দর্পণ ॥ কবিতার পাতা ॥ সোহেল মাহমুদ




পোস্ট বার দেখা হয়েছে


তোমার আটলান্টিক পেরোতে চাইনি


তোমার আটলান্টিক পেরোতে চাইনি,

শুধু অবগাহনে ভেজাতে চেয়েছি মন !

চিবুকের সেই তিল, বিস্ময়কর একজোড়া চোখ

আকণ্ঠ করেছি পান !

নিঃস্বীম হৃদয়ের জলে ভেসে ভেসে,

অমরাবতীর বিধৌত বন্দরে 

নোঙর করেছি শতবার !

এখনো প্রগত বিকেল, 

নীল টিপ, সেই এলোচুল,

তুলতুলে বুকের কাঁপন, স্পর্শহীন সহস্র ভুল !

খোয়াবের চৌহদ্দি জুড়ে

ফেলে আসা ঠোঁটের প্রাচীর !

জোছোনার জলে ভেজা পুরোনো ভোরের শিশির !

সেই সব দিন, সেই সব জোনাকি প্রহর

অশ্রুর বিন্দুতে লেখা !

কোন এক পায়ের শব্দে আজো-  অকস্মাৎ জেগে উঠি,

বাতাসে চুলের গন্ধ পাই !

সময়ের ফ্রেমে বাঁধানো অনালিঙ্গনের আহত অনুভব

এখনো আগলে রাখি-  

নিঃসঙ্গ বুকের পুরনো জাদুঘরে।

প্রতিটা বিকেল এলিয়ে পড়ে রাতের শয্যায়,

বেশ্যার শরীরের মত -স্বপ্ন বিছিয়ে দেই

দুঃসময়ের নিষিদ্ধ পল্লীতে।

দু চোখের সীমানা পেরিয়ে যেদিকে তাকাই

ফেলে আসা স্মৃতির মিছিল

বুকের সড়কে হেঁটে যায় অশরীরী পায়ে।

আর এই আমি বার্ধক্যের অচল কর্নিয়ায় 

নিঃসঙ্গ হৃদপিন্ডের ধূসর ক্যানভাসে আঁকি

মৃত স্বর্গের জীবন্ত পোর্ট্রেট।


যাবো বলেই এসেছিলাম


যাবো বলেই এসেছিলাম !

যাবো বলেই -

জন্ম থেকে এ প্রস্তুতি, চলে যাবার !

যদিও আমি বিতারিত স্বর্গ থেকে,

প্রিয় মায়ের পবিত্রতম জঠর থেকে !

সেখানে আর হয়নি ফেরা,

যাবার কোন ইচ্ছেও নেই !

তবুও তো একটা সময়

যেতে হবে, চলেই যাবো !

তারিখবিহীন রিটার্ন টিকিট 

সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়াই !

হাতের মুঠোয় জীবন নিয়ে

অনিশ্চিত এক ধারাপাতের বক্ররেখায়

দিব্যি হাঁটি, লক্ষ্যবিহীন ভ্রষ্ট পথে !

মাংসপেশীর শরীর এখন; বিকল একটা পরিবহন !

এই চলে, এই চলে না !

হয়তো বা তার শেষ জ্বালানি, যেটুক ছিল।

আগের মত ব্যাটারিতে নেই গ্রাভিটি,

পুরোনো এক দার্শনিকের অলস রক্ত ধারার মতো

অকার্যকর ইলেকট্রোলাইট !

হাইড্রোমিটার ক্রমাগত; যাচ্ছে নেমে নিচের দিকে,

যেমন করে; জীবন নামের উত্তোলিত পতাকাটা

দিনে দিনে পড়ছে নুয়ে 

আকাশ থেকে মাটির ধুলোয় !

যাবো বলেই এসেছিলাম !

যাবো বলেই গুছিয়ে রাখি, 

না বলা সব কথার পাহাড় !

মুমূর্ষ হাত; সাদাকালো শব্দ দিয়ে

অপূর্ণ সব ইচ্ছে কণার মুক্তো দিয়ে

আজো লিখি এই কবিতা !

যাবো বলেই -

জন্ম থেকে এ প্রস্তুতি চলে যাবার ! 


সেখানে যাওয়া হয়নি আর


কোন এক স্পর্শহীন বুকের সোনালি মৃত্তিকায়,

অনন্তের হাতে বুনে ছিলাম- 

প্রত্যয়ের সঞ্জীবনী বীজ !

হৃৎপিণ্ডের লোহিত সরোবরে 

অদিতির ডানার মতো ইচ্ছেরা ছিলো !

হয়তো বা এখনো আছে-

ক্যামেলিয়ার ঘ্রাণের মতো ছড়িয়ে,

অধরা বাতাসের কোমল শরীরে !

স্মৃতির ক্যানভাসে বিমর্ষ রঙতুলি,

অবচেতন পড়ে আছে শৈল্পিক হাত !

পুরোনো সেই বুকে,

সেই আমার রোপিত বীজে-

ফুটে আছে অজস্র নক্ষত্রের ফুল !

দুঃসময়ের অগণিত পুলসিরাত পেরিয়ে

সেখানে যাওয়া হয়নি আর !





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

5 মন্তব্যসমূহ