শারদ সংখ্যা ২০২০ || গল্প || ধর্মেন্দ্র রাওয়াত




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

একটি কাল্পনিক মৃত্যু
ধর্মেন্দ্র রাওয়াত

দাদা, বিপ্লব মজুমদারের বাড়ি কোনটা? 
বলুন আমিই বিপ্লব মজুমদার । নমস্কার, আমি পূরব ব্যানার্জীর বন্ধু। পানাগর থেকে আসছি। কাল বোধহয় আপনার সাথেই ফোনে কথা হয়েছিল। ও  আচ্ছা আচ্ছা, ধর্মেন্দ্র দা? নমস্কার নমস্কার। আসুন আসুন ভেতরে আসুন। এক নজরে মন কেড়ে নেওয়ার মতো সাজানো ঘর। রুচিসম্মত আসবার পত্র।একটা আভিজাত্যের ছোঁয়া ঘরে- বাইরে। সেল্ফে বেশ কিছু গল্প কবিতা মহাপুরুষের বই।
বই পড়ার অভ্যাস আছে দেখছি  দাদা।
না না পড়ার সময় কোথায়। বাবা পড়তেন। আপনার বৌদি মাঝে  মধ্যে পড়ে। ও কবিতা ভীষণ ভালোবাসে। ওতো বিয়ের আগে আবৃত্তি করতো।
অর্পিতা ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন, -
হ্যাঁ সে অনেক দিন আগের কথা। এখন সময়ই পাইনা। সব চুকেবুকে গেছে। 
নমস্কার বৌদি
নমস্কার
খুব সুন্দরী না হলেও বৌদির মধ্যে একটা আভিজাত্য আছে।
সত্যি বৌদি, সময় যেন হারিয়ে গেছে আমাদের। কখনো কখনো আমরা ছেলেবেলাতেই খুঁজে পাই আমাদের হারানোর সময়।
বিপ্লব দা বললেন, -ধর্মেন্দ্র দা, তুমি করেই বলছি।  তুমি পূরবের বন্ধু তাই আমারও বন্ধু। 
হ্যাঁ হ্যাঁ একদম।
কি খাবে বলো চা না কফি।
বৌদি হাসতে হাসতে আমাকে বলার সুযোগ না দিয়েই বললেন,-
না না কফিই বানাই। 
হ্যাঁ হ্যাঁ কফিই বানাও, একটু কড়া করে  কিন্ত, বিপ্লবদা হাসতে হাসতে বললেন। 
এতক্ষণে আমি অনেকটা সহজ হয়ে এসেছি। কিন্তু বুঝতে পারছি না কোথা থেকে শুরু করব। 
বিপ্লব দা, ছেলে কি স্কুলে গেছে?
হ্যাঁ হ্যাঁ 
কোন স্কুল?
সেন্ট জেভিয়ার্স 
বাঃ কিসে পড়ে? 
ক্লাস থ্রি আর ছোট মেয়েটার বয়স তো এখন বছর  দুই পাশের ঘরেই ঘুমোচ্ছে। 
তৎক্ষণাৎ মনে হল এখান থেকে শুরু করা যেতে পারে। 
বিপ্লবদা যে জন্য এসেছিলাম 
হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন বলুন
দারুন একটা এডুকেশন পলিসি এই কিছু দিন হল লঞ্চ হয়েছে।  আপনার মেয়ের যা বয়স বললেন এই বয়সের জন্যই এই পলিসিটা খুবই এপ্রোপ্রিয়েট হবে।
ছবি সহযোগিতায় : উষসী রায়
আচ্ছা,  কি রকম। 
15 লাখ সাম এসিডিওর পলিসি বললাম। বিপ্লবদাও খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। ততক্ষনে বৌদি কফি নিয়ে একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে কফি টেবিলে রাখতে রাখতে বললেন
বাহ, খুব ভালো পলিসিটা তো। ভাবছিলামই।  ছেলের তো পলিসি আছে। মেয়ের জন্য একটা করতে হবে। 
ধর্মেন্দ্র দা একটা কাগজে পলিসির ডিটেলস প্রিমিয়াম টার্ম ম্যাচুরিটি কি কি ডকুমেন্ট লাগবে লিখে দাও। বিপ্লবদা খুব আগ্রহের সঙ্গে বললেন। 

