পোস্ট বার দেখা হয়েছে
নক্ষত্রপতন
পূরব ব্যানার্জী
সবাইকে চলে যেতে হবে একদিন, মৃত্যুর চেয়ে সত্য আর কিবা আছে !!
তবু অগণিত দীর্ঘশ্বাসে, বিমর্ষতা আজ শহর ছাপিয়ে গ্রাম হতে গ্রামান্তরে --------
মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে লড়তে,
মিলিয়ে গেল ভূবন মোহন হাসিমাখা এক অনিন্দ্যকান্তি মুখ।।
এই সন্ধ্যায় নীড়ে ফেরা পাখিরাও যেন শান্ত স্তব্ধ আজ ,
থমকে গেছে হেমন্তের হাওয়া !!
যেন অনর্গল গুরুগম্ভীর কিছু কথা হটাৎই থেমে গিয়ে,
নীরবতার মূর্ছনায় বেজে উঠেছে করুণ শানাই এর সুর।।
জানি আগামীর সকালে ফের নতুন সূর্যের আলোয়,
আবারও জীবনের গানে প্রকৃতি ফিরবে তার স্বাভাবিক ছন্দে,
তবু এই শূন্যতা অপূর্ণ থেকে যাবে এই প্রজন্মের প্রতিটি বাঙালির অন্তরে ।।
মৃত্যুর আহ্বানে জীবনের সায়াহ্নে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন,
বাঙালির প্রিয় ফেলুদা, আকাশ কুসুমের নায়ক, কালজয়ী আমাদের প্রিয় সৌমিত্র !!
কে বলেছে তুমি নাই -------
তুমি আছো হৃদয়ের গহীনে, ভালোবাসার স্মৃতি জুড়ে,
তুমি আছো বাঙালিয়ানায় -----------
তুমি চির অমর হয়ে রয়ে যাবে তোমার অনন্য শিল্পকলায়,
পথ হারানো আপনভোলা অপূর জন্য হাহাকার,
যেন আজ আকাশ বাতাস জুড়ে -----------
মহাশূন্য হতে যেন ভেসে আসে আজ কবিতার পুষ্পাঞ্জলী কারো জলদগম্ভীর মধুর কণ্ঠস্বরে !!
ভুলবে না তোমায় বাঙালি কোনোদিনও -----------
চিরঅমর তুমি অভিনয়ে, কবিতায়,বাচিকতায়,
আমাদের মননে তুমি চির অম্লান, তোমারই স্মৃতি আকঁড়ে ।।
====
একটি অতি সাধারণ শবযাত্রা
মলয় সরকার
একটি মৃত্যুর গাড়ী চলেছে গড়িয়ে গড়িয়ে--
চলেছে কিছু বাসী রজনীগন্ধার
অনিচ্ছুক বিকৃত গন্ধ কে জোর করে সঙ্গে নিয়ে,
তার সঙ্গে বেজোড় হলেও, সস্তা একমুঠো উদাসী ধূপকে সহমরণে পাঠানো হয়েছে।
কয়েকটা কাক অনাহূত হয়ে আকাশে ঘুরছে পরিদর্শকের মত।
আর হ্যাঁ, কিছু জঘন্য মাছি চেটে নিচ্ছে তাদের লোলুপ জিভ দিয়ে
শবের দেহ নিঃসৃত দুর্গন্ধ রস;
তাদের তৃপ্ত নিঃশ্বাসে ভরে যাচ্ছে
চারিপাশ।
গাড়ীর হেমন্তের মত সাদা আলখাল্লা পরা যাত্রী জীবনের শেষবারের মত চলেছে অন্তহীন যাত্রাপথে -
সঙ্গে নিয়ে চলেছে কিছু ছেঁড়াছেঁড়া, অপূর্ণ স্বপ্নের অকালমৃত্যুর ছবি।
কুঞ্চিত নিমীলিত চোখে তাই হতাশাভরা অপ্রাপ্তির প্রতিবাদ,
আর গাড়ীর চাকার ভারী দাগে তুলে দেয় অজস্র প্রশ্নবোধক চিহ্ন-
যা নীরব কশাঘাত করে ফেলে যাওয়া বর্তমানকে।
শুকনো সাদা ফাটা ঠোঁটে এখনো মাখা বোধ হয় অতীত মধুময় প্রেমের নৈর্ব্যক্তিক ব্যঞ্জনা -
একমাত্র চুল্লীর স্নেহময় উষ্ণতাই পরম মমতায় অপেক্ষা করে শান্তির নিশ্চিত প্রলেপ দানে।
কিছু মিথ্যা বিলাপ আর স্বার্থচিহ্নিত প্রলাপকে সঙ্গে করে
সময়ের বীণায় টুংটাং করে বেজে যায় বিদায়ের মালকোষ-
ম্রিয়মাণ গাড়ী এগিয়ে চলে নিশ্চিত এক জ্বলন্ত পরিণতির দিকে--
====
যতিচিহ্ন যখন ক্লান্ত অবসর
পিন্টু বেতাল
অগুণিত শব্দের কোলাহলের ভিড়ে,
অল্প একটু অবসর- দাঁড়ি, কমা, ও অন্যান্য যতিচিহ্ন;
বেখেয়ালী স্বল্প সময়ের ব্যবধানেই, হতে পারে সমস্ত বন্ধন ছিন্ন!
