সোনার থালায় সাজানো পরমান্ন || অংশুমান কর




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

শ্রীরামপুর শহরে থাকেন রমা ঘোষ। কলকাতার আলোকিত মঞ্চের কবিসভায় তাঁকে পাওয়া যায় না। মঞ্চের সাজানো আলোর থেকে একটু দূরে তাঁর নিজস্ব আলোপৃথিবী। দশের অধিক কাব্যগ্রন্থ তাঁর। বছর পনেরো আগে প্রকাশ পেয়েছিল তাঁর নির্বাচিত কবিতাও। কিন্তু, সেই বইটিও, কে জানে কেন, বৃহত্তর পাঠকগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে যায়নি। এতে অবশ্য তাঁর ক্ষতি হয়নি কিছু, ক্ষতি হয়েছে বাংলা কবিতার, ক্ষতি হয়েছে বাংলা কবিতার নিবিষ্ট পাঠকের। এইবার অবশ্য আশা করা যায় যে, বাংলা ভাষার প্রকৃত পাঠক যথাযথভাবে পড়তে পারবেন রমা ঘোষকে কারণ কিছুদিন আগেই ঋত প্রকাশন থেকে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কবিতা সংগ্রহের প্রথম খন্ড। রমা ঘোষের কবিতাগুলি একত্রে যথাযথভাবে প্রকাশ করতে না-পারায় বাংলা কবিতার যে-ক্ষতি এতদিন হয়েছে, এই গ্রন্থ সেই ক্ষতি কিছুটা পূরণ করবে আশা করা যায়।

তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ “মহারাজ, আমি সমুদ্রের জলে ডুব দিয়ে”র ‘আমার কবিতা সকল’ কবিতায় রমা ঘোষ জানিয়েছিলেন কেন কবিতা  লেখেন তিনি, “কেউ যদি প্রশ্ন রাখে কবিতা লেখেন কেন/তার দুই হাত ধরে সবিনয়ে বলি/বিশ্বাস রাখুন রক্তে দারুণ অসুখ/জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি আনত লতায়/রমণীর লাজনম্র রূপ/দেবদারু গাছটিকে বুঝি/দীর্ঘতর পুরুষের বলিষ্ঠ শরীর।/...কবিতা লেখার জন্য কতদিন কাঁদি/গাছ কি এমন কাঁদে ফুল ফোটানোর মোহে/দুরন্ত ইচ্ছেয়”। এ কথা সত্যি যে, নিজের সারা জীবন কবিতার জন্য সমপর্ণ করেছেন রমা ঘোষ। তাঁর একটি কাব্যগ্রন্থের নাম “নিঝুম জলের ঘোর”। এক ঘোরের মধ্যেই যেন আজীবন কবিতা রচনা করেছেন তিনি; সেই ঘোর সঞ্চারিত করেছেন পাঠকের হৃদয়ে।  সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিবর্তিত হয়েছে তাঁর কবিতা, কিন্তু কখনওই মূল কয়েকটি সূত্রের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়নি তাঁর সংযোগ।  যেমন, প্রথম যৌবনে আনত লতায় রমণীয় লাজনম্র রূপ দেখেছেন যিনি, যিনি দেবদারু গাছটির মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন দীর্ঘতর পুরুষের বলিষ্ঠ শরীরের আদল, কোনও সন্দেহ নেই যে, প্রকৃতি আর প্রেম ফিরে ফিরে আসবে তাঁর কবিতায়। এসেছেও।  ‘চাঁদিনি সড়ক’ কবিতায় রমা ঘোষ লেখেন, “আমার আবাস থেকে তোমার বাড়ির  সেতু চাঁদিনি সড়ক/গহন পরিখা ঘেরা তোমার বাড়ির পটে আলোকিত ঘর/সবুজ কার্পেট পাতা,.../গেটের দু’পাশে দুই ঝাউবৃক্ষ গাঢ় চোখে আমন্ত্রণ করে,/পাঁচিলে উথল হেসে হাস্নুর মদির শাখা বলে ঘরে এসো”, আর বোঝা যায় কীভাবে তাঁর কবিতার রক্ত-মজ্জায় প্রকৃতির সঙ্গে সংলগ্ন হয়ে আছে প্রেম। 

