দর্পণ || দৈনিক কবিতাগুচ্ছ




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

ঐশ্বর্যবিনাশ

কবি সুব্রত মিত্র


সবুজ রঙ বা সবুজ শব্দটি কোন রাজনৈতিক পরিচয় বহন করে না। সবুজ মানে শান্তির প্রতীক, সবুজ মানে বন্ধুত্বের আরও গাঢ় গাঢ় নিবিড়তা।


তেমনি

গেরুয়া রং বা পোশাক কোন রাজনৈতিক পরিচয় বহন করে না। গেরুয়া রং ভারতীয় ঐতিহ্য, ভারতীয় ইতিহাসে, ভারতীয় সংস্কৃতিতে বহুকাল ধরে বিরাজমান রয়েছে।


এছাড়াও লাল রং উষ্ণতা, ক্ষমতা, ভালবাসা, আন্তরিকরা ,সাহসিকতা, প্রবলতা, উষ্ণতা, শক্তি,উদ্দীপনা, উত্তেজনা , রক্ত, যুদ্ধ, সহিংসতা, আবেগ, শক্তি, বিপদ, আগুন, আন্তরিকতা প্রভৃতি ভাব প্রকাশে ব্যবহৃত হয়।


সব রঙেরই একটি অর্থ বা বিশ্লেষণ আছে।গেরুয়া, সাদা, সবুজ ও নীল – এই চারটি রং আমাদের জাতীয় পতাকায় ব্যবহৃত হয়েছে।


অথচ অত্যন্ত দুঃখের বিষয়.., এই পতাকায় যুক্ত থাকা তিনটি রং নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করছেন তিনটি রাজনৈতিক দল। যে যার মতো করে একেকটি রঙের অর্থ আবিষ্কার করার চেষ্টা বা প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আর পতাকার মাঝের সাদা রং টি? নীল রং টি? না এই সাদা বা নীল রঙের ভাগীদার কেউ হওয়ার চেষ্টা করছেন না। কারণ ওখানে তাদের স্বার্থ নেই। স্বার্থের বিনিময়ে রাজনীতিবিদরা নিজের দেশের পতাকার রংকেও স্বার্থের সাথে মিলিয়ে নিচ্ছেন।


কোন বৈষ্ণবধর্ম অবলম্বনকারী ব্যক্তি কে তার পোশাকের জন্য ধরে নেওয়া হয় তার রাজনৈতিক পরিচয় অমুক দলের। বাচ্চার জন্য কোন বাবা সবুজ রঙের একটি বেলুন কিনে আনলে সেই বাবাকে ধরে নেওয়া হয় তিনি অমুক দলের। কোন পুরনো প্রেমিক বা বন্ধুর জন্য একটি সুন্দর লাল গোলাপ কিনে আনলেও তাকে ধরে নেওয়া হয় সেই প্রেমিক বা তার প্রেম অমুক দলের।


আমি পূর্বপুরুষ হতে আমাদের হিন্দু আচারে দেখে এসেছি বিবাহিত মা-বোনেদের কপালে লাল সিঁদুর, সুন্দরী যুবতীদের পায়ে লাল আলতা, রমণীদের হাত এবং পায়ের নকে লাল নেইল পলিশ। ঠোঁটে উজ্জ্বল হয়ে গোলাপের মত ফুটে ওঠে লাল লিপস্টিক। এগুলো আমি বাদ দেবো কি করে? তবে কি সেই মা-বোনের সেই পছন্দও একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের?


জানিনা সময়ের সাথে সাথে রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনা আরও কতটা তলানীতে এসে নামবে বা নেমে গেছে। 


=====

একবার তোরা মানুষ হ' 

দলছুট পাখি


আরও একবার চেয়ে দেখ তোর চোখের ভিতর-

ক'টা জ্বলছে স্বার্থ চিতা?

কোনোমতেই পার পাবি না তুই শেষ শাস্তি থেকে-

হিসেব রাখছেন পরম পিতা।


নিজের খেয়ে নিজের পরে নিজের মতো থেকে-

পারছিস কি নিজের হতে?

কঠিনতর মৃত্যু বানে বিঁধবি তুইও যেদিন, সেদিন 

মৃতদেহ হবি সবার মতে।


ফুল পাখি আর জল হাওয়া মেঘ তোরও যেমন-

নয়তো কিছুই ফাঁকি!

