সুমিত ও গ্রাম (দ্বিতীয় পর্ব) || মঙ্গল মিদ্যা (রিপল)




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

সুমিত ও গ্রাম

(দ্বিতীয় পর্ব)

 মঙ্গল মিদ্যা (রিপল)


ঠাকুরদা আর সুমিত বাড়ি ফিরতেই প্রথমে প্রীতির সামনা-সামনি পড়ে গেলো। ঠাকুরদা কিছু বলতে যাচ্ছিলেন তখন প্রীতি বলে উঠলো - কি আমাদের এয়ারপোর্ট কেমন লাগলো রে দাদা?

সুমিত উত্তর না দিয়েই চলে যাচ্ছিলো, তারপর আবার পিছুনে এসে প্রীতির গালটা টিপে মুচকী হেসে বললো - ভালো লেগেছে রে আমার মিষ্টি বোন !" তারপর নিজের ঘরে চলে গেলো। প্রীতি ও ঠাকুরদা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো শুধু।

একটুপর, প্রীতির ডাকে সুমিত চোখ খুলে বিছানায় বসলো। প্রীতি একটু নীচু গলায় বললো - "জানিস দাদা, গ্রামে অনেক আচার প্রচার নিয়ম কানন আছে যা শহরের লোকরা বিশ্বাস করে না কিন্তু গ্রামে বেঁচে থাকার সেটাই আত্মবিশ্বাস। যেমন বছরে একবার ১দিন বা ২দিন ধরে গ্রামের লোকরা মিলে হরিনামের আসর বসায়, বাইরে থেকে কির্তনীয়া দল আনিয়ে হরিনাম হয়, তাতে নাকি গ্রামের মঙ্গল ও শ্রোতার পাপ খেয় হয়। এটাও তো ধরতে গেলে ১টা কুসংস্কার, তবুও প্রতি গ্রামের লোকরা মানেন "। 

প্রীতি খানিক চুপ করে রইলো, তারপর সুমিতের দিকে তাকিয়ে বললো - "দাদা তুই গ্রামের জীবন মানিয়ে নিয়ে এখানেই থেকে যা "।

সুমিত মুচকী হাসলো তারপর বললো - "এই পাগলী বোনটার "মাথার ছিট" অসুখ সারাতে থাকতেই হবে, কারণ তার মাথার গন্ডগোল আছে তাই কখনো ইয়ারকী মজা আবার কখনো সিরিয়াস কথা বলিস "।

প্রীতি বিছানায় বসে কিছু বলছে না দেখে সুমিত বিছানা থেকে নেমে মেঝেতে প্রীতির পায়ের কাছে বসে বললো - "তোরা যদি এভাবেই আমার পাশে থাকিস তাহলে মৃত্যু পর্যন্ত এখানে থাকতে পারি রে "।

সেই সময় দরজায় মেজো কাকিমার শব্দ - "ও মা, তোর পায়ে আবার কি হলো রে ?"

প্রীতি - "আর বলোনা কাকিমা, সকালে পায়ে ১টা মাছের পেটি পড়ে গিয়ে লেগে গেছে গো "।

কাকিমা একটা "কী " বলে শব্দ করতে সুমিত আর প্রীতি হো হো হো করে হেসে উঠলো।

কাকিমার হাতে ১টা কাগজ দেখে প্রীতি "কি ওটা" জানতে পাওয়াতে তিনি বললেন তার দূর সম্পর্কের একটা দাদার মেয়ের ফটো, সুমিতের যদি পছন্দ হয় তাহলে বিয়েটা....