কবির ছবিটি ঐত্রেয়ী সরকারের সৌজন্যে প্রাপ্ত।

রমা ঘোষের দ্বিতীয় গ্রন্থ “ত্যক্তগ্রহ” তিনটি কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বইটি থেকেই তাঁর কবিতার শরীর অনেক বেশি সংহত হতে শুরু করে; প্রথম বইটিতে যে মৃদু আলগা সজ্জা ছিল কবিতাগুলির, সেই সজ্জাটি নিখুঁত পারিপাট্য অর্জন করে এই গ্রন্থে।  তার মানে অবশ্য এই নয় যে, এ বইয়ে প্রয়োজন মতো ছন্দ ব্যবহারে এক-আধমাত্রার স্বাধীনতা তিনি গ্রহণ করেননি। এই বইটি থেকেই তাঁর কবিতায় প্রবেশ করতে থাকে বিচিত্র সব অনুষঙ্গ, ভূগোল বেড়ে যায় তাঁর কবিতাভুবনেরও। ‘ফার্নচারাটিকে নিয়ে’ কবিতায় তিনি লেখেন, “তোমার দু’হাতে আজ বরফের দস্তানা/মেয়েটিকে শীতদেশে কেন নিয়ে যাও,/পুরোনো সার্ডিনমাছ এই ভেবে অযতনে রেখেছ ঝুলিয়ে/...এখন ঘুমোও কেন মৃত শ্বেতভল্লুকের চামড়ার নীচে”। শ্বেতভল্লুক আর সার্ডিন মাছ এভাবেই অনায়াসে তাঁর কবিতায় প্রবেশ করে তাঁর কবিতাভুবনের ভূগোলটিকে বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বাস্তবতার দরজাটিকেও আলতো টোকায় উন্মুক্ত করে পাঠককে প্রবেশাধিকার দেয় পরাবাস্তব এক জগতে। অনায়াসে তাই তিনি লেখেন, “তুষারের নীচে আজ ঘুমিয়ে পড়েছে এক তুষারমানবী/রকরোজ ফুলগুলি খুব শীতে নষ্ট হয়ে গেছে,/দীর্ঘডানা পাখিদের কেউ নেই, দলবেঁধে উড়ে গেছে দূরে/বরফে নিঝুম ওই পপলার শ্রেণি পার হয়ে/ভূমধ্যসাগর নয় আরো দূর পথে” (‘আর্তি’)। তবে, একথা বললে অনৃতকথন হবে যে, কবি হিসেবে পরাবাস্তব এক দুনিয়ায় প্রবাসীর জীবন কাটিয়েছেন রমা ঘোষ। যেমন, শেষ কয়েক বছরের লেখায় রূঢ় বাস্তব, নিষ্ঠুরতা বড় স্পষ্ট করে ধরা পড়েছে তাঁর কলমে। এই গ্রন্থে নেই, কিন্তু “ভূতে টানা এক্কাগাড়ি” বইয়ের ‘অহংকার’ কবিতায় তিনি লিখেছেন, “দুব্বোঘাসের সবুজে রক্ত ছিটিয়ে দিচ্ছে ও কে!/গরমভাতের সঙ্গে আহারে কলমির ডগা ছিঁড়তে/ঘাটে নেমে দেখি কাটা-মাথা লাশ পুকুরের জলে ভাসছে/...ধান-কাটা মাঠে শস্য খুঁটতে দেখি আঙুলের খন্ড,/অহংকারের তির এসে এক বালকের পিঠে গিঁথল”। “নিঝুম জলের ঘোর”-এও ‘বাজ’ কবিতার সূচনায় হিংস্র, রক্তগৃধ্নু এক পৃথিবীর ছবি এঁকেছেন তিনি, “শহরে চালান হল হারানের লাশ/লাশ বলতে শুধুমাত্র ধড়/কাটা মুন্ডু জঙ্গলে ফেরার,/ডুকরে কাঁদতে ভয় পায় হারানের বউ/উনুনের ঝিঁক ছুঁয়ে/ছেলেকে সে ফিসফিস কী কথা বোঝায়”। তাঁর যৌবনে লেখা কবিতাগুলির পাশে এই কবিতাগুলিকে রেখে পড়লে চেনা যায় কবি হিসেবে তাঁর যাত্রাপথটিকে।

