শারদ সংখ্যা ২০২০ || চিঠি || গীতাঞ্জলী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে


একটি চিঠি
গীতাঞ্জলী

প্রিয় শেখর, 

চিঠি লেখার অভ্যেসটা আর তেমন নেই, আগে অনেক চিঠি লিখতাম তোমাকে, যদিও সবটা দেওয়া হতোনা। আমার মনের যত অধিকার ভালোবাসা অভিমানী কথা, সবটা তোমাকে বলতে চাওয়ার স্বভাবে। ইদানিং সবটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। 
তবুও ভাবছিলাম অনেকদিন থেকে তোমাকে জানাবো,
 কিভাবে সময়কে হাতে মুঠো করে ধরে চলেছি, শুধুমাত্র তোমার ভাবনাকে সঙ্গে নিয়ে। 
 
মনেহয়, 
এটাই হয়তো আমার লেখা শেষ চিঠি,
 আমি হার মানতে শিখিনি কোনোদিন,
 বুকের ভেতরে সবকিছু চাপতে চাপতে এখন সব অভ্যাসে বদলে গেছে,
 আমাকে অসহায় করে তোমার চলে যাওয়ার ব্যস্ততাটা আজও মনে পরলে বুকের ভেতরে খাঁ খাঁ করে উঠতে থাকে। 
 মনেহয় চারপাশের থেকে হাজার মৃত্যুবাণ এসে আমার বুকটাকে বিদ্ধ করে রক্তাক্ত করে যায়। 
 আমার হাতের ছোঁয়া তোমার মনের গভীরে একটুও আলো দেয় না শেখর? 
 অবাক হয়ে যাই কখনও জানো? 
 কি করে ভালোবাসা এতোটা অক্ষমতায় বেঁচে থাকতে পারে! আমি তো শুধু তোমার সুরেই সুর মেলাতে জানতাম শেখর?  তুমি হারিয়ে গেলে কোনো অজানা পথিকের মতো! 
 
 আমার অপেক্ষা যেনো অনাহূত বেচারার মতো তাকিয়েই রইলো চাতক পাখির দৃষ্টি নিয়ে আকাশের দিকে,
তুমি ফিরলেনা শেখর! 
বাসি রজনীগন্ধা বেলি ফুলের পাশেই আমাদের গল্প ও জীবনটা আদিম হবে, বুঝে গেছি। 

যাইহোক, 
শেষবারের মতো আবার বলছি,
সেই দিন,, শেখর 
সেই কালো দিনটা!!
বিশ্বাস করো আমি লিখতে গিয়েও বারবার শিহরিত হয়ে যাই বারবার,,
আমাদের জীবনের পথ বদলে গেছিলো, টুকরো টুকরো করে ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছিলো আমাদের ভাগ্য নিয়তির আঘাতে। 

 সেদিন,,
  রাস্তায় বেলেমাটি রক্তে মাখা তোমার শরীরটাকে আমি টেনে তুলতে পারবো ভেবেছিলাম, কিন্তু,,,!!!
  থামাতে পারিনি আমার শরীরের চিৎকার ,যেখানে আরেকটু দুরে আমিও রক্তাক্ত ছিলাম। 
  বারবার এটাই বলছিলাম, তোমাকে যেনো কেউ হাসপাতাল নিয়ে যায়।
   যখন আমি চোখ খুললাম, তোমাকেই শুধু খুঁজছিলো এই চোখগুলো। 
 যন্ত্রনায় ঘিরে ছিলো আমার শরীর, কিন্তু তোমার নামেই আবারও জ্ঞান হারিয়েছিলাম হাসপাতালে। 
     শেখর, তুমি কেনো এতো সহজে হারিয়ে গেলে? প্রায় চার বছর পেরিয়ে গেলো সেই ঘটনার। 
     কতবার চেষ্টা করেছি তোমার সাথে,,, !!
      এর মধ্যে আমার বিয়েটাও হয়ে গেলো,, বছরখানেক পেরিয়েও গেলো। আগামীকাল সৈকত আমাকে নিয়ে যাবে কলকাতা। 
       তুমি কি করে এভাবে হতাশা করে রেখে চলে গেলে, 
       কিছুই কি বলার ছিলোনা? 
       কোনো অভিযোগ? 
       একবার এসে পারলে আমার দোষগুলো বলে যেও,
       অপেক্ষায় রইলাম। 


                  ইতি
        আজও শুধু তোমারই,
                   সুনন্দা
===========================
বিদেশ ফেরৎ লিয়ার বাবার আবার ট্রান্সফার, ফৌজির চাকরী তাই প্রতি দুতিন বছর পরপর জায়গা বদল করতেই হয়।
পরিত্যক্ত ঠাকুরমার ট্রাঙ্কটা এবার আর নেওয়ার ইচ্ছে নেই তাদের। 
লিয়া সেটা ঘাঁটতে গিয়ে পেলো এই চিঠিটা, সাথে একটা সাদাকালো আবছা পাসপোর্ট ছবি। 
বারবার পরিস্কার করেও মুখটা ঠিক বোঝা যাচ্ছিলো না। 
লিয়া পাগলের মতো বাকি চিঠিগুলো খুজতে শুরু করে, 
কিন্তু পাওয়া যায়নি। 
এদিকে সুনন্দার(লিয়ার ঠাম্মা) মৃত্যুর প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলো, 
    ভেতরের সেই ভালোবাসা জড়ানো প্রশ্নগুলো আগে একজনের ছিলো, এবার দুজনের মনে বাড়তি হয়ে গেলো। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