সবখবর দর্পণ || শীতলা মায়ের স্নান যাত্রা || তন্ময় রাণা




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

শীতলা মায়ের স্নান যাত্রা , কলমে তন্ময় রাণা 

কথায় আছে বারো মাসে তেরো পার্বণ আমরা উত্তর হাওড়ার সালকিয়া ও সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের কাছে সেরকমই একটি পার্বণ বা উৎসব হলো শীতলা মায়ের স্নান যাত্রা l 

শীতলা মা সাধারণত হিন্দু ধর্মের দেবী যিনি এক লোকদেবী রূপে পূজিত হন l 

ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর ভারত,  পশ্চিম বঙ্গ,নেপাল,এবং পাকিস্তানের বহু ধর্মের মানুষ এনার উপাসনা করে থাকেন l 

এই দেবীকে আবার সমন্বয়ের দেবী বলেও 

উল্লেখ করা যায়,হিন্দু,মুসলিম,বৌদ্ধ, এমন কি চীনের মানুষরাও এই দেবীর কৃপা লাভের জন্য মায়ের পূজা স্থানে মিলিত হনl

হিন্দুদের কাছে ইনি শীতলা মা, মুসলিমদের কাছে বুড়াবুবু, বৌদ্ধদের কাছে হীরাট এবং চীনাদের কাছে উষা বলে পরিচিত l

শীতলা দেবীর বাহন গর্ধব বা গাধা l প্রচলিত মূর্তিতে মায়ের এক হাতে জলের কলস আর অন্য হাতে ঝাড়ু দেখা যায় l 

মানুষের বিশ্বাস মা কলসি থেকে আরোগ্য সুধা দান করেন এবং ঝাড়ু দারা বসন্ত রোগে আক্রান্তদের কষ্ট লাঘব করেন l

শীতলা দেবীর কথা মহাভারতেও উল্লেখ আছে l একবার বিরাট রাজার রাজ্যে ভীষণ বসন্ত রোগের উপক্রম হয় তখন সেখানে রাজা পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে,শেষে শীতলা মায়ের পুজো করে রোগ মুক্ত হন l তখন থেকেই মা শীতলা গুটি বসন্ত,হাম রোগের দেবী রূপেও প্রচলিত হন l 

কথিতে আছে বসন্তকালে পৃথিবী ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠলে মা শীতলা গঙ্গা স্নান করে নিজেকে তৎসহ পৃথিবীর মাটিকে শীতল করেন l 

সেই ধারণা থেকেই প্রতি বছর মাঘ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে উত্তর হাওড়ার সালকিয়ায় গান,বাজনা,বিভিন্ন সং  সহ বিরাট শোভাযাত্রা সহকারে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে এই শীতলা মায়ের স্নান যাত্রা পালিত হয় l 

লৌকিক মতে মায়েরা সাত বোন সালকিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে থাকেনl 

বছরে একবার এই সকল মায়েরা স্নান যাত্রা উপলক্ষে বের হয়ে একে অপরের সাথে দেখা করেন, শুধু ছোটো মা বের হন না বাকি সব মায়েরা গিয়ে তার মন্দিরে শোভা যাত্রা করে দেখা করে আসেন l

সালকিয়া হরগঞ্জ বাজারের শীতলা মা বড়ো বোন এবং তার মন্দির বড়মার মন্দির রূপে বিশেষ ভাবে প্রসিদ্ধ l 

মাঘ মাসের এই পূর্ণিমা তিথিতে মায়ের স্নান যাত্রা উপলক্ষে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মায়ের মন্দিরে বহু মানুষের সমাগম ঘটে l 

বহু মানুষ উপোষ করেন,তাদের সব কষ্ট দূর করার জন্য মায়ের কাছে মানষিক করেন l 

অনেকে মায়ের মন্দির থেকে গঙ্গার ঘাট পর্যন্ত দন্ডি কাটেন l নতুন জামা কাপড় পড়ে স্নান যাত্রা উপলক্ষে বের হওয়া মায়ের চতুর্দোলায় কাঁধ দেন l পরের দিন ষোলো আনা পুজো দিয়ে ব্রত সম্পূর্ণ করেন l  

বিভিন্ন ক্লাব সংস্থার পক্ষ থেকে রাস্তার ধারে ছোটো বড়ো ক্যাম্প করা হয় যেখান থেকে প্রতি বছর উপোষ করা ভক্তদের জল বাতাসা শরবত,ডাব বিতরণ করা হয় ছোটদের জন্য থাকে লজেন্স l 

স্নানযাত্রর সমগ্র চিত্র লোকাল কেবিল টিভি চ্যানেলে লাইভ দেখানো হয় l 

রাস্তার ধারে বড়ো স্ক্রিনের মাধ্যমেও দর্শনার্থীদের জন্য দেখার ব্যবস্থা থাকেl 

সমস্ত অনুষ্ঠানটি  প্রশাসনের সুসংগঠিত  পরিচালনা ও সিসি টিভি ক্যামেরার নজরদারিতে পরিচালিত হয়ে থাকে l 

সেই ছোটো বেলা থেকে এরকমই দেখে আসছি মা ঠাকুমাদের কাছ থেকে এরকমই গল্প শুনে আসছিl  বিশ্বাস, আগামী প্রজন্মও শুনবে l 

তবে এবারের পরিবেশ একটু অন্যরকম

করোনা আতঙ্ক,এখনো পুরোপুরি যায়নি,

নতুন রূপে নাকি আবার আসছে l 

তার মধ্যেই এই উৎসব পালিত হতে চলেছে l 

যে কথা মাথায় রেখে প্রশাসন এবারের যার জন্য কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করেছেন সে জন্য হয়তো এ বছর স্নানযাত্রার আড়ম্বর কিছু কম হবে l তবে মানুষের বিশ্বাস ভক্তিতে খুব  একটা প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না l 

যদিও বর্তমানের এই পরিস্থিতির কথা ভেবে মন চাইলেও,মানুষকে এবারে এই উৎসব পালন থেকে বিরত থাকার স্পর্ধা আমার নেই, তবুও সবাইকে প্রশাসনের নির্দেশ মেনে এই উৎসব পালন করতে এবং নিজেদেরকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে পুজোর সব নিয়ম পালন করতে আমার একান্ত অনুরোধ জানাচ্ছি  l 

তবে সবার মতো আমারও বিশ্বাস, আমাদের সবার "বড়ো মা" আছেন সব বোনেদের নিয়ে তাঁরা সকলে মিলে আমাদের আরোগ্য সুধা বিলিয়ে সব বিপদ থেকে সবাইকে রক্ষা করবেন l 

মায়ের কৃপায়,আমরা সবাই 

এই মহামারি থেকে রক্ষা পাবোl

জয় শীতলা মা...জয় বড়মা,সবার 

মঙ্গল করো,সবাইকে 

রক্ষা করো মা....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