শারদ সংখ্যা ২০২০ || গল্প || ডাঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

  টার্গেট  
ডাঃ নীলাঞ্জন  চট্টোপাধ্যায় 

ফোন বাজছে অনেকক্ষন। আজ সাপ্তাহিক লকডাউন, বাজারে যাবার ব্যাপার নেই। বিছানায় গড়াতে গড়াতেই মোবাইল ফোনটা  তুলে নিলো সন্দীপ। "হ্যালো কে বলছেন"? 
গুডমর্নিং স্যার,আমি পুনম, পুনম সেনগুপ্ত  from..দেওয়ানজি এ্যান্ড রতনজি   just two minutes স্যার,  if I am not wrong, আপনি মিস্টার সন্দীপ মিত্র বলছেন তো"? 

"হ্যা বলছি, বলুন"। সন্দীপ যেন একটু বিরক্তই হলো --
"স্যার আমরা এক reputed রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, আপনি হয়তো জানেন"! পুনম বলে "হ্যা, শুনেছি", সংক্ষিপ্ত উত্তর দিল সন্দীপ। 

"স্যার আমাদের কোম্পানি এই প্যানডেমিকের কথা মাথায় রেখে কিছু unique প্রোজেক্ট  শুরু করেছে -
"কিন্তু, আমি তো কখনো আপনাদের কোম্পানির প্রোজেক্টের ব্যাপারে, কোন আগ্রহ দেখিয়েছি বলে মনে করতে  পারছিনা"। সন্দীপ একটু বিরক্তি প্রকাশ করে। 

"না স্যার আমি ঠিক সে কথা বলছিনা! আপনি একটু শুনুন প্লিজ"। পুনমের আকুতি ঝরে পড়ে। 
সন্দীপ এবার বেশ বিরক্তই হল,সাতসকাল না হলেও সকালতো বটেই,  এইসময় এইধরনের আলাপে খুব একটা খুশি হতে পারছেনা সন্দীপ। এবার  একটু  গম্ভীর হয়ে বললো, তবে আপনার  কথাটা ঠিক  কি একটু বলুন তো! 
আমাদের, একটা ডুপ্লে অ্যাপার্টমেন্টের নতুন স্কীম এসেছে, কিছু selected ক্যাটাগরিতে, আমরা দিচ্ছি --
আপনিও আছেন তারমধ্যে, Artist ক্যাটাগরিতে..। কলকাতার কাছেই, উত্তরপাড়ায়... 
পুনম বিনীত ভাবে বলে। 
কারা কারা  আছেন এই ক্যাটাগরিতে? সন্দীপ জানতে চায়। 
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, লইয়ার, অধ্যাপক, সরকারি অফিসার, এছাড়া সঙ্গীতশিল্পী, ডিরেক্টর আর..
পুনমকে কথা শেষ করতে দেয়না সন্দীপ -
--"বুঝতে পারছি ম্যাডাম , কিন্ত আমার তো এখনই কোন ফ্ল্যাটের প্রয়োজন নেই, ম্যডাম আপনি বরং.. 
"স্যার,আমার যে খুব প্রয়োজন আছে",--  হঠাৎ মেয়েটা ফোনের মধ্যে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো 
এবার একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে  সন্দীপ। হাজার হাজার মানুষের সামনে গান গাওয়ার সময় বা প্লেব্যাক করবার সময়ও এর আগে এত নার্ভাস হয়নি সন্দীপ। রীনা রান্নাঘরে breakfast রেডি করছে শুনলে এখন হয়তো, এই সকালেই একটা অন্য নাটক শুরু হয়ে যাবে। 
সন্দীপ গলাটা কঠিন করে বললো," আমি একটু কাজে ব্যস্ত আছি, আপনি  ঠিক কি চাইছেন বলুনতো, আর তাছাড়া আমার তো এখন ফ্ল্যাট দরকার নেই, আপনাকে তো বললাম"। 
মেয়েটির কান্নার আওয়াজটা তখনও শোনা যাচ্ছে।  গলাটা শুনে মেয়েটির বয়স ২২/ ২৩ র আশেপাশে বলেই মনে হয় সন্দীপের। 
"লকডাউনের পরে নতুন চাকরি আমার। লকডাউনে  আমার আগের আগের চাকরিটা চলে গেছে স্যার "একটু থামে মেয়েটি।  কিছুটা শ্বাস নিয়ে বলে, " আর সাতটা দিন হাতে, নতুন চাকরিতে আমার আড়াইমাস হয়ে গেছে, এমাসের মধ্যে একটা ফ্ল্যাট বিক্রি করাতে না পারলে, আমার চাকরি আর থাকবে না স্যার। 
স্যালারি আটকে যাবে, বিধবা মা আর ছোট বোন, ক্লাস টেনে পড়ছে, আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা, কি করবো,আমার উপরেই সংসারটা স্যার ", এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে হঠাৎ চুপ করে যায় পুনম। 
শারদ সংখ্যা ২০২০ ( অঙ্কন উষসী রায়)

