ভয় না পেয়ে || সাবিত্রী জানা ষন্নিগ্রহী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

ভয় না পেয়ে

সাবিত্রী জানা ষন্নিগ্রহী


কলকাতা যেতেই হোত। কিছু করোণার উপদ্রব তো ভয় পাইয়ে দিয়েছে। তারসাথে নতুন এক প্রজাতি এসেছে যে কিনা আরো মারাত্মক-- খবরে শোনা। প্রায় দশমাস আগে অজান্তে হাওড়া স্টেশনকে বিদায় জানাতে হয়েছে‌। --কিন্তু কলকাতায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে আছে। যেতে হবেই। বয়সজনিত কারণে চারচাকা গাড়িতে একনাগাড়ে চারঘন্টা বসে থাকা মুশকিল। তাই সমস্ত দ্বিধা কাটিয়ে ট্রেনের চেপে বসলাম। রিজারভেশন সিট--তিনজনের সিটে আমরা দু'জন আরামে বসে হাওড়া স্টেশন পৌঁছে গেলাম। আমরা সিনিয়র -সুতরাং বাসে বা লোকাল ট্রেনে চেপে যাওয়া সমীচীন হবে না। প্রিপেইড ট‍্যাট্সি লাইনে দাঁড়াতেই হবে। না ভিড় নেই। ---পৌঁছলাম দক্ষিনেশ্বরের-আদ‍্যাপীঠে। মন টানছে দক্ষিনেশ্বরের মা ভবতারিণীদেবী, গঙ্গা বাঁদরগুলো। তারসাথে কৌতূহল হচ্ছে জন সমাগমের বহর ও ঢোকার নিয়মাবলী দেখার। 

---বিকেলে গেলাম --পরিচিত রাস্তায়। ধাক্কা খেলাম গঙ্গার ধারে যাওয়া মানা। মন্দিরমুখী এগোলাম --দোকানগুলোর দিকে। আবার ধাক্কা--থারমাল চেকিং। মন্দির চত্বর থেকে ফিরে এলাম। বেশ ভিড় -ঠেলাঠেলি। এই চত্বরের বাঁদরগুলোকে পেলাম। স্থান বদল করেছে‌। তবে সংখ্যায় কম। রানী শিরোমনি মন্দিরের আশেপাশে রেলিংয়ের উপর বসে আছে -সাথে কাচ্চাবাচ্চা। ফলমূল কিছু পেয়েছে-বটগাছের তলায় পূজোর উপকরণের সাথে। স্নানের ঘাটে ভিড়ের কোন ঘাটতি নেই। তবে প্রত‍্যেকে মাস্ক ব‍্যবহার করছে।

পরের দিন "পৌষসংক্রান্তি"

-সকাল সাতটায় গেলাম ভিড় দেখার কৌতূহল মেটাতে। স্নান করার আগ্রহ নেই। এক আঁচলা জল হাতে নিয়ে মাথায় ঠেকানোর আগ্রহ ছিল। কিন্তু পূন‍্যার্থীদের সমাগমে আমি আমার আগ্রহ বিদায় দিলাম। ---ফিরে এলাম রুমে। 

---গুরুত্বপূর্ণ কাজ মিটিয়ে ফেরার পালা। চেপে আসতে হবে লোকাল ট্রেনে। ট‍্যাক্সি নিয়ে সোজা হাওড়া। টিকিট কাউন্টারে একেবারেই ভিড় নেই।

কোন কোন স্টেশনের প্লাটফর্মে নির্দিষ্ট দূরত্বে সাদা গোল দাগ দেওয়া --অর্থাৎ ঐ সাদা দাগের মধ্যেই দাঁড়াতে হবে। --একটি ট্রেন ছেড়ে গেল --পরের ট্রেন নিশ্চয় ভিড় কম হবে। ঠিক তাই। পরের ট্রেনে একবারেই ভিড় নেই। বসার দুটো সিটের মাঝে  "সাদা কাটা" দাগ দেওয়া আছে। অর্থাৎ ঐ কাটা দাগের উপর কেউ বসবে না‌। করোণার সংক্রমণ এড়াতে এই ব‍্যবস্থা। তবে ছ'সাতটি স্টেশন এভাবেই চললো। না আর কেউ নিয়ম মানেনি--পাশাপাশি বসছে সবাই। পৌঁছলাম মেদিনীপুর। ---চলে গেলাম "সূর্যাস্ত-সপ্তাহান্তের মিলনহাট" --দেখতে। মেদিনীপুর শহরের অদূরে কংসাবতীর নদীর পাড়ে -ব্রীজের উত্তর ধারে উঁচু ঢিপির উপর।--মুক্ত আকাশের নিচে গাছের তলায় গোলাকার ভিড় --বাজনা বাজছে। উঁচু নীচু-খানাখন্দ অতিক্রম করে ক্রমশঃ উপরে উঠতে লাগলাম। উপরে গাছের তলায় আদিবাসী বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েরা লাল কার্পেটের উপর গাছের তলায় নাচছে। তারই গোলাকার ভিড়। আট দশটি চারচাকার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। বড় ছাতার নিচে ফুচকা-তেলেভাজা বিক্রি হচ্ছে। --তফাতে তফাতে হাঁটছি--কিন্তু অন‍্যদের কি করোণার ভয় নেই!!! নিশ্চয় ভয় নেই। উচুঁ ঢিপির উপর অংশ সমতল। বাঁশের ছোট ছোট ঘেরা-এক একটি অংশে ঘেরার মধ্যে দোকান। বেশিরভাগ মেয়েদের দোকান। গ্রাম থেকে হাতে তৈরি বড়ি, আচার, ব‍্যসন, সাবান, ব‍্যাগ, বুটিক শাড়ি, ভুট্টার খই, চানাচুর, ছোলাভাজার দোকান-- সবই হাতে তৈরী‌। বেশ ভিড়--হাসি হাসি মুখে সপ্তাহান্তের হাটে ঘোরাঘুরি করছে বহু মানুষ।

--"করোণাভয়"--অতিক্রম করেছেন প্রায় সবাই--তাও মনে মনে খটকা লেগেই আছে। জনসমাগমে এই বুঝি কিছু হয়ে যায়।

---করোণা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি---ট্রেনে ওঠা ঠিক হবে কি হবে না। কিন্তু একবার চেপে দেখে নিলাম তো ব‍্যবস্থা কেমন ও আমরা কেমন সচেতন। জনসমাগম বুঝিয়ে দিল--করোণাকে ভয় নয়--সাবধান থাকে-সচেতন হও -নিজেকে সুস্থ রাখো।

--- সব ঠিক আছে -আমাদের প্রয়োজন যে সবার আগে। 

যাইহোক ভালোয় ভালোয় ফিরে এসেছি। আবার যদি যেতে হয় ভাবলেই আবার আশঙ্কা--এই বুঝি দেহে প্রবেশ করে করোণা জীবানু।

---ভালো থাকাটাই জরুরি --কাজগুলো না করলে ও যে ভালো থাকা যায় না।--

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3 মন্তব্যসমূহ

  1. খুব ভালো লাগলো, আসল কথা ওটাই .... ভালো থাকতেই হবে , ভালো থাকাটাই জরুরি 👍

    উত্তরমুছুন
  2. খুব ভালো লাগলো, আসল কথা ওটাই .... ভালো থাকতেই হবে , ভালো থাকাটাই জরুরি 👍

    উত্তরমুছুন
  3. খুব ভালো লাগলো, আসল কথা ওটাই .... ভালো থাকতেই হবে , ভালো থাকাটাই জরুরি 👍

    উত্তরমুছুন