শারদ সংখ্যা ২০২০|| গল্প || অসীম বিশ্বাস




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

পূজা ও প্রেম 
অসীম বিশ্বাস 

"সুন্দরী গো দোহাই দোহাই মান করো না...!" মাইকে গান ভেসে আসছে,  আজ ওল্ড কলোনির পুজো প্যন্ডালে অষ্টমী পূজোর ভীড়।
মায়ের কী সাজ ! এবারে মাকে  লাল পাড় ও আঁচলের ঘিয়ে রঙের গরদের শাড়ি পড়ানো হয়েছে। মায়ের এই রূপ দেখার জন্য আপামর বাঙালি সারা বছর ধরে অপেক্ষায় থাকেন। তাই অষ্টমীর পুজোর সকালে সবাই নিজের নিজের সাধ্যমত সেজে গুজে উপস্থিত হয়েছেন মায়ের অষ্টমী পুজোর অঞ্জলি দিয়ে সাক্ষী হতে। 
পূজারী ও মহিলারা মিলে পুজোর আয়োজন করছেন, হটাৎ গান থেমে মাইকে ভেসে এলো - "একটি ঘোষণা আজ পুষ্পাঞ্জলি বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে। সন্ধি পুজো রাত ন'টায়। আগামী কাল ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতা সন্ধ্যা সাত'টায়। যারা যারা নাম দেবেন মলয়'দাকে ও কাকলি দিকে নাম দিয়ে যান..."।
সুতপা- এই জানিস আমার খুব নাম দিতে ইচ্ছে করছে কিন্তু বাবা পারমিশন দেবে না। 
মহুয়া - তোর আবার প্রবলেম কি, তোর বাপিদা'কে বল না, বাপিদা বললে কাকু রাজি হয়ে যাবে।
সুতপা- তুই তো আরেক জন, বাপি'দা যদি এ কথা তোলে, তাহলে আমাকে আরতি দেখতেই আসতে দেবে না!
মহুয়া - এই জানিস অঙ্কুশ'দা আজ হেবী মাঞ্জা দিয়েছে, আমি সকালে গেছিলাম ওদের পূজোয়। অঙ্কুশ'দাকে ধুতি পাঞ্জাবি'তে হেব্বি লাগছিল।আজ সন্ধ্যায় চল না, যাবি? তোদের সাথে আলাপ করিয়ে দেবো।
রীতা - কোন লাভ নেই । 
মহুয়া- কেন?
রীতা- ওর অমৃতা বলে একটা মেয়ের সাথে চলছে, তোর বলার আগে আমি খোঁজ নিয়েছি।
মহুয়া - কে বললো?
রীতা- আমাকে ওর বোন বলেছে। 
মহুয়া - দূর বাজে কথা ওর বোনের সাথে আমার রোজ কথা হয়। 
রীতা - কি ব্যপার রে মৌ, তুই খুব ভাব জমাচ্ছিস অঙ্কুশ'দার বোনের সাথে? 
মহুয়া - এই অমৃতা টা কেরে? 
রীতা - আরে থার্ড ইউনিট কলোনির মেয়ে, RE Model School  থেকে  pass out।  তাই আমরা অতোটা চিনি না। চোখে মুখে কথা, দেখবি অঙ্কুশদাকে চড়কির মত ঘোরাবে। বিকেলে যাবি? তোর সতিন আসবে,  হা হা হা!
মহুয়া - রীতা খুব বাড়াবাড়ি করবি না। 
রীতা - এই সুতপা, বাপিদা'কে বল একটা গাড়ি জোগাড় করে দিতে, দেখবো মহুয়ার সতিন ভালো না মহুয়া ভালো! 
