পোস্ট বার দেখা হয়েছে
স্বাধীনতার অগ্নি কন্যা" ননীবালা দেবী "
সোনালী দাস সরকার
স্বাধীনতা পেতে জীবনে কত কাঠখড় পুড়িয়ে ইজ্জৎ কে অগ্নিকুণ্ডতে আহুতি দিয়েছে মেয়েরাও তা ভাবলে বর্তমান স্বাধীনতা নিয়ে ছিনিমিনি রসিকতা আর শ্যাম্পেইন বোতল উলটানো দেখলে ধিক্কার দিতে ইচ্ছা করে। স্বাধীনতার প্রাক্কালে মাইক বাজে পিকনিক করে।একটা ছেঁড়া পতাকা বাক্সপ্যট্রা থেকে কফিন বন্দি লাশের মত এমন ভাবে বেড়িয়ে আসে মনে হয় সব যুদ্ধ লজ্জিত এখানের বিজয়ে।
এক অগ্নিকন্যার কথা লিখে জানালে একটু লজ্যা হয়তো করবে তাদের যাদের জানার শক্তি গুলি অব্যাহত রয়ে গেছে।
এক সেইসময়ের অগ্নি কন্যার নাম শোনাতে চাই যা কেউ কেউ হয়তো জানেন। আগে আমিও এই নামটির সাথে খুবপরিচিত ছিলাম না। কিন্তু যখন ওনার জীবন কাহিনী পড়লাম শিহরিত হই অশ্রুজলে। শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে যায় ওনার চরণে।
ননীবালা দেবী পরাধীন বাংলার প্রথম মহিলা স্টেট প্রিজনার। ১৯১৬ সালে তিনি তৎকালিক ইংরেজ সরকারের হাতে অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করেও তাঁর মুখ বন্ধ রেখেছিল,দেশের স্বার্থে বিপ্লবী ভাইদের স্বার্থে একজন অল্পবয়সী নারী হয়ে। কোনো গোপন ত্বত্ত বের করতে পারেননি তৎকালীন পুলিশ প্রশাসন
ননীবালা দেবী হাওড়া জেলার বালিতে, এক সাধারণ ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
সেই সময়কার ব্রাক্ষণ গোরা অনৈতিক রীতিতে মাত্র এগারো বছর বয়সেই তাঁর বিবাহ সম্পন্ন হয়। তবে এই বয়সেই তিনি সামান্যলেখাপড়া শিখেছিলেন।তাতেই দেশমাতৃকার প্রতি ছিল এক অনুরাগ জন্মায়।
১৯০৪ সাল থেকে মাত্র চার বছর স্বামীর সংসার সে করতে পেরেছিল। মতামত বিরুদ্ধতায় শ্বশুরবাড়িতে স্থান হয়নি।অল্প বয়সে সব হিসাব শেষ।স্বামীর ঘর হতে বিতাড়িত হল।
বাপের বাড়িতে স্থান টুকু পেয়ে নিষঙ্গতার জীবনে দেশের প্রতি ভালোবাসা এক টান অনুভব করেন। তাঁর রক্তেই জেন দেশপ্রেম ছিল তাই তো ভাইপো অমরেন্দ্র চ্যাটার্জী বিপ্লবী যুগান্তর পার্টির সক্রিয় কর্মী সহযোগীতা বিপ্লবী দলে চলে আসেন চুপিসারে।
তিনি ভাইপোর সাথে বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত হন। শুরু হয় তাঁর জীবনের এক নতুন অধ্যায়।
হুগলি জেলার রিষড়ায় বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন। সুতো কেটে জীবিকা নির্বাহ করায় এক গরীব ব্রাহ্মণ বিধবার উপর কারোর সন্দেহ হয়নি। সেই সুযোগের সৎব্যবহার করে সংকল্পে ব্রতী হন কি ভাবে সে সাহায্য করবে বিপ্লবী দের।
বিপ্লবীদের আত্মগোপন করার নিরাপদ আশ্রয় হয়ে যায় তাঁর বাড়ি।
ভাইপো অমরেন্দ্র চ্যাটার্জী বহুবার পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে তাঁর বাড়িতে আত্মগোপন করেছেন। ধীরে ধীরে ননীবালা দেবী নানা ধরনের বৈপ্লবিক কাজকর্মে নিজেকে রেখে দেশের একজন স্বাধীন চেতা বিপ্লবী নারী হয়ে ওঠেন। তিনি বিভিন্ন স্থানে গোপন খবর পৌঁছে দিতেন, এমনকি অস্ত্র সরবরাহ করতেন।
