পোস্ট বার দেখা হয়েছে
ঘন্টা - কাঁসর
(শ্রুতি নাটক)
শুভশ্রী সাহা
চরিত্র--
বাসন্তী( আয়া মাসি)
রাসু বা বিউটির মা ( ঠিকে কাজের লোক)
-- টিং টং
-- অই! অই এয়েচেন এতোক্ষুনে মহারানী ভিট্টোরি
যাচ্চিইইই! বাসুন্তী এয়ে পড়েচে গো মাসিমা!
( দরজা খোলার আওয়াজ)
হাঁপাতে হাঁপাতে অপেক্ষাকৃত কমবয়েসী এক মহিলার প্রবেশ। প্রবেশ করতে করতে নিজের মনে কথা, উ আর পারা যায় না বাব্বা! কি ভিড়! টেন, টোটো, অটো, মুকে মাস পরো, হ্যান ট্যান! ককুন বেরিয়েচি!
ও বিউটির মা, জল দাও তো আমায় একগেলাস! ভাদ্দরের পচা গরমে মরে গেলুম!
বিউটির মা -- বলি আগে বল তো, হাতে তো ঘড়ি বাদা আচে ভাই, টাইম দেকিচিস!
বাসন্তী- মানে! কিসের টাইম গো ! আমার তো আটটা থেকেই ডিউটি! একনো আটটা বাজতে পাঁচইইই মিনিট বাকি! কাঁটা নড়ে যাবে কিন্তুক বাসন্তীর টাইম ফিস টাইম!
বিউটির মা-- তোর আটটা থে ডিপটি! আর আমার বুজি পাঁচ টা থে ডিপটি নাকি!
বা-- তোমার আবার ডিউটি কিসের! ঠিকের কাজ! বাসন ধোওয়া ন্যাতা দেওয়া! কি বলো কি!
আমরা কি এক কাজ করি?
বি-- অ! তা তোমার মুনিব তো আমার মাতা খাচ্চে বাসন্তী বাসুন্তী করে! তুমি যেতুক্ষন না আসপে আমি বেরুতে পাচ্চি নি, বলি আমার অন্য বাড়ির বাসন ঠেলতে হয় তো নাকি!
বা -- তুমি আসো পাড়া থেকে পাড়ায়! আমাকে টেরেন টোটো ধত্তে হয়! এক হলো! আর
কিসের মনিব কচ্চো , মনিব তোমার, আমার কে! আমি পেশেন্ট দেক্তে আসি এখানে বুঝেছ! ফুরনের কাজ!
হাঁড়ি হেঁসেল ঠেলতে নয়! না এলে কি পয়সা দেবে আমায়? বাড়ির বেবস্তা না করে বেরুনু যায়! ফিরবো সেই রাতে! দুমুট ডাল ভাত নিজেরও নিতে হয়! কতা বলা না অনেক সহজ!
বি-- অই হলো! পেসেন না গুস্টির পিন্ডি! যা বায়ান্ন তাই তেপান্ন বুইলি! আমার বউদি, তোর মাসিমা, তোর মাসিমা, আমার বউদি!
বা-- না যাই বাহান্ন তাই তেপান্ন কক্কোনো নয়! আমাকে সেন্টার থেকে পাটিয়েছে! আমার একটা অপিস আছে! এটা ওই পাইকারি ঘর মোচা বাসন মাজার কাজ নয়! রুগীর সেবা বলে কতা!
বি-- ম্যাগো! সেবা! ন্যাকা ! বলিস নিতো! গু মুত কাড়তে হয়! তার আবার আপিস! কালে কালে কত্ত দেকব! ওই যে আমাদের নগার বউ, করত ঠিকের কাজ, তা নগার অসুক হলে এই আয়ার কাঝ নিলো, ছিল ঠিকে ঝি, একুন হাতে ঘড়ি বেদে কুঁচিয়ে শাড়ি পরে কাঝে যায়।
কি ক্যাতা মাইরি!
বা-- শোনো, বিউটির মা, এই কাজে না পড়াশুনা জানতে হয়! রুগীকে অসুদ বিসুদ খাওয়াতে হয়! ন্যাতা বোলানোর কাজ এটা নয়! অপিসে হাজিরা মাত্তে হয়, সই কত্তে হয়, আমার ছেলেমেয়েকেও আমি ইস্কুলে দিয়েচি!
-বি -- নে, নে, ভাই, তুই তো ডিএ ছ্যার! তোর ছেলে পুলেও কেউক্যাটা হপে ! আমার তো চোক নেই গা, এট্টা অসুদের নাম পত্তে দাদা বউদির কাচে যেতে হয়কো! বউদিতো ফিস্ফিস করে দাদারে কয়, এদের না কোনো বেরেন্ট নেই! রোজ এক কথা বলতে হয়! নিঝের কানে শুনিচি ভাই! বললে হপে!
বা-- এত কিচু লোকে র টা কান পেতে শোন বলেই তো নোংরা, গুয়ে মুতে কাজ করে রেখে যাও! কি ঘরমোচার ছিরি! ছ্যা! বাসনে খেতেও ঘিন্না লাগে!