আজকে যারা সাঙ্গ করে বিদায় নিলো পরলোকে-

রইলো তোর জন্যও বাকি।


এবেলা তোর সাধের মানব জনম শেষের আগে 

আর একবার হ' মানুষ,

ওবেলাতে থাকবি পড়ে ছাই হয়ে একমুঠো, ওই

চিতার আগুনে ফানুস।


বাঁচার মতো বাঁচতে চেয়ে মরতে যদি হয় আজ

তবে বাড়িয়ে দে রে হাত,

শ্মশান ঘাটে চিতার আগুন, জীবন বায়ু, রক্ত ফোঁটার 

হয়না কোনো জাত।


====

ভালো থেকো নয়ন

কামনা ইসলাম 


বহুদিন পর সেই সতেরো আঠারো বছরের নয়নের ছবিটি  যখন মিরার সামনে এলো, মিরা অপলক দৃষ্টিতে কিছু সময় ছবিটির দিকে তাকিয়ে ছিলো। 

কোনো শব্দ নেই তার মুখে। দুচোখ গড়িয়ে অঝোর ধারায় ঝরে এলো জল।

ভাষা হারিয়ে ফেলেছে মিরা।একি সেই নয়ন যে ছিলো তার প্রথম দেখা রাজকুমার। 

মিরা ভাবছে আর কাঁদছে। দিন পেরিয়ে মাস, মাস পেরিয়ে বছর, বছর পেরিয়ে যুগ।তবুও ভোলেনি মিরা, নয়নের সেই ঝাকড়া চুল, মিষ্টি হাসি। কেমন যেনো আজও একলা পথে চললে মনে হয় নয়ন তার নয়নের মণি হয় চোখের উপর বসে আছে।

আকাশে তো একটাই চাঁদ ওঠে তাই না? লক্ষ কোটি মানুষ তার দিকে তাকিয়ে থাকে, সবারই মনে হয় চাঁদটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। 

কিন্তু না চাঁদ কারো দিকে তাকায় না, কাউকে আপনও ভাবতে পারে না।

সে সব সময় তার মূল্যবান সময় টুকু নিজের জন্য রেখে দেয়।

মিরা, আমি কি পাথরের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম? 

মন কে প্রশ্ন করে মিরা ।যার সঙ্গে কথা বলার জন্য আমার হৃদয়টা সারাক্ষণ ছটফট করে, তার কি কখনওই উপলব্ধি হয় না আমাকে নিয়ে কিছুই?

তবুও ভালো লাগার মানুষটিকে ভুলতে পারেনি মিরা। বিধাতার কাছে প্রার্থনা করে তাঁকে ভালো রেখো, তার সব কাজে সাফলতা দান করো। 

বেঁচে থাকবো আশা নিয়ে। পর জনমনে হয়তো দেখা হবে, তখন এই জনমনের সব জমিয়ে রাখা  কথা গুলো বলবো। 

মন ভরে হাসবো,আজকের চাপানো কষ্ট গুলো সেদিন ঠিক আমি তার মনের মাঝেই চাপিয়ে দিবো।

এই চাঁদ, নীল আকাশ, ফাঁকা মাঠ, সবুজ ঘাস তোমরা সব্বাই জেনে রেখো আমি তাকে ভালোবাসতাম। কিন্তু কখনওই বলতে পারিনি।

যখন বলেছি তখন আর তার সঙ্গে দেখা করা দূরে থাক, তাকে নিয়ে ভাবনাটাই আমার জন্য অনেক কষ্টের

 ছিলো।

না পেরেছি ভালোবাসতে, না পেরেছি ভুলে থাকতে , যন্ত্রণাই হয়ে দাড়ালো জীবন সঙ্গী।

মিরা,নয়ন তুমি কেমন আছো? ভালো আছো তো?  কি খেয়েছো? তুমি সুখে আছো তো?

আমার মতো এমন করে তোমাকে আর কেউ ভালোবাসে তো?

জানি তুমি কথা বলবে না! কারণ তুমি তো কখনও ই কোনদিনই আমাকে নিয়ে কিছুই কল্পনা করোনি।

আবেগি মন তো তাই ধরে রাখতে পারিনা, ফিরেও আসেতে পারিনা। 

যাক ভালো থেকো তুমি। নয়নে জড়িয়ে রাখবো যখন তোমাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে বুকটা ভারি হয়ে যাবে ঠিক তখন জলের কণা হয়ে বুকের উপর গড়িয়ে আসতে বলবো। 

ভালো থেকো নয়ন ---

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