দর্পণ || ইপত্রিকা || ১২ তম সংখ্যা ||পায়ের ছাপ - অলিপা পাল




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

পায়ের ছাপ

অলিপা পাল


            এক থেকে নয় তার পরে দশ

            ব্যরিকেট ভেঙে ফেলে এশহর

            তুমি আর্জেন্টিনায়

            যত দূরেই থাকো

            আমার স্বপ্নের হার্টথ্রব


 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল চুরির কলঙ্ক এরাজ্যের গায়ে আগেই লেগেছে। এবারে সেই তালিকায় যুক্ত হল দিয়েগো মারাদোনার পায়ের ছাপ! 

নোবেল পদকের মতো চুরি হয়তো এখনই বলা যাবে না। কিন্তু কলকাতার থেকে সত্যিই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে দিয়েগো মারাদোনার পায়ের ছাপ। 

লজ্জা। কলকাতার লজ্জা। ফুটবল রাজপুত্রের ইতিহাস ধরে রাখতে পারলো না তিলোত্তমা। মারাদোনার স্মৃতি বেমালুম হারিয়ে ফেলল কলকাতা। ফুটবল রাজপুত্র দিয়েগো মারাদোনার বাপা মানে একের পর এক ইতিহাস। চিরস্মরণীয় হয়ে থেকে যাওয়া এক একটা গোল । সেই পায়ের ছাপটাই হারিয়ে ফেলল কলকাতা ৷এ লজ্জা আমার মত আমার বাসস্থান মহেশতলার সকল 

জনগণের ৷

তাঁর পায়ে ছিল জাদু। ফুটবলের জাদুকর মারাদোনার সেই পায়ের ছাপ পড়েছিল এ বঙ্গেও। শুধু পড়েইনি, রীতিমতো ছাপ নিয়ে রাখা হয়েছিল মহেশতলার একটি অনুষ্ঠানে। কথা ছিল বাঁধিয়ে রাখার। কিন্তু আর্জেন্টিনীয় ফুটবল কিংবদন্তির মৃত্যুর পরে অনেক খোঁজ খবর করেও পাওয়া গেল না তাঁর পায়ের ছাপ নেওয়া সেই সিমেন্টের বেদির। উদ্যোক্তারা দায় ঠেলছেন একে অন্যের উপর। দিনের আলো আজও দেখেনি 'হ্যান্ড অব গড'এর হাতে সূচনা হওয়া সেই ফুটবল অ্যাকাডেমিও।

সালটা ২০০৮। কলকাতা সফরে এসেছিলেন ফুটবলের রাজপুত্র মারাদোনা। 

বিভিন্ন কর্মসূচির মাঝে মহেশতলার ফুটবল স্টেডিয়াম এবং ফুটবল স্কুলের জমি উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে আসেন বিশ্বকাপ জয়ী কিংবদন্তি ফুটবলার। হেলিকপ্টার করে মহেশতলা পৌঁছনোর পর হাজার হাজার মানুষের ভালোবাসায় ভেসে গিয়েছিলেন মারাদোনা। ছোট ছোট শিশুদের ফুটবল পায় দেখে মারাদোনা মুগ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। মঞ্চ থেকেই বাঁ পায়ে ফুটবল স্কিল দেখান তিনি। শিশুর মতো আনন্দে ভাসেন।

ফুটবলের শহর কলকাতাতেও যে তাঁর গুণমুগ্ধের সংখ্যা বিপুল, তার প্রমাণ মিলেছিল সে দিনের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস-উন্মাদনায়।  তারপর আসে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত। প্লাস্টার প্যারিসে মারাদোনার বাঁ পায়ের ছাপ তুলে রাখা হয়। যে পা ছুঁয়ে দেখার জন্য তাঁর অনুগামী থেকে ফুটবলপ্রেমীরা লক্ষ লক্ষ মাইল ছুঁটে যেতে পারেন ৷ দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে পারেন সেই পা দর্শককে দেখিয়ে ছাপ দেন মারাদোনা ৷

অনুষ্ঠান শেষে মারাদোনার স্মৃতি হিসেবে একটি সিমেন্টের বেদির উপর তাঁর পায়ের ছাপ রেখে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অযত্নে, অবহেলায় সেই স্মৃতি আজ উধাও। হদিশ দিতে পারলেন না তদানীন্তন অনুষ্ঠানের আয়োজকরা ৷ অনুষ্ঠানের পর মহেশতলা পুরসভার পক্ষ থেকে মারাদোনার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল রুপোর তৈরি তাজমহল। কিন্তু সবটাই এখন কালের গর্ভে বিলীন। মারাদোনার পদার্পণের স্মৃতি বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই মহেশতলায়।

কথা ছিল সেই বামপায়ের ছাপ নবনির্মিত স্টেডিয়ামে রাখা হবে। সেদিনের সেই ছবি আজও জীবন্ত।

তবে তারপরের বাকিটা রাজনৈতিক দলাদলি আর ফুটবল রাজপুত্রকে ভুলে যাওয়া।

নানান টানাপোড়েনের মাঝে গঙ্গা দিয়ে বয়ে গেছে বহু জল।মহেশতলার সেই জায়গায় গিয়ে দেখা গেল ১২ বছর পরেও স্টেডিয়াম তৈরিই হয়নি। আগের শাসক এবং বর্তমান শাসক দলের স্বার্থ জটে আটকে আছে আধুনিক মানের ফুটবল স্কুল এবং স্টেডিয়াম তৈরির কাজ । স্টেডিয়াম তৈরি হলে নিজে উদ্বোধন করতে আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন মারাদোনা স্বয়ং।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