শারদ সংখ্যা ২০২০ || নাটক || স্বাতী রায় চৌধুরী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে


 নারী শক্তিরূপেন সংস্থিতা
  স্বাতী রায় চৌধুরী
চরিত্র : মা দুর্গা,লক্ষী,সরস্বতী,কার্তিক,গণেশ এবং মহাদেব।
হাস্যনাটিকা[Skit]
                     [স্বর্গের দৃশ্য]

মা সরস্বতী বীণার তারে একমনে ভৈরব রাগিনীর আলাপ তুলছেন আর ঘরের এককোণে মা লক্ষী তাঁর ঝাঁপি খুলে টাকাপয়সা গুণতে ব্যস্ত। এইসময় হন্তদন্ত হয়ে কোমরে আঁচল গুঁজে হাতে খুন্তি নিয়ে মা দুর্গার প্রবেশ।
মা দুর্গা : ও লো ও লক্ষী, ও সরস্বতী তোদের কি কোনো আক্কেল হবে না? আর দুটো দিন বাদেই তো মর্ত্যে যেতে হবে মামার বাড়ি। কত গোছগাছ করার আছে। পাঁচ-পাঁচটা দিনের ব্যাপার। কত জামাকাপড় নেওয়ার আছে,আমার অস্ত্রশস্ত্র,তোমাদের বাদ্যযন্ত্র,লক্ষীর ঝাঁপি সবই তো নিতে হবে। তার উপর ঘরের পোষা বাহন গুলো ও তো সঙ্গে যাবে। এই এতো রাজ্যির গোছগাছ কখন হবে শুনি? 
যেদিকটা না দেখবো সে দিকটাতেই গন্ডগোল। এদিকে সকাল থেকে তোমাদের বাবা গাঁজায় ছিলিম দিয়ে বসে আছেন।বছরে একটিবারই তো যাই বাপু বাপের বাড়ি। হাতে হাতে একটু গুছিয়ে দিতে ও তো পারেন। তা যেমন আমার কপাল!
তা তোমরা কি একটু দয়া করে আমার হাতে হাতে জিনিসগুলো এগিয়ে দেবে? নাকি দাদাদের মতো তোমরাও গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াবে।
মায়ের ভৎর্সনা শুনে লক্ষী, সরস্বতীর মুখ তো বেজায় কালো হয়ে গেল। কিছুক্ষন চুপচাপ থাকার পর সরস্বতী গলা ঝেড়ে টেড়ে নিয়ে আমতা আমতা করে বললো- 
সরস্বতী : মা বলছিলাম কি, মানে লক্ষীও বলছিল আর কি, এবছরটা না গেলে হয় না?
মা দুর্গা : ও মা,বলে কি! এ যে ভূতের মুখে রাম নাম শুনছি! প্রত্যেকবছর তোমাদের লাফানি ই তো সবচেয়ে বেশি থাকে বাপু মামাবাড়ি যাবার নামে। এবার হলটা কি?
লক্ষী : মা তুমি তো Android use করনা,তাই জানোনা। মর্ত্যের এখন কি অবস্থা! তুমি তো মাত্র একটা অসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলে মা। মর্ত্যে এখন লাখো লাখো অসুর।
লক্ষীর কথার খেই ধরে সরস্বতী ও বলে ওঠে-
সরস্বতী : আর এই সব অসুরগুলো এত ভয়ংকর যেফুলের কুঁড়ির মতো নিষ্পাপ শিশু গুলোকেও চিবিয়ে খায়।আমাদের মতো মেয়েদের তো কথাই নেই।
লক্ষী : আমরা ও বড় হচ্ছি মা,তাই খুব ভয় করছে মর্ত্যে যেতে। অসুরগুলো যদি আমাদেরকে ও............
কথা শেষ করা হলো না। মা দুর্গা এতক্ষন গালে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে দুই মেয়ের কথা শুনছিলেন। এবার বলে উঠলেন-
মা দুর্গা : ও মা বলিস কি রে! মর্ত্যের এই অবস্থা! এইতো গতবছর ও অসুরটাকে বধ করে আসলাম। এর মধ্যে এত অসুর হলো কোত্থেকে? এ তো বড় চিন্তার ব্যাপার।
ঠিক এইসময় মঞ্চে কার্তিকের প্রবেশ। গায়ে রঙেবেরঙের জামা,চকচকে জুতো । মাথায় রঙ করা চুল ওপরদিকে খানিকটা চূড়ার মতো হয়ে আছে। মা দুর্গা বড় ছেলেকে ঢুকতে দেখেই দ্রুতপায়ে তার দিকে এগিয়ে যান।
মা দুর্গা : ওরে ও কার্তিক শুনেছিস তোর বোনেরা কি বলছে?