রুদ্র বাস্তবকে একজন মেয়ের চোখ দিয়েও দেখেছেন রমা ঘোষ। তবে মেয়েদের চোখ দিয়ে পৃথিবীকে দেখলেও লঘু অর্থে তাকে কিছুতেই ‘নারীবাদী’ কবি বলা যাবে না। নারী হিসেবে কবিতায় তাঁর অবস্থান কখনওই চিৎকৃত ঘোষণা-আবদ্ধ নয়। তাঁর প্রতিবাদে বরং লুকিয়ে থাকে অভিমান আর প্রগাঢ় প্রেম। এই প্রসঙ্গে সম্পূর্ণ উদ্ধৃত করতে ইচ্ছে হয় “জলের উদ্ভিদ” গ্রন্থের ‘মাটির কলস’ কবিতাটিঃ

তোমার পায়ের কাছে হয়েছি আনত

গ্রামের বালিকা মেয়ে, জানি না প্রেমিক এলে

কী কী হয় দিতে।

দু’একটি লোকগীতি, অরুণমালার গল্প

এইমাত্র জানি,

স্বীকার করছি আমি রূপহীনা কালো

আমার কুটিরে এসো তখন দেখাব

কেমন গভীর লাল ভিতরের আলো।

চোখ ঝলসানো কোনো ছবি নেই দরজায় আঁকা

কেবল মাটির রূপ,  মাটির মমতা,

আমিও মাটির মেয়ে, কলসের মাটি

আর মাটির কলস।

একটি কালো মেয়ের জীবনের দুঃখকে কি এই রকম লাজনম্র দৃঢ়তায় আর ধরে রেখেছে কোনও বাংলা কবিতা? আসলে রমা ঘোষের কবিতা পড়লে মনে হয়, সেইসব কবিতার ভেতরে বসে রয়েছেন এক ঐশ্বর্যময়ী কাঙালিনি, যিনি পুরুষের কাছ থেকে প্রেম যাঞ্চা করেন ঠিক, কিন্তু কখনওই নিজমহিমার বিসর্জনের বিনিময়ে প্রত্যাশা করেন না ভিক্ষাতন্ডুল। বরং রমা ঘোষের কবিতার অন্তঃস্থলে বসে থাকেন সেই রমণী যিনি আদর-কাঙালিনি হয়ে রক্তাক্ত হতে, ক্ষতবিক্ষত হতে প্রস্তুত। তিনি লেখেনঃ “হাতের মুঠোর নীচে ঝরে যাওয়া জল নিয়ে/শোক নিরর্থক/আঙুলের ভিজে স্বাদ সেইটুকু পুষে রাখা ভালো” (‘সুখ দুঃখ’)। ভেঙে-যাওয়া সম্পর্ক নিয়ে এই রকম নরম বাংলা কবিতা ঠিক কটি লেখা হয়েছে? “টক আঙুরের কথা” এই গ্রন্থের এই রকম একটি কবিতা পড়ার পরে মনে পড়ে যায় অন্যত্র রমা ঘোষ লিখেছেন, “প্রেম চলে যায় তবু বেঁচে থাকে প্রেমের কবিতা.../প্রেম চলে যায়/চতুর্দিকে ঝরে পড়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্তের আখর/গভীর অরণ্যে বৃষ্টি জমাট নৈঃশব্দ্যে/পাতা ভেজে ফুল ভেজে ভিজে যায় ঝুরি ও বাকল.../প্রেম চলে গেলে/তারপর লেখা হয় প্রেমের কবিতা” (‘প্রেম চলে যায় তবু’)। লিখেছেন:  “কিছু নেই এই দীন রমণীর ভরিয়ে দেওয়ার/বিনম্র চোখে দেব মেঘভার জলদবরণ।/তুমি এনে দিয়ো কিছু বুনো ফুল কুর্চি শিমুল,/দেব সিঁথি পেতে—রক্তনদীর উৎসটি খুঁড়ো” (‘গাথা’, ১৪ নম্বর কবিতা)। 

