শারদ সংখ্যা ২০২০ || লালন ফকির মূল্যায়ন || বরুণ চক্রবর্তী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

লালন ফকির - এবং সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও তার মূল্যায়ন , লিখেছেন  বরুণ চক্রবর্তী 
বিগত শতাব্দীর গোড়ায় (১৭৭৪ - ১৮৯০) দশকের সেই সময়টা কেমন ছিল? সমাজ - সংস্কৃতি এমন কি মানুষের জীবনযাত্রা কীরকম ছিল সেই সব সময় কালের কথা বলতে গেলে এখনকার থেকে অতীতের সেই সময়কাল নিশ্চিতভাবে অনেক অনেক পিছনে ছিল। সময়ের সাথে সাথে সমাজ সভ্যতার তৎকালীন অবস্থা বদলেছে।  মানুষ আগের তুলনায় অনেকটাই যুক্তিবান হয়ে উঠেছে। যুক্তি - বুদ্ধিতে দক্ষ - যোগ্য হয়ে উঠেছে । এ হল সময়ের প্রক্ষিত কিন্তু স্বার্থান্বেষীদের ক্রিয়াকলাপ পাল্টায় নি , বরং বেশি মাএায় বেড়েছে।
                      রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তার থেকেও আগের কালে পিছিয়ে পড়া হাল হকিকৎ সেই যুগধর্মী ইতিহাস তুলে ধরা যায় কিন্তু না সেই ইতিহাসের কালখন্ডে
বিচরণ করতে চাইলে বৃহৎ পরিসরে আলোচনা উঠতেই পারে এখানে তেমন পরিসর কোথায় ? অতএব সীমিত পরিসরে মোটামুটি আলোচনায় অনিবার্যভভাবে সমাজ সচেতকদের মধ্যে লালনের নাম উল্লেখ করা যায়।
লালন ? তিনি লালন ফকির। লালন প্রসঙ্গ উঠলে এই প্রসঙ্গে অবশ্যই সামাজিক বিষয়ের প্রেক্ষিতকে সামনে নিয়ে আসতে হয়। এই বিষয় আড়াল করার প্রশ্ন নেই , লালনই সবটা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।  এমনই লালনের সাহসী চেতনা। তাই অনুভবে মনে মনে লালন , শুধু কি তাই - ই । দারুণ অনুমানে ক্ষণে ক্ষণে লালন ফকির অস্তিত্বে নাড়া দেয়। তখনই ছায়াময় - মায়াময় সেই লালনের গান শুনি। 
 লালন এবং তার গানকে বুঝতে গেলে বোঝা যায় তার গানের কথাগুলো খানিক অন্যরকম। জগত আর জীবনের শাশ্বত সত্য তার গানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এখানে ও সেই গানে লালনের বোধস্মৃতি ধরা আছে।
           কিন্তু লালনকালের অর্থাৎ তৎকালীন সমাজ পরিকাঠামোয় 'মানবিক' এই কথাটির যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ হত। আজ এর দূর অবস্থান! মানবিক - মানবিকতা শব্দ যুগল যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। এই এমন আজকের বোধ বেদনা কাকে বোঝাতে হবে , সবাই বোঝেন। আজও মানবতার অবমাননা পীড়া দেয় ----
            সত্য যেখানে জীবনকে পথ দেখায় , সত্যই যেখানে জীবের পাথেয় , জীবনের আলো জ্বালিয়ে রাখে যেখানে সত্যের পরিবর্তে আজকাল বারংবার অসত্য প্রতিষ্ঠা বড়ই বেমানান ঠেকে। এ যেন , কত যত্নের অলঙ্কার অযত্নে অবহেলায় বেহাল দশা সময় অসময়ের কত আশঙ্কার দুর ভাবনার মলিনতা পেয়ে বসেছে। লালনের এ হেন ভবিষ্যত বাণী অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায়। চারিদিকে বেগতিক পরিস্থিতি গোপনে বোঝাপড়া স্বার্থের হানাহানি নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা প্রবাহ জনমনে নানান প্রশ্ন জিজ্ঞাসা জাগিয়ে তুলছে। কে কাকে দোহাই দেবে ? দোহাই দেব কাকে ?  সমাজ নাকি সমাজবাসী মানুষদের ! এর উওর কোথায় ?
                     কত আশঙ্কায় আজকের পৃথিবী ভুগছে।  যুদ্ধ অশান্তি - ক্ষুধা - দারিদ্র এ সমস্ত কিছুতেই পৃথিবী তোলপাড়।  লালনের জগত লালনের হৃদয় তোলপাড় কতকাল আগে।  লালন সেই যে লালন এবং ন্যায়পক্ষে
যার নির্ভীক অবস্থান এ কথা জেনেছি , তত্ত্ব - তলাসে বুঝেছি তার নৈতিকতার প্রগাঢ়তা - বিশ্বাসবোধ - নৈতিকবোধ - সর্বোপরি বিবেকবোধ লালনকে আমৃত্যু জাগিয়ে রাখে।
                      কিছু মানুষ আছেন যাদের মুখে কোনও দিনও প্রশান্তি শোনা যায় না , কত মানুষ রয়েছেন যাদের প্রাণ ঢেলে হাসতে কেউ কখনও দেখেনি।  কত যে মানুষ আছেন যাদের চেহারাই ভয় জাগানো , চলা ফেরার দাপট , কিছু কিছু মানুষ আড়িপাতা আর সুক্ষ্ম নজরদারিতে পটু , খুঁটে - খুঁজে জাগায় বিভ্রম।  আকার ইঙ্গিতে জাগায় ইন্ধন। হামেশা অশান্তির জারিজুরিতে মশগুল এই মানুষেরা । এদের জন্য আমাদের সমাজের কী করণীয় ? এদের জন্য মানুষের জীবন - ভবিষ্যত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ? 
 তথাপি এদেরই গুণগান শুনি পাশের লোকের মুখে। নির্গুণের কদর অকর্মের কাজের প্রশান্তি ছড়ায় পথেঘাটে দেখতে হচ্ছে - শুনতে হচ্ছে। সেই প্রতিধ্বনি শুনি , "দুঃখের রাত্রি শেষ হবে কবে ?" 
                                                                
