শারদ সংখ্যা ২০২০ || গল্প || মিতালী দাস




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

পরিহাস
মিতালী দাস

কাজের সূত্রে কদিন আগে গিয়েছিলাম একটি প্রতিষ্ঠানে | যেখানে মেয়েদের স্বনির্ভর করে তোলার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় | এখানে শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্থাৎ পুঁথিগত শিক্ষার বিশেষ প্রয়োজন নেই | হস্তশিল্প মেলায় যে সমস্ত দ্রব্য আমরা চোখ জুড়িয়ে দেখি তেমন'ই সব সম্ভার , দক্ষতার সাথে তারা তাদের কল্পনা মিশিয়ে অদ্ভুত সব সৃষ্টি করে চলেছে | 
                     আমি আনমনে ভাবছিলাম কত সুপ্ত প্রতিভা থাকে মেয়েদের মধ্যে যা সুযোগের অভাবে প্রকাশ পায়না | কখনও আবার সমাজ সংসার তাকে বেঁধে দেয় রান্নাঘরে | তাদের নিজেদেরই কোনওদিন জানা হয়ে ওঠেনা ভিতরের সুপ্ত প্রতিভাকে | এখানে কর্মরত প্রায় সব মহিলাই কাজের অবসরে আমার উপর দৃষ্টি বুলিয়ে নিচ্ছে | একটি মেয়ে আমার দিকে চেয়ে মৃদু হাসে | আমিও হাসি বিনিময় করে সামনে গিয়ে দাঁড়াই | মেয়েটি বলে আপনি লেখেন তো !! আমি বলি মাঝে মধ্যে মন খুব অস্থির হলে | মেয়েটি বলে ---- আপনার কয়েকটি কবিতা আমি ঠিক বুঝিনি | কিন্তু গল্পগুলো যেন বাস্তব ছুঁয়ে থাকে |
আমি বলি ---- কল্পনায় লেখার দক্ষতা আমার নেই ,তাই হয়তো !! জানতে চাই ,কি নাম তোমার ? আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডে আছো ?
মেয়েটি বলে ---- আমি সম্পূর্ণা রায় | আপনাকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম আপনি এখনোও একসেপ্ট করেন নি | আমি আপনার ফলোয়ার তাই সব লেখাই পাই এবং পড়ি | 
             ভীষণ লজ্জাবোধ করি আমি | লজ্জায় চোখ নামিয়ে তার হাতটা ছুঁয়ে বলি কিছু মনে করো না ,হয়তো খেয়াল করিনি | বেশ আজকে একসেপ্ট করে নেবো |
            মনে মনে নিজেকে দোষারোপ করি মনের এই বেয়াদপির জন্য | মন সর্বদাই বলে রিকোয়েস্টের অর্ধেক মানুষ আমার বন্ধুত্বের যোগ্য নয় আর বাকি অর্ধেকের যোগ্য নই আমি | ব্যস তাই সহজ সমীকরণে ফ্রেন্ডলিস্ট সীমিত থাকে |
       আমি যখন এলোমেলো চিন্তায় মগ্ন তখন মেয়েটি বলে একটা অনুরোধ করবো !! আপনি আমার গল্পটা লিখবেন ? আমি হালকা হেসে বলি সকলের জীবনেই এক বা একাধিক গল্প থাকে | তবে সেটা সঠিক ভাবে উপস্থাপন করতে না পারলে পাঠক পড়ার আগ্রহ পায়না | আমি শখে একটু আধটু লিখি সে পারদর্শিতা আমার নেই | মেয়েটি খুব সপ্রতিভভাবে বলে ---- কিন্তু আপনি ভালোবাসতে জানেন | আপনার জীবনে কোনও একজন বিশেষ মানুষ ছিল বা আছে যাকে আপনি আজও অসম্ভব ভালোবাসেন | আমি আপনার লেখায় আপনাকে অনেকটা চিনেছি | আপনি দর্শনের শিক্ষিকা | দর্শন আমার পাসের সাবজেক্ট ছিল | তবে ইতিহাসে অনার্স করেছি | 
দর্পণ শারদ সংখ্যা ২০২০( অঙ্কন উষসী রায়)
মেয়েটির বাচনভঙ্গিতে এতোটাই দৃঢ়তা ছিল যে আমি প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলি ...... তবে তুমি তো কোনও প্রাইভেট স্কুলে পড়াতে বা প্রাইভেট টিউশন করতে পারো ,তাতে বেঁচে থাকাটা সহজ হবে | মেয়েটি ততোধিক দৃঢ়তায় বলে আমি তো বেঁচে নেই | শুধু দু'টি মানুষের বেঁচে থাকার রসদ হয়ে রয়ে গেছি | আমি যে একদিন বেঁচে ছিলাম তা ভুলে থাকতে এ'খানে এতোগুলো মেয়ের সাথে সময় কাটাই |
             মেয়েটির সপ্রতিভতায় এতোক্ষণে আমি তার প্রতি বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছি | কিন্তু সময়ের স্বল্পতার কারণে সে'খান থেকে ফিরতে হবে, তাই তাকে বলি ----- আজ আসি ,পরে ইনবক্সে কথা হবে | মেয়েটি বলে----  আমার কথা আমি আপনাকে পরে সব জানাবো | লিখবেন কিন্তু !! সকলের জানা দরকার একটি মেয়ের ডাইনি হয়ে ওঠার ইতিকথা.............
