দর্পণ || কবিতাগুচ্ছ || নন্দিনী পোদ্দার




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

 ভালোবাসি

তুমি বলো তোমার একমুঠো ভালোবাসা চাই
কেন? যদি দিই তার চেয়েও বেশি
যদি বসন্তের পলাশ রাঙা আবীরে তোমায় রাঙাই
মহাকাশের তারায় তারায় তোমার সাথে ঘর বাঁধি
এক চিলতে কেন? যদি ঝর্ণার মত ঝরে পড়ি
আমার গোপনের সব আদর নিয়ে
তুমি কি কচ-এর মত আমায় ফিরিয়ে দেবে 
আমি দেবযানীর মত মরুভূমির বালি হবো
 একটুখানি উষ্ণতার জন্য
রাতের পর রাত করবো তোমার প্রতীক্ষা
আমি তোমার জন্য শ্রাবণও হতে পারি
হতে পারি অলকানন্দা
আমার বুকে তোমায় নিয়ে ভেসে যেতে পারি
মাইলের পর মাইল মরু থেকে মহাকাশ
তোমায় বাঁধতে চাই নিবিড় বন্ধনে
যেখানে বাতাসের যাওয়া নিষেধ
যেখানে নগ্ন মনে দাঁড়াবো আদম ইভের মত
ছাড়িয়ে যাবো সমাজের সব বন্ধন
ছাড়িয়ে যাবো শাঁখা পলা সিঁদুরের শিকল
শুধু তোমাময় করবো এই জীবন
বলবো ভালোবাসি হ্যাঁ ভালোবাসি
****
 অপূর্ণতা

অনেক কিছুই না পাওয়ার অভাব থাকে জীবনে
তেমনই ধরনা তোমার আমার দেখা না হওয়া
ভিক্টোরিয়ায় হাত ধরে না হাঁটা
মোড়ের মাথায় তোমার হাত থেকে ফুচকা না খাওয়া
শেষ কি আছে চাওয়া পাওয়ার এই ছোট্ট জীবনে
কিছু স্বপ্ন মেঘে ঢাকা থেকে যায় অনন্তকাল
চোখের জলেও কিছু স্বপ্ন বয়ে নিয়ে যায় কিছু স্বপ্ন বয়ে নিয়ে যায়
কিছু দায়িত্ব হাত ধরে থাকে
দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে ভাঙা পাঁজর থেকে
এই জীবনে থাক না হয় কিছু বাকী
আসছে জন্মে আবার দেখা হবে তোমার সাথে
তখন আমায় চিনতে পারবে তো?
****
 কর্তব্য 

ইচ্ছেরা সব মরেছে কর্তব্যের চিতায়।
স্বপ্নগুলো দাঁড়িয়ে কাঁদে, রাতের তারার নীচে।
গা থেকে পড়া ঘাম মাটি শুষে নেয়..
ক্লান্ত পা গুছিয়ে নিয়ে আবার পথ চলে।
বুঝতে পারিনা মন অন্ধকারে হাতড়ায় ,
না
অন্ধ হয়ে হাতড়ায়....
সারাদিনের কাজের ফর্দ মনে জাবর হয়ে কাটে।।
কবিতার পাতায় জমে ধূলোর আস্তরণ,
দিনের শেষে আঙ্গুলগুলো খুঁজে বেড়ায় কলম।
চোখের পাতা জড়িয়ে ধরে হাজার ইচ্ছার ভীড়...
সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসে মনের আটচালায়। 
আপন মনে হাত চালায় লুটে নেবে সব ইচ্ছা....
এলার্ম বাজে চোখ খুলে যায়.....
কর্তব্যের জালে জরিয়ে ইচ্ছা আবার মুখ থুবড়ে পরে।
 অপেক্ষমান 

হ্যাঁ সে তো আমিও জানি মনের ব্যাকরণ হয় না
তাই কারণের কোন ঠাঁই ও থাকে না
শুধু থেকে যায় অকারণে চোখের জল
থেকে যায় কালো কালো রাতগুলোর অসহায়তা

ক্যালেন্ডারে পাতা উল্টে সময় পার হয় না
শুধু বয়ে যাওয়া সময়ে বয়সটা বয়ে যায়
মন দাঁড়িয়ে থেকে সেই দোরগোড়ায়
নীল বিষের ছোবলে নীলচে হয়ে যায় ঠোঁট
তবু আকণ্ঠ পিপাসা নিয়ে অপেক্ষমান

দিন চলে যায় তার পথে রাত ও আসে সেই পথ ধরে
অপেক্ষারাও দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে অবশেষে
শুভ্র পাতার আনাচে কানাচে শুধু কবিতারা পড়ে থাকে
শূন্য বিছানায় শরীর জীর্ণ পাতার মত
তোর অপেক্ষায় এখন অনাবিষ্কৃত
****
 চেনা অচেনা সুর

সেই চেনা সুরটা মনে পরছে না আজ
মনে করতে চেষ্টা করলেও শুধু চোখের সামনে কুয়াশা...
টুংটাং শব্দগুলো আজ ভীষণ অচেনা
যেন নতুন কোনো স্বরলিপি হারমোনিয়ামে পাঁজরে বাজজে
সেদিনের সোনা ঝরা সন্ধ্যা.....
সন্ধ্যা ঘনায়, রাত আসে, কিন্তু সেটা সোনা ঝরা নয়
বড্ড বেশি কালো কালো... চাপ চাপ জমাট রক্তের মত
সেই অচেনা সুরে হারমোনিয়ামের পাঁজরও রক্তাক্ত
নতুন দিনে নতুন সব সুর চেনা হয়েও থাকে সেই অচেনায়
তাই তো আজ সেই পুরোনো সুরই ফিরে ফিরে আসে
অচেনা ভাষায় পুরোনে গীটারে বেজে যায় সুর...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