তারাপীঠ || সুমিতা সরকার ঘোষ




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

তারাপীঠ

সুমিতা সরকার ঘোষ 


দুর্গতিনাশিনী, নৃমুণ্ডমালিনী, ত্রিলোচনা, উগ্র তারা।


বীরভূমের চোখের মণি তারাপীঠের তারা মা,

যত্নে জানাই প্রনাম যেখানে পড়েছে রাঙা পা।


ধূপ, আতর, কারণ বারি, আর গঙ্গাজলে,

প্রতিনিয়ত ও চরণ ধোয়া পুণ্যের কথা বলে।


১০৮ লাল জবা, নীলকন্ঠ আর বিল্বপত্রে,

বশিষ্ঠ দেবের শিষ্য বামাক্ষ্যাপার ছায়াছত্রে।


তারামা নিজ মহিমায় প্রতিষ্ঠিত এখানে,

মাকে তুষ্ট করে, বিশ্বরূপে জানতে হলে বামদেবের পুজো দিন সেখানে


এতেই দেবী তারা তুষ্ট 

অভীষ্ট মনোবাসনায় জগৎ পূর্ণ 

নচেৎ শুধু তাকে পুজো দিলে 

করবে ভক্তের অহংকার চূর্ণ। 


গভীর রাতে তারাপীঠের শ্মশানঘাটে

অষ্টসখী সাথে মুণ্ডমালিনী তলায় দু পায়েতে নূপুর পরে মা আজও করেন নৃত্য। 


শুধু কায়,মন ও বাক্যে বামদেবের স্মরণে,

মুখে ও অন্তরে মা জপ নামে,

একবার বলুন তারা আমি তোমার ভৃত্য। 


ভোররাতে শিলা বিশেষ পাঁচ দ্রব্যের সাথে, 

পবিত্র মনে পুরোহিত করায় স্নান, মন্ত্র সহযোগে ডান হাতে।


সারাদিনে অনেক শব এই শ্মশান ভূমিতে পোড়ে,

পৃথক হওয়া বহু সংসার, ঘটনা, মা একত্র মনে জোড়ে।


মারণ, উচাটন, তন্ত্রসাধনা মা তারার নখদর্পণে,

তান্ত্রিকরা যায় সিদ্ধিলাভে আর মানসিক অভীষ্টপূরণে।


বীরভূমের দৈন্য দূর্দ্দশা দেখে কেঁদে উঠেছিলেন মা,

যতক্ষণ না শব পোড়ে একটিও, ততক্ষণ ভোগ উনুনে চড়ে না।


কালীঘাটে ভোরবেলা, তারাপীঠে গভীর রাতে আর দক্ষিণেশ্বরে মা সদা বিরাজমান,

শান্ত, স্থির, চিত্তে মা তারাকে করুন স্মরণ, 

মনের সব ময়লা বিসর্জন দিয়ে করুন শীতল পবিত্র স্থান।


কোজাগরী লক্ষী পুজোয় মাকে দীপান্বিতা লক্ষী রূপে পুজো করা হয়,

ধূপ, ধুনো, দ্বীপ,  ভোগ, মন্ত্র  সহযোগে  মা আজও এই স্থানে রয়।


মা তোর রাঙা পায়ের জবা হয়ে থাকব আমি পড়ে,

তারা তুই ছাড়া কে মুক্তি দেবে বল না এমন করে.........

মায়ের বিশেষ স্নান জলঃ


মায়ের স্নানের জলে আছে গঙ্গাজল, দুধ, মধু, ঘি, রক্তচন্দন, শ্বেতচন্দন, পুষ্প এবং আতর। প্রতি বৃহস্পতিবার  আর বিশেষ  তিথিতে মাকে এই জল দিয়ে স্নান করানো হয়।

প্রথম পাতা মহাপীঠ তারাপীঠের অলৌকিক রহস্য আজও মানুষকে অবাক করে। ইতিহাস পশ্চিমবঙ্গ বাংলা ও বাঙ্গালী মহাপীঠ তারাপীঠের অলৌকিক রহস্য আজও মানুষকে অবাক করে

পৃথিবীতে এমন কিছু রহস্যময় জায়গা রয়েছে যার রহস্যের সমাধান আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার প্রসিদ্ধ মহাপীঠ তারাপীঠের নাম শোনেননি এমন হয়তো কেউ নেই। প্রতিদিন অসংখ্য ভক্তের সমাগম ঘটে এই তীর্থস্থানে। এই মন্দির রয়েছে অলৌকিক রহস্য যা সাধারণ মানুষের চিন্তার বাইরে ।