            ফেরার পথে গাড়িতে বসেই প্রথমে মেয়েটির রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করি | অন্যের প্রোফাইল ঘাঁটার অভ্যাস না থাকলেও মেয়েটির প্রোফাইল খুলে দেখতে থাকি | বছর দেড়েক মেয়েটির প্রোফাইল থেকে ব্যক্তিগত কিছু পোস্ট হয়নি | দু-একটি পছন্দের গান ছাড়া | তার আগে পোস্ট রয়েছে সদ্য বিবাহিত তার স্বামীর সঙ্গে কিছু সুন্দর মুহূর্তের ছবি | 
                আমি মনে মনে অংক সাজাই এবং তার উত্তর মেলাই | সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে মেয়েটির এই দেড় বছরে নির্ঘাত বিবাহিত জীবনের অবসান ঘটেছে | আর এই বিচ্ছেদ তার বাঁচার সবটুকু ইচ্ছে শেষ করে দিয়েছে |
            এরপর ভাবনাদের গতিরুদ্ধ করে ফিরে আসি তার প্রোফাইল থেকে | কারণ বিচ্ছেদ আজকাল তেমন নাড়ায় না | প্রতিনিয়ত শরীর অথবা মনের বিচ্ছেদ দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি |
         সারাদিনের কাজের চাপে ভুলে যাই মেয়েটির কথা | রাতে শোবার আগে ফোন চেক করতে গিয়ে দেখি মেয়েটি অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়েছে | রাত হয়ে যাওয়ায় আমি আর রিপ্লাই করিনা | ভোরে মহালয়া দেখার জন্য ছেলেকে ডাকতে হবে তাই শুয়ে পড়ি |
           ভোরে আমার ঘুম ভাঙার পূর্বেই ছেলে আর ছেলের বাবা ততক্ষণে সমস্ত জানলা খুলে বেশ জোরে মহালয়া চালিয়ে দিয়েছে | অগত্যা আমি একইভাবে ঘুমচোখে বিছানায় শুয়ে থাকি | জানি প্রতিবারের মতোই মহালয়া শুনতে শুনতে  আবার ঘুমিয়ে পড়বো |
         ফোন হাতে নিয়ে শুয়ে মহালয়া শুনতে শুনতে অভ্যাস বসে নেট অন করি | সাথে সাথেই টুং টাং শব্দে মেসেজ ঢুকতে থাকে | সবকটিই প্রায় সেই মেয়েটি অর্থাৎ সম্পূর্ণার ভয়েস মেসেজ | অদ্ভুত এক সম্মোহন ছিল মেয়েটির কথায় , তাই নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে কানে হেডফোন লাগিয়ে শোনার প্রস্তুতি নিলাম | কী এমন কথা যা সে সেন্ড করেছে রাত্রি দু'টোর পর !! জানার ব্যাকুলতা বাড়ে | 
           মহালয়া ছাপিয়ে কানে বেজে ওঠে.......
