পোস্ট বার দেখা হয়েছে
আমার মা
মলয় সরকার
মাকে আজ আমার খুব মনে পড়ে-
মা ছিলেন যেন
আমাদের গাঁয়ের মধ্যে বহু প্রাচীন বটগাছটি হয়ে।
বটগাছে কত পাখী বাসা বাঁধে,
ডিম পাড়ে, থাকে ছানাপোনা নিয়ে
দিনের শুরুতে উড়ে যায় দূর থেকে দূরান্তরে।
আবার রাতের বেলায় চারিদিকে যখন ঘোর অন্ধকার,
সবাই নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে ঠিক গাছের বুকে
আমরা সব ভাই বোন মাকে আঁকড়েই থাকতাম-
সেই ছোট্ট বেলাটিতে যেমন
বড় বেলাতেও তেমনি।
ছোট বেলায় যখন রাত নামত মনের মধ্যে
চারিদিকে গা ছমছমে আবছায়া
অন্ধকারের আঁকিবুঁকি-
রূপকথার দেশে হুস করে উড়ে যেতাম মায়ের কোলে শুয়ে
ঠিক যেন যাদু কার্পেট হয়ে যেত আমার মায়ের কোলটি।
আবার অনেক বড় বেলায়, যখন অফিসের কাজের চাপে বিপর্যস্ত,
মায়ের চুল তখন শন নুড়ি।
বাড়ী ফিরলে,
মা ডেকে বলত, আয় ছোট্ট বেলার মত
কোলে শুয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দি'।
ব্যস, কি শান্তি, কি শান্তি -
যে কোন উৎসবে দূরে দূরে থাকা ভাইবোনেদের জমায়েত হত বাড়ীতে,
মা যেন সেই বটগাছটি হয়ে ডেকে নিত
সব পাখীদের-
একদিন ঝড়ে হঠাৎ সেই বটগাছটি গেল উপড়ে।
সব পাখী হল বাসা হারা, ঠিকানা হারা-
ছড়িয়ে পড়ল দূর আকাশে-
তারা আর একসাথে সন্ধ্যায় এক ঠিকানায় ফেরে না
কলকাকলীতে আর ঘর ভরে না।
আমার নিজেকে আজ কেমন ভোকাট্টা ঘুড়ির মত লাগে।
লাটাই থেকে সুতোটা কেটে যাওয়ায় আমার সামনে আজ পিছুটানহীন অনন্ত আকাশ-
শান্তির বটগাছটার বড় অভাব বোধ করি।
মা আজ তোমাকে একান্তে বড় বেশি মনে পড়ে।
0 মন্তব্যসমূহ