মহান দেশনায়ক,নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু || ডাঃ সঞ্জয় কুমার মল্লিক




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

মহান দেশনায়ক,নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু

ডাঃ সঞ্জয় কুমার মল্লিক

আজ ২৩ শে জানুয়ারি ভারতবর্ষের মহাননেতা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ১৮৯৭ সালে আজকের দিনে উড়িষ্যার কটক শহরে জন্মগ্রহণ করেন।ওনাদের পৈতৃক ভিটে ছিল অধুনা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কোদালিয়া য়।প্রথমে কটকে তারপর কলকাতায় পড়াশোনা করেন।তারপর ধীরে ধীরে হয়ে উঠেন ভারতবর্ষের জনপ্রিয় ও সর্বকালের যোগ্যতম দেশনায়ক।দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের সংস্পর্শে এসে যোগ দেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে।আজাদ হিন্দ ফৌজ তৈরি করে প্রতিষ্ঠা করেন আজাদ হিন্দ সরকার।হাজার হাজার মানুষ নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শ ও নেতৃত্বকে সন্মান করে যুক্ত হয়েছিল আজাদ হিন্দ ফৌজে ব্রিটিশদের ও দেশের গাদ্দার দের হাত থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করতে।আজাদ হিন্দ ফৌজের হাজার হাজার বীর যোদ্ধা আজ ভেকধারী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও নেতাদের চক্রান্তে চিরতরে হারিয়ে গেছে।কোন ইতিহাসের পাতা তাদের স্থান দেয়নি।ভারতবাসীর প্রিয় নেতা সুভাষচন্দ্র বোসু আজ নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু নামে বিখ্যাত হয়ে অমর হয়ে আছে।সেই সঙ্গে তার প্রতিষ্ঠিত আজাদ হিন্দ ফৌজের সমস্ত সেনা অমর হয়ে আছে,আজাদ হিন্দ ফৌজ হিসেবে।নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু প্রশাসক হিসেবে কেমন ছিলেন তার স্মৃতি ও কাহিনী আজও বয়ে চলেছে কলকাতা পৌরসভা।একসময় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের শিষ্য সুভাষচন্দ্র বসু কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।পরে কলকাতার মেয়র হিসেবে কাজ পরিচালনা করেন।কিন্তু বিপ্লবীদের সাথে যোগাযোগের অভিযোগে ১৯২৪ সালে ব্রিটিশ সরকার সুভাষচন্দ্র বসুকে গ্রেপ্তার করে।১৯২৭ সালে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।১৯২৭ সালেই তিনি কলকাতার মেয়র নির্বাচিত হন।১৯৩১ সালে মেয়র সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে একটি মিছিলে ব্রিটিশ পুলিশ লাঠিচার্জ করে,মেয়র সুভাষচন্দ্র বসুকে গ্রেফতার করে।সেখানেই প্রশাসনিক ভাবে কলকাতা পৌরসভার সাথে তার সমস্ত সম্পর্ক তিনি শেষ করেন।কলকাতা পৌরসভার মেয়র হিসেবে তার যে সমস্ত অবদান তিনি রেখে গিয়েছেন সেগুলো হল, অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা, গরিবদের জন্য চিকিৎসা পরিষেবা,মানুষের জন্য সস্তায় পুষ্টিকর খাবার ও দুধ সরবরাহ,পয়প্রাণালীর উন্নততর ব্যবস্থা,গরিবদের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্প,যানবাহন ব্যবস্থার উন্নতি সাধন,পৌরসভার খরচ কমিয়ে পৌরসভার উন্নতি সাধন।একবার বর্ষাকালে পুরবাসীদের কষ্টের কথা শুনে  জলনিকাশী ব্যবস্থা উন্নতির  নিজে সেই এলাকায় গামবুট পরে কাজের তদারকি করতে পৌঁছে গিয়েছিলেন।সেই সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের কাছে বাড়তি খরচ দাবি করেন।ব্রিটিশ সরকার দাবি না মানায় নিজের বেতনের অর্ধেক পৌরসভার উন্নতির জন্য তহবিলে দান করতে থাকেন।পরে ব্রিটিশ সরকার তার দাবি মেনে নেন কিন্তু মেয়র সুভাষচন্দ্র বসু তার বেতনের অর্ধেক দান অব্যাহত রাখেন।এই আমাদের নেতাজী।

 বীর মহাননেতা আমাদের নেতাজিও রাজনৈতিক চক্রান্তের স্বীকার হন।সর্বসম্মতভাবে পরপর দুবার জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাজিত হন।কিন্তু গান্ধীজির পক্ষ নেতারা নেতাজির বিরুদ্ধে লাগাতার বিরোধিতা জারি রাখেন।নানান সময় নিজের কাজ পরিচালনা করতে অসুবিধা হতে থাকে।সেই কারণে উনি কংগ্রেসের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করে ফরয়ার্ড ব্লক দল প্রতিষ্ঠা করেন।নেতাজী মনে করতেন অহিংস আন্দোলন ও সত্যাগ্রহ আন্দোলন স্বাধীনতা আনতে পারবে না।তাই সশস্ত্র আন্দোলনের লক্ষে গোপনে দেশ ত্যাগ করেন।সোভিয়েত রাশিয়া,জার্মানি হয়ে জাপানে পৌঁছান।সেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভারতীয় যুদ্ধ অপরাধী ও প্রবাসী ভারতীয়দের নিয়ে,জাপান সরকারের অর্থনৈতিক, সামরিক,কূটনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে তৈরি করেন আজাদ হিন্দ বাহিনী।সেই বাহিনীতে পরে বার্মা(বর্তমানে মায়ানমার),সিঙ্গাপুরের বহু ভারতীয় শ্রমিক যোগদান করেন।তারপর নেতাজির গন্তব্য হয় ভারত।মায়ানমারে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করে ভারতের মাটিতে মণিপুরের ঈমফলে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা করেন।যখন ভারতের অন্যান্য নেতারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের পক্ষ অবলম্বন করছেন তখন আমাদের নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।

