, অমন করলে চলে"। আমি কি অন্যায় করলাম। যার হাতে বাড়তি টাকা নেই। তুলে রাখার ক্ষমতা নেই, সে কি পাবে না। রাজবাড়ির ঘড়ির কাঁটা স্থির। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই বাজারে গেছি। সে মুড়ি নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছে লাইনে। দূরত্ব রাখছে মানুষ। বাজারের ভারি ব্যাগ তুলে আনার সময় বলছিলাম সেই বৃদ্ধার ভারি ব্যাগ বয়ে দিক কেউ। শাড়ি পরার ধরণ, লাঠি ধরা, কুনুই এর ভাঁজে কাপড়ের ব্যাগ গলার চামড়ার ভাঁজ; কিন্তু কাছে যেতেই চোখে অবিশ্বাস আর ভয়ের ছাপ দূরে ঠেলে দিল। সেই যে পুরুষটি 'মা' বলে ডেকে নিয়ে গেছিল বৃদ্ধাকে, বর্ধমান স্টেশনে। কি কি যেন ভরে দিয়েছিল পেচ্ছাপের জায়গায়। টানটান থাকলে ত্বক। নাহলে চামড়া। এ তত্ত্বও খারিজ। সেই দিদা এখন একটা বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন। রাজবাড়ির ঘড়ির কাঁটা স্থির। ছোটবেলায় মা-কে কাছে পাইনি তাই এখনও খোকামো যায়নি আমার। দাঁত খিঁচনোর পরও জোর করে চুমু দিলে অভিমান গড়িয়ে নামে। থাকে না। এত বকবক করে সারাদিন। তিন-চার-পাঁচবার জিজ্ঞেস করে একই কথা, খেলি! খেলি! খেলি? রাগ হয়ে যায়। ইদানিং খেয়াল করছি মায়ের হাতের তালুটা কেমন আলগা পেলব হয়ে যাচ্ছে দিদার মতো।  আদর মেখে নিতে নিতে বলি যারা মা না থাকার কান্না জমিয়ে রেখেছে তারা স্বপ্ন দেখুক। মাকে জড়িয়ে ধরছে। গৃহবন্দির দিনগুলোতে ওইভাবেই ঘুমুক। উঠতে দেরী হোক। রাজবাড়ির ঘড়ির কাঁটাটা তো স্থির। বাবা কিছুতেই কানের মেশিন পরবে না। ধান শুনতে কান শুনবেই, সে নিয়ে ভুল মন্তব্য করবে আর রাগারাগি হবে নাতির সাথে। এ বি ডেভিলিয়ার্স, ক্রিস গেইল, যশপ্রিত বুমরার সাথে এ বি সি ডি মানে এভরি বডি ক্যান ডান্স গুলিয়ে যাওয়া কিছু অস্বাভাবিক নয়। তাছাড়া এখন তো রোজ বিকেলে আমি মহঃ শামি হলে ছেলে রাসেল, আমি বেন স্ট্রোকস হলে ও বুমরা। আমার স্ত্রীর বাবা এখনও বেশ শক্তপোক্ত। চোখে সানগ্লাস। মাথায় বিভিন্ন টুপি। ওনার বয়স বাড়ে না। ভালোয়-মন্দয় সে বাবাকে মনে করে। "আজ যদি বাবা বেঁচে থাকতো! আজ যদি বাবা বেঁচে থাকতো!"।  আমার তো বই পড়ে চলে যাবে। ওই মেয়েটাকে কিছুটা বেশি সময় দেওয়া উচিত? অন্তত স্বামীর সাথে বনিবনা ভালো নয় বা ডিভোর্সি বান্ধবীদের কথা ভেবে রাত্রে শোওয়ার সময় মশারি খাটিয়ে দেওয়া উচিত? খেয়ে ধুয়ে রাখবো থালাটা? সদ্য পুরুষালী কণ্ঠ নিয়ে ছেলে কথা বললে মনে করিয়ে দেবো, ওর মা ভোরে ওঠে আর সারাদিন খেয়াল রাখে ওর? তাই মায়ের ফেসবুক, হোয়াটস এপ আর ফোনে কথা নিয়ে ওর না ভাবলেও চলবে। এখনই কী ওর মা কে বলার সময় --"চলো,  একদিন পুরানো চিঠিগুলো খুলি। ওদের ভেতর ইমামবাড়া বা হংসেশ্বরী মন্দিরে যাওয়ার রাস্তা আছে। গিয়ে বসি। প্রথমদিনের মতো তাকাই তোমার দিকে। রাজবাড়ির ঘড়িটা স্থির। চুমুর ইচ্ছেগুলো ঘণ্টাধ্বনি হয়না আর। আমি কী ওকে বলবো -- তোমার আবির, প্রাপ্তির রোদে শুকনো। ডানা আছে। ওড়ে। ইনবক্সের আবির ভিজে। আমার বান্ধবীদের ওপর রাগ ক'রো না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ



  1. বলিষ্ঠ কলম
    মুগ্ধ হলাম

    শুভ শারদীয়ার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা

    উত্তরমুছুন