পোস্ট বার দেখা হয়েছে
শিশুর বায়না
সাবিত্রী জানা ষন্নিগ্রহী
সবে স্কুলে যেতে শিখেছে,
মায়ের কাছে ছোট্ট শিশুর জিজ্ঞাসা-
মা আমি দাঁড়াবো কোথায়? বড্ড রোদ্।
কেন! গাছের তলায় দাঁড়া-ছায়া-বেশ শীতল।
ওটা তো তোমার গাছ- আমার গাছ দাও।
মায়ের গলায় বিস্ময়-
তোর গাছ! ওটাই তো তোর গাছ।
শিশুর গলায় তাচ্ছিল্য-
মা-তুমি বেশ বোকা-
আমি কি এখানে থাকবো নাকি!
সাহারা, থর, দাবানলে পুড়ে যাওয়া কালোমাটি আমায় ডাকতে পারে তো।
--মা কে শোনায়-জানো মা বরিদাদু কি লিখেছেন! শিশুর গলায় রবিঠাকুরের কবিতা--
"চাই মুক্ত বায়ু, চাই বল- চাই স্বাস্থ্য-
আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু"।
মায়ের কন্ঠে বিরক্তির সুর--
কি হবে ঐ লেখা দিয়ে?
শিশু উদাত্ত কন্ঠে বলে ওঠে---
"সবুজ পাতা-ও তো আমাদের জীবনের বায়ু দেয়।
মানুষ অনেকদিন বাঁচে-সুস্থ থাকে।
কত বৃক্ষ শহীদ হয়েছে- কৃষিক্ষেত্রে অট্টালিকা হয়েছে-কংক্রিটের দেওয়াল
হয়েছে রাজা।
শীতল হাওয়া গরম হয়েছে-
পৃথিবীর জ্বর হয়েছে।
---
মা- দাও না একটি চারা আমায়-আমার প্রাণ,
আমার উঠোনে সে হবে রাজা-আমি হবো প্রজা।
নতজানু হয়ে প্রণাম করবো - আর বলবো-
তুমি আমায় ছেড়ে চলে যেয়ো না"।
মায়ের বকুনি-পাগলামো রাখ তো এবার,
খাবি আয়।
---তুমি আমার বোকা মা--
"আমরা আটকে পড়েছি-
সবুজ ঘরের দাবদাহের মাঝে-সবুজ ঘরের ফল।
আমাদের মাথা টলছে- হৃদপিণ্ড কাঁদছে-একটু বিশুদ্ধ বাতাস চাই"।
------
মা ; আজ সব বন্ধুরা মিলে ঠিক করেছি-
সবাই কোলে ক'রে এক একটি শিশু গাছ নেবো- -বাড়ির পাশে লাগাবো।
তুমি একটি চারা দিও আমায়-
তোমার উঠোনে লাগাবো-
"আমরা সবুজের সেতু বাঁধবো, সবুজের ঢেউ খেলাবো।
টুনটুনি, বুলবুলি, শালিক -কোকিল -ডালে ডালে বাসা বাঁধবে, ঝগড়া করবে-ভাব করবে।
লাল-খয়েরী ডিম পাড়বে,
ছোট ছোট বাচ্চাগুলো হাঁ ক'রে খাওয়ার চাইবে।
পাতায় পাতায় মাকড়সা সূক্ষ সূতো দিয়ে জাল তৈরী করবে-পোকা ধরবে- রসপান করবে।
আচ্ছা মা-গাছের ডাল না থাকলে পাখি-মাকড়সা কোথায় থাকবে?
