পোস্ট বার দেখা হয়েছে
ভাগ্যবিধাতা
তুহিনা চক্রবর্তী
সবাই নিদ্রামগ্ন
আমারও ঘরের চার দেওয়াল বেয়ে
নেমে আসছে অন্ধকার।
পরিচিত মানুষ গুলো মুখ লুকিয়ে
ছুটছে এদিক ওদিক।
অস্থিরতা বড়ই অস্থিরতা।
কেউ অসহায় হয়ে ছুটছে আপন অস্তিত্বের খোঁজে।
কেউবা অস্থির হয়ে শূন্যের
মাঝে বিন্দু খোঁজে।
কেউবা কর্তব্যের মস্তক সযত্নে
ছিন্ন করে চলেছে অবিরত।
হে ভাগ্যবিধাতা__ তুমি অচিরেই মুচকি হেসে আপন লীলায় মেতে আছো প্রতিনিয়ত।।
সময়ের এই করুণ পরিহাস
আমাকে বিচলিত করেছে,তবে
দুর্বল করতে পারেনি,আঁচড় কেটেছে মনে,তবে হৃদয়কে চূর্ণ করতে পারেনি।আমি শীতল হৃদয়
সেঁকেছি প্রদীপের আলোয়।
হে ভাগ্যবিধাতা তোমার আলোতে
আলোকিত করেছি অন্তর।
তাই বিচার নয় কেবলই ক্ষমাভিক্ষা
চাইবো নিরন্তর।
====
ক্ষমাধর্মী জাতক
সুজাতা দে
জেরুজালেমের রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে
কুড়িয়ে পেলাম
জং ধরে যাওয়া অনেকগুলো ক্রুশ।
গ্রীসের কোন গাছতলায় পড়ে থাকতে
দেখেছি,
হেমলক ভর্তি শিশি।
কপোতাক্ষর সবুজ স্রোতের বুকে
এক অশ্লেষালগ্নে গজিয়ে ওঠে ধূসর চর।
কাশ্মীর উপত্যকার ভাঙা কার্তুজের পাশেই
ঝরে পড়ে
পাখির ঠোঁটের থেকে শস্যবীজ।
চরাচর জুড়ে জ্বলতে থাকা আগুনের ভিতর
থেকেই
একদিন ডানা মেলে উড়ে এসেছিল প্রাণ।
জন্ম নিয়েছিল অমৃতের সন্তান।
কতগুলো ক্ষমা জড়ো হলে
একটা প্রতিবাদ তৈরী হয়!
কতগুলো প্রতিবাদ বিপ্লব হয়ে উঠলে
বসুন্ধরা গর্ভবতী হয়!
তুমি জানো?
ও জানো। তুমিতো জানবেই।
আমার মতো বহু মানুষের জানা হলো না
আজও,
কতগুলো ক্ষমা জড়ো হলে
একটা সত্যিকারের মানুষের জন্ম হয়!
====
এখনও
বনশ্রী ঘোষ
এখন শহর ও গ্রামে হিমেল চাদরে ঢাকা বিছানায় মাঘের শীতল সন্ধ্যা।
উত্তুরে বাতাসে কম্পমান পাতায় পাতায় আসন্ন
আগামীর প্রতীক্ষা...
অনতি অতীত হেমন্তে ছিল যে শূন্য রিক্ত বন্ধ্যা,
আগামীতে হবে বসন্ত পুরুষের দীক্ষা।
এখন ঘন কুয়াশায় মাখামাখি আবছা ভোরের আলোয় ঘন খেজুরের রস।
শীতের স্নেহ মেখে প্রায়বৃদ্ধ নবীন যুবক রসের হাঁড়ি কাঁধে ফেরে...
জীবন জীবিকার খোঁজে সে যুবক বৃদ্ধ বয়স,
নলেন পাটালি,মোয়ায়,বাক্সবন্দী করে।
এখন রাতের শরীরে বাতাসের কান্নার শিশির বিন্দু টুপ টুপ ঝরে যায়।
আগুনের লেলিহান শিখার পাশে জবুথবু মানুষ, সারমেয় সারি...