সেই সময় ভারত জার্মান অস্ত্র ষড়যন্ত্রের ঘটনা জানাজানি হয়ে যায়, শুরু হয় ব্যাপক ধরপাকড়। মৃত্যু হয় ভারতমাতার বীর সন্তান বাঘা যতীনের। অমরেন্দ্র চ্যাটার্জী সেই সময়ে কোনরকমে নিজেকে বাঁচিয়ে অন্তর্ধান হয়ে যান। কিন্তু ধরা পড়ে যান রামচন্দ্র মজুমদার।
একজন ব্রাহ্মণ বিধবা হয়েও দেশের স্বার্থে শাঁখা পলা সিঁদুর পরে , একগলা ঘোমটা দিয়ে রামচন্দ্র মজুমদারের স্ত্রীর পরিচয়ে জেলে গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করেন। অস্ত্র কোথায় রাখা আছে জেনে নিয়ে, বিপ্লবীদের জানিয়ে দেন।এমন দুঃসাহসী কাজতিনি প্রায় করতেন।
পুলিশের , ননীবালা দেবীকে ধরে ফেলেন কিন্তু সঠিক বুঝে উঠতে পারেন না তাঁকে ।
তাঁকে গ্রেফতার করে কাশীর জেলে রাখা হয়, হাজার ধরণের অত্যাচার আর নির্যাতন করা হয়। ওনার গোপনাঙ্গে লঙ্কাবাটা দেওয়া হয়। তবুও সেই বীর নারী চুপ করেই সহ্য করে ছিলেন।
অত্যাচারের মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন তাঁকে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে পাঠানো হয়। ১৯১৮ সালে সেখানেও ঘটে এক অদ্ভুত ঘটনা , সেদিন কলকাতা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসে স্পেশাল অফিসার গোল্ডি সাহেব উপস্থিত ছিলেন , ওনাকে ননীবালা দেবী বলেন...
“আমি অনশন প্রত্যাহার করে নিতে পারি , যদি আমাকে বাগবাজারে শ্রী শ্রীসারদা মায়ের কাছে রেখে আসা হয়।“
তখন তাঁকে বলা হয় এই কথাটা চিঠিতে লিখে দিতে।
ননীবালা দেবী সরল মনে চিঠিতে সেই কথা লিখে দেন, তখন গোল্ডি সাহেব মুচকি হেসে চিঠিটা ছিঁড়ে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
অগ্নিস্ফুলিঙ্গর মত হঠাৎ জ্বলে ওঠেন সেই কন্যা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেন অনশন করা দুর্বল শরীরের নারীর হাতে সপাটে চড় খান গোল্ডি সাহেব ! দ
ননীবালা দেবী কাঁপতে কাঁপতে বলেন...
“পরাধিন ভারতের নাগরিকদের প্রতি এই অপমান অসহনীয়, যদি চিঠি ছিঁড়ে ফেলে দেবে, তাহলে লিখতে বলার দরকার কি ছিল।“
তাঁর এই রূপ দেখে, তাঁকে প্রথম মহিলা রাজবন্দী করে প্রেসিডেন্সি জেলে পাঠানো হয়। সেখানে বেশ কিছুদিন থাকার পর ১৯১৯ সালে তাঁকে মুক্ত করে দেওয়া হয়। অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে থাকতে তাঁর জীবনের অবসান হয় ১৯৬৭ সালে। এমন কত দেবীর কথা কালের অতলেই হারিয়ে যাচ্ছে এখনো অনেক এমন নারীর দুর্ধর্ষ কাহিনী আমরা অনেকেই জানিনা। আজকের দিনে এমন নারীর চরণে রইলো আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি।
“ মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হলো বলিদান লেখা আছে অশ্রু জলে “
স্বাধীনতার অন্তরের কান্না হাহাকার শুনতে গেলে সেই দিনের সাথে আন্তরিক হতে হবে।
তবে জানবে নারীর অবদান কত ছিলো ভারতবর্ষ স্বাধীন হতে।
জয় হিন্দ।।
0 মন্তব্যসমূহ