হতে পারে বিলুপ্ত পথ,
হতে পারে, অস্তিত্বের সংকট;
হতে পারে নিশ্চিৎ বিনাশ প্রাপ্তি- মনের ভাব প্রকাশের।
ওই অল্প অবসরটাই- অলক্ষ্যে অসীম শক্তি জোগায় চিন্তাধারা বিকাশের।
অগুণতি মুখ-মুখোশের ভিড়ে,
তেমনই- স্বল্প অবসরটা, সংজ্ঞা বহন করে ভিন্ন ভিন্ন;
বাঁধা পড়ে কখোনো অটুট সম্পর্কের জালে,
আবার কখোনো বা, মেকী সৌন্দর্য্যে আচ্ছন্ন!
সময়ের আবর্তে- দৃঢ় যদি হয় বন্ধন,
পরিচয়টায় শোভা পায় দূর্বার হৃদস্পন্দন।
কখোনো সখোনো, আচ্ছন্ন মোহেও- হৃদস্পন্দনটা হতে পারে স্তব্ধ;
হতে পারে সম্পর্কটার অকালমৃত্যু!
হতে পারে, মুখ আর মুখোশের মতিভ্রমটা উন্মোচিত!
অবশ্যম্ভাবী তখনই আবার-
দাঁড়ি, কমা, জীবনের যতিচিহ্নগুলোই-
অবলীলায় জন্ম দিয়ে যায়- অজস্র কোলাহল মিশ্রিত অগুণিত শব্দ।
বিকল জীবনের গাড়িটা-
কেবল খাতার পাতাতেই খুঁজে বেড়ায়, অল্প ফাঁকফোকর;
যতিচিহ্নটা- তখন শুধুই ক্লান্ত অবসর।।
===
সে কোন বাদল বাউল
মেঘে ঢাকা তারা
সে কোন বাদল বাউল হৃদয়-দেউল
মাতায় আলোড়নে,
সে কেবল সাজায় স্বপন, বাজিয়ে গোপন
একতারা তোর মনে!
সুরে তার ওই ভোলাপন মন উচাটন
রয় না ঘরের কোণে!
সে বুঝি লাগায় আগুন অকাল ফাগুন-
জাগায় হৃদ-অঙ্গনে!
আবেশে সে চমক লাগে পুলক জাগে
অঙ্গে ক্ষণে ক্ষণে,
বুঝি তায় মগ্ন থাকা প্রলাপ বকা
বিনিদ্র স্বপনে!
মনটা সে ছুটিয়ে বেড়ায় উতরে তরাই
পথে পথে বনে!
সেজে কোন বৈরাগী সে সকল ত্যাগী
ভাবের নিমজ্জনে !
ও সে কোন সৃষ্টিছাড়া আপনহারা
সদাই সন্তরণে-
তোর ঐ মানসলোকে,দিব্যচোখে
স্বপ্ন জাগরণে!
কে আছিস ধর পাগলে বাঁধ আগলে
মায়ার বন্ধনে-
ওর ফন্দী কেবল বন্দী করা,ওকে -
পাঠা নির্বাসনে!
