দর্পণ || কবিতা গুচ্ছ || সুমিতা দাস




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

সবুজ দ্বীপে আমি 


চেনা ছিলে, 

তবুও সামনে গিয়ে হাত বাড়িয়ে বলেছিলাম, 

বন্ধু হবে আমার? 

সেদিন, 

জীবনের প্রতিটি স্তবকে শুধু 

তোমায় অনুভব করেছিলাম। 

তোমার জলোচ্ছ্বাসের মুখোমুখি বসে যুগান্তরের কথামালায় সাজিয়েছিলাম নির্জন তট। 

অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ,

আবিস্কার করতে চেয়েছিলাম 

তোমার বলে যাওয়া কথাগুলোকে। 

জানি, 

জলের কোন রং হয় না? 

তবুও, 

সূর্যের রশ্মিতে ঝলমল তোমার সাত রঙা স্রোত।

কখনো বা মেঘ বৃষ্টির খেলায় 

অভিমানী হয়েছো নিজের ধারায়,

কখনো আবার অহংকারী পুরুষের মতো গর্জন তুলেছো 

বহমান প্রবৃত্তিতে,

কখনো আবার শান্ত ধীর স্থির !

যেন সবুজ পাহাড়ে ঘিরে রূপসী হয়েছো নীল আঁচল ছড়িয়ে। 

সেদিন, 

তোমার বুকে মাথা রেখে হয়েছিলাম নীরব প্রেমিকা,

পিপাসা মেটাতে পান করেছিলাম তোমার লবণাক্ত

ভালোবাসা। 

লোলুপ দৃষ্টির নজরে ছিল কোরালে ঘেরা রঙিন সত্যটা। 


আকাঙ্খার গোপন চাহিদায় 

হয়েছি কোরাল দ্বীপের রাণী। 

তৃপ্তির জীবন্ত দর্শনে হাত বাড়িয়ে বলি ,

আরো একবার!

বন্ধু হবে আমার ???

===

কথা হবে আজ                  

                      

উন্মুক্ত আকাশ, 

রঙিন স্তব্ধতা ভেঙে কথা হবে আজ!

সেদিন আমি তোমায় মেঘ বলে ডাকবো। 

তোমার ধূসর আঁচলের গন্ধ মেখে আরো একবার অবাধ্য হবো ।

অচেনা কোন নদীর বালুচরে এক ফালি আলো খুঁজবো ছোঁয়াছুঁয়ি খেলার ছলে। 

আমার অভিমান গুলোকে সেদিন ভাসিয়ে দেবো ঐ নদীর জলে, 

চুরি করে নেব গোটা দিনের আবির রং। 


জানি, 

তখনো তোমার বৃষ্টি ভেজা শরীরে লেগে থাকবে মেঘের ঢেউ, 

তবুও বেলা শেষের ভাবনাগুলোকে আটকে রাখবো চোখের ঝাপসা চাহনিতে। 


কথা হবে আজও, তুমুল বোঝাপড়ায়,

জীবনবোধের স্বরলিপিটা তাই সাজাবো আজ ,

কোন এক পাথরের ফলকে। 

তখন তুমি বুঝবে, ভালোবাসা কতটা স্থাবর।

সেদিন রক্তঝড়া এক বিকেলের কাছে চেয়ে নেব অন্য এক আলো, 

যেখানে রামধনু বসন্ত ছড়াবে আকাশের বুকে ,

পলাশের পাপড়িগুলো ঝরে পড়বে সন্ধ্যার ঠোঁট ছুঁয়ে। 


এমন করেই একদিন সন্ধ্যার খুব কাছাকাছি গিয়ে ,

আবিস্কার করবো তোমার না বলা কবিতাদের। 

মিটিয়ে দেবো সব ক্ষত,যা ছিল মনের দেওয়ালে আঁকা 

হাজার তারার ভীড়ে সাক্ষী করবো সেই উজ্জ্বল তারাটিকে, 

যার দিকে তাকিয়ে কিছু সময় বেঁধে নেব তোমার আমার। 

অনুভবে ডুবে থাকবে প্রেমের সমর্পণ, 

আকাঙ্খিত এক স্পর্শে তুমিই আমার চিরন্তন!!!

ইচ্ছেদের আধিপত্য 


সেদিনের সেই নির্জন উদাস বিকেলটা 

আমার ছিল,

আমার একলা জানলায় বসে,গোধূলির রঙে দেখেছিলাম একটুকরো পুরুষ মেঘ! 

