দর্পণ || ভাবানুবাদ ও আলোচনা || সাদত হাসান মান্টো~ দে ব লী না




পোস্ট বার দেখা হয়েছে
১১ মে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠতম গল্পবলিয়ে সাদত হাসান মান্টো-র জন্মদিন
 আমাদের দুর্ভাগ্য যে তাঁর রচনা আমরা সেভাবে কেউ পড়ে উঠতে পারি নি বিভিন্ন কারণে তারমধ্যে অন্যতম কারণ হলো তার লেখাগুলো উর্দু ভাষায়। উপমহাদেশের দাঙ্গা ও দেশভাগের শ্রেষ্ঠ কথাকার বললেও কম বলা হবে তাকে, দেশভাগের যন্ত্রণা, ছিন্নমূল মানুষের হাহাকার, দাঙ্গার আতঙ্ক, সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত বিদ্বেষ এত নিপুণ দরদে প্রকাশ করেছেন তার প্রতিটি গল্পে তা আজও ভয়ানক ভাবে প্রাসঙ্গিক।
তাঁর জীবন সম্প্রতি আবার আলোচনায় এসেছে নন্দিতা দাসের মান্টো সিনেমার মাধ্যমে। ভারত ভাগের নির্মম শিকার ক্ষণজন্মা এই কথাসাহিত্যিকের আজ জন্মদিন। সাদত হাসান মান্টো ১১ মে ১৯১২ পাঞ্জাবের লুধিয়ানার এক সুন্নী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৩ সালে তার বয়স যখন একুশ বছর, তখন তার পরিচয় হয় আবদুল বারি আলিগের সঙ্গে। এই পরিচয়ই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ক্রমান্বয়ে পণ্ডিত আবদুল বারি আলিগ হয়ে ওঠেন তার পরামর্শদাতা। আবদুল বারির পরামর্শেই মান্টো ফরাসি এবং রাশিয়ান লেখকদের লেখা পড়তে শুরু করেন এবং সেগুলোকে তিনি উর্দু ভাষায় অনুবাদ করেন। আবদুল বারির পত্রিকাতেই ছদ্মনামে তার প্রথম গল্প 'তামাশা' প্রকাশিত হয়।

১৯৩৪ সালে মান্টো সাহিত্য এবং লেখালেখি বিষয়ে পড়ার জন্য আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে তিনি ছোটগল্প লেখালেখি শুরু করেন। তার সেসময়কার ছোটগল্পগুলোর মধ্যে 'ইনকিলাব পসন্দ' নামে একটি প্রকাশিতও হয়। এখানে তিনি বেশ কয়েকজন মানুষের সাথে পরিচিত হন, যারা তার জীবনে পরবর্তীতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। এ সময় ধীরে ধীরে মান্টো ভারতে অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্যিক হয়ে উঠতে থাকেন। 
রাষ্ট্র, ধর্ম ধ্বজাধারী থেকে প্রগতিশীল সবাই একযোগে সাদত হাসান মান্টোকে খারিজ করে দিলেও তিনি গল্পকার হিসেবে নিজের অবস্থান জানতেন। মৃত্যুর এক বছর আগে লেখা নিজের এপিটাফে তিনি বলে গেছেন, ‘এখানে সমাধিতলে শুয়ে আছে মান্টো এবং তাঁর বুকে সমাহিত হয়ে আছে গল্প বলার সব কৌশল আর রহস্য।’ কখনো ফতোয়া এসেছে, অশ্লীলতার জন্য মামলা হয়েছে ছয়বার, বন্ধুরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, কিন্তু মান্টোর চারপাশে বয়ে চলা জীবনের প্রতি আকর্ষণ আর তাঁর কলম কেউ থামাতে পারেনি।

বেঁচেছেন মাত্র ৪৩ বছর। কিন্তু লিখে গেছেন কী প্রবল উদ্যমে! ২২টি ছোটগল্পের সংকলন, ১টা উপন্যাস, রেডিও নাটকের ৭টা সংগ্রহ, ৩টা প্রবন্ধ সংকলন আর ২টা চেনা মানুষদের স্মৃতিকথা! 