সন্ধ্যার একটু পরে সবাই পৌঁচ্ছে গেছে নিউ কলোনির পূজোয়। সবাই শাড়ি পরেছে, মহুয়া যেন একটু বেশী মাঞ্জা দিয়েছে । একটা লাল কাঞ্জীভরমে ভীষণ সুন্দর লাগছিলো। 
মহুয়া যেন আজ মনে মনে তৈরীই হয়ে এসেছে, যে করেই হোক অমৃতা নামি মেয়েটার সাথে টক্কর দিতে হবে। 
প্যন্ডেলে ঢুকতেই অনন্যা, অঙ্কুশদার বোনের সাথে দেখা হ'ল,  ও ওদের সকল কে এক'টা সাইড দিয়ে ঠাকুরের সামনে নিয়ে গেল, মহুয়া দেখলো অঙ্কুশ দা একশো আটটা প্রদীপ জ্বালানোর ব্যবস্থাপনায় বেশ ব্যস্ত ।
অনন্যা বললো -দাদা কে ডাকছি, তোদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য। 
ও 'দাদা' বলে ডাকতেই অঙ্কুশ তাকালো। 
অনন্যা বললো -একটু এ দিকে আসবি,আমার বান্ধবীরা এসেছে ।
 অঙ্কুশ বললো - ওদের ভলান্টিয়ার রুমে নিয়ে বসা, আমি আসছি। 
মহুয়ার সাথে অঙ্কুশের চোখাচোখি হ'ল, মহুয়ার সারা শরীরে যেন বিদ্যুৎ তরঙ্গ বয়ে গেলো। মনে মনে বললো -অঙ্কুশদা কে ধুতি পাঞ্জাবি পড়লে কি ভীষণ ভালো লাগে। 
সবাই ভলান্টিয়ার রুমের দিকে পা বাড়ালো। ভলান্টিয়ার রুমে এসেই অনন্যা চিৎকার করে- 'অ.. মৃ ..তা' বলে ডেকে জড়িয়ে ধরলো। 
অনন্যা সকলের সাথে অমৃতার পরিচয় করিয়ে দিল। অমৃতা বললো ও পনেরো মিনিট হ'ল এসেছে, অঙ্কুশ ওকে মাসিও মেসোমশায়ের ( অঙ্কুশ ও অনন্যারা মা ও বাবা) সাথে বসিয়ে রেখে কোথায় যেন গেলো। 
মহুয়া আর অমৃতার চোখে চোখে দেখা হ'ল। 
অনন্যা নিজের মা বাবার সাথে'ও সকলের পরিচয় করিয়ে দি'ল। 
কিছুক্ষণ পরেই অঙ্কুশ এলো, সবাই উঠে দাঁড়াতেই অঙ্কুশ বসতে বললো এবং নিজেও বসলো। অমৃতা উঠে এসে অঙ্কুশের পাশে বসলো। তাই দেখে রীতা মহুয়ার হাতে চিমটি কাটলো। সকলের সাথে আলাপ পরিচয় শেষ হতে হতেই গরম গরম কাটলেট আর ঘুগনি প্লেটে প্লেটে চলে এলো। 
মাসিমা আর মেসো মশাই উঠলেন, 
মাসিমা বললেন -তোমরা গল্প করো আমরা ঠাকুরের কাছে যাই। 
ঘন্টা খানেক বেশ জমিয়ে আড্ডা চললো, অঙ্কুশের দু-একজন বন্ধু এসেও যোগ দিল তাতে। 
অঙ্কুশ বললো মহুয়ার শাড়ীটা খুব সুন্দর। অমৃতা অনন্যা সাথে গল্প করতে করতে হঠাৎ থেমে গেল কথাটা শুনে, অঙ্কুশ কে বললো রাতে যেন ওকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসে। 
অঙ্কুশ 'হ্যাঁ' বললো। 
সেদিন সন্ধিপুজোর পরেও ওরা অনেকক্ষণ ছিল। মহুয়া এক ফাঁকে অঙ্কুশ'দাকে একা পেয়ে একটা পদ্ম ফুল চেয়ে নিয়েছিলো আর আস্তে করে বলেছিলো - আগামী কাল সন্ধ্যায় আসুন না আমাদের পূজো মন্ডপে । 
গাড়িতে ফেরার সময় সকলে মহুয়ার পদ্ম ফুল নেওয়ার রহস্যটা জানতে চাইলো।
বাড়িতে ফিরে মহুয়া খেতে বসেও অঙ্কুশ'দার কথা ভাবতে লাগলো। বিছানায় শুয়েও ঘুম এলো না ,শুধু এ পাশ ও পাশ করতে লাগলো। মহুয়া বারবার ভাবতে লাগলো অঙ্কুশ দা পদ্ম ফুল টা দেওয়ার সময় ওর হাত টা একটু বেশী সময়ের জন্য ছুঁয়ে ছিল - এটা ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত! 
