দর্পণ ॥ ঐতিহাসিক ঘটনা ॥ কৌশিক চক্রবর্ত্তী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

 

রাজা কংসনারায়ণ ও বাংলার দুর্গোৎসব 

                       

                     কৌশিক চক্রবর্ত্তী 



আজ বলব এক দোর্দন্ডপ্রতাপ রাজার গল্প। বাংলার যে বারো ভুঁইয়ার হাঁকডাকে স্বয়ং শাহেনশা আকবর পর্যন্ত দাঁত ফোটাতে পারতেন না বঙ্গের আনাচেকানাচে, জাহাঙ্গীর তাঁর সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাপতি মানসিংহকে পাঠিয়েছিলেন বঙ্গ দখলের জন্য, তাদের মধ্যেই একজন হলেন তিনি। রাজশাহী পরগনার তাহিরপুরের জমিদার কংসনারায়ণ রায়। ধারে ও ভারে তখন তাঁর নামডাক সারা বাংলা জুড়ে। বাংলার মসনদে তখন পাঠান নবাব সুলেমান করনানী। এদিকে তাঁর সেনাপতি কালাপাহাড়ের অত্যাচারে অতিষ্ট সারা বাংলাবাসী। একে একে সে ধ্বংস করে চলেছে সমস্ত হিন্দু মন্দির। ধর্ম নষ্ট করছেন হিন্দু প্রজাদের। সব দেখেশুনে আর চুপ করে বসে থাকতে পারলেন না কংসনারায়ণ। সোজা নালিশ জানালেন নবাবের দরবারে। কিন্তু হিন্দু রাজার আর্জিতে কর্ণপাত করছে কে? যথারীতি সুরাহা হল না কোনোমতেই। ছাড়বার পাত্র নয় রাজা কংসনারায়ণও। গোপন বৈঠকে বসলেন সিন্দুরীর জমিদার কালীদাস রায়, সাঁতোরের গদাধর সান্যাল, দিনাজপুরের গোপীকান্ত রায়ের সাথে। রুদ্ধদ্বার সেই বৈঠকে সেদিন ঠিক হল পাঠান উৎখাতের ব্লু প্রিন্ট। এরপর জমিদার কংসনারায়ণ নিজে উপস্থিত হলেন একেবারে আগ্রায়। সম্রাট আকবরের কাছে পেশ করলেন পাঠান শাসিত বাংলার দুরবস্থার কথা। একে একে তুলে আনলেন হিন্দু-মুসলিম অনৈক্যের পরিবেশ ও সাম্প্রদায়িক হানাহানির ঘটনা থেকে করনানী-কালাপাহাড়ের সমস্ত উৎপীড়নের কথা। সেদিন বাদশাকে নিজের বাকচাতুরতা দিয়ে মুগ্ধ করলেন বাঙালী যুবক কংসনারায়ণ। বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ তুলে ধরে বাদশাকে পাঠান অত্যাচারের সমস্ত কাহিনী বর্ণনা করলেন তিনি।

 


সুবক্তা ও ঝকঝকে বাঙালী যুবক কংসনারায়ণের প্রভাবে রীতিমতো আচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন তামাম ভারত ভূখণ্ডের একছত্র অধিপতি জালালুদ্দিন মহম্মদ আকবর। বাংলার করুণ অবস্থার কথা তাঁর চোখের সামনে ফুটে উঠলো। সেইদিনই রাজশাহীর এক সামান্য জমিদার কংসনারায়ণকে পাঠানমুক্ত এক নতুন বাংলার আশ্বাস দিয়ে বসলেন সম্রাট। বাংলার বিপন্ন মানুষ জানতেও পারল না যে তাদের স্বার্থে জমিদার কংসনারায়ণ কিভাবে এক এক করে সাজিয়ে চলেছেন দাবার ঘুঁটি। আগ্রাতেও রাজদরবারে নিজের বাকচাতুরতা দিয়ে সকলের নজর কেড়ে নিতে এতটুকু সময় লাগেনি কংসনারায়ণের। তিনি বাংলার স্বার্থে সেদিন পাঠান নবাবের সরাসরি বিরোধিতা করে শাহেনসাকে নালিশ জানাতে বিন্দুমাত্র ভাবেন নি। নিজের পরগনাটুকু নয়, তাঁর চোখে লেগেছিল এক স্বাধীন ও সম্প্রীতির বাংলার স্বপ্ন। অত্যাচারী কালাপাহাড়ের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছিল তাঁর অবাধ ছুটে চলা।

                      

                               ক্রমশ.....

ছবি সংগৃৃহীত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