পোস্ট বার দেখা হয়েছে
গোপন বিবাহ
চাবুকের দাগ দেখে যেই তুমি ঠেকালে আঙুল,
কঠিন পাহাড় দেশে বাজল মাদল,
পূর্ণগ্রাস থেকে চাঁদ মুখতুলে তাকাল নরম,
তার কোনা ক্ষোভ নেই ৷ বুনো গাঁদা ফুল
পার হয়ে বসেছে গভীর হয়ে মাটির উঠানে পাতা কাঠির মাদুর৷
মোটা ভাত,লাল শাক, দিলাম আমার অন্ন দুঃকের হাঁড়ির,
আহার পার্বণ হল কী ভাবে যে তুমিই তা জানো !
কাকে বলি, কাছে-পিঠে কেউ নেই, রাত্তিরকে ডেকে বললাম,
জানো নিশা, ও আমাকে দিয়েছে সিঁদুর ৷
====
সুতো
তিনি জানতেন বকুল আমার প্রিয়
সেটা বিবাহের প্রথম বছর সবে
সিনেমা ফেরত রাত্তিরে জল ঝড়
আমাদের খুব ভাল লেগেছিল সেই
দুর্যোগে ভিজে রাস্তায় ঢেউ ভাঙা ৷
নির্জন বাড়ি দুপুর শয়নে হেলে
এ বয়স আর কীভাবে এড়াবে দিব্য
নিদ্রার টানে পুরনো পুঁথির পাতা
খুলে পড়ে ফেলা টুকরো চিত্র কিছু,
কোথাও নাটক কোথাও গানের কলি
ভাপা ইলিশের সঙ্গে গরম ভাত ৷
এ বয়সে ছেঁড়া সেলাই জমে না ততো
পড়ে থাকে সুতো সূচের রন্ধ্র চ্যুত
তিনি ডাকতেন সন্ধ্যামালতী নামে ৷
====
কলসমাটির
তোমার পায়ের কাছে হয়েছি আনত
গ্রামের বালিকা মেয়ে, জানি না প্রেমিক এলে কী কী হয় দিতে,
দু-একটি লোকগীতি,অরুণমালার গল্প এইমাত্র জানি ৷
স্বীকার করছি রূপহীনা কালো,
আমার কুটিরে এসো তখন দেখাব
কেমন গভীর লাল ভিতরের আলো
চোখ ঝলসানো কোনো ছবি নেই দরজায় আঁকা
কেবল মাটির রূপ, মাটির মমতা ৷
আমিও মাটির মেয়ে, কলসের মাটি আর মাটির কলস ৷
===
গাথা
এই কি তোমার তোমার খেলার সময় এই কি খেয়াল !
কত পথ হেঁটে ছেঁড়াখোঁড়া আর কাতর কাঙাল
বাড়িয়েছি হাত, এখনও ঘুমুবে পাথরেহ ঘরে !
কেন হাসবে না! ভাস বে না কেন
প্রগলভতায়!
মিশর দেশের ভারি পিরামিডে তুমি কি ফারাও !
যদি ডাকে কোন সামান্য নারী ছোট বুনো ফুল
জাগবে না তুমি ঠেকাবে না পাও ধুলোর উঠোনে!
মাটির পাত্রে এনেছি হাঁড়িয়া ছোঁয়াবে না ঠোঁটে !
তব্ ফিরে যাব টুকরো টুকরো
জ্যোত্স্নার রাতে!
ছোটো শাঁখে গাঁথা মালাও নেবে না!
নেবে না লবণ!
আমি শ্যাম দ্বীপ চির পুরাতন আর্ত প্রেমিকা,
বোঝেনি পুরুষ কেন তাকে ডাকি নীল সন্ধ্যায়,
ভেবেছে কামনা ভেবেছে ছলনা বোঝেনি প্রণয়,
জানে না সে কেন পাখিরাও বাঁধে এক মুঠো নীড় ৷
====
বীজপত্র
যতবার আমি তোমাকে চিঠি লিখতে চাই, সাদা কাগজে ঝরে
পড়তে থাকে রকমারি ফুল ও বাহারী পাতা, গড়িয়ে যায় মেঘ ৷খাম খুলতেই একরাশ অগোছালো অক্ষরের বীজপত্র ভাঙে যদি খলবলিয়ে ওঠে সাতশো মুনিয়া পাখি, হয়ত তোমার খুব রাগ হবে, জন্মের শোধ আড়ি করে দেবে ভেবে নিজের ভেতর গুটিয়ে রাখি পুরনো ঘোড়ারগাড়ির টুং টাং শিশিরের গুঁড়ো থেকে শুরু করে সব রকম বাড়াবাড়ি ৷
অনিচ্ছায় খসখস ছড়িয়ে দিই বালিকাঁকর শিয়ালকাঁটার আঠা ৷ আচ্ছা, তুমিই বলো এভাবে সত্যি কি আর উল্টো হাওয়ার কথা ডাকবাক্সে ফেলে আসা যায় !ফলে দিনের পর দিন মাটি খুঁড়ে গহন গহ্বরে আমার যত ক্ষুধার কবিতা পুঁতে ফেলি, একটা ফক্কা বোতল উল্টে মদ খাওয়ার মহড়া দিতে দিতে ফুরফুরিয়ে খরচ করতে থাকি দিন ৷ অপমান ও দুঃখে থেঁতো হতে হতেও আমি আমি টের পাই শুকনো হাড়ের নীচে একা চোরা নদী ক্ষীণ খরতোয়া,...পাহাড় দেশে ফুটে থাকা এক ম্যাগনোলিয়া ফুলের সঙ্গে ফের কোনওদিন দেখা হতে পারে ৷
2 মন্তব্যসমূহ
অসামান্য এ কাব্য গুচ্ছ 🙏
উত্তরমুছুন
উত্তরমুছুনমুগ্ধ হয়েছি প্রতি লাইনের শব্দ বিন্যাসে ৷ এই অসামান্য লেখা গুলো আমি আমাকে টাইপ করতে বলায় আমি কৃৃৃৃৃৃতজ্ঞ দর্পণ সম্পাদকের কাছে ৷
প্রিয় কবি রমা ঘোষ দিদি আমার টাইপে কোন ভুল থাকলে ক্ষমা করবেন ৷