হঠাৎ মহুয়ার মনে অমৃতার মুখটা ভেসে উঠলো, মহুয়া নিজের মনে হেসে উঠলো, মনে মনেই বললো কি সব ভাবছে!  অঙ্কুশ'দা তো অমৃতাকেই ভালবাসে। অমৃতা নিজের অধিকার ব'লেই তখন সকলকে শুনিয়ে বললো অত রাতে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা ! মহুয়া নিজের মনে কল্পনা করলো বাড়ি ফেরার পথে অঙ্কুশদা বাইক চালিয়ে যাচ্ছে আর অমৃতা দুই হাতে অঙ্কুশ'দাকে জড়িয়ে ধরে গালটা অঙ্কুশ'দার পিঠে রেখে পেছনে বসে আছে!  মহুয়ার চোখের কোনায় এক বিন্দু জল চিক চিক করে উঠলো! ও নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পরলো। 
নবমীর সন্ধ্যায় ওল্ড কলোনির পুজোয় আরতি প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। সুতপাও প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছে। সব বান্ধবীরাই তাই সুতপাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য হাজির হয়েছে।
তখন বাচ্চাদের আরতি প্রতিযোগিতা চলছিলো। ঠিক ঐ সময় ওল্ড কলোনির পূজো প্যন্ডেলে অঙ্কুশদা'কে ঢুকতে দেখে সুতপা, রীতা অবাক হয়ে গেলো। মহুয়া নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না!  মহুয়া মনে মনে খুব একটা সুখানুভূতি অনুভব করলো যে অঙ্কুশ'দা তার কথা রেখেছেন!  কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সংযত করে নিলো অমৃতার কথা মনে পড়ে যাওয়ায়। অঙ্কুশদার সাথে অমৃতা এবং আরো একজন অপরিচিত ব্যক্তি এসেছেন। 
ওরা তিন জনেই এগিয়ে গিয়ে অভ্যর্থনা জানালো। অঙ্কুশ অপরিচিত ব্যক্তিটিকে ডেকে সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য বললো - ও অভিজিৎ দাঁ, কলেজ হোস্টেলের রুমমেট ছিল, এখন চাকরী সুত্রে মুম্বইয়ের বাসিন্দা।
অভিজিৎ হাসি মুখে সকলকে হাত জোড় করে প্রণাম করলো। 
সকলে মিলে পূজো মন্ডপ এ ঠাকুরের সামনে এসে মা কে দর্শন করে  বাইরে এসে একটা খাওয়ার দোকানের সামনে দাঁড়ালো। একটা সুন্দর আড্ডা জমে উঠলো,  অভিজিৎ সকলকে চিংড়ি আর মোচার চপ খাওয়ালো । অমৃতার চিংড়ির চপ টা খুব ভালো লেগেছে জেনে অঙ্কুশ'দা নিজের প্লেট থেকে চিংড়ির চপটা অমৃতার প্লেটে দিয়ে দিলো। ওদিকে অভিজিৎ মোচার চপ'টার  আধখানা ফট করে মহুয়ার প্লেটে তুলে দিলো। 
দর্পণ শারদ সংখ্যা ২০২০(ছবি : উষসী রায়)

হঠাৎ মাইকে ঘোষণা করলো - পরবর্তী প্রতিযোগিনী সুতপা রায়। 
সকলে ফিরে এলো আরতি প্রতিযোগিতার জায়গায় সুতপার আগের মেয়েটির ধুনুচি নাচ চলছে। সুতপা নিজেকে নাচের জন্য তৈরি করে নি'ল । 
অবশেষে সুতপার নাচের ঘোষণা হ'ল, মা দুর্গা কে প্রণাম করে খুব সুন্দর নাচ শুরু করলো সুতপা , ধুনুচির ধোঁয়ায় ঢাকের তালে খুব সুন্দর হাত ঘুরিয়ে নাচছে সুতপা, অঙ্কুশ, অভিজিৎ, মহুয়া, অমৃতা ও রীতা খুব উৎসাহ দিতে লাগলো। সুতপা এত অদ্ভুত সুন্দর নাচছে দেখে অমৃতা অবাক হয়ে এবং আনন্দে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মহুয়াকে জাপটে ধরলো। 
মহুয়াও দু হাতে কাছে টানলো অমৃতাকে। 
নাচ শেষ হয়ে গেল, সুতপা ঘেমে নেয়ে ওদের কাছে এসে হাঁপাতে লাগলো। অঙ্কুশ ছুটে গিয়ে দোকান থেকে এক গ্লাস জল নিয়ে আনলো। সুতপা এক নিমেষেই জলের গ্লাসটা খালি করে দিলো। 
সবাই খুব প্রশংসা করলো সুতপার নাচের। 
আবার সকলে ভীড় ঠেলে বাইরে এলো। এক কাপ করে চা নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠলো। অঙ্কুশ'দার সিগারেটের ধোঁয়াটা মহুয়ার নাকে আসতেই কেমন যেন একটা অনুভূতি হলো! অমৃতা অঙ্কুশ'দার পাশের জায়গাটা সেই আসা থেকেই পার্মানেন্টলি দখল করে রেখেছে। 
কি ভাবে যেন নবমীর সন্ধ্যার আড্ডা টা দারুণ ভাবে জমে উঠলো! 