মহাপীঠ তারাপীঠ একটি শক্তি পীঠ। তবে মহাপীঠ তারাপীঠকে অনেকে শক্তি পীঠ বলতে নারাজ। এই জাগ্রত মন্দিরের মাহাত্ম্য সম্পর্কে বেশকিছু মতবাদ রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন তথ্যটি হলো শক্তিপীঠ অর্থাৎ একান্নটি সতী পীঠের অন্যতম হলো এই মহাপীঠ তারাপীঠ ।

দক্ষ যজ্ঞে সতী দেহত্যাগ করলে মহাদেব শিব তাঁর পবিত্র দেহ কাঁধে নিয়ে সারা পৃথিবী ঘুরতে থাকেন । শিবের প্রলয় নাচনে পৃথিবীর অস্তিত্ব বিলুপ্তের পথে যাবার দশা হয়। এমন সময় শ্রী বিষ্ণু তাঁর সুদর্শন চক্রের সাহায্যে সতীর দেহ মোট একান্ন খণ্ডে বিভক্ত করেন। কথিত আছে, দেবী সতীর তৃতীয় নয়ন অর্থাৎ নয়ন তারা এই গ্রামে পতিত হয়। পরে সেই নয়ন তারা প্রস্তরে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। ঋষি বশিষ্ঠ মায়ের এই রূপটি প্রথম দেখতে পেয়েছিলেন এবং সতীকে মা তারা রূপে পূজা করেছিলেন ।

আবার অন্য একটি পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে সমুদ্রমন্থনের সময় যখন মহাদেব হলাহল বিষ পান করেছিলেন,  তখন সেই ভয়ানক বিষের প্রভাবে মহাদেব খুবই কষ্ট পাচ্ছিলেন, সেই সময় দেবী তারা তাঁর স্তন সুধা পান করিয়ে দেবাদিদেব মহাদেবের জ্বালা নিবারণ করেছিলেন। বিভিন্ন পীঠস্থান গুলির মধ্যে তারাপিঠ হল অন্যতম সিদ্ধ পীঠ। কথিত আছে এখানে সাধনা করলে সাধক অসীম জ্ঞান, আনন্দ এবং সিদ্ধি  তথা অলৌকিক ক্ষমতা প্রাপ্ত হন ।

সর্বোপরি দিব্যপুরুষ  সাধক বামাক্ষ্যাপাকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য প্রসিদ্ধ কাহিনী। বীরভূমের প্রধান তীর্থস্থান তারাপীঠ আজ আন্তর্জাতিক কৌতূহলের কেন্দ্রভূমি। রহস্যের পর রহস্য আবৃত রেখেছে এই শক্তিপীঠকে। তবে পুরাণাদি গ্রন্থে তারাপীঠ কে শক্তিপীঠ বা সতী পীঠ বলা হয়নি । তাই এই নিয়ে রয়েছে বেশ দ্বন্দ্ব ।

মহাপীঠ তারাপীঠের মহিমা অন্যান্য শক্তিপীঠ থেকে একেবারেই ভিন্ন। দশ মহাবিদ্যাতেও বিশেষ স্থান পেয়েছেন দেবী তারা। তারারহস্য এবং অন্যান্য তন্ত্রের গ্রন্থ পাঠ করলে বোঝা যাবে,  দেবীর পৌরাণিক রহস্য কি ? তারাপীঠ মন্দিরের স্থাপত্য খবুই সাধারন প্রকৃতির।  কিন্তু সাধারণের মধ্যে কোথাও যেন লুকিয়ে রয়েছে রহস্যের ছোঁয়া । চালা ডিজাইনের এই মন্দির বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যকে ব্যক্ত করে ।

মহাপীঠ তারাপীঠের এই মন্দিরের ভেতরের দেওয়াল বেশ মোটা। মন্দিরের উত্তর দিকে খিলানের উপর কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ঘটনা, ভীষ্মের শরশয্যাসহ  মহাভারতের যুদ্ধের কাহিনীর চিত্র দেখা যায়। তারা মায়ের শিলারূপ  ঢাকা থাকে একটি আচ্ছাদনে। সেই আচ্ছাদনকেই মাতৃরূপের প্রতীক ধরা হয়। এই মূর্তি তারা মায়ের মূর্তি হিসাবে আজও ঘরে ঘরে পুজিতা ।