সিঁদুরদান যে আসলে বিবাহ নামক এক প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের সিংহদুয়ারই কেবল নয়, আসলে এক রক্তনদীর উৎস খোঁড়ার প্রক্রিয়া—সে কথাও কি এইভাবে আর উচ্চারিত হয়েছে বাংলা কবিতায়? আসলে রমা ঘোষ যখন প্রতিবাদী, তখন সেই প্রতিবাদও থাকে ঋজু কিন্তু শান্ত স্বরে স্থিত। তিনি জানেন জীবনের মতো কবিতাতেও নিচু স্বরের শক্তি। আর এর চেয়েও বোধহয় বড়ো সত্য এটিই যে, চরাচরে পরিব্যাপ্ত প্রেমের থেকে তিনি কিছুতেই বিচ্ছিন্ন করতে চান না তাঁর কাব্যকে। তাই এমনকি ধর্ষণের বিরুদ্ধেও যখন তিনি কবিতা লিখছেন তখনও কোথাও যেন বয়ে যেতে থাকে অন্তঃসলিলা প্রেম; ধর্ষণকেও তিনি দেখেন প্রেমের অপমান হিসেবে। “জলের উদ্ভিদ” গ্রন্থে ‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে’ কবিতায় লেখেন, “আমাকে ধর্ষণ করে এই ঘোর শীতকালে অর্কিডের প্রজাপতি/ চেয়ো না ফোটাতে,/চুম্বনের দাগে কেন মাখালে লাঞ্ছনা আর অপমান এত/তুমি কি জানো না বীণা বাজানোর রীতি”। ধর্ষণ নিয়ে এই রকম ধীর, শান্ত, প্রত্যয়ী একটি প্রতিবাদের কবিতা সত্যিই বাংলা ভাষায় আর লেখা হয়েছে কি?

ভাবলে আশ্চর্যই হতে হয় যে, ধর্ষণের বিরুদ্ধেও যখন কলম ধরছেন রমা ঘোষ তখনও তাঁর কবিতা তিক্ত হয়ে উঠছে না। কোথা থেকে পেলেন তিনি এই অমৃত উচ্চারণের শক্তি? তাঁর “টক আঙুরের কথা” গ্রন্থটির ‘ক্ষমা’ কবিতাটির কথা এই প্রসঙ্গে স্মর্তব্য। টানা গদ্যে লেখা সেই কবিতায় তিনি লেখেন, “আমার শরীর থেকে বিচ্ছুরিত টাটকা রোদ্দুর পাকিয়ে তুলছে বিষণ্ন গমদানা, থরথরে উন্মাদনায় ফেটে পড়ছে পাখপাখালির ডিম, জলে মাছ উল্লসিত।...শিশুরা খেলছে হাসছে চুমু খাচ্ছে আর হিংস্র মানুষ তার ভেতরের পশুকে অনুভব করে ঈষৎ লজ্জিত হয়ে লাঙল-কাঁধে মাঠের দিকে...যারা আমার বাপ তুলিয়ে মা তুলিয়ে...যারা আমার অস্বাস্থ্য কামনা করে চৌত্রিশ-তলার ব্যালকনি টপকে ঠেকে ফেলে দিয়েছিল, যাদের হেনস্থায় আমাকে টিনের কৌটো নেড়ে ভিক্ষে করতে হয়েছিল...সকলকে শেষে আমি ক্ষমা করতে পেরেছি”। এই কবিতা পড়লে বেশ বোঝা যায়, প্রকৃতিই তাঁর নিরাময়, তাঁর ক্ষতের শ্রুশ্রূষা। এই নিরাময়ই গরলকে করে তোলে অমৃত; খুদকুটোকে পরমান্ন। তাঁর এই অবস্থানটিকে স্পষ্ট করার জন্যই, মনে হয়, ‘নিরাময়’ শিরোনামে একটি কবিতাই লিখেছেন রমা ঘোষ। সেই কবিতায় গৌতম সুজাতাকে বলেন, “তোমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে বরফের স্তর ফেটে গড়িয়ে যাচ্ছে নদী। তোমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে আমি আবিষ্ট হচ্ছি সমুদ্রের নিবিড় আলিঙ্গনে। সুজাতা, তোমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে আমি ঘ্রাণ পাচ্ছি এই ভোগ্য পৃথিবীর—সোনার থালায় সাজানো পরমান্নের”। কবিতাটি পড়তে পড়তে মনে হয় যে, এই কবিতার সুজাতা তো কবি রমা ঘোষ নিজেই। পাঠকের সঙ্গে কথা বলার অছিলায় তিনি, যেন, সমস্ত গরলকে অমৃত করে, তিক্ততার সমস্ত পারিপার্শ্বকে প্রেমের জলসিঞ্চনে ধৌত করে, একটি বোধিবৃক্ষের নীচে গৌতমের সামনে তাঁর সোনার থালার মতো কাব্যে অর্পণ করেছেন পরমান্ন।  