হঠাৎ অঙ্কুশ বলে উঠলো - সকলের জন্য একটা সারপ্রাইজ নিউজ আছে!  
কথাটা শুনে সকলেই অবাক হয়ে অঙ্কুশের দিকে তাকালো। 
অঙ্কুশ নিজের পাশে অমৃতাকে টেনে আনলো, 
মহুয়ার বুকের মধ্যে তখন ধরাস ধরাস করে দামামা বাজতে শুরু করলো !  মনে মনে ভাবলো কি এমন ঘোষণা করতে চাইছে অঙ্কুশ'দা ?! এমন কিছু কি, যা শুনেই মহুয়ার নবমীর সন্ধ্যা টা কাচের মত ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাবে?! অঙ্কুশ'দা ভিলাই স্টিল প্ল্যান্টে বছর দুই হলো চাকরী করছে। তাহলে কি....! 
অঙ্কুশ অমৃতাকে প্রায় তাঁর বুকের কাছে টেনে নিয়ে বললো - আমি তোমাদের সকলকে জানাতে চাই,  আগামী মাঘ মাসে অমৃতার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছে আমার প্রিয় বন্ধু অভিজিৎ দাঁ! 
মহুয়ার মনে যেন এই কথা গুলো সেতারের ঝঙ্কারে বেজে উঠলো। 
রীতা মহুয়া কোমরে চিমটি কেটে দিলো, 
সুতপা মহুয়া পায়ে ওর পা দিয়ে মাড়িয়ে দিলো। 
অমৃতা এগিয়ে এসে ওদের'কে একে একে জড়িয়ে ধরলো।মহুয়া যেন একটু বেশী জোড়েই বুকে চেপে ধরলো অমৃতাকে, মহুয়া আরো আশ্চর্য হল যখন অমৃতা মহুয়ার কানের কাছে মুখ এনে ফিস ফিস করে বললো -  Congratulations! 
মহুয়ার মুখটা এক মুহূর্তের জন্য রাঙা হয়ে গেল, তবুও  নিজেকে সামলে নিয়ে অমৃতাকে বললো - congratulations you too! 