হিম নিস্তব্ধ ধানক্ষেত ছুঁয়ে তীব্র ও মৃদুতায়
ধাবমান দূরপাল্লার কোনো রেলগাড়ি।
এখনও আগের মতই আসে শীত ঋতু...শীত বেলা
বাংলার নগরে,গ্রামে।
শুধু নেই সে অতীতের স্মৃতি বিজড়িত শীত গল্পের ঠাকুমার ঝুলি...
এখনও ভরা শীত মরশুমে শীত রাত নামে,
শীতে ওম খুঁজে ফেরে জোড়া বুলবুলি।
এখনও দারুন মাঘে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় উষ্ণতাগুলি...
====
জীবন
বাসুদেব মণ্ডল
বালতি উপুড় করলাম একটুও জল নেই,
মোমবাতিটা নিভে গেল দেশলাই ফুরিয়েছে।
নিশুতি কানটা সজাগ আছে একটু বেশি ;
গোঁ- গানি শব্দ ভেসে এল কান্নার কিংবা তাণ্ডবের।
কানটা আরও খাড়া হচ্ছে সংকীর্তন শুনতে:
জোঁকের মতো পড়ে আছে কয়েকটা পথ শিশু!
কান বুঝে গ্যাছে হৃদয় বুঝে গ্যাছে খিদের তাড়না।
কত সাধ করে জন্ম দিলো, সাধ্য ছিল ভারাক্রান্ত;
প্রাচীন গ্রিসে ক্রিতদাস প্রথার মত অপাংক্তেয়!
ক্রুশ বিদ্ধ খ্রিস্টমাস পালন হবে দুয়ারে দুয়ারে।
নতুন রঙে চুমু খেয়ে যাবে কামোচ্ছ্বাস ;
আলোও আসেনি ঘুমও চৌকাঠ ডিঙোয়নি।
====
প্রথম দেখা
সুমিতা দাস
স্বপ্নময় জীবনটাকে সাক্ষী করে সময়টা যখন থমকে দাঁড়ায়,
আকাশ তখন জোৎস্নাময়।
হঠাৎ করেই মনটা ভিজতে চেয়েছিল শ্রাবনের দুফোটা জলে।
মেঘের ঘনত্ব পেরিয়ে চেনা স্মৃতিগুলোকে কুঁড়োতে চায় তারাদের ভিড়ে।
তাই অবুজ মনের গভীরতায় আবিষ্কার করেছিলাম ফিরে দেখার মুহূর্তটাকে।
জীবনের জটিল অবয়বের সামনে দাঁড়িয়ে তোমার সাথে সেদিন প্রথম দেখা!
হাজার স্বপ্নে মোড়ানো একটা আবেগি বিশ্বাস,
একজন প্রিয় মানুষ।
সেদিন তোমার হাতে একটা লাল গোলাপ দেখে বুঝেছিলাম ,
মন চাইছে মন ছুঁতে।
জান,
সেদিন তুমি আমায় একটা
কৃষ্ণচূড়ার বন দিয়েছিলে,
আগুন রঙের ফুল আর ঝড়া পাতার ভিড়ে আমি আমার বসন্তকে খুঁজে পেলাম।
সবুজ ঘাসের উপর পা রেখে যখন অনেকটা পথ হেটেছিলাম ,
মনে হয়েছিল ঐ তেপান্তরী মাঠটা শুধু দুজনের।
সেদিন তুমি তোমার শব্দের স্রোতে আমাকে ভাসিয়েছিলে,
কাব্য মালায় সাজিয়েছিলে পরম আহ্লাদে,
মনের আঙিনায় প্রস্ফুটিত ফুলের মত,
উন্মত্ত তোমার সৃষ্টি!
সেদিন তুমি প্রথম প্রেমের কাব্য লিখেছিলে!!!
0 মন্তব্যসমূহ