আজন্ম - আমৃত্যু বিপদাপন্নের পাশে থাকাই শ্রেয়। এই সার বুঝেছিলেন লালন। তাই বারবার বিপন্নদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন লালন ফকির। অসহায়ের পাশে এসে সবরকম সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রদর্শন আর সদর্থক বুদ্ধি পরামর্শ এও লালনের বড় গুণ। কী না কি কত ভাবনার স্রোত এসে ভেঙে চুরমার করে দুর্ভাবনার ঢেউ । মত্ত বাতাস আরও ঢেলে দেয় নির্দ্ধধায় - নির্ভয়ে লালন পথে একা ----- নেই কোনও দ্বিধা - সংশয় , নেই কোনও ভয় ভীতি , সমাজে স্বাগত লালন ফকির।
            আমাদের চেতনার বড়াই আছে জীবনের লড়াই আছে ; জগৎ কী নিয়ে কাকে নিয়ে কাদের নিয়ে,  কত মহত্বের প্রকান্তরে দৃষ্টান্ত স্থাপন এই। জগতেই মানু‌ষের মধ্যেই। আবার এর বিপরীত চিত্র ধরা পড়ে। অন্ধকার আঁকড়ে ধরে জীবনের ভোগ সর্বস্বতা নিংড়ে নিতেই কত যে মানুষ ব্যস্ত অথচ এতে পরিতৃপ্তির চাইতে অতৃপ্তির বাড় - বাড়ন্ত দেখি।

                 আজকের দিনে লালনকে চিহ্নিত করতে গিয়ে তার প্রাস‌ঙ্গিকতায় কিছু বলতে চাইলে বলতে হবে ----- তার জীবনের তথা বঞ্চিত জীবনের লড়াই সংগ্রাম - আন্দোলনের মধ্য দিয়ে লালন জীবনের যে অভিজ্ঞতা উপর্যুপরি যে অর্জন করেছেন তাতেই লালনের জীবন - যাপন চিত্র বুঝিয়ে দেয় আত্মবিশ্বাস ও সৎসাহস তার জীবনের মূলশক্তি ,  যে শক্তি আত্মশক্তিও বটে। কোনও কালেই লালন তার প্রতিবাদী চরিত্রের বিপরীতমুখী হননি। তিনি তার সত্ত্বাকে বিসর্জন দেননি। 
              যুগে যুগে এই মানুষেরা জেগে থাকেন। অথচ জেগে থাকা মানুষের সঙ্গে আয় - ব্যায়ের জেগে থাকার কথা তাদের তন্দ্রাকাল এখনও শেষ হয়নি ; এখন ঘুমে! যে ঘুমিয়েই থাকতে চায় তাকে জাগাবে কে ? সমাজ ও ঘুমকাতর ? যার সুযোগে  অনীতি - কুনীতি জাঁকিয়ে বসেছে। প্রলুব্ধ প্রতারণা সর্বত্র যেন অপশক্তির জোয়ার । এই অপশক্তিকে ঠেকাবে কে ? তার কালে এমন অপশক্তি নির্মুল করতে লালনই সাহস দেখিয়েছিলেন। আজকের ভোগবাদী সমাজে লালনের পথকে কে আর অনুসরণ করে ? শিষ্টাচারী লালন - এর অনুসৃত পথের পথিক যারা আজ তারাই কোণঠাসা।
 লালন ফকির - তার প্রতি আমাদের মুগ্ধতা এমনই তার সমাজ কাজের বিশ্বাস যোগ্যতা ইতিহাসের কঠিন ঠাঁই ; যে মানুষ বিবেচক ,  যে মানু‌ষেরা বিবেকবান বিশ্বাসে যত্নবান সেই মানুষেরা আজও লালনমুখী। অতিভদ্র ,  অতিসচেতন , সমাজমুখীন মানুষদের মধ্যে লালন আলোচনা আজও শুনি। যুক্তিবাদী চেতনা সম্পন্ন মানু‌ষেরা খুঁজে বেড়ায় এমন মানু‌ষদের যারা আত্মস্বার্থ - র চাইতে পরস্বার্থমুখী এতেই সমাজের স্বস্তি।  তাইতো বলি সমাজ তলিয়ে যায়নি - অন্ধকারে হারিয়ে যায়নি। লালন অনুগামী কিংবা অনুসারীদের মতো এমন কত সুন্দর মনের মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন যারা আর যা কিছু ভালো তাতেই আশার আলো দেখেন। 


               এ যুগের আশ্চর্য মোহ আবিষ্টদের নানান বিষয়ে মাথাচাড়া দিতে দেখা যাচ্ছে , আজও কত মানুষ প্রতিনিয়ত অপমান এবং হেনস্থার শিকার এমন দুঃসহ বেদনার্ত আবহাওয়ায় রক্ত - মাংসের বিবেকবান মানুষদের ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক। লালন ফকির তার প্রতিক্রিয়া তেমন তার মতামত প্রতিফলিত তার কার্যকারিতায় এবং জীবন - যাপনে তার বিশেষ অনেক গানে সুন্দর মুল্যায়ণ পরিলক্ষিত হয়। 
                                                           (সমাপ্ত)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ



  1. সমৃৃৃদ্ধ হলাম অজানা তথ্যে
    শুভ শারদীয়ার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা

    উত্তরমুছুন