  অবশেষে দেশীয় নেতাদের অসহযোগিতা, অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষতির পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে আজাদ হিন্দ বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।যদি ঐ সময় দেশের সমস্ত নেতা একজোট হয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ সরকার ও বাহিনীকে সাহায্য করত তাহলে হয়তো স্বাধীনতা অতি দ্রুত আসত।সাহায্য করা তো দূর ব্রিটিশদের সাথে হাত মিলিয়ে সুভাষচন্দ্র বসুকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ঘোষণা করেছিল সেই সময়।ভগ্ন হৃদয়ে আমাদের প্রিয় নেতাজি হারিয়ে গেলেন চির ত্বরে।বহু গবেষণা ও বই থেকে যেটুকু জানা যায়,নেতাজী প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত হয়নি।মাধ্যমিক পাস করার পর ননেতাজী সম্পর্কিত বইগুলো আমি প্রথম পাই আর এক বীর বিপ্লবী শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর জন্মভিটা মোহবনির শহীদ ক্ষুদিরাম লাইব্রেরী তে, নেতাজি সমগ্র কয়েকটি খন্ড যেখানে নেতাজির হাতের লেখা বহু মূল্যবান চিঠি গুলো পাওয়া যায়।ঐ বইগুলো থেকেই প্রথম জানতে পারি নেতাজী বিয়ে করেছিলেন, ওনার স্ত্রীর নাম মিসেস এমিলি,ওনার দুই মেয়ে আছেন সুদূর জার্মানিতে।তারপর ঐ লাইব্রেরির নেতাজি সম্পর্কিত অনেকগুলো বই আমি কয়েক মাস ধরে পড়ি। যেমন,"নেতাজী ও গান্ধীজি"।উভয়ের তিক্ত সম্পর্কের কথা ঐ বইতেই প্রথম পাই।"চরম মুহূর্তে নেতাজি" যেখানে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে যুদ্ধ অপরাধী হিসেবে ঘোষণা তে দুজনের স্বাক্ষর আছে একজন আমাদের দেশের তখনকার বিখ্যাত নেতা দ্বিতীয় জন লর্ড মাউন্ডব্যাটেন।ডাঃ আলোক কৃষ্ণ চক্রবর্তী র লেখা "শৌলমারীর সাধুই কি নেতাজি?" বইয়ের দুটি খন্ড শেষ করার পর বুঝতে পারি অন্তর্ধান হওয়ার ঘটনাটি ছিল আমাদের নেতাজির সাজানো ঘটনা।জাপান রেডিও থেকে প্রচারিত ওনার মৃত্যু সংবাদ প্রচার ছিল ওনার নির্দেশে।উনি যে দেশকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন সে দেশ থেকে দূরে থাকতে পারেন নি।উনি সৌলমারীমারি আশ্রম সহ অনেক আশ্রমেই সাধু হয়ে শেষ জীবনটি কাটিয়ে গিয়েছেন।নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু যে ব্রিটিশের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছিল,তাকে মারা এত সোজা নয়।"চরম মুহূর্তে নেতাজী"বইটি পড়ে জেনেছি মৃত্যু বারবার তার কাছে এসে অসহায়ের মতো ফিরে গেয়েছিল।ব্রিটিশদের গুপ্তচর সংস্থা ও গুপ্তচর বাহিনীর আক্রমনও তাকে মারতে পারেনি। সহকর্মীরা ব্রিটিশদের গুলিতে লুটিয়ে পড়েছে কিন্তু আমাদের নেতাজী অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছে তার ডেরায়।বার্মা(অধুনা মায়ানমার) থেকে ডামি নেতাজি সাজিয়ে নিজে ছদ্মবেশে পুলিশকে দেখা দিয়ে গাড়িতে করে পালিয়ে গিয়েছে।গ্রেপ্তারের আশায় ফাঁদ পেতে থাকা পুলিশের কাছে গাড়ি থামিয়ে সন্দেহ কাটানোর জন্য নিজেই ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলে গাড়ির কাঁচ নামিয়ে বলেছেন, আপনারা কি নেতাজিকে ধরতে এসেছেন?

 - হ্যাঁ।

         -আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ওনার কনভয় এসে যাবে।আশা করি দেখা পেয়ে যাবেন।আমিও ওনার নিয়ে রিপোর্ট লিখতে এসেছি।

           বলে পালিয়ে গিয়েছেন।সারাদিন অপেক্ষা করার পর ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থা বুঝতে পেরেছে,ঐ ব্যক্তিটিই মনে হচ্ছে নেতাজী ছিল।ননেতাজী তখন তাদের হাতের নাগালের বাইরে।

         নেতাজিকে ধরা ও নেতাজির মৃত্যু এত সোজা নয়।তাই আজও তার মৃত্যু রহস্যে মোড়া।

আপামর ভারতবাসীর হৃদয়ের মহান নেতা নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু।তিনি বর্তমানে হয়তো বেঁচে নেই কিন্তু বিমান দুর্ঘটনায় তিনি মারা যাননি।তিনি ভারতেই শেষ জীবনটি কাটিয়ে গিয়েছেন,প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্য ও শান্তির আশ্রয় বিভিন্ন আশ্রমে।

        হে মোর বীর মহান নেতা তোমায় জানাই অন্তরের অন্তরস্থল থেকে শতকোটি প্রণাম।


জয়তু নেতাজী, জয়তু নেতাজী, জয়তু নেতাজী

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