শারদ সংখ্যা ২০২০ || কবিতা || কস্তুরী সান্যাল




পোস্ট বার দেখা হয়েছে


আত্মসম্মান
কস্তুরী সান্যাল

সুচতুর পুরুষ আমি,বুদ্ধি মাথায় ঠাসা,
তাইতো কেমন খাটিয়ে মাথা,বাড়ি বানালাম খাসা!
বাড়ি দেখে লাগবেই তাক,লেটেস্ট ফ্লোরিং,দারুন হিট,
নইলে মানায়? ফ্ল্যাটটি যে দুই হাজার স্কয়ার ফিট!
নামি-দামী রঙ দিয়ে এই দেওয়াল রাঙালাম,
কার্পেটও তো সেই কাশ্মীর থেকে আনালাম।
বিশাল মাপের মানুষ, আমার কোটি টাকা আয়,
পরোয়া তো নেই, দু-দশ হাজার এমনিই যদি যায়।

গিন্নি আমার চৌকস খুব, শুধু ব্র্যান্ডেড পড়ে,
মেক-আপ আর গয়নাগাটি, সব ঝকঝক করে।
সকাল-বিকেল রূপচর্চা করেই তো দিন কাটে,
কাজের জন্য আয়া আছে, সকাল থেকে খাটে।
আমরা কেউই ধার ধারি না, বুঝি ওদের স্বভাব,
যখন তখন লোভের বশে বাড়ে ওদের অভাব।

এইতো সেদিন বুড়ির মা যেই চাইল কিছু বোনাস,
গিন্নি বলে,"আমায় কেন বাজে কথা তুই শোনাস!
টাকা কি রোজ গাছে ফলে, যে পেড়ে নিলেই হল?
মাইনে যা পাস,তাই পাবি, পুজোয় কার কি এল-গেল"!

এসব শুনে বুড়ির মায়ের চোখ ফেটে জল আসে,
বুড়ির বাবার ওষুধ তবে হবেনা এই মাসে?
কেঁদে বলে, "না বউদি, পুজোর জন্য নয়,
ওনাকে যে বাঁচতে গেলে ওষুধ খেতেই হয়।
এক-দু মুঠো ভাতের যাদের নিত্য হাহাকার,
তাদের আবার কি পুজো আর কিসের বা আচার!
এই কটা টাকা আমায় আপনি যদি দেন,
জানব আমি, আপনি আমার সাক্ষাৎ ভগবান"।

এত কথা শুনে ওনার মাথায় আগুন জ্বলে,
ছোট মুখে, কাজের লোকে এত্ত কথা বলে!
রেগে গিয়ে বুড়ির মাকে, স্পষ্ট বলেন তিনি,
"আমি বাপু তোমাদেরকে হাড়ে হাড়ে চিনি;
সোজা কথায় বলছি তোমায় ফন্দি ফিকির ছাড়ো,
পোশায় যদি থাকো, নইলে, এক্ষুনি পথ ধরো"।

মন ভেঙে যায় বুড়ির মায়ের, দাঁড়ায় হতবাক,
পাঁচশো টাকা দেয়না, যাদের আছে লাখ লাখ!
কিচ্ছুটি আর বলেনা, শুধু, "বউদি এলাম আমি,
ভুল কিছু বললে আমায়, ক্ষমা কোরো তুমি।
আমাদেরও পেটে খিদে, আছে মন-প্রাণ,
তবে বিকিয়ে দিতে পারবনা এই আত্মসম্মান"।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