এই বিশেষ মূর্তিতে দেবী শিশু মহাদেবকে তাঁর স্তন সুধা পান করাচ্ছেন। তারা দেবীর চতুর্ভূজা, মুণ্ডমালিনী এই মূর্তির মস্তকে রৌপ্য মুকুট দেখা যায়। বাইরের মূর্তিটি সাধারণ শাড়ি দিয়ে আবৃত থাকে । যার মাথার ওপরে থাকে একটি রুপোর  ছাতা । দেবীর  কপালে এক বিশেষ সিঁদুর থাকে এবং এই সিঁদুরের টিকা পেতেই দর্শনার্থীদের ভিড় হয় দেখার মত ।

ভক্তরা নারকেল, রেশমি শাড়ি ইত্যাদি অর্পণ করে দেবীর পুজা দেন। মহাপীঠ তারাপীঠ মন্দিরের  মহাদেব চন্দ্রচূড় নামে পরিচিত। তারাপীঠ মহাশ্মশানে আজও তান্ত্রিক বিচরণ করে থাকেন। সারা দেশ থেকে বড় সাধকরা এই স্থানে আসেন। মহাপীঠ তারাপীঠ দারোকা নদের তীরে অবস্থিত। এর আধ্যাত্বিক তাৎপর্য বিপুল । বিভিন্ন অমাবস্যায় এই মন্দিরে বিশেষভাবে পূজা হয়ে থাকে । যার মধ্যে কৌশিকী অমাবস্যা অন্যতম  

দেবী মা তারাকে দর্শন  করতে অসংখ্য পূণ্যার্থীদের আগমন বিশেষভাবে লক্ষণীয় । এই মন্দিরে পুন নির্মাণ  করেছিলেন জয় দত্ত বণিক। এর পেছনেও  রয়েছে এক ইতিহাস । তবে তীর্থস্থানের সঠিক নির্মাণকাল সম্পর্কে আজও জানা যায়নি । এই শক্তিপীঠের অলৌকিক রহস্যগুলি আজও মানুষকে চিন্তা করতে বাধ্য করে।

তারাপীঠ মন্দিরের রহস্যাবৃত নানা লোককথা শুনলে গা ছমছম করে আজও!

তারা মা ও তারাপীঠ মন্দিরঃ

 

পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার অন্তর্গত রামপুরহাট পার্শ্ববর্তী এলাকার তারাপীঠ শাক্ত ধর্মাবলম্বীসহ সমস্ত হিন্দুদের কাছেই একটি পুন্য তীর্থস্থান। একান্ন সতীপীঠের অন্যতম তারাপীঠ তান্ত্রিক সাধনা ও মন্দির সংলগ্ন শ্মশানক্ষেত্রের জন্য বিখ্যাত। সমগ্র বাংলা জুড়েই কালীর বহুরূপের মধ্যে অন্যতম তারা জটিল বিমূর্ত আঙ্গিকে পূজা পান। গৌরবময় ঐতিহ্যবাহী এই মন্দিরের লোককথা বহুল প্রচারিত এবং কিছু ক্ষেত্রে আজও রহস্যাবৃত। ফলে এই তারাপীঠকে ঘিরে মানুষের উৎসাহ,কৌতূহলের সীমা নেই।


নানা কীর্তির সাক্ষী তারাপীঠঃ

সাধক বামাখ্যাপার গল্পঃ

তারাপীঠের অপর এক আকর্ষণ হলো পূজারী সাধক বামাখ্যাপা। যিনি একাধারে পাগল সন্ন্যাসী ও শ্মশানে তন্ত্রসাধনায় ব্রতী হয়ে ছিলেন।

মন্দিরের কাছেই তার আশ্রম রয়েছে যেখানে ভক্তদের নিয়মিত ঢল নামে। কথিত আছে, এই বামচরণ এই মন্দিরে সাধনা করেই সিদ্ধি লাভ করেন ও বহু অসাধ্যসাধন করেন। মা তারার উদ্যেশ্যে নিবেদিত ভোগ নিজেই গ্রহণ করে উনি অন্যান্য সাধকদের বিরাগভাজন ও হন। এই সমস্ত নানা কীর্তির সাক্ষী তারাপীঠ। দেবীর কুলকুন্ডলিনী শক্তির রূপ জনচিত্তে একথা অনেকদিন থেকেই প্রচলিত যে সতীর তৃতীয় নয়ন এখানে পড়েছিল যদিও এ ঘটনার কোনো পৌরাণিক ভিত্তি নেই। তারাপীঠকে সতী পিঠের একটি বলে মানা হয়। তবে কাহিনীটিকে প্রতীকী ধরলে সহজেই বোঝা যায় তারাপীঠ এক মহাশক্তির আরাধনা ক্ষেত্র। দ্বারকা নদের তীরে অবস্থিত তারাপীঠ স্বমহিমায় স্থিত।