আমর ভিতরে ভিতরে খুব আনন্দ হচ্ছে। এই মাসে তাহলে একটা খুব ভালো পলিসি উঠছে। আমি খচাখচ খচাখচ সবকিছু একটা কাগজে লিখে দিলাম। মনে মনে ভাবছি একটা ভুল হয়ে গেল ছেলের জন্য একটা দামী চকলেট আনতে হত। আমি একটা ফর্ম বার করলাম।
বিপ্লবদা তাহলে ফর্ম রেডি করি।
না না, এখনই নয়। আমি তো করবোই। বৌদির সঙ্গে একটু আলোচনা করে নি। আজ কুড়ি তারিখ তুমি বরং ছাব্বিশ  তারিখে এসো। আসার আগে একটা ফোন করে নিও। আমি সব কিছু রেডি রাখবো। ছাব্বিশ  তারিখে আমার মর্নিং শিফট। তুমি বিকেল পাঁচটায় এসো।
আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে আমি নিশ্চিত রইলাম বিপ্লবদা।
একদম। 
উঠছি তাহলে বৌদি। খুব ভালো লাগলো পরিচয় হয়ে। পূরবের বাড়ি এলে আমাদের বাড়িতে অবশ্যই আসবেন। বৌদি তাহলে আজ আসছি। নমস্কার। 

বাইক স্টার্ট করে রওনা হলাম।

খুব খুশি। ছাব্বিশ তারিখ সকাল দশটায় ফোন করি। রিং হয় কেউ তোলে না। আবার এগারোটায়। আবার বারোটায় যখন করি তখন বৌদি রিসিভ করে।
ও বৌদি নমস্কার সকালে একবার ফোন করেছিলাম। 
ধর্মেন্দ্র দা? নমস্কার আজ আপনার আসার কথা ছিল,  না?
হ্যাঁ বৌদি বিকেল পাঁচটায়। 
ও তো আজ অফিস যাইনি হঠাৎ একটা কাজে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গেল। ফোনটাও নিয়ে যেতে ভুলে গেছে। 
দুপুরের মধ্যে ফিরে আসবে নিশ্চয়ই।
না না ধর্মেন্দ্র দা, কিছু মনে করবেন না। ওর ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যাবে। ও এলে আপনাকে ফোন করতে বলবো। 
ঠিক আছে বৌদি। এখনো তো টাইম আছে এই মাসটাই। 
হ্যাঁ হ্যাঁ রাখি তাহলো।
একটু অস্থির হলাম। সারাটা সকাল দুর্গাপূর যাব যাব করে কোন কাজ হলোনা। ঠিক আছে এখনো তো  দুই  দিন বাকি।
কিন্তু  রাতের মধ্যে ফোন এলো না। আমিই তার পরদিন ফোন করি। ফোন কেটে যায়। দুদিন পরে আবার ফোন করি। 
বিপ্লবদা, আপনার সাথে যোগাযোগ হচ্ছে না। ভালো আছেন তো? 
ও ধর্মেন্দ্র দা কিছু মনে করবে না। এই দুদিন এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। শোনো না আমি তো পলিসিটা করবই যখন কথা দিয়েছি। এই কয়েকটা দিন আমি একটু ব্যস্ত থাকব তুমি বরং ফাস্ট উইক করে এসো।
আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। 
মনটা খারাপ হয়ে গেল।মালা কান পেতে আমাদের কথা শুনছিল। ও বলল কি হলো? হলো না?
না, ওই পরের সপ্তাহে যেতে বলেছে।
ও হবেনা, ঘোরাচ্ছে।
না না কোনো অসুবিধা হয়েছে বোধহয় নিশ্চয়ই। 
বোকা বানাচ্ছে। 
ছবি সহযোগিতায় : উষসী রায়
এভাবে চলতে থাকে। প্রথম সপ্তাহে যায় আবার ডেট দেয়। কখনো ফোন তোলে। কখনো কেটে দেয়। কখনো সুইচ অফ। কিন্তু রাগ করেন না যদি কখনো ফোন তুলে ই ফেলে অথবা জানুয়ারি মাসে ডায়েরি ক্যালেন্ডার দিতে গেলে খুব সুন্দর আপ্যায়ন করেন। লজ্জিতও  হন। বলেন - একটু অসুবিধেই ছিলাম ধর্মেন্দ্র দা। একটু ক্যালকুলেশন করে নি তারপর তোমাকে জানাচ্ছি। 
মোটামুটি কবে আসবো বিপ্লবদা?
এই মাসের কুড়ি তারিখের পরে। ফোন করে নেবে। 
ফোন করি কিন্তু ফোন কেটে যায়। উনিও রাগ করেন না। আমিও রাগ করি না। আমি আশাও ছাড়ি না। এই ভাবেই তিন চার বছর পেরিয়ে যায়। প্রতিবছর ডাইরি ক্যালেন্ডার নিয়ে যাই় আবার শুধু হাতে ফিরে আসি। ততদিনে ডিএম থেকে জেড এম    club member হয়ে গেছি। 