আমি সম্পূর্ণা রায় | দুই বছর পূর্বে বিয়ের আগে আমার পদবী ছিলো ব্যানার্জী | সরকারী চাকুরীরত সম্ভ্রান্ত পিতার একমাত্র কন্যা | ক্লাস টেনেই প্রেমে পড়ি পাশের পাড়ার সুমিত রায়ের | তখন সে কলেজ পড়ুয়া | আমি একমাত্র সন্তান হওয়ায় বাবা,মা'র অসম্ভব আদুরে ছিলাম | ওই দুটি মানুষই ছিল আমার জগত | সুমিত এই ছোট্ট জগতেরই একজন স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে ওঠে | ঐ বয়সে ভালোবাসা কী জিনিস যথার্থ না বুঝলেও ওকে ছাড়া যে আমার বেঁচে থাকা অসম্ভব এই অনুভূতি বেশ তীব্রতা পাচ্ছিলো | ক্রমে বয়সের সাথে সাথে ভালোবাসা বাড়ে |সম্পর্ক আরো মজবুত হয় | আমি কলেজ জীবনে পা রাখি আর সুমিত চাকরির চেষ্টায় | অ্যাকাউন্টসের মেধাবী ছাত্র হওয়ায় এবং কিছুটা সৌভাগ্যের কারণে সুমিত ব্যাঙ্কে চাকরি পায় অল্প দিনেই | সুমিতের ভালো চাকরি এবং আমাদের অসম্ভব ভালোবাসার কাছে বোধহয় আমাদের কাস্ট'ও বিবাহের অন্তরায় হয়না | একমাত্র সন্তান হওয়ায় দাবীদাবার উর্ধ্বে গিয়ে বাবা আমার সংসার সাজিয়ে দেন |
            সুমিতরা দু'ভাই,এক বোন | সুমিত সবার ছোট | ও'বাড়িতে আমায় সাদরে গ্রহণ করা হয় | ভালোবাসার অভাব বোধ হয়নি এক ফোঁটাও | শ্বাশুড়িমা,ননদ ,জা সকলের স্নেহের পাত্রী ছিলাম | সুমিতের বাবা,মা আমাকে মা বলে ডাকতেন | তাদের মতে আমি বাড়ির লক্ষ্মী | শ্বশুড়বাড়ি যে এমন হতে পারে তা আমার কল্পনার বাইরে ছিল | বহুদিন এমন হয়েছে আমার শ্বাশুড়ি মা আমার মায়ের মতো করেই "চুলের যত্ন নিতে পারিস না "বলে সযত্নে চুল বেঁধে দিয়েছেন |
            আমি সমুদ্র ভালোবাসতাম আর সুমিত পাহাড় | নতুন চাকরি বলে হানিমুনের ছুটি ম্যানেজ করতে পারছিল না সুমিত | এরমধ্যেই বিয়ের তিনমাসের মাথায় আমি অন্তঃসত্ত্বা হই | বিষয়টা প্রথমে শাশুড়ি'মাই আন্দাজ করেন | ওনাদের অভিজ্ঞতার চোখে খুব সহজেই ধরা পড়ি | এতো অল্পদিনে এ'সব ঘটে যাওয়ায় আমরা যাতে কোনও ভুল সিদ্ধান্ত না নিই তাই শ্বাশুড়িমা একদিন মাথায় হাত বুলিয়ে বুকে জড়িয়ে বলেন ভয় পাসনা | ক'টা মাস খালি একটু কষ্ট কর তারপর বাচ্ছার সব দায়িত্ব আমার | তোরা ঘুরে বেড়াবি ,আনন্দ করবি | আমি ওর দেখাশোনা করবো | দিনকাল এখন ভালো নয় | এখন আসতে না দিলে পরে যদি আর না আসে !!
         নিরাশ করতে পারিনি | ভালোবাসার এই ছোট্ট দাবি মেনে নিয়েছিলাম মন থেকে |
          একটি ভয়েস ক্লিপ শুনলাম আমি ছোট্ট বাচ্ছার মতো মন দিয়ে | কোথাও কোন নাটকীয়তা নেই তবু আগ্রহ দমেনি আমার পুরোটা শোনার | দ্বিতীয়টা চালালাম................