নিজের কাজের কৃতিত্বও পাননি তিনি তাঁর জীবদ্দশায়, ছিলেন সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে অবহেলিত এবং এক সময় তাকে অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল তবু তাকে কোন কিছুই তার উদ্যম ও কলম আটকাতে পারে নি। খুব গর্বের সঙ্গে জীবদ্দশায় নিজেকে মির্জা গালিবকে নিয়ে একটি ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন এবং ছবিটি পরবর্তীতে পুরস্কারও পেয়েছিল। তবে জীবদ্দশায় মান্টো তা দেখে যেতে পারেননি।

মান্টো গালিবের একটি কবিতার লাইন উদ্ধৃত করে একটি প্রবন্ধের শিরোনাম দিয়েছিলেন, 'কুছ নহী হ্যায় তো অদাওত হী সহী' (কিছু না থাকলে শত্রুতাই থাক)।

আজ তার জন্মদিবস এ তার কিছু উদ্বৃতি অনুবাদের মাধ্যমে প্রকাশ করার চেষ্টা করলাম। পরবর্তীতে তার হার হিম করা ছোটগল্পের অনুবাদ নিয়ে আসার চেষ্টায় থাকলাম ।
১)
রাজনেতা যখন চোখের জলে ভেসে মানুষকে বলার চেষ্টা করে যে রাষ্ট্র বা জাতির সঙ্কট তখন সেখানে আদৌ বাস্তবতা থাকে না। জাতি বা সম্প্রদায় তেমন কোন বস্তু নয় যা সঙ্কটে পড়তে পারে, আসল সঙ্কট হলো সেই রাজ নেতা নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য জাতি বা সম্প্রদায়কে সঙ্কটে ফেলে।

২) 
আমি বিপ্লব চাই , সেই প্রতিটা পারিপার্শ্বিক বিষয়ের বিরুদ্ধে বিপ্লব গড়ে তুলতে চাই যা আমাদের দিয়ে শ্রম করিয়ে নেয় কিন্তু শ্রমের যথার্থ মূল্য দিতে জানে না।

৩) 
পৃথিবীর বুকে যত অভিশাপ আছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো খিদে।

৪) 
সময়ের যে অবস্থার মধ্যে দিয়ে আমরা অতিক্রম করছি সে সম্বন্ধে যদি আপনি অপরিচিত বা অজ্ঞাত
হোন তাহলে আমার কথা শুনুন বা তথ্যগুলো পড়ুন  আর তারপরও যদি এই কথাগুলো সহ্য করতে না পারেন তাহলে বুঝতে হবে এই সময় ও পরিস্থিতি আসলে অপরিচিত ও অসহ্য...
আমার মধ্যে যে দোষ আছে তা এই সময়ের দোষ। আমার লেখা তথ্যতে কোন ত্রুটি নেই । যে ত্রুটি আমার নামের সাথে জড়িয়ে ফেলা হয় সে আসলে বর্তমান পরস্থিতির ত্রুটি ।
৫) 
মন কোন শয্যা নয় যা যে কারুর সাথে ভাগ করে নেওয়া যায়।

৬) 
ভাষা বা শব্দ মুখে ফোটে স্বইচ্ছায় আর তাকে কোন মনুষ্য শক্তি নষ্ট করতে পারে না ।

৭) 
শরীর পুড়িয়ে দেওয়া যায় কিন্তু আত্মাকে বিনষ্ট করা যায় না।

৮) 
আমি অনেকসময় ভাবি যে বাঁদর রূপান্তরের মাধ্যমে আমরা মানুষে পরিণত হয়েছি আর এতো অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটিয়ে চলেছি ঠিক সেইরকম মানুষ যদি আবার বাঁদরে পরিবর্তিত হয় তাহলে ভগবানই জানে সে কি না করতে পারে !!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