পোস্ট বার দেখা হয়েছে
শিশুমনে নেতাজী
সাবিত্রী জানা ষন্নিগ্রহী
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মশতবার্ষিকী। সারা দেশজুড়ে স্মরণসভা হয়েছে। বিভিন্ন স্কুলে, ক্লাবে, অফিসে। প্রভাতফেরি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বক্তৃতার মাধ্যমে আমাদের প্রিয় দেশনেতা নেতাজীকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। ছোট ছোট বাচ্চাগুলো অবলীলায় মুখস্থ করে এসেছে নেতাজীর জীবনকাহিনী। তাঁর স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। কেউ বা স্বাধীনতা সংগ্রামের গান গেয়েছে, কেউ বা কবিতা বলেছে, কেউ বা নিজের মতো করে ছবি একেঁছে। সবাই আনন্দ করেছে--কারণ স্কুল ছুটি। একদিন বাইরে বেরোতে পেরেছে--বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছে--সবাই মিলে গান গাইতে গাইতে রাস্তায় লাইন দিয়ে হেঁটেছে। মাষ্টার মহাশয়েরা যত্ন করে আগলে আগলে রেখেছেন।
একটি স্কুলে পথ পরিক্রমার পর অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়েছে।
১ম পর্বে --অতিথি বরণ। ২য় পর্বে--নেতাজীর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ৩য় পর্বে--বাচ্চাদের ফুল নিবেদন।
তৃতীয় পর্ব সমাপ্তের পর
৪ র্থ পর্ব--ভাষন দিলেন সভার সভাপতি। পর পর বক্তব্য রাখলেন মঞ্চে উপবিষ্ট বিশিষ্টজনেরা।
৫ম পর্বে বাচ্চাদের গান, কবিতা আবৃত্তি ও নেতাজীর সম্বন্ধে বক্তব্য রাখার পর্ব।
পরপর দু'টি মেয়ে গান গাইলো--আধো আধো গলায়। ওদের বয়স পাঁচ থেকে আটের মধ্যে। সুর-তালের একটু বিচ্যুতি ঘটলো-তাতে কি!!!
খুশীমনে গেয়েছে তো।
একটি ছয় বছরের বাচ্চাছেলে খুব সুন্দর আবৃত্তি করলো----
তোমরা আমাকে রক্ত দাও-আমি তোমাদের স্বাধীনতা দিব।
দশম শ্রেণীতে পড়া একটি মেয়ে-বোধহয় নিম্ন মধ্যবিত্ত বাড়ির হবে-নাম আদুরী দুলে-নেতাজীর লেখা--
""শিক্ষাপর্বের পুনরারম্ভ" থেকে পাঠ করে শোনালো ----"কলেজ থেকে বহিস্কৃত হয়ে যখন কটকে এসে পৌঁছলাম তখন ১৯১৬ সালের মার্চ মাস শেষ হতে চলেছে। সৌভাগ্যের বিষয় বহিস্কারের কালিমাটা ছাত্রমহলে দেখা দিয়াছিল জয়টিকারুপেই। -----কলেজ থেকে বহিস্কারের পর ও বাবা -মায়ের ভালবাসা অটুট থাকলো-----কিন্তু আমার দল সম্পর্কে সে কথা বলা চলে না। ----সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় কাজ করেছিলাম, দলের সংগে পরামর্শের অপেক্ষা রাখিনি"।
মেয়েটি এই পর্যন্ত পড়ে নিজে যোগ করেছে ----আমরা মেয়েরা ও নিজেরা মাথা উঁচু করে চলবো--নিজেরা নিজেদের সম্মান রক্ষা করবো -সমাজের সম্মান রক্ষা করবো। অনেকেই বাধা দেবে---ভালো কাজ করতে দেবে না। কিন্তু আমরা নেতাজীর আদর্শ মেনে চলবো-আমরা বড়ো হবো।
-----এরপর খানিকটা বিরতি। --গান চলছে----।
---এক মা তাঁর চারবছরের পুত্রসন্তানকে হাত ধরে স্টেজের উপর তুলে দিলেন। পরণে খাঁকি পোষাক--ঠিক যেন সৈনিক যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য তৈরী হয়েছে। বাচ্চাটির হাতে স্পিকার ধরিয়ে দেওয়া হোল। বাচ্চাটি বারবার মায়ের দিকে তাকাচ্ছে। মা ঘাড় নেড়ে অনুমতি দিলেন। বাচ্চাটির গলায় স্বর বেরোচ্ছে না। যদিও বা বেরোলো মনে হয় কাঁদছিল। হতে পারে অনেক বাচ্চাকে মা জোর করে স্টেজে তুলে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চান। এ ও হয়তো তাই হবে। কিন্তু না--পরে বোঝা গেল। একটু থেমে আস্তে আস্তে আরম্ভ করলো--- """নেতাজী পড়াশুনায় খুব ভালো ছিলেন। তিনি ব্যায়াম করতেন, বাগান ভালবাসতেন, সবজি- আনাজ-ফুলবাগানে মালির সাথে গাছে জল দিতেন। একমনে গাছের সৌন্দর্য্য দেখতেন। পড়াশুনায় ভালো ছিলেন তাই টাকা পেতেন। সেই টাকা গরীবদের দিয়ে দিতেন। আমাদের ভারত দেশকে ইংরেজরা পরাধীন করে রেখেছিল। নেতাজী সহ্য করতে পারেননি। তিনি তাঁর বন্ধুদের নিয়ে সংগ্রাম করেছিলেন। তারপর তিনি কোথায় চলে গেছেন। তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি"""--বলেই বাচ্চাটি কাঁদতে শুরু করলো। পাশে বসে থাকা এক মাষ্টার মহাশয়কে জিজ্ঞেস করলো - --বল না নেতাজী কবে ফিরে আসবে!! আমরা তাঁর গলায় ফুলের মালা দেবো। আর কোথাও যেতে দেবো না।---তখনও ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে।--মা স্টেজে উঠে বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে নামিয়ে আনলেন। সারা হলঘরের বাচ্চারা কাঁদছে---চোখ মুছছে--কেউ কেউ দু'চোখ ঢাকা দিয়ে রেখেছে।
----কেবল ঐটুকু বাচ্চা নয়---হাজার হাজার বাচ্চার মনে নেতাজী কতটা স্থান জুড়ে আছে আমরা বড়রা কল্পনা করতে পারি না।
---জয় নেতাজী--প্রণাম।
0 মন্তব্যসমূহ