কার্তিক : সব শুনেছি মা। অত চিন্তার কিছু নেই। ওরা মিথ্যেই এত ভয় পাচ্ছে। মর্ত্যে আমার চেলারা আছেনা-সলমন,শাহরুক,অক্ষয়,ঋত্বিক- কি চেহারা কি ক্ষমতা ওদের তুমি জানোনা মা।কত কিছু যে করতে পারে ওরা কি বলবো। মর্ত্যের মানুষ তো আমাদের সাথে সাথে ওদের ও পূজো করে। ওরা থাকতে ভয় কি? কোনো ব্যাটা অসুর আমাদের ধারেকাছে আসবেনা।
ঠিক এইসময় ভুঁড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে গণেশের প্রবেশ।তিনি বোধহয় বাইরে থেকে কার্তিকের কথা কিছু শুনতে পেয়েছিলেন । সেই কথার খেই ধরে বলে উঠলেন-
গণেশ : এই বুদ্ধি নিয়েই তো আর পড়াশুনোটা করা হলনা তোমার। চিরকাল টেরি বাগিয়ে আর যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা করেই কাটিয়ে দিলে।
গণেশের কথায় যারপরনাই ক্ষুব্দ্ধ কার্তিক বলে ওঠেন-
কার্তিক : আমি নাহয় টেরি বাগাই, আর তুই যে অতবড় ভুঁড়িটা বাগিয়ে ঘুরে বেড়াস। সেটা বুঝি কিছুনা? 
এরপর মার দিকে ফিরে “ মা, তুমি কিন্তু ওকে বলে দাও সবসময় আমার পিছনে না লাগতে।”
গণেশ : আহা,লাগি কি আর সাধে দাদা? পর্দার বীরত্ব আর বাস্তবের বীরত্ব যে এক নয় সেটা বোঝার বুদ্ধি ও তো তোমার হলোনা। বোনেরা যেসব লাখো লাখো অসুরের কথা বলছে সেগুলো যদি আমাদের ঘিরে ধরে মা কজনের সঙ্গে যুদ্ধ করবে বলো দিকি?
গণেশের কথায় নিজেদের বক্তব্যের সমর্থন পেয়েলক্ষী, দ্বিগুন উৎসাহে সমস্বরে বলে উঠলো;
-হ্যাঁ মা,এই কথাই তো আমরা বলছিলাম।
সরস্বতী : অতগুলো অসুর একসঙ্গে ঘিরে ধরলে তুমি পৃথিবীকে রক্ষা করবে কি করে; আমাদেরকেই বা রক্ষা করবে কি করে?
মা দুর্গা : সত্যি তো,তাহলে এখন উপায়? মর্ত্যে কি একটাও বীর নেই যে আমায় সাহায্য করতে পারে?
গণেশ : কেন থাকবে না? নিশ্চয়ই আছে মা। তার নাম অভিনন্দন বর্তমান। কিন্তু সেতো এখন ছুটিতে আছে।
মা দুর্গা : ওহো,তবে উপায় ? পৃথিবীর মানুষ যে আমায় ডাকছে।
এইসময় গাঁজায় দম দিতে দিতে মহাদেবের প্রবেশ-
মহাদেব : আছে আছে,উপায় আছে। তার ই ব্যবস্থা করে এলাম। তুমি তো সারাক্ষণ আমাকে বসে বসে গাঁজা টানতেই দেখো গিন্নি। আজ ও বুঝলে নাএই গাঁজা টেনেই তো আমি বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দিই। নইলে এমন একখানা বুদ্ধি কি আর মাথায় আসতো?
মা দুর্গা কপট বিরক্তি দেখিয়ে বলে ওঠেন- থাক্ আর বুদ্ধির ব্যাখ্যান করতে হবে না। এখন বলো তো বাপু কি উপায় ভেবেছ?
মহাদেব : শোনো,প্রতিবছর একটি অসুরকে বধ কর তুমি আর পৃথিবীর মানুষকে রক্ষা কর। এবার লাখো লাখো অসুর সেখানে। তাই দুর্গাও আর এক নয়,যাবে অনেক। তাই তো বিশ্বকর্মার কাছে গিয়েছিলাম অর্ডার দিতে।
মা দুর্গা : তাই নাকি!  আর ও দুর্গা যাবে? দারূণ ব্যাপার তো!
মহাদেব : তবে আর বলছি কি? অনেক দুর্গা যাবে। কেউ যাবে হিমা দাস হয়ে, কেউ অরূণিমা হয়ে,কেউ সিন্ধু হয়ে আবার কেউ যাবে মানসী যোশী হয়ে। আর কোনো চিন্তা নেই গিন্নি। এবার নিশ্চিন্ত মনে গোছগাছ শুরু করে দাও আর ভালোয় ভালোয় বাপের বাড়ি থেকে ঘুরে এস।
লক্ষী,সরস্বতী,কার্তিক,গণেশ একসাথে বলে উঠলো—নারী শক্তিরূপেন সংস্থিতা,নমোস্তস্যই নমোস্তস্যই নমোস্তস্যই নমঃ নমঃ।।
শেষ।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