গতকালই পূরব ফোন করে বলে-
কাল বিপ্লবের সাথে কথা হলো ওকে আবার বললাম।  ও খুব লজ্জিত। বলল - না না মেয়েটার জন্য একটা পলিসি অবশ্যই করবো। উনি খুব ভালো মানুষ। কথা দিয়েছি বলেই আর কোথাও করিনি। খুব খারাপ লাগছে।
শোনো না তুমি কাল একবার বিপ্লব কে ফোন কর। 
ও আচ্ছা ঠিক আছে। আরো কিছু কথা হয় পুরবের সাথে  তারপর গুডনাইট বলে ঘুমিয়ে পড়ি।

বিপ্লবদা, ধর্মেন্দ্র বলছি গুড মর্নিং ভালো আছেন তো?
মনিং মনিং, তুমি  কেমন আছো?
আমি তো ভালোই আছি।  এই বছরই জেড এম ক্লাব মেম্বার হলাম। 
খুব ভালো কথা। 
পূরব বলেছিলো আপনার সঙ্গে কথা হয়েছে।
হ্যাঁ হ্যাঁ আমি ওকে সব বললাম একটু বৌদির সঙ্গে বসে ক্যালকুলেশন করে নি তারপর তোমাকে আমি নিজেই জানাচ্ছি। 
হাসতে হাসতে বললাম,-
বিপ্লবদা আপনি কিন্তু যতদিন 'না করবো না' বলছেন। ততদিন ঠিক আমি জানুয়ারি মাসের ফাস্ট উইক এ ডায়রি ক্যালেন্ডার নিয়ে আপনার বাড়ির সদর দরজায় সকাল-সকাল হাজির হয়ে যাব।  হয়তো আমার আপনার বয়স যখন সত্তর এর গোড়ায় তখনও দেখবেন আমি ঠিক জানুয়ারি মাসে ডায়েরি ক্যালেন্ডার নিয়ে হাজির। বিপ্লবদাও হাসতে হাসতে বললেন -
আচ্ছা ততদিনে আমি যদি ফুটে যায়। 
সেটা অবশ্য আমি আপনি কেউই চাইবো না 
তবু বলি সেটাই যদি হয় -----     