আবেগের ভাঙা ঘরে ভারী হয়ে উঠলো আধিপত্য ,

গোটা মনের রাজ্য জুড়ে, ,বেহিসাবী কিছু আব্দার সেজে উঠলো ইচ্ছে মতো। 


প্রতিক্ষারা প্রহর গুনছিল শব্দহীন নিস্তব্ধতার মাঝে।

এভাবেই সন্ধ্যা নেমে এলো ঐ অন্ধ উপত্যকায়।

জোনাকির মিট্ মিট্ আলোর মিছিলে শুনতে পেলাম ভায়োলিনের সুর। 


দূরের পাহাড়ে বৃষ্টিরা ছোঁয়াছুঁয়ি খেলছিলো পাহাড়ি গল্প হয়ে। 

খুব ইচ্ছে করছিলো ঐ জলজ স্পর্শটাকে গায়ে জড়াতে, 

ইচ্ছে করছিলো আব্দার করে বলতে, ভালোবাসি তোমায় ।

ইচ্ছে করছিলো তোমার পর্যাপ্ত আকাশ হতে, 

ইচ্ছে করছিলো তোমার শব্দাক্ষরের তার ছুঁয়ে কবিতার স্বরলিপি হতে। 


সেদিন ,

আরো একবার বসন্তকে ছুঁয়ে দেখতাম ,

বুঝে নিতাম তার আগুন রঙের গরিমাকে ,

তুমুল বোঝাপড়ায়। 

টুকরো টুকরো স্বপ্নে খুঁজে নিতাম হারিয়ে যাওয়া অন্তমিল। 

শুধু সময়ের কাছে গুছিয়ে রাখবো   কিছু নির্বাক প্রেমের সুখ,

যেখানে সৃষ্টির নতুন রূপ ধরা দেয় রঙিন ফ্রেমে!!! 

====

কবিতা, আমি এটুকুই পারি 


নিখুঁত একটা ছবি, 

চোখের খুব কাছাকাছি এসে সোহাগী হয়েছিল, 

গুমোট আঁধার পেরিয়ে ইচ্ছে পূরণের ছবিটা পরিচিত হয়েছিল কিছু কাঙ্খিত বর্ণমালায়। 

সেদিন কবিতারা রঙিন বেশে ছড়িয়ে পড়লো মনের শূন্য ঘরে, 

যেভাবে ভোরের একমুঠো রোদ্দুর ছড়িয়ে পড়ে শাল পিয়ালের বনে।

অপেক্ষার ঋণ মিটিয়ে ইচ্ছেগুলো বার বার হারিয়ে যায় উদাসী মনের অলিতে গলিতে। 

মুহূর্তের আবেশে শঙ্খচিল হয়ে উড়ে গেছিলাম ঐ আকাশটাকে ছুঁতে, 


 বুঝতে পেড়েছিলাম, 

নিয়মের খোলস ভেঙে পরন্ত বেলার লালিমায় রঙিন ছবি আঁকবে কবিতারা। 

কখন আবার পাহাড়ের গা ঘেঁষে মেঘ কুয়াশার গল্পেরা ডানা মেলে উড়ে বেড়াবে, 

ঝরনার ধারা ঠিক বয়ে চলবে নদীর কূল ঘেষে 

কথা দিলাম, 

সেদিন অহংকারে সাজাবো নির্জন কাগজে শব্দের কুঁড়ে ঘর ।

সময়ের অবাহিকায় সেদিন  ফিরতেই হবে কবিতাদের, 

সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!


সেদিন আরো একবার তোমায় কবিতা বলে ডাকবো, 

জীবনের সব  বেদনা নিংড়ে  তোমার শরীরে শব্দের আল্পনা সাজাবো। 

তোমার নিষ্প্রাণ ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলবো, 

কবিতা , আমি শুধু এটুকুই পারি  তোমায়  ভালোবাসি বলে!!! 

ফিরে এসো আরো একবার


যেখানে আমার রাতের প্রহর গেছে থেমে, 

একাকিত্ব জীবনের জলছবিটা বড্ড ভারি হয়ে উঠেছে মনের ঘরে। 

শুধু আঁচলে মোড়া বিশ্বাসটুকু আমার সম্বল! 


বেঁচে থাকার মিছিলে আমরা তো রোজ হারাই নিজেকে, 

অজানার পথে। 

জীবন খুঁজি সত্য অসত্যের দ্বন্ধে।


তবুও যেন নিজের কাছে একটা আব্দার,

ঝিমধরা আলোতে স্বপ্নের ভীড়ে খুঁজি প্রেমের পরশ! আজও প্রতিক্ষায় অবনত আমার এক একটি শ্বাস! 


ফিরে এসো আরো একবার, 

আরো একবার বাড়িয়ে দাও হাত। 

অপরাহ্নের ডানা ছুঁয়ে উজানের স্রোতে ভাসবো দুজনে।

কাগজ কলম ছাড়াই সাজাবো শব্দের বাসর ,মধুর আবেশে!


আঁধারের ছায়াপথে হাটতে হাটতে স্পর্শেরা কথা বলবে,

ক্লান্ত দুটি চোখে ভিজে থাকবে , অদৃশ্য কিছু সুখ। 


রাতের গভীরতা বাড়বে যত, 

সূর্যটা আসবে ততই কাছে ।

ঝলমল দিনের রোদ্দুর মেখে হারাবো তেপান্তরী মাঠে, 

প্রথম আলোর কাছে চেয়ে নেব নতুন পথের দিশারী। 

সারাদিনের খুশির মোড়কে গুছিয়ে রাখবো 

তোমার  ভালোবাসার পরশখানি  !!! 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3 মন্তব্যসমূহ