প্রীতি ততোক্ষণে কাকিমার হাত থেকে ফটোটা নিয়ে নিয়েছে আর সুমিত ফটোটা না দেখেই বলে দিলো - "কাকিমা আজ সকালে যে মেয়েটাকে দেখতে গেলাম, তাকে আমার আর ঠাকুরদার পছন্দ হয়েছে আর গলা জড়িয়ে আদরও করে এসেছি, তুমি ঠাকুরদার থেকে জেনে দেখো "।

সুমিতের এরকম কথা শুনে কাকিমা তো অবাক হয়েইছে সাথে প্রীতিও অবাক হয়ে বলে উঠলো "দাদা তুই এরকম কান্ড করেছিস, দাঁড়া দাদুর থেকে জেনে আসছি "। বলেই ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো সাথে কাকিমাও গেলো।

বিকালটা গ্রাম ঘুরতে ঘুরতে ঠাকুরদার সাথে সময় কাটিয়ে বেশ ভালো লাগলো। অনেক কথা হলো যা ঠাকুরদার মনে জমা ছিলো। সুমিতের হাত ধরে তিনি বললেন - " গ্রামের এইসব মানুষদের পাশে থাকলে তাদের সেবা সাহায্য করলে নিজের মনে যে সুখ শান্তি পাওয়া যায়, তা অর্থ দিয়ে কেনা যায় না। তোমার বাবা চাইলে এখানে থেকে যতেষ্ঠ অর্থ রোজগার ও সক্ষম মেয়েকে বিয়ে করতে পারতো, কিন্তু করেনি কারণ অর্থই জীবনে সবকিছু নয়, অন্যকে ভালো রাখাটাই আসল জীবন। এখন তুমি চাইলে তোমার বাবা-মাকে এখানে এনে রাখতে পারবে.... "।

            রাতের খাবার খেয়ে সুমিত শুয়ে শুয়ে ঠাকুরদার বলা কথাগুলো ভাবছিলো "সত্যি এখন তো সে সাবলিল হয়ে গেছে, বাবা-মা এখানে থাকলে ভালো হবে "।

এইসব কথা চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পারেনি। সে দেখলো তাদের বাড়ির উঠোনের সামনে তেঁতুলগাছ টা থেকে কিযেনো ১টা উড়ে এলো, তারপর আরো ১টা। সুমিতের বিছানার কাছে আসে তারা মানুষের মত হয়ে গেলো আর আচমকা তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে ১জন নাক মুখ চেপে ধরলো আর অন্যজন সুমিতের পা। সুমিত নিজেকে বাঁচাতে ছটপট করতে থাকলো কিন্তু লম্বা চওড়া দেহের হাতটা কিছুতেই সরাতে পারছে না। সে চিৎকার করতে পারছে না শুধু মুখ চাপা গোঁ গোঁ শব্দ করতে থাকে, সুমিতের দম বন্ধ হয়ে আসতে থাকে আর সে আরো জোরে ছটপট করতে থাকে, নিজেকে যেকোন ভাবেই ছাড়াতে হবে কিন্তু পারছে না, সুমিত হাত দিয়ে বিছানা চাপড়িয়ে শব্দ করতে থাকে লোকটা অন্য হাত দিয়ে সুমিতের সেই হাতটা চেপে ধরে তখন পিছুনে অন্য একটা মহিলা বলে ওঠে " ঠাকুরপো "!

তখন এরা ২জন সুমিতকে ছেড়ে দেয় আর আগের মত আবার তেঁতুলগাছটার দিকে চলে যায়। সুমিত ধড়পড় করে বিছানায় উঠে বসে আর চিৎকার করে "দাদা" বলে ডাকে, কারণ একটু দূরেই দাদার ঘর।