====
ছবি
কৃষ্ণশঙ্কর আচার্যি
শতাব্দীর শ্রাবন্তী থেকে
সৃষ্টির ভিতরে সে তো তুলি দিয়ে আঁকা রহস্যের রেখা।
আলোক আবরণের লিপ্ত অয়নে জ্যোতিস্কলোকে দেখা।।
কাতর দুটি মুক্তা আঁখি কেবল প্রেমের প্রতীকচিহ্ন।
ক্ষণদ্যুতি উদ্ভাসিত ম্লান জগত অন্তরে তাহা ভিন্ন ।।
মনের অনুশাসনে রাত্রিদিন অদৃশ্যের আলোছায়া।
অস্পষ্ট আঁধারে একান্তে কবির কলমে সে প্রেম মায়া।।
সপ্তর্ষির শান্ত তিথিতে সত্যরূপে সে যে শাশ্বত যাত্রী।
দুঃস্বপ্নে কম্পিত দিগন্তের এলোমেলো উচ্চাশার রাত্রি।।
অতিদূর আকাশের এক কোণে সে যে স্থায়ী অরুণিমা।
চোখে চোখে চুরমার করে ছলছল স্বচ্ছ নদীসীমা।।
অলক্ষিতে আত্মার ঐতিহ্যে স্থির ক্লান্তিহীন সম্ভাষণ।
অনবরূদ্ধ আবেগে বহু ইঙ্গিত স্বপ্নে প্রতিফলন ।।
স্নায়ুতন্ত্রী বোধে নীহারিকায় ভাষা সে তো কাব্য-শরীরী।
গোধূলি বেলায় ডিঙি নিয়ে ফেরে নিদ্রার্ত নাবিকের-স্ত্রী।।
স্পষ্ট সুচারু মুখের সত্ত্বাতে শিল্পীর প্রতিবিম্বপাত।
প্রেমের কারণে হাজার বছর ম্লান আলোহীন রাত।।
তার অভ্যন্তরে অতিরিক্ত বাসনা স্বর্গীয় উপলব্ধি।
পূর্বরাগের ইশারাতে উলটানো আঁখি না করে সন্ধি।।
অন্তর্ভেদী ঝলকানিধারা অহরহ আলোর নির্ঝরে।
অনন্তে অকৃত্রিম সৃষ্টির প্রেরণা পিয়ানোর ভিতরে।।
অসীম শূন্যে আহত অভিমান আঁটা, মৌন মুখী মেরী।
নির্জনে আলো-আঁধারি মুখছবি দুই জোড়া চোখ মেলি।।
অপরূপ রহস্যের রূপরেখা যেন এক সূত্রে গাঁথা।
অনিশ্চিত চঞ্চলতায় ভালোবাসা বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বাঁধা।।
যতদূর দৃষ্টি যায় জাগতিকে সজাগ তার ইশারা।
অলৌকিক আশ্রয়ে নাস্তিক, নিষ্ঠুর ভূমিতে আত্মহারা।।
অনুভবের অন্তরালে থাকা ঐক্য, আপাত আকুলতা।
আবেগের নিঃশেষিত মন উর্বশী-স্বপ্নে আনে স্তব্ধতা।।
রাত্রির আহ্বানে নক্ষত্রে কাঁপা নীলাভ ব্যথিত প্রকাশ।
ব্যর্থ প্রেমে ভালোলাগে আজও প্রিয়ার নির্গত নিঃশ্বাস।।
অজস্র ধারায় ঝরেছিল ভালোবাসার অমৃত স্বাদ।
স্নিগ্ধ অনুভবে চেয়ে থাকা পবিত্র মধুরিমার রাত।।
অনির্দেশ অবসানবার্তা যেন আঁকড়ে ধরা তুলিতে।
অদ্ভুত আঁধারে অমরত্বের আশা প্রেমের পৃথিবীতে।।
তারপর নদী অববাহিকার কামনা জোয়ার জল।
নির্মল আনন্দে অন্বেষণ নির্জনে নির্ঝরিণী অতল।।
স্বপ্ন নয় যুগান্তের সঞ্চিত অভিমান অজানা পুরে।
করুণার আভাসে আধোজাগা নম্র নারী ভাসে অদূরে।।
শতাব্দীর পরে ও সুন্দর স্থির দৃষ্টিতে সে যে সাবলীল।
নীরবে নিভৃতে অপার্থিব আলোর আড়ালে অনাবিল।।
কিন্তু শিল্পের চিত্রকল্পে সাগর তরঙ্গের ভেজাজল।
সার্থক শোভার সজ্জায় অতলান্ত আঁধারে ও উজ্জ্বল।।
তবে কি এ সব অচেনা ঐশ্বর্যের অসার্থক উপমা।
এমন সুচিন্তিত নমুনা নবসূর্যে দীপ্ত নিরুপমা ।।
মোহময় মোহিনী মায়ায় মত্ত তিমিরবিনাশী কবি।
অনন্তের অনুভবে নক্ষত্রলোকে নিষ্পাপ এক ছবি।।
অন্তহীন রহস্যের মর্মবাণী উজ্জ্বল আস্তরের আলো।
মিশরে-মুক্তাসমান-মানুষী আবেগে হঠাৎ ফুরালো।।
4 মন্তব্যসমূহ
বাংলা সাহিত্যের এক অভূতপূর্ব সারা জাগানো মঞ্চ বঙ্গীয় সাহিত্য দর্পণ, নবাগত কবিদের কাব্য-মন্দির, আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা আরো আরো সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হয়ে উঠুক সবার প্রিয় বঙ্গীয় সাহিত্য দর্পণ।।
উত্তরমুছুনকৃতজ্ঞচিত্ত অশেষ ধন্যবাদ "বঙ্গীয় সাহিত্য দর্পণ" পরিবারের প্রতি.....
উত্তরমুছুন
উত্তরমুছুনপ্রত্যেকের লেখা অসাধারণ
মুগ্ধহলাম
প্রতিটি লেখাই অসাধারণ।
উত্তরমুছুনমুগ্ধতা নিয়ে গেলাম। সকল কবিকে আমার হার্দিক অভিনন্দন।
দর্পণের এই শুভ উদ্যোগকে সাধুবাদ।