উত্তরবাহিনী জলস্রোত দেবীর কলকুন্ডলিনী শক্তির রূপ। তাই এইদিক থেকে বিচার করলে এর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বিপুল। মন্দিরের স্থাপত্যের মধ্যেও ধরা হয়েছে বাংলার নিজস্ব ঘরানার ছাপ যা চালা রীতির নির্মান শিল্পকেই ব্যক্ত করে।

দ্বিতীয় মহাবিদ্যাঃ

এবার আসা যাক তারাপীঠ এর কিছু গা ছমছমে ও মাহাত্ম যুক্ত কিংবদন্তিতে।

তন্ত্রে তারাকে বলা হয়েছে দ্বিতীয় মহাবিদ্য। শিবের ওপরে বামপদ তুলে তিনি দাঁড়িয়ে, তাঁর গায়ের রং নীল, লালজ্বিহা এবং মুন্ডমালিনি শোভিত।

দেবীর কটিদেশ ব্যাঘ্রচর্মে আবৃতা, মাথায় রয়েছে পঞ্চমুদ্রা সমন্বিত একজটা যা রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ ইত্যাদি বিজয়জ্ঞান এর প্রতীক। জটাশীর্ষে রয়েছে অক্ষভ্য বা মহাদেব।

দেবীর পাদপদ্ম আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। দেবীর বাস যেহেতু শ্মশানে তাই সেখানে চিতাগ্নিরূপে অবস্থান করেন তারা মা, সাথে থাকেন যোগিনী ডাকীনিরা। বহুমানুষ অমাবস্যার রাতে দূর থেকে এই জ্যোতি দেখতে পান।

কথিত আছে এর কাছাকাছি গেলে দেবী রুষ্ট হন।

সমুদ্রমন্থনের কাহিনীঃ

তারাপীঠ এর আরেক কাহিনী হলো সমুদ্রমন্থনের সময় যখন সমুদ্রের বুক থেকে হলাহল বা বিষ ওঠে তখন তা কণ্ঠে ধারণ করে শিবের তীব্র বিষজ্বালায় ছটফট করতে শুরু করেন।

সেই সময় দেবী তারা প্রকট হয়ে শিবকে নিজের বুকের স্তন্য পান করান ও তাকে উপশম দেন।স্থানীয়মত অনুসারে ঋষি বশিষ্ঠ মায়ের সেইরূপের দর্শন লাভ করেন যা তার অভীষ্ট ছিল। দেবীর দর্শনলাভে ধন্য হয়ে উনি সিদ্ধি লাভ করেন ও তাঁর মনস্কামনা পূর্ণ হয়।

এই বিশ্বাস থেকে আজও বহুমানুষ এখানে নিজেদের মনোবাসনা পূরণ করতে মা এর বেদীতে প্রার্থনা জানান।

পঞ্চমুন্ডের সমাহারঃ


আরেকটি উল্লেখযোগ্য রহস্য মহাশ্মশান এর বামাখ্যাপার পঞ্চমুণ্ডের আসন। এই প্রসঙ্গে মনে রাখা ভালো দেবীর মাথাতেও রয়েছে পঞ্চমুন্ডের সমাহার। এখানে পাঁচটি মুণ্ড সাপের, ব্যাঙের, খরগোশের, শিয়ালের এবং মানুষের। বহুযুগ আগে এই আসনে বসেই দেবীকে সন্তুষ্ট করেছিলেন বামাচরণ। তন্ত্রসাধন বিদ্যায় এই আসনের গুরুত্ব অপরিসীম। বলা হয় এই আসন খুবই জাগ্রত, শুদ্ধচিত্তে এই আসনে একাগ্র ভাবে ভক্তি নিয়ে না বসলে মানুষ উন্মাদ পর্যন্ত হতে পারে। নানা ক্ষতি সহ মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।


দীপাবলি  সংস্কারঃ

মাছ ভোগ দিয়েই কৌশিকী অমাবস্যায় পুজো হয় তারা মায়ের।

  

তারাপীঠঃ  মনে করা হয়, স্বয়ং মা তারার অবস্থান তারাপীঠে। আর সেইজন্যই বিভিন্ন জায়গা থেকে ভক্তরা ভীড় করেন মা তারাকে পুজো দিয়ে পুণ্য অর্জনের জন্য। নিয়ম নিষ্ঠা মেনে হয় পুজো। আর শনিবার কৌশিকী অমাবস্যার বিশেষ তিথিতে আড়ম্বর করে পুজো হয়। এদিন সকাল থেকেই ভিড় থাকে তারা মায়ের মন্দিরে।