বি-- মুক সামলে কতা বল বলচি! তুই কতদিনের যুগি র্যা! বারো বচর একেনে আচি, কেউ বলতে পারবে নে, বিউটির মা ব্যাগার দায়!
বা-- আমার কি দরকার বলার, যা শুনচি তাই বলচি ! ওই সব লাগানি ভাগানি ঠিকে ঝিদের কাজ! তোমার মনিব বলে বলেই বলচি! আমার কি দায়!
বউদিই তো নিজে এসে বলে, কি ব্যাগারে কাজ দেখছ! দশ বাড়ি কাজ নেবে, আর ছুটে মরবে! ঠিকে গুলো কাকে আর কি বলবো! সব এক জাত! বজ্জাত!
-- আচ্চা! আমি ঠিকে ঝি! তাই বজ্জাত! তুই কুচিয়ে শাড়ি পরে অপিসার! গু মুত কারা পোস্কার করে পিতিবীর লোক ঝানে! আর তোর বউদি! বেয়ায়া গতর কুড়ে মেয়েছেলে! পাচার কাপড় পজন্তি ধোয় নে! গুস্টি সুদ্দু বেইমান! দেক্তিচি তো অতদিন ধরেই! তুই ও বুজবি ! আমারেও কয় তো, আমি তো আপিসে চলে যাই, আয়াগুনোর যা হাতটান থাকে, চোকে চোকে রেকো গো, বিউটির মা!
বা-- বুঝেচি, উনার সবাব ভালো নয়! লাগানি ভাঙানির মাস্টর! পেটের দায়ে কাজে এসিচি! হাতটান থাকলে অপিস আমায় রাকত! গরীব হলেই চোর হতে হবে! নেহাত মেয়ের বাপটার কারকানা বন্ধ হয়ে গেলো! চলছিলো তো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে! এই একবচ্চর আমি এই লাইনে! এই সব কতা শুনলে পরে মনটায়, (কান্নার মত, তারপর ঝেঁঝে উঠে)
হ্যাঁ আয়াদেরতো হাতটান থাকে, ঠিকেরা সব ছ্যাঁচড়া, আলুমুলো বাড়ি নিয়ে যায়! যত সাদু তোমরা!
বি -- বাদ দে দিনি, ওদের জন্য আবার মুন! মুয়ে আগুন শুটকি পেতনির, বাস থেকে পড়ে গিয়ে হাত ভাঙতে কে হদ্দ করা করিছিল? চাবি হাতে দে বলেচে, বিউটির মা, এ সোমসার তোমার, তুমি যা পারো করো! ওদের তুমি ভাত জল টুক দিও!
তেকুন ছাঁচড়া মুনে পড়ে নি! কবে ছেড়ে দিতুন, নেহাত বুড়ি টা বিচানায় পড়ে রইচে, রাসু রাসু করে তাই, মুন টা পোড়ে! আমার বিউটিরে জম্মাতে দেকেচে! হাড় বজ্জাত মেয়েছেলে শাউড়িকে কিচ্চু দেকে না!
বা- ওই টাই তো কতা গো দিদি! মাসিমাটার জন্য মন পোড়ে! হ্যাঁ আমার নতো কি! আমরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াই পেটের টানে গু মুত কাড়ি লোকে তাই ভাবে! আরে সেবাটাও করি গো! অসুস্ত মানুষ কে উটিয়ে দাঁড় করিয়ে দেই! মাসিমা কি ছিলো বলো তো! ভাত পজ্জন্ত মনের মত করে দেই! রান্না করার কতা কি আয়াদের! এক টাকাও এস্টেরা দেয়! সুদু এট্টু চা বিস্কুট! রুটি মুড়িও নয়! মার খ্যাংরা!
বি --- কক্ষুনো না, দেক্লুম তো! চি চি কত্তো গলা দে, বলি খেতে দিত নাকি কিচু? ওই সপ দুদ মুদ গুলে খানিক্টে দে দিত! ওতে সোয়াদ থাকে! অতচ, ঝানিস, এই বাড়ি ঘর, মোটা টেকা পেমসন সব কিন্তু বুড়িরই! বুড়ির কোনো হুকুম নাই কিচু করার! চোর তো আমরাই। ভদ্দর লোকেরাই, নিঝের পেটের ছেলে মেইয়ে যে চোকের সামনে সব মেরে দেচ্চে, টের পাইনে নাকি!
-
বা --- হা হা হা, লাখ টাকার কথা বললে গো দিদি! লাখ টাকার! চলো, চলো দিকি মাসিমার কাছে যাই!
বি-- আহারে, বলি হারি মাতা আমার, জল না দে বকে মচ্চি তোকে
বা-- আমি মাসিমার কাছে উপরে যাচ্চি, তুমিও এসোওঅঅ, আহা মানুষ টা অপেক্ষা করছে গো! আজ আবার এট্টু পায়েস করে দেব বলিচিলাম!
যাই ইইইইই মাসিমা!
(দোতলার সিঁড়িতে ওঠার আওয়াজ)
0 মন্তব্যসমূহ