কবিতা গুচ্ছ || এ কে আজাদ




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

হীরার খনি থেকে কাচের চুড়ি


সূর্যগন্ধী বিকেলটাকে হাতে নিয়ে এখনও হেঁটে যাই সেই চেনা রাজপথ ধরে।

কোথাও সুখের হাওয়া নেই, দুর্গন্ধের আঁড়ালে ডুবে গেছে এই শহরের গগণচুম্বী ইমারত সব!

সভ্যতার গলিতে তুমি নেই, জানি। 

সন্ধ্যার অালোতে হয়ে গেছো ডাকাতের হাতের মশাল।

লুট করা সম্পদ হয়ে গেছো সূর্যাস্ত আইনের ফাঁকে।

কি আর বলব তোমাকে! দোষ দেবো আর কাকে?

বিশ্বাস ভেঙে হয়ে গেছে  টুকরো টুকরো, 

তাই সাধের আয়নাটা আস্ত নেই আর,

ভাঙা কাঁচ হয়ে কেবলই ক্ষত সৃষ্টি করে স্মৃতির পথে হাঁটা বুকের ভেতর!


বিক্ষিত জলের রাশিতে বহু সুজনের নদী হয় ঠিক,

খুব করে ঝরে পড়া রিনিঝিনি কিনিকিনি অনুভবের ঝর্ণা হয় না কোনদিন!

বিক্ষিপ্ত জোনাকির অালোতে দিন হয় না জানি,

বহু চোখ-পিয়াসী চাঁদেও হয় না আঁধার ভাঙা ভোর,

রাশি রাশি পরের সম্পদে ধনী হয় না কোন দিনই চোর!

বিশ্বাসী জহরত হতে গেলে মাটির নীচে পড়ে থাকতে হয় যুগের পরে যুগ ধরে!

তারপর হয়ে ওঠে অনেক দামী হীরার খনি!


নন্দিনী, তুমি তো হীরার খনির চাইতে সস্তা কাচের চুড়ি হতেই বেশী ভালবাসো।


বেশ, তবে তাই হোক। 


রাজপথ থেকে অলিতে গলিতে ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বাস,

পঁচা গন্ধে থমকে যাক ভালবাসার নিশ্বাস!

বিরহী প্রলয়ের অাঘাতে ভেঙে খান খান হয়ে যাক স্মৃতির মিনার!

ছলকে ছলকে ঢেউয়ের আঘাতে ভেসে যাক বুকের পারে বেঁধে রাখা মনের কিনার!

অর্বাচীন এক বানের তোড়ে ভেসে যাক বুকের পারে বেঁধে রাখা হৃদয়ের কিনার!


একদিন থেমে যাবে এই নিঃসীম হাহাকার


এখন আর কবিতা হয়ে ওঠে না রাত্রির চোখ,

কবিতা হয়ে ওঠে না তারাদের মিটিমিটি,

কবিতা হয়ে ওঠে না প্রেয়সীর ঠোঁট,

কবিতা হয়ে ওঠে না বাঁশরির সুর!


এখন কবিতা হয় দূরত্বের জ্যামিতি!

কবিতা হয় শঙ্কার ডাকাতি ডঙ্কা!

কবিতা হয় আতঙ্কের নিশ্বাস!

কবিতা হয় ছুঁয়ে দেয়ার এক অচেনা অবিশ্বাস!


জানি - একদিন কেটে যাবে অন্ধকার,

একদিন থেমে যাবে এই নিঃসীম হাহাকার!

একদিন ভেঙে যাবে ভয়ের পেণ্ডুলাম,

আবার গাছে গাছে বসবে পাখিদের মেলা,

স্বপ্নের আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠবে বেলা।


একদিন আবার অনুরাগের আদরে ছেয়ে যাবে রাত্রির বাসর,

চন্দ্রমল্লিকার বনে আবার বসবে জোনাকিদের আসর,

শিউলীর ঘ্রাণে আবার ফিরে আসবে প্রাণ,

ছেলের কপালে মায়ের চুমুতে আবার ভরে উঠবে আসমান,

আবার চাঁদের হাসিতে ভরে উঠবে দুধরাঙা রাত্রির কোল,

ভোরের দেয়ালে শোনা যাবে রাতজাগা পাখিদের বোল!


একদিন তসবীর দানায় আবার ভরে উঠবে স্তুতি,

প্রার্থনালয়ে আবার হবে বিশ্বাসী কবুতরের শ্রুতি!

