পোস্ট বার দেখা হয়েছে
ডাঃ মোঃ শামীম রেজা
নির্ঘুম রাত কাটে এখনও।
খরস্রোতা নদীর যে বাঁধটা ভেংগে গিয়ে
গ্রামে পানি ঢুকেছিল,
ওর পাশেই দু'চালার কুঠির
মোটেও নড়বড়ে নয়
গাছের শক্ত কান্ডে গড়া ছিল মোর পোঁতা ঘর।
কি রুদ্র মূর্তি ধরেছিল সেদিন
আকাশ , বাতাস , অতলান্ত জল!
সমস্বরে, সহযোগে, কলোস্বরে, সব শক্তি এক করে
আকাশে - বাতাসে ধূনের তাল, তুলো তুলো খেলা,
ছিলো স্বপ্নজাল।
দুধেল গাইটা সে রাতেই স্রোতের টানে
অকুল পাথারে ভেসে গেলো আগেই,
কৈশোর পেরুনো ছেলেটা
' বাবা ছেড়ে দিলে হাত? '
বলেই ভোঁ করে ঢুকে গেল স্রোতের কুহুরে।
গর্ভবতী বউটা স্রোতের আঘাতে ঘরের চালায় বাড়ি খেতে খেতে
রক্তে রঞ্জিত হতে হতে
যেন এক হাজার একটা মুরগির শিরচ্ছেদের রক্ত দেখে
সেই যে হারিয়ে গেল সাগরের নোনা জলে
উদ্দিষ্ট পেলাম না তার কখনও।
ঘরের গোলায় সাড়ে বার মন ধান
চৈতালী, মুগ, মসুর
বিয়ের শাড়ী, জামদানী, কাতান
লাংগলের ফলা, রসুনের ঝোপ, ফসলের বীজ,
ধুয়ে, মুছে, শুষে নিয়ে গেল তরংগিনী
তার উল্লম্ব জয়োল্লাসের জলোচ্ছ্বাসে।
সব হারালাম।
তরংগে তরংগে খেলো,
চুষে শুষে খেলো,
পিসে পিসে খেলো,
সব, শ্বাস প্রশ্বাস , জীবনের আশা-আলো।
তারপর কত পানি গড়ালো
ইতিহাস রচিত হলো
এসেম্বলী , অধিবেশন বসলো
ফুড কনফারেন্স, ভিজিএফ কার্ড
এম পি, মন্ত্রীর আগমন - নির্গমন ঘটলো
নির্বাচনের পর নির্বাচন
স্থুল-সুক্ষ্ম কারচুপি
কত বিদগ্ধজন অকালে প্রাণ হারালো
টেংরা, চুনোপুঁটি গোঁপ ভাসালো ডোবায়-ডেরায়
রুই কাতলার অনাকাঙ্ক্ষিত সমাধি হলো
ঘটনা পরম্পরা, - ঘটতেই থাকলো!
এখনও দেখি কেউ ঘুমায়
আহারে বিহারে ঘুমায়,
দুযেক জন আমার মত পোড় খাওয়া মানুষ
জাগে রাত, জেগে রয়।
আমার রাত কাটে নির্ঘুম, এখনও।
কারও কাছে সাহায্য চাই নি
কারও কাছে ফরাশ বিছানা-তক্তপোষ চাই নি
রুদ্র মূর্তিও ধরি নি
অনুযোগ , অভিযোগ নেই
রাগ বিরাগ, ধুন্ধুমার মতলবও নেই
নেই কোন ইন্দ্রধনুচ্ছটা কিংবা জ্যোতিরিন্দ্রিয় হবার অভিলাষ।
শুধু কপালে ক্ষনে ক্ষনে হাত দেই, ভাবি --
বিধাতা - কপাল কত সুরসিক, কত সমান্তরাল!
কত সুনিপুণ, দক্ষ দ্রুতলয়,
নিমিষে ভাংগে সুখের ঘর, লোকালয়, দেবালয়,
মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা,
বুকের খাঁচা, সাধের আশা,
স্বপ্ন, সুললিত সাজানো বাগান।
বিধাতা - কপাল কত যুগপৎ
দ্বৈরত নেই, কেবলই সমঝে চলা যুগপৎ শক্তি!
0 মন্তব্যসমূহ