খুব যত্নে বাড়ছে আমার শরীরের অংশটি | আমিও দুই বাড়ির সকলের আদর যত্নে আরো বেশি আহ্লাদি হয়ে উঠেছি | সুমিতের সঙ্গে আমার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক হওয়ায় শরীরের থেকেও মনের প্রাধান্য অনেক বেশি |
         ইতিমধ্যেই অফিসের একটি কাজে সুমিত'কে ভুবনেশ্বর যেতে হবে | আমার তখন পাঁচ মাস | শরীর তেমন একটা ভারী হয়নি | সুমিতের খুব ইচ্ছা আমিও ওর সাথে যাই |ও'খান থেকে পুরী ঘুরে আসবো | আমার সমুদ্র ভালোবাসা সুমিত নিজের চোখে দেখতে চেয়েছিলো | কিন্তু এই অবস্থায় আমি নিরুপায় | বড়দের মুখের দিকে তাকাই সম্মতির আশায় | সকলেই এক কথায় না বলে দিলেন | এরপর দু'দিন ধরে আমার আর সুমিতের বিষণ্ণ মুখ দেখে শ্বাশুড়ি'মাই যাওয়ার সম্মতি দিলেন | অনেক দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন সুমিত'কে |
           অদ্ভুত এক আনন্দ নিয়ে ট্রেনে চাপলাম | আমি আর সুমিত সবার থেকে আলাদা হলাম এই প্রথম | ভুবনেশ্বরে কাজ মিটিয়ে আমরা পুরীতে এলাম দু'দিন পর | দিনে দফায় দফায় ফোন করে খবর নেয় বাড়ির সকলে | সে'দিন সকাল সকাল হোটেলে ব্রেকফাস্ট করে আমরা সমুদ্র স্নানে গেলাম | যদিও আমি বসে ছিলাম ছোট্ট ছোট্ট ঢেউয়ে পা ভিজিয়ে |
          সুমিত ঢেউয়ের সাথে দাপাচ্ছিলো আর মাঝে মাঝে এসে আমার গায়ে জল ছুঁড়ছিলো | সেদিন পূর্ণিমার কারণে ঢেউ একটু বেশি বড়ো ছিলো | সুমিত আমায় জড়িয়ে বলেছিলো -----আমার বেবির প্রথম ঢেউয়ের শব্দ শোনা | সামনের বছর আবার আসবো ওকে কোলে নিয়ে  সমুদ্র দেখাতে | সুমিতের ছেলেমানুষী দেখে আমি খুব হাসছিলাম | সুমিত আরও উচ্ছসিত হয়ে বেশ অনেকটা দূরে চলে যায় | বড় বড় ঢেউয়ে আবার ভেসে আসে | ঢেউ ক্রমশ অশান্ত হয়ে ওঠে | মহিলারা সকলে ভয়ে উঠে আসে | আমিও সুমিত'কে ডাকতে থাকি | ভয়ে আরও একটু পিছিয়ে যাই | সুমিত হাসতে হাসতে দু'হাত তুলে নাড়ে আমার দিকে তাকিয়ে | এরপর বিশাল একটা ঢেউ | আমার তীব্র চিৎকার সুমিত...সুমিত......সুমিত...............
সুমিত আর নেই ||
           ভেঙে পড়া কান্নার আওয়াজ | ভিজে গেছে আমারও চোখ | কিছুক্ষণ পর তৃতীয় ভয়েস ক্লিপটা চালাই...............
            পাঁচদিন আমি ঠিক কী অবস্থায় ছিলাম,কীভাবে ফিরেছি,কীভাবে কি ঘটেছিলো কিছুই জানতে পারিনি | দিনে কয়েক মুহূর্ত জ্ঞান ফিরেছে আবার তা হারিয়েছি | সে'দিন মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে দেওয়ালে টাঙানো সুমিত আর আমার বিয়ের ছবিটার দিকে তাকিয়ে কিছু মনে করছিলাম,শ্বাশুড়ি'মা চুলের মুঠিটা ধরে বললেন "রাক্ষসী আমার ছেলেটাকে খেয়ে নিলি"!!!