ঘাসের ঠোঁটে দেখা যাবে শিশিরের নিঃশব্দ হাসি,

একদিন পুকুরের জলে হবে হাঁসেদের জলকেলি,

ফাগুনের দুপুরে ঘুঘুরা আবার গেয়ে যাবে গান-

হে জীবন! আমি তোমায় বড্ড ভালবাসি।


হেমন্তের খুশি


মৃদুমন্দ হাওয়ার তালে

আলতো নরম ভোরের কালে

শিশিরকণা টুপ,

সবুজ কচি ঘাসের পাতায়

কাব্য লেখা কবির খাতায়

মন থাকে না চুপ।


উদাস করা গাছের ডালে

মিষ্টি-মধুর সুরের তালে

হলুদ পাখির গান,

এমন সময় ধানের গাছে

দোয়েল ফিঙে বাবুই নাচে

খুশিতে খানখান।

(সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই)

হিংসা ভুলে ভালবাসি


মানব ঘরে দানব দোলায়

বিজয়িনী চামড় ওই,

দেখে শুনে হৃদয় পোড়ে

ভালবাসা কেমনে কই?


হৃদয় মিনার ভেঙ্গে ফেলে

মানুষ মারে অগ্নিতে,

মায়ের কাছে তবুও যায়

মানবতার ভোগ নিতে!


মৈত্রী খোঁজে, রামের পায়ে 

মানুষ দিয়ে বলি রে!

মানুষ মেরে মানবতা! 

এটাই বুঝি কলি রে!


ধর্মকথার মর্ম যদি

মানুষ মারা ফাঁসি হয়,

রামের শিঙা কেমন করে

ভালবাসার বাঁশি হয়?


রহিমও কি আল্লাহ ভজে

এমন করে হননে?

আল্লাহ হরি যে যাই বল

থাকে না তো মননে!


মানব হৃদয় খোদার বসত

থাকেন তিনি সজ্ঞানে,

মানুষ মেরে খোদায় খোঁজে

কোন্ সে পাপী অজ্ঞানে?


মানব সেবায় স্রষ্টা মেলে

পড়েই দেখ ধর্ম বই,

সুখের সমাজ গড়তে হলে 

বুঝতে হবে মর্ম ঐ!


হিংসা বিভেদ রক্ত মাঝে

খোঁজে যারা ঈশ্বরে,

সবুজ ধরায় জল্লাদ ওরাই

রক্তে রাঙায় বিশ্ব রে!


হিংসা বিভেদ সব ভুলে যাই

মানুষ ভালবাসিতে,

মর্ত বানাই সুখের স্বর্গ

হৃদয় খোলা হাসিতে!

ফুল পাখি প্রজাপতির সাথে খেলা


আমাদের ওই বাড়ির পাশে

বাগানটা যে আছে,

আলতো শীতের সকাল বেলা

গেছিলাম তার কাছে।


নরম নরম শীতের সকাল

লাগছিল যে কেমন!

মৌ মৌ মৌ গন্ধে মাতাল

আকুল হৃদয় যেমন!


ফুলগুলো সব আহা কি যে

রঙের সমাহার,

বাগান জোড়া নয়ন ভরা

হরেক ফুলের বাহার!


কোনটা যে গোলাপী রঙ 

কোন টা যে লাল,

কোনটাতে সাদা, হলুদ

রাঙে গাছের ডাল!


চোখ জুড়ানো রূপ যে এমন

আছে হৃদয় ছুঁয়ে,

এই অপরূপ স্রষ্টার প্রতি

আসে মাথা নুয়ে,


হঠাৎ দেখি - পুষ্প ঘিরে

কি যেন কি উড়ছে,

ফুলের উপর বনবনিয়ে 

চক্রাকারে ঘুরছে।


দেখতে পেলাম - মাতোয়ারা

মৌমাছি আর ভোমরা,

বলল ডেকে- এই ছেলেরা!

খেলবে নাকি তোমরা?


দেখছো কেমন ফুল পিন্দেছে

সবুজ পাতার অঙ্গে!

বসন্তে আজ ছেলেমেয়ে

খেলব রে এক সঙ্গে।


ওই যে দেখো পাতার ফাঁকে

পাখিরা গান গায়,

ফুলের ওপর খুশীর নাচন

প্রজাপতির পায়!


ফুল পাখি আর প্রজাপতির

অবাক সাড়া পেয়ে

আমরা তখন খেলতে নিলাম

পাড়ার ছেলেমেয়ে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3 মন্তব্যসমূহ

  1. অপূর্ব সুন্দর সব লেখা সাজিয়ে এক উপহারের ডালি🌹🌹

    উত্তরমুছুন

  2. প্রত্যেটা লেখা অসামান্য
    মুগ্ধহলাম
    শুভেচ্ছা
    শুভ জন্মদিন

    উত্তরমুছুন
  3. প্রতিটি কবিতাই খুব সুন্দর ,
    জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা কবি ৷

    উত্তরমুছুন