       অন্য লোক 
চিত্রগুপ্ত বসে আছেন। বিরাট একটা লাইন। চিত্রগুপ্ত খাতা দেখছেন আর এক এক করে সবাই হয় স্বর্গে নয় নরকে যাচ্ছেন।  বেশ কয়েকদিন পর চিত্রগুপ্তের সামনে দাঁড়ালেন বিপ্লব। 
নাম?
বিপ্লব মজুমদার । 
বাবার নাম?
অনির্বাণ মজুমদার। 
আই কার্ড কী আছে? 
ভোটার কার্ড। 
দেখি, নামের বানানটা ভুল। পশ্চিমবঙ্গে বিপ্লবের বাংলা বানান ভুল!
ইংরেজিতে ঠিক আছে স্যার।  এখন তো সবাই ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে  কিনা।
আচ্ছা আচ্ছা চিত্রগুপ্ত খাতা দেখে। সবই তো ঠিক আছে দেখছি।  তারপর খাতা দেখতে দেখতে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে আর মুচকি মুচকি হাসে। দূরে যমরাজের দিকে তাকিয়ে দেখে যমরাজ তখন পোশাক পড়তে ব্যস্ত। হঠাৎ চিত্রগুপ্ত আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ধর্মেন্দ রাওয়াতকে কি চেনো?
আমি চমকে উঠলাম।
ও হ্যাঁ হ্যাঁ কেন স্যার? 
নিচের দিকে তাকিয়ে দেখো। কি দেখছ?
আমাদের বাড়িতে আমার ছেলের সামনে বসে আছে আর ছেলে কি একটা ফর্মে সই করছে। 
অবশেষে পলিসিটা তুলেই নিল। অবশ্য আপনার মেয়ের নয় আপনার নাতনির। 
খুব চিটেল মাল স্যার । 
হ্যাঁ হ্যাঁ এই পেশায় চিটেল না হলে কেউ সাকসেস হতে পারে না। ওই দেখুন যমরাজ তৈরি হচ্ছে। কেন স্যার? কোথায় যাবেন উনি? 
ধর্মেন্দ্র রাওয়াত কে তুলতে।
কেন কেন স্যার? 
শোনো বলি -
তোমার ঘরের এই পলিসিটি হবার দিনিই ওর মৃত্যু লেখা আছে  । তাই প্রথম যেদিন পলিসিটা তুলতে আসে সেদিন থেকেই যমরাজ যায় আর শুধু খালি হাতে ফিরে আসে । 
চিত্রগুপ্ত যমরাজের দিকে তাকিয়ে বলল, - পলিসিটা তো হয়ে গেল স্যার।  আজ আর খালি হাতে ফিরতে হবে না আপনাকে।
তার কি ঠিক আছে। এখনো আমি হান্ডেট পার্সেন্ট নিশ্চিন্ত নয় । এল আই সি -ইর বি এস এন এল লাইন আছে। যেকোনো সময় লিঙ্ক ফেল হতে পারে । লিঙ্ক ফেল হলে আজও খালি হাতে ফিরতে হতে পারে।
বলেই যমরাজ নিচের দিকে নেমে গেলেন। 
চিত্রগুপ্ত একটার স্কিনের দিকে তাকালেন। সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠলো ধর্মেন্দ্র রাওয়াত বাইক চেপে বাড়ি ফিরছে। এটা হল তৃতীয় দিন।  পলিসিটা হলো না।  বিমর্ষ হয়ে বাড়ি ফিরছে। খুব মন খারাপ। বউকে বলে এসেছিল আজ পলিসিটা হবেই হবে। এই পলিসিটা হলে কি কি করবে সব ভেবে রেখে ছিল। কিন্তু হল না। জানে ঘরে ঢুকতেই মালা জিজ্ঞেস করবে পলিসিটার হলো কিনা।একটু লজ্জিত হবে। 
এমা খুব খারাপ লাগছে দেখে এত কিছু ভাবি নি তো , শুধু মনে হতো মালটা খুব চিটেল।।
চিত্রগুপ বললেন , -
ও জানে না এই পলিসিটা হলেই তার মৃত্যু হবে। বিরাট একটা আঘাত আসবে সংসারের। 
আমি তাকিয়ে আছি স্কিনের দিকে।  চিত্রগুপ্ত বলতে থাকে,-
ও  জানে না আজও ও বেঁচে গেল। বাড়িতে গিয়ে মা ছেলে বউকে দেখতে পাবে। জানে না কি হারাচ্ছে কিন্তু কি পাচ্ছে । 
 