      আমার সবটুকু চোখের জল মনে হয় আমার সমস্ত হাসির সাথে সেদিন সমুদ্রে বিসর্জিত হয়েছিলো | বুকের ভিতর এক বুক কান্নায় ভেসে যাচ্ছি তবু কাঁদতে পারছি না | মুহূর্তে সব কিছু ভুলে যাচ্ছি | সামনে শুধু একটা বিশাল ঢেউ | বাবা,মা আমাকে বাড়ি নিয়ে আসে | যে মেয়ের একটু চোখের জলে অস্থির হয়ে উঠতেন তাঁরা সেই হৃদয়ের টুকরোর এত বড়ো বিপর্যয়ে তাঁরা কীভাবে ছিলেন স্বয়ং ঈশ্বর জানেন |
দর্পণ শারদ সংখ্যা ২০২০( অঙ্কন উষসী রায়)
 আমি মানসিক স্থিতিশীলতা হারিয়ে ছিলাম | সম্পূর্ণ রূপে চিকিৎসাও সম্ভব হচ্ছিলো না আমি অন্তঃসত্ত্বা বলে | শরীরে বেড়ে ওঠা ভ্রুণটির উপরও চরম অত্যাচার চলছিলো | আমার খাওয়া,ঘুম কোনওটাই স্বাভাবিক ছিলো না | মানসিক ভাবে একটু সুস্থ থাকলেই বাবা,মা বারংবার বুঝিয়েছেন আমার শরীরে সুমিত আছে,ওর যত্ন নিতে |
          অবশেষে অনাগত অতিথির আগমনের দিন আসন্ন হয় | অত্যাধিক যন্ত্রণা নিয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি হই  | সোনোগ্রাফি করে ডাক্তার জানান বেবির অবস্থা আশঙ্কাজনক ,দ্রুত সিজার করতে হবে | সবকিছুতে নিরুৎসাহ থাকলেও এই একমাস পরিবর্তিত শরীরে সুমিতের অস্তিত্ব অনুভব করছিলাম | অধীর অপেক্ষায় ছিলাম সুমিতের | কোথাও যেন বেঁচে থাকার ক্ষীণ ইচ্ছা জন্মাচ্ছিলো | কিন্তু পোড়া কপাল ......একটি মৃত পুত্র সন্তানের জন্ম দিলাম আমি |
      ভীষণ চিৎকার করে কেঁদেছিলাম জ্ঞান ফিরতে | দুর্বল শরীরের সেই চিৎকার শুধু আমার অন্তরাত্মাই শুনেছিলো | এই কয়েকমাসে সুমিতের বাড়ির কেউই কোনও যোগাযোগ রাখেনি | আমাকে নার্সিংহোমে ভর্তি করা হলে আমার বাবাই তাঁদের  খবর দিয়েছিলেন সম্পর্কের সন্মানার্থে | তাছাড়া আমার গর্ভে যে তাঁদেরই বংশধর আছে তাই ভেবে |
         শ্বশুড়বাড়ি সম্পর্কিত মহিলামহল উপস্থিত হয়েছিলো নার্সিংহোমে ,আর অসীম ধৈর্য্য নিয়ে অপেক্ষা করেছিলো আমার জ্ঞান ফেরার | অর্ধ-অচৈতন্য আমাকে দুই হাতে ঝাঁকিয়ে শাশুড়ি'মা বলেছিলেন ----"ডাইনি নিজের পেটেরটাকেও খেলি "
            জানেন সে'দিন থেকে অনেকেই আমাকে ডাইনি বলে আড়ালে,কেউ কেউ আবার সামনে |
 পরিহাস দেখুন .....বাড়ির লক্ষ্মী থেকে কত তাড়াতাড়ি রাক্ষসী,ডাইনি হয়ে গেলাম ভাগ্যের পরিহাসে | তবু যে নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা দুটো অবলা মানুষের মুখ চেয়ে | মুহূর্তে সবাই বদলে গেলেও তাদের চোখে যে আজও অকৃত্রিম ভালোবাসা দেখতে পাই...
            ফুঁপিয়ে ওঠে কান্নার শব্দ......
আমার চোখে আবর্তিত হচ্ছে দেবী থেকে ডাইনির রূপ.......
রেডিওতে মহালয়া বাজছে তখন

"যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমঃ নমঃ |"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