এই প্রসঙ্গে আর একটি কথা বলতে ইচ্ছে করছে।  একটি বিশেষ কারণেও রমা ঘোষের প্রেমের কবিতা চিরকালীন বাংলা প্রেমের কবিতার ধারাটিতে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রমী সংযোজন বলে অনেকেই মনে করে থাকেন।  তাঁদের মতে, তিনিই  প্রথম দুই নারীর প্রেমকে স্পষ্ট করে এঁকেছেন বাংলা কবিতায়; তাঁর কলমই প্রথম রচনা করেছে লেসবিয়ান বাংলা কবিতা।  “কালো মেয়ের ডানা” গ্রন্থে তিনি নির্মাণ করেছেন এক চরিত্র ‘নীতা’, আর তারপর তার সঙ্গে সম্পর্কের নানা স্তরকে আশ্চর্য সাহসে এঁকেছেন কবিতায়। লিখেছেন, “নিভাদির ছাদ জুড়ে ভূমধ্যসাগর!/ভূমধ্যসাগরে আমি ঢেউ ভেঙে কবিতা লিখব/নীতা যদি রাগ করে, টুক ক’রে ভ্রমর শরীরে.../অনন্ত তৃষ্ণার দুঃখে আরও মূর্খ হব” (‘নিভাদির ছাদ’)। তবে এক্ষেত্রেও একটি কথা বলা জরুরি। যদিও এই বইটির ‘কালচৈত্র’ সিরিজের আট নম্বর কবিতায় তিনি সদর্পে ঘোষণা করেছেন, “আঙুল দেখিয়ে যদি কেউ বলে ওই যায় সমকামী/কুর্নিশ করি স্বাগত সম্ভাষণে!”, তবুও যে প্রেম এই কবিতাগুলির অন্তরাত্মা তা নিছকই শরীরী প্রেম নয়। এ যেন সেই বৃহৎ প্রেমেরই সম্প্রসারণ, যে প্রেম তাঁর কবিতায় সর্বব্যাপ্ত। 

দুই নারীর প্রেমকে ঘিরে আবৃত্ত এই কবিতাগুলি এই গ্রন্থটিতে নেই। এই গ্রন্থটিতে আছে ‘মহারাজ, আমি সমুদ্রের জলে ডুব দিয়ে’, ‘ত্যক্ত গ্রহ’, ‘জলের উদ্ভিদ’, আর ‘টক আঙুরের কথা’। সংযোজন অংশটিতে আছে আরও কিছু কবিতা। আগামীদিনে “কবিতা সংগ্রহের” দ্বিতীয় খন্ডটি প্রকাশ পেলে, রমা ঘোষের কবিতার ভুবনটির রূপময় বৈচিত্র্যের সঙ্গে পূর্ণ পরিচয় ঘটবে বাংলা কবিতার পাঠকের–এই আশা করাই যায়।  ঋত প্রকাশন একটি অত্যন্ত জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করেছে। কোনও ধন্যবাদই তাঁদের জন্য যথেষ্ট নয়। 


°ক্যালিগ্রাফি কৃতজ্ঞতা : দেবাশিস সাহা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

4 মন্তব্যসমূহ

  1. ভীষণ ভালো লাগলো রমা ঘোষের কবিতা সংগ্রহের এই আলোচনা পড়ে , কবিকে পড়ার ইচ্ছে আরো বেড়ে গেলো 🙏

    উত্তরমুছুন


  2. কবি রমা ঘোষ , উনার কবিতার অংশ পড়লাম মুগ্ধ হয়ে ৷ অসামান্য ভাবনায় প্রতিটা লেখা ৷আর সম্পূর্ণ আলোচনা সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করার জন্য অজস্র ধন্যবাদ জানাই অংশুমান কর মহাশয় কে ৷

    উত্তরমুছুন
  3. অনেক কিছু জানতে পারলাম। রমা ঘোষের কবিতা খুব বেশি পড়বার সৌভাগ্য হয় নি, যে কয়েকটি লাইন এখানে পেলাম তাতে তাঁর দক্ষতার পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ হলাম।

    উত্তরমুছুন