আমি অবাক হযে তাকিয়ে আছি। 
ছবি সহযোগিতায় : উষসী রায়
পৃথিবীর কোন মানুষ জানতে পারে না। কি হারাচ্ছে কি পাচ্ছে, কি পাচ্ছে কি হারাচ্ছে। 
কেন কেন জানতে পারে না?
পৃথিবীতে পা রাখতেই তোমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় একটা ছোট্ট গাব্বুর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যায। আর সেখান থেকে সে সমগ্র বিশ্বকে তার সামগ্রিকতায় দেখতে পায় না । কোন ঘটনাকেও তার সম্পূর্ণতায় দেখতে পারেনা। সব খন্ড খন্ড হয়ে দেখা দেয় পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সীমাবদ্ধতায়। তাই তার কাছে সুখ একটা ঘটনা ।  দুঃখ আরেকটা আলাদা ঘটনা । কিন্তু দুটোই যে একই সাথে একই সময়ে যুগপৎ জন্মায় এবং মৃত্যু হয় তা বুঝতে পারেনা। জন্ম আর মৃত্যু দুইটি ঘটনা নয় ।একটিই ঘটনা।ঠিক সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো। 'এক' বললে 'দুই' এর চিন্তা মাথায় আসে তাই বলি 'অদ্বৈত'।  তোমার এই যে মৃত্যু তাও তোমারই জন্মের সেই আনন্দঘন মুহূর্তের-ই এক যাত্রা। তোমার বা সকলের-ই তোমার মৃত্যু কে মৃত্যু বলে মনে হচ্ছে কিন্তু  কেউ-ই জানো না তোমার মৃত্যুর সাথে সাথেই  পৃথিবীতে প্রভাবিত হলো  অনেক প্রাণীর জন্ম মৃত্যু  তোমাকে ঘিরেই। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘটে গেছে অনেক সুখ দুঃখের ঘটনা তোমার জন্ম মৃত্যু কে কেন্দ্র করেই।
আমি অবাক হয়ে চিত্রগুপ্তের কথা শুনছি। চিত্রগুপ্ত বলে চলেছেন-শোন এই যে এইভাবে ধর্মেন্দ্র রাওয়াতের মৃত্যু কখনোই হতো না ।যদি না তোমার জন্ম হতো ।যদিও তোমরা একে অপরের সঙ্গে অর্ধেক জীবন পরিচিতই ছিল না । আবার মজা করে হাসতে হাসতেই বললেন চিত্রগুপ্ত-
আবার একই সাথে যদি দেখো সমগ্র অস্তিত্বকে তার সামগ্রিকতায় তাহলে ভেবে দেখো তোমার জন্ম যদি না হতো পৃথিবীতে তাহলে ধর্মেন্দ্র রাওয়াতেরও  জন্ম হতো না কখনোই। অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ এর সমস্ত কিছু সমস্ত কিছুর সঙ্গে ইন্টার কানেক্টেড হয়ে আছে বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে। কোথাও একচুল এদিক-ওদিক হবার জো নেই।

তাইতো গীতায় সদাহাস্যময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন "যা হয়েছে ভাল হয়েছে যা হচ্ছে ভালো হচ্ছে যা হবে ভালো হবে।"  

আমি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছি। 
দেখছি ধর্মেন্দ্র দা আমাদের বাড়ি থেকে আজ পলিসিটা করে ফিরছে। খুব আনন্দ খুব খুশি।  অফিসে পৌঁছেই এক ঘণ্টার মধ্যে পলিসিটি ডিপোজিট হয়ে যায়। ব্রাঞ্চ ম্যানেজার-এর চেম্বার এ গিয়ে বলল -
স্যার আজ পলিসিটা উঠলো।
বাঃ congratulation., বলেছিলাম না কোন কিছুতে লেগে থাকলে জিত হবেই হবে।
লেগে থাকুন লেগে থাকুন।

দেখছি, পানাগড় বাজার কাঁকসা মোড়ের মাথায় নির্বিকার দাঁড়িয়ে আছে যমরাজ।

ধর্মেন্দ্র দা এলআইসির অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়িটা স্টার্ট দেয়। আমার বুক ধুকপুক করছে। ধর্মেন্দ্র দা খুব খুশি। বাড়ী ফিরছে। কিছুক্ষণ পরেই একটা আওয়াজ। অনেক ভিড়। 
কেউ বলল 
কে গেলো?
এলআইসি এজেন্ট। 
বাঁচবে?
না না পেটের উপর দিয়ে গাড়িটা চলে গেছে।
একজন ছিটকে পড়া মোবাইলটা তুলো দেখে 
একটা মেসেজ - 
we have completed the proposal no009022of ms arundhuti mojumder. The policy no is---409331747

                              সমাপ্ত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