শারদ সংখ্যা ২০২০ || চিঠিপত্র || পৌষালী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

মেঘের খামে উড়ো চিঠি
পৌষালী

বাবা,
সবাই কত চিঠি লেখে। কত বন্ধুবান্ধব, স্বজনকে। কত ঠিকানায় কত সুখ দুঃখের চিঠি পৌঁছে দেয় গ্রামের ডাক হরকরা। সাইকেলের টিং টিং আওয়াজ শুনলেই কত মানুষের মন জেগে ওঠে, ওই বুঝি কাছের মানুষের খবর নিয়ে এসেছে। আমার এরকম কোনো ব্যাপারই নেই। আমার কোনো স্বজন নেই, কোনো বন্ধু নেই। আছে বলতে মা, যে দিনরাত হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে খেটে মরে আমাকে বড় করবে বলে। মায়ের কাছে একটাই ভালো লাগা তা হলো আমার মুখের হাসি। জানো বাবা, মা'কে কখনোই হাসতে দেখিনা, কাঁদতেও দেখিনা। কিরকম চুপচাপ। শুধু চুপ করে কাজ করে যায় সারাদিন। ওই আমি যখন খেলতে গিয়ে মেডেল পাই, বা ইস্কুলের মাস্টার বলে আমি ভালোভাবে পরীক্ষা দিয়েছি তখন মায়ের চোখে আলোর ঝিলিক খেলে ওঠে। আবার কিছুক্ষণ পর কাজে মন দিয়ে দেয়। শুধু একটাই কথা বারবার বলে, এই ভালোটা'কে টিকিয়ে রাখতে হবে দিপু, কখনো যেন আলোর ভিড়ে হারিয়ে না যায়। 
জানো বাবা ইস্কুলের মাস্টার বলে আমার নামের মধ্যেই নাকি আলো লুকিয়ে রয়েছে। 
বাবা, তোমার সঙ্গে বড্ড কথা বলতে ইচ্ছে করে। তোমাকে তো দেখতেই পাইনা। মা'কে জিজ্ঞেস করলেই  মা বলে, তুমি নাকি ওই আকাশের মধ্যে যে মেঘের বাড়ি আছে সেখানে নাকি থাকো। শরতের সময়  তুমি নাকি পেঁজা মেঘতুলোর জামা পরে আমাকে দ্যাখো। বাবা কিছুদিন বাদেই মা দুর্গা আসছে। তুমিও তখন মেঘতুলো হয়ে নতুন জামা পরে থাকবে। তোমার সঙ্গে তো সামনাসামনি কথা বলতে পারবনা তাই চিঠি লিখছি, বাবা তুমি একটু মা'কে বলে দেবে মা যেন এবার অন্তত নিজের জন্য একটি হলেও শাড়ি কেনে। শুধু আমার জন্যই কেনে। আর নিজে পুরোনো পরে থাকে। মা'কে একটু বলে দাওনা গো বাবা। আমি না হয় কম জামা পরব। তুমি বললেই শুনবে। আমার কথা একদম শোনে না। আমি বললেই বলে, দিপু আজ তুই  জামাকাপড় পর, যেদিন আমার দীপ্তমান অনেক বড় হবে সেদিন আমি পরব। 

বাবা আমি বড় হব কবে?

বাবা তুমি ওই মেঘতুলো হয়েই কিন্তু থেকো। ভালো লাগে তোমাকে ওইভাবে দেখতে। তাও তো তুমি আছো। খুব কাছাকাছি। মাঠে দাঁড়ালে তোমাকে খুব স্পষ্ট ভাবেই দেখা যায়। বড্ড তখন তোমাকে আমার পাশে মনে হয়।

আমি টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে শম্ভুদার দোকান থেকে গ্যাস বেলুন কিনেছি। এই বেলুনের সুতোর মধ্যে চিঠিটা আটকে দিলাম। আমি জানি বাবা, এই চিঠি ঠিক তোমার কাছে পৌঁছবে। তুমি কিন্তু মা'কে বলে দেবে মা যেন এবার পুজোয় নতুন কাপড় কেনে।

রাখলাম বাবা।

ইতি
তোমার দীপ্তমান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