সুমিত হাঁপাতে হাঁপাতে আবারো জোরে "দাদা" বলে ডাকার সময় খেয়াল করলো সেই বউটাকে চেনে যেনো। কিন্তু তখন তার অবস্থা মনে করে চেনার মত নেই। দরজা খুলে দাদা আর বউদি ঘরে এসে টিউবলাইট জ্বালালো, বউদির কথা মত দাদা নীচে ঠাকুরদা ও অন্যদের ডাকতে গেলো, বউদি গ্লাসে জল নিয়ে এসে পাশে বসে হাঁপাতে থাকা সুমিতকে দিয়ে গায়ে মাথায় হাত বোলাতে থাকে। প্রীতি আগে ছুটে এসে কাঁদো কাঁদো গলায় গ্লাসটা নিয়ে পাশে রেখে দিয়ে পাখাটা জোরে দিয়ে দিলো। বউদিও কাঁদো কাঁদো গলায় বললো "দেখনা গা হাত আগুনের মত গরম হয়ে আছে  "।

আসতে আসতে অন্যরাও সেই ঘরে এলো ঠাকুরদাও।  সুমিত ততোক্ষণে নিজেকে একটু সামলে নিয়েছে। বড়ো কাকিমা গরম দুধ করার কথা বলতে সুমিত বাঁধা দিয়ে বললো না এখন ওসব খাওয়া ঠিক হবে না। বড়'দা বললো দাঁড়া গ্লুকোজের জল করে আনি।

ঠাকুরদা সুমিতের হাত ধরে রইলো, সুমিত একবার অন্ধকারে বাইরের তেঁতুল গাছটার দিকে তাকানোর চেস্টা করলো কিন্তু দেখতে পেলো না।

সুমিত প্রশ্ন করলো "ওই গাছটা কতোদিনের পুরনো?"

ঠাকুরদা বললেন তা অনেকদিনের আমি আসা থেকেই ওতো বড়ো দেখে আসছি।

বড়'দা ১মগ গ্লুকোজের জল করে এনেছে বলে কাকিমারা বকতে থাকে তাকে, সে বললো আরে সবাই খাবে বলে করেছে।

সুমিত আবারো জল খেলো তারপর সব কথা বললো।  ঠাকুরদা চিনতে পেরে বললেন "ওটা আমার কাকা-শ্বশুর হন "। কারণ ওমন লম্বা চওড়া লোক উনিই ছিলেন। সুমিত একটু চিন্তা করলেন তারপর বললো হতে পারে কারণ ঝিম্মার মতোই সিঁথিতে চওড়া সিঁদুর পড়া, গোল মুখ, লম্বা চুল বলে উঠলেন "ঠাকুরপো" ।


সুমিত চুপ করে গেলো, কারণ সে বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও এইসব ভূত প্রেতে বিশ্বাস করছে। কিন্তু যা ঘটনা ঘটলো তাকে তো অস্বীকার করা যায় না।

ঘরের মধ্য অনেকে অনেকরকম কথা বলছে কেউ গাছটা নিয়ে কেউ নিজের বাপের ঠাকুরমাকে নিয়ে। সুমিত এসবে কান দিচ্ছে না, সে ঘটনাটা মেলানোর চেস্টা করছে, তখন প্রীতির কথাটা মনে পড়লো গ্রামে এমন অনেক আচার নিয়ম আছে যা শহরের লোকের কাছে কুসংস্কার কিন্তু গ্রামের লোকদের কাছে আত্মবিশ্বাস।

সুমিত প্রীতির দিকে তাকিয়ে দেখলো কান্না কান্না চোখ আর মুখ যেনো ঝিম্মার মতোই দেখতে।

পরেরদিন সকালে ঠাকুরদা আগে তেঁতুল গাছটা কাটার ব্যবস্থা করলো। কাকারা বললেন বাড়িতে কালিপুজা করবেন। আর প্রীতি সুমিতকে চুপি চুপি বললো "ওসব না করে প্রিয়া-সুজাতা বউদিকে আনলেই তো সসম্যা মিটে যেতো কারণ একের মধ্যে বউ ও প্রেত্নী দুটোই আছে "।

সুমিত কিছু বললো না, চুপ করে নিজের ঘরে চলে গেলো।  

                ( চলবে.......)

 ★প্রথম পর্ব পড়ুন 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