টালা ট্যাঙ্কের ইতিহাস




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

টালা ট্যাঙ্কের ইতিহাস

 ভারতবর্ষ নয়, পৃথিবীর বৃহত্তম ওভারহেড রিজার্ভার হলো কলকাতার ‘টালা ট্যাঙ্ক’। ঐতিহাসিক ‘টাইটানিক’ জাহাজ যে লোহা দিয়ে তৈরি হয়েছিল ‘টালা ট্যাঙ্ক’ তৈরি হতেও সেই রকম লোহা ব্যবহৃত হয়েছিল।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মোঘল সম্রাট ফারুকশিয়ার এর কাছ থেকে ৩৮ টি গ্রাম অধিগ্রহণ করেছিল। যার মধ্যে ৩৩ টি ছিল বর্তমান কলকাতায়। ধীরে ধীরে কলকাতা যখন শহরে পরিনত হয়, তখন নাগরিক পরিষেবা বাড়ানোই একমাত্র লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশদের । নাগরিক পরিষেবার মধ্যে অন্যতম ছিল পানীয় জল । এর জন্য কয়েকটি পুকুরও কাটা হয়। হেঁদুয়া, ওয়েলিংটন স্কোয়ার, ভবানীপুরের পুকুর থেকে সে সময় জল সরবরাহ করা হতো । কিন্তু শহর যখন ক্রমশ বাড়তে শুরু করল, তখন জলের প্রয়োজনটাও বাড়ল ।

ছবি সংগৃহীত 
তত্‍কালীন পুর ইঞ্জিনিয়র মিস্টার ডেভেরাল একটি ট্যাঙ্ক ( রিজার্ভার) তৈরির প্রস্তাব দেন । প্রস্তাবটি তৈরি করেছিলেন তাঁর সহকারি মিস্টার পিয়ার্স । প্রস্তাবের সঙ্গে সহমত হয় বেঙ্গল গভর্নমেন্টও । ১৯০১ সালের প্রস্তাব কর্পোরেশন গ্রহণ করে ১৯০২ সালে । এর ঠিক এক বছর পর এই প্রস্তাবে সামান্য অদলবদল আনেন পৌরসভার নয়া নিযুক্ত ইঞ্জিনিয়র ডব্লু বি ম্যাকক্যাবে । তাতে প্রস্তাবিত অঙ্কের পরিমাণ বেড়ে হয় ৬৯ লক্ষ ১৭ হাজার ৮৭৪ টাকা । তবে আরও উন্নত জল পরিষেবা সম্ভব বলে তাতে সম্মতি দেয় পৌরসভা ।

কিন্তু কোথায় হবে এই ওভারহেড ট্যাঙ্ক ? বেছে নেওয়া হয় টালাকেই । আজ টালা ট্যাঙ্ক যেখানে সেখানে তখন ছিল বেশ কয়েকটি পুকুর । ঠিক হয়, পুকুর বুজিয়ে গড়ে উঠবে বিশ্বের সর্ববৃহত্‍ ওভারহেড রিজর্ভর। ১১০ ফিট উঁচুতে । যেখান থেকে মাধ্যাকর্ষণের স্বাভাবিক নিয়মে জল পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে । অর্থাত্‍ বলা যেতেই পারে কলকাতাবাসীকে জল দিতে কয়েকটি পুকুরকে মাটি থেকে ১১০ ফুট উঁচুতে তুলে দিয়েছিল ব্রিটিশরা।

ছবি সংগৃহীত 
১৯০৯-এর ১৮ নভেম্বর টালা ট্যাঙ্ক নির্মাণের উদ্বোধন করেন বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার এডওয়ার্ড বেকার । প্রথমেই শুরু হয় পুকুর বোজানো । পুকুরগুলিকে জলশূন্য করা হয়, চারদিকে শাল-বল্লার খুঁটি দিয়ে ২০-২৫ ফুট পাইল করে খোয়া দিয়ে ভর্তি করা হয় । ভারী স্টিম রোলার দিয়ে সমান করে তার ওপর খোয়া দিয়ে ৯ ইঞ্চি পুরু আরও একটি স্তর তৈরি করা হয় । এরপর আড়াই ফুট পুরু কংক্রিট সিমেন্টের ওপর ফ্ল্যাট স্টিল টাঁই-এর সঙ্গে বোল্ড স্টিল জয়েন্টের ওপর স্তম্ভগুলিকে দাঁড় করানো হয়।

বিশেষভাবে উল্লেখ্য টালা ট্যাঙ্কের ফাউন্ডেশনের কাজটি করে টি সি মুখার্জি অ্যান্ড কোম্পানি । কংক্রিট ফাউন্ডেশনের কাজটি করেন স্যার রাজেন্দ্রলাল মুখার্জির মার্টিন অ্যান্ড কোম্পানি । বাকি কাজ করে লিডসের ক্লেটন কোম্পানি । ১৯১১-র ১২ জানুয়ারি কাজ শেষ হয় এবং সে বছরের ১৬ মে থেকে এটি চালু করা হয় । ট্যাঙ্কটি তৈরি করতে খরচ হয় ২২ লক্ষ ২৫ হাজার ৪১ টাকা ।

ছবি সংগৃহীত 
এবার আসা যাক কয়েকটি খুঁটি নাটি বিষয়ে। টালা ট্যাঙ্ক বিশ্বের বৃহত্তম ওভারহেড রিজার্ভার। মাটি থেকে ১১০ ফুট উঁচু । মানে প্রায় ১০ তলা বাড়ির সমান । আয়তন ১ লক্ষ বর্গফুট ।


★তথ্যসূত্র সংগৃহীত

★সম্পাদনা : দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