একটি চারা দিও আমায়---
তোমার দেওয়া চারা আমার হাতে বড় হবে-
কুলুকুলু হাওয়ায় কচিকচি
পাতা দোল খাবে।
ডালে ডালে কোকিল কুহুকুহু সুরে গান গাইবে।
গাছ থেকে টুপটুপ ফুল পড়বে-বাড়ির উঠোনে-
আমি আমার বুড়িমাকে কোলে বসিয়ে ফুল কুড়াবো,
এক একটি ফুল গুঁজে দেবো তোমার চুলে।
আমার গাছ-আমার মা-আমার কোকিল-
আমার জগৎ-বিশ্ববৈচিত্র্য মায়ের দুয়ারে-মায়ের উঠোনে"।
মা আমরা সবাই শপথ নিয়েছি--
"আমরা সবুজ-আমরা হবো না অবুঝ,
পৃথিবী তোমার দূর হোক জ্বর-
তোমার উপর না যেন হয় দূষণের ভর।
--বাঁচুক পাখি, বাঁচুক পশু
প্রাণ জুড়াবে স্নিগ্ধ বাতাস,
দু'চোখ ভরে দেখবো মোরা-
নীল আকাশ-নীল আকাশ।।
====
স্থায়ী পরম্পরা
সুব্রত মিত্র
ফিরে আসার আগে সব কথা থেমে যেত
থেমে যেত সব আশা
তথাপি মাপকাঠির দীর্ঘায়ু হয়েছে সম্বল
পৃথিবীতে আশ্চর্য প্রাদুর্ভাব বলে কিছু আছে
একটি চুম্বকের লৌহ আকর্ষণ বিচলিত সংসার পাতে,
সংসার পাতে ঘর্ষণ পদ্ধতির
লাজ ভাঙা অভিলাজের প্রাপ্তিরা গণ্ডির আওতাহীন
অবস্থান কেড়ে নেয় নিয়তির মায়াজাল
নিস্পলক আলোর রোশনাই মিথ্যের প্রাদুর্ভাব উন্মোচন করে
উত্তাল সুর মনোবল প্রাঞ্জল প্রবাহ শীতল
ওরা কথা বলে চলে আনমনে আছিলে
প্রেতাত্মার নিগ্রহের ভয় নেই এখানে
এখানে চলমান ঢেউয়ের অগ্রসর হয় ক্রমান্বয়ে
অদ্ভুদ মেঘদূত দিশার উৎপত্তি ধার করে ফেরে
কোন তপস্যার মালির চোখে নিদ্রার কাঁদন
বাঁধন ছিঁড়ে বোনে বংশীর মিলন
চির অপরিণত,চির সংযত,চির মাধুর্যের আলাপ
বয়ে আনে সংলাপ,পুষ্প বনে ফুটিয়ে গোলাপ
হাপিত্যেশের দৌরাত্ব অবনতির সাধন ঘটায়
পিচ্ছল কেন্দ্রবিন্দুতে অস্থায়ী মরীচিকা বাসা বাঁধে
অসন্তোষ জনরোধ,সন্তোষ বিড়ম্বনা,ভিড় গড়ে মৃত্যুর
কালিমার মিছিল শেষে যত খুশি দুঃখ উঠবে হেসে
কারামুক্ত অসম্বল যাত্রা,মাত্রাহীন অশোভনীয় প্রার্থনা
দিন গোনা শেষ হবে,শেষ হবে মুহূর্তের লালন
আমার বা আমাদের প্রায়শ্চিত্ত অনেক উচ্চবিত্ত
অকল্যানময় ঢেকি ছাঁটা চালের আমি বাদামি আবরণ
ছেঁটে ফেলেছিল না জেনে আমার ভূমিকা হেথা অকারণ
আমি কঙ্কাল,আমি জঞ্জাল,আমি ধ্বংসের মহাকাল
চির চেতনার পরিমার্জিত কোন গহ্বরে ক্ষুদ্র কীট অম্লান
বৈরাগ্যের প্রকারভেদ চর্চিত অনুকাব্যের প্রাঙ্গণ
অনুকল্যের প্রশ্রয় গ্রহণ করে নবারণ সর্বাঙ্গন।
===
করুণ আকুতি
কামনা ইসলাম
তুমি বুঝলেনা তো এই জীবনে
ছিলে কতো আপন,
হৃদয় মাঝে রেখে ছিলাম
করে কতো যতন।
শিশির থেকে বৃষ্টি তুমি
ঝর্ণা হয়ে আছো,
দূর্বাঘাসের নরম ঠোঁটে
তুমি মিশে গেছো।
নদীর ঢেউয়ে ভিজে ভিজে
তোমার ছবি ভাসে,
বর্ষা বৃষ্টি হিমেল হাওয়ায়
তোমার কণ্ঠ আসে।
রাতে যখন আঁধার নামে
জোছনা খোঁজে মন,
সকল বাঁধা পেরিয়ে ভাবি
তুমি বড় আপন।
লুকিয়ে লুকিয়ে লিখেছি কতো
কবিতা গল্প গান,
তুমি আমার সকল ছন্দের
একটাই শুধু প্রাণ।
ঊষালগ্নে জেগে জেগে
আবছা আলোয় দেখি,
রবির সাথে তোমার ছায়া
বুকে ধরে রাখি।
গড়িয়ে পড়ে সূর্য কিরণ
বিলীন হয় আলো,
তবুও ভাবি আছো তুমি
হয়তো কোথায় ভালো।
ভুলে যাওয়া হয়না কেনো
মনে পড়ে বারবার,
নিশিতে স্বপনে কেনোযে আসো
ফিরে ফিরে আবার।
ভাগ্য লিপি লেখা ছিলো
বেদনার কালি দিয়ে,
তাইতো আজও স্বপ্ন দেখি
তোমাকে আমাকে নিয়ে।
জীবন যুদ্ধ বড়োই করুণ আকুতি মিনতির ঘর,
আপনার চেয়ে আপন যে
সে হয় সবথেকে পর।
1 মন্তব্যসমূহ
প্রতিটি কবিতায় অনন্য শিল্পকলায় সমৃদ্ধ, অসাধারণ........
উত্তরমুছুন