অঙ্কুশ অভিজিৎ কে অমৃতার পাশে দাঁড় করিয়ে দিল এবং বললো ওদের প্রেম কলেজ জীবন থেকেই ।
অভিজিৎ এক হাতে অমৃতাকে আর এক হাতে অঙ্কুশকে চেপে ধরে বললো- আমার প্রিয় বন্ধু অঙ্কুশের জন্যই আজ আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছি। প্রেমের মান অভিমানের খেলায় ও আমাদের দু'জনকে সব সময় সাহায্য করেছে ।
অমৃতা বললো অঙ্কুশ'দার মত মানুষ প্রতিটি ঘরে ঘরে যেন জন্ম নেয়। 
অঙ্কুশ বললো- চলো এবার বাড়ি ফেরার পালা।
সকলেই ওদের দুজনকে আসন্ন বিবাহের শুভেচ্ছা জানালো। 
অঙ্কুশ ফিরে যাওয়ার আগে সকলকেই পরের দিন দুপুরে নিউ কলোনির পুজোয়  যাওয়ার নিমন্ত্রণ করে গেল। 
ফিরে যাওয়ার আগে অঙ্কুশ মহুয়ার দিকে তাকাতেই মহুয়া লজ্জায় না কিসে যেন চোখ দুটো নামিয়ে নিলো। তবে মহুয়া এটুকু বুঝলো ঐ চাহনির মধ্যে একটা আবেগ এবং আহ্বানের চিহ্ন ছিল। 

দশমীর সকালে তিন জনেই তৈরী হয়ে নিউ কলোনির পূজো মন্ডপে পোঁচ্ছে গেল।
সকলেই সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেছে। ঢাকে বিসর্জনের  তাল বেজে চলেছে - ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন ! 
মায়ের মুখের হাসি কেমন যেন বিষন্নতায় ভরে উঠেছে। সকল মহিলার মুখ সিঁদুর রাঙা হয়ে গেছে। কারা যেন এসে মহুয়া, সুতপা আর রীতা কেও রাঙিয়ে দিয়ে গেলো। দূরে অমৃতা, অঙ্কুশ আর অভিজিৎ ভিরের মধ্যে ঢাকের তালে তালে নেচে চলেছে। মহুয়া এক কোনে দাঁড়িয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। আজ যে বিসর্জন !
হঠাৎ অমৃতা এসে মহুয়াকে হিড় হিড় করে টেনে নিয়ে গেলো, কিছু বোঝার আগেই অনন্যা এক গাদা লাল সিঁদুর লেপটে দিলো মহুয়ার মুখে!  অভিজিৎ মহুয়ার ডান হাত টা ধরে অঙ্কুশের হাতে গুঁজে দিল। 
অমৃতা শাঁখ বাজালো। অভিজিৎ চিৎকার করে বলে উঠলো - বলো দুগ্গা মাইকি! 
 এক সাথে সকলেই বলে উঠলো জয়...! আকাশে বাতাসে 'জয়' শব্দটা প্রতিধ্বনি হ'ল! 
মহুয়ার চোখে তখন এক অপরূপ অনুভূতিতে অবিরাম ধারায় অশ্রু বয়ে চলেছে ...এটা কি মায়ের বিসর্জনের বেদনা ? নাকি, কোন সিঁদুর রাঙা মেয়ের জীবনের আনন্দের আবেগ অশ্রু ! অঙ্কুশ মহুয়ার হাতটায় জোরে চাপ দি'ল, মহুয়া জানে এটাকে ভরসা দেওয়া বোঝায়। অঙ্কুশ আস্তে করে বললো - চোখের জল মোছো। মহুয়া সযত্নে রুমালের কোনা দিয়ে চোখ দুটো মুছে নিলো
 ঠাকুর মন্ডপ থেকে মা দুর্গা ও তাঁর পরিবার কে নিয়ে অঙ্কুশ, অভিজিৎরা ট্রাকে করে বেড়িয়ে গেলো বিসর্জনের পথে। 
অভিজিৎ মনের উল্লাসে চিৎকার করে বলছে - বলো বলো দুগ্গা মাইকি! সারা ট্রাক জুড়ে প্রতিধ্বনি হচ্ছে -জয়....! 
আসতে আসতে ঐ ধ্বনি'টা অস্পষ্ট হয়ে আসছে... !অস্পষ্ট হলেও শোনা যাচ্ছে তখনো ঢাকের বিসর্জনের বাজনা - ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ... ঠাকুর যাবে বিসর্জন...! 
দুর্গাপুজো মানেই যে উপহারের আশা, মণ্ডপের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকেও সাজিয়ে তোলার উদ্যোগ, বাঁধা নিয়মের জীবন থেকে বেরিয়ে কয়েক দিনের বাঁধনহারা আনন্দ যাপন, তা শেষ হলে মন খারাপ হবেই তো! তবুও মহুয়া মনে মনে শতকোটি প্রণাম জানালো মা দুর্গাকে, এবারের পুজোয় জীবনের সব থেকে বড় উপহার'টা পাইয়ে দেওয়ার জন্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