সন্দীপ কিছুটা বিহ্বল হয়ে পড়ে। এই মহামারী আর লকডাউন যে কত মানুষকে শেষ করে দিয়েছে, 
জীবন তছনছ করে দিয়েছে, সে তো জানে, দেখছে, এ পাড়াতেই কত মানুষ আজ বেকার হয়ে গেছে, 
সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। তাঁর নিজের শো আজ পাঁচ মাসের উপর বন্ধ, জমা টাকায় চলছে, কিন্তু সেটাই বা কতদিন! এভাবে দিন চললে, একদিন তারও তো...!
ফোনটা ছেড়ে দিয়েছে মেয়েটি।  সন্দীপ কি করবে বুঝে উঠতে পারেনা।  পুনমের নাম্বারটা দেখে, 875442...রিং ব্যাক করে সন্দীপ। অনেকক্ষন বাজবার পর, ফোনটা তোলে পুনম,
"হ্যালো, আপনি পুনম বলছেন"? সন্দীপ বলে "হ্যা স্যার, আমি পুনম ;  দাদা কিছু মনে করবেন না ।  সরি, স্যার, কেন জানিনা আপনাকে দাদার মতো ভেবে অত কথা বলে ফেলেছিলাম, বিরক্ত করলাম, অনেক সময় নিলাম আপনার, ক্ষমা করে দেবেন স্যার "
আপনার অফিস বা বাড়ির address টা দিন, "কেন স্যার, আর ফোন করবো  না, প্লিজ, complain করবেন না স্যার"।  অনুনয় করে পুনম "এক্ষুনি আমাকে, দাদা, বললেন না, আবার এই কথা বলছেন,"! সন্দীপ বলে। 
বলেছি।  পুনম বলে। 
"শুনুন, আপনাদের সবচেয়ে ছোট, one room ফ্ল্যাট, তার জন্য পঞ্চাশ হাজার, advance করবো ই. এম.আই.টা( emi) ছয় মাস পর থেকে দেবো, সেটা আপনাকে assure করতে হবে"। সন্দীপ বলে হঠাৎ কেঁদে ফেলে পুনম, "আমার চাকরিটা আপনি বাঁচিয়ে দিলেন স্যার,অসুস্থ মা কে আপনি বাঁচালেন"
"দাদা বলেছেন তো ", সন্দীপ গলাটা নরম করে, "ঠিক আছে রেডি করুন সব" - 
করে দেবো স্যার, আমি, মার্কেটিং ম্যানেজারের সাথে কথা বলে রেডি করে আপনাকে ফোন করবো কাল। 
পুনমের গলায় খুশি।" ভাল থাকবেন স্যার"। 
সাবধানে থাকবেন , নরম গলায় বলেে, ফোনটা রেখে দেয় সন্দীপ।    

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