বলা হয়, মা তারা সবার উর্ধ্বে। তাই মন্দির সংলগ্ন এলাকায় কেউই মূর্তি গড়ে দুর্গা বা কালীর আরাধনা করেন না। বারোয়ারি পুজোরও প্রচলনও নেই। কালীপূজোয় মা তারা ‘তারা’ অঙ্গে কালীরূপে পূজিত হন। হাজার হাজার ভক্ত ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সমাগমে তারাপীঠ মন্দির ভরে ওঠে।


প্রতিবছর ভাদ্র মাসের কৌশিকী অমাবস্যা হয়। বিশেষভাবে এই অমাবস্যা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কথিত আছে, এই বিশেষ তিথিতে তন্ত্রসাধনা করে তারাপীঠ মহাশ্মশানে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন সাধক বামাক্ষ্যাপা। সেই সময় থেকেই দিনটি বিশেষ ভাবে পালিত হয়। জনশ্রুতি, এই দিনে তন্ত্র সাধনা করলে সাধনায় সিদ্ধিলাভ নিশ্চিত। আর তাই তারাপীঠের মহাশ্মশানে যজ্ঞ করেন সাধকেরা।

অমৃতভোগঃ

তারাপীঠে বলির মাংস পুজোর আয়োজনের অঙ্গ ভোগ নিবেদন। শুদ্ধ মতে রান্না করে, খাদ্য-পানীয়ের নানা উপকরণে সাজিয়ে ভোগ না দিলে দেবীর আরাধনা যেন সুসম্পন্ন হয় না।

ভক্তের যা প্রিয়, তা-ই নিবেদন করা হয় ইষ্টদেবতাকে। আবার কোন দেবদেবীর প্রিয় ভোজ্য কী কী, তা নিয়ে শাস্ত্রে, লোকাচারে রয়েছে নানা মতামত। বড় বড় মন্দিরগুলিতে ভোগ নিবেদনের দীর্ঘ পরম্পরা রয়েছে। রইল তারই কিছু বিবরণ।

তারাপীঠে তারা মায়ের ভোগঃ

তারামা সেবাইত সমিতির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় এবং সম্পাদক ধ্রুব চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, কালীপুজোর দিন মাকে দেওয়া হয় ‘রাজকীয় ভোগ।’ সকালে দেবীকে তিন রকম অন্নভোগ দেওয়া হয়— পোলাও, খিচুড়ি এবং সাদা অন্ন। সঙ্গে থাকে পাঁচ রকম ভাজা, তিন রকম তরকারি। চারাপোনা, কাতলা, রুই-সহ বিভিন্ন মাছের ভোগ থাকে। তান্ত্রিক মতে নিবেদিত বলির পাঁঠার মাংস, কারণ বারি সহযোগে নিবেদিত হয়। আর থাকে পায়েস, চাটনি, দই, আর পাঁচ রকম মিষ্টি। রাতে খিচুড়িই প্রাধান্য পায়। চাল-ডাল মিলিয়ে প্রায় দেড় কুইন্টাল, ১০টি বড় হাঁড়িতে রান্না হয়। করলা, বেগুন, আলু, এমন পাঁচ রকম সব্জির ভাজা, তরকারি, শোল মাছ পোড়া, ও বলি-দেওয়া পাঁঠার মাংস। সঙ্গে পাত্রে থাকে কারণবারি। মন্দির কর্তৃপক্ষ যেমন ভোগ নিবেদন করেন, তেমনই ভক্তেরাও তাঁদের ইচ্ছেমতো সব্জি, মাছ, মাংসের ভোগ নিবেদন করেন তারা মাকে।

দ্বায়িত্বে আছেন কারাঃ


তারাপীঠ মন্দিরের ভোগ রান্না করছেন বংশপরম্পরায় ময়ূরেশ্বর থানার দক্ষিণগ্রামের কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের সঙ্গে থাকেন তারাপীঠের মন্দিরের সদস্যরা। কালীপুজোর ভোগের রান্না করেন এঁরা জনা পনেরো ব্যক্তি। ভোর থেকে দুপুরের ভোগ রান্না শুরু হয়, আর দুপুরের পরেই শুরু রাতের ভোগের রান্না। ভোগগৃহ, নাটমন্দিরে বসে প্রসাদ খান সহস্রাধিক ভক্ত। আরও অনেক প্রসাদ নিয়ে গিয়ে বাড়িতে খান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